X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কামাল জোটের ভবিষ্যৎ কি নিষ্ফলা?

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৫২আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৪৬



বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী ঐক্যের ডাক দিয়ে ড. কামাল হোসেনের বিদেশে যাওয়ার রীতি বহু পুরনো। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড চলে গেছেন। আর হাঁটুর চিকিৎসা করে সেখান থেকে আগামী ৬ বা ৭ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি গেছেন এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন তাদের ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা কী হবে সেটা নির্ধারণের কথা। আর তিনি এবং ডাক্তার বদরুদ্দোজা চৌধুরী যে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার শর্ত দিয়েছেন, তার পরিণতি কী সেটাও নির্ধারিত হলো না।
বিএনপি সমাবেশ ডেকেছে ২৯ সেপ্টেম্বর। পত্রিকা বলছে, এই সমাবেশে জামায়াত ও ২০ দলের শরিকরা নাও থাকতে পারে। কারণ, বিএনপি চাচ্ছে একক শক্তি দেখাতে। কিন্তু বিএনপি কি জামায়াতকে ছাড়তে পারবে? নির্বাচনের আগে যদি আন্দোলন হয়, বিএনপির দরকার জামায়াতকে, কারণ তারাই জঙ্গি আন্দোলন করতে পারবে। আর আন্দোলনের সুযোগ না থাকলে ড. কামাল- বি. চৌধুরীকে সামনে রেখেই নির্বাচনমুখী হয়ে আগানোই তাদের পরিকল্পনা। তাই রাজনৈতিক মহলে বিরাট প্রশ্ন- আদৌ কি ড. কামালের নেতৃত্বে কোনও নির্বাচনী জোট হবে?
২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশের পর দলগুলোর মধ্যে এখনও কোনও সম্মিলিত সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয়নি। একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যাকে ভিত্তি করে তারা কাজও করবে আর আলাপ আলোচনা করে সাংগঠনিক কাঠামোও স্থির করবে আশা করছে। ডাক্তার বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি থাকলেও বিএনপির সিনিয়র নেতারা তার কাছে গিয়ে করজোড় ক্ষমা চেয়েছেন। সম্ভবত তিনিও তাতে সন্তুষ্ট হয়েছেন। যার কারণে বিলম্বে হলেও তিনি ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে যোগদান করেছেন।
ড. কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়া, বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট আর বিএনপির ২০ দলীয় জোট অর্থাৎ প্রায় ৩০টা নিবন্ধিত অনিবন্ধিত দলের এক মঞ্চে সম্মিলন হয়েছে। ড. কামাল হোসেন আর বি. চৌধুরীর ব্যাপক কোনও রাজনৈতিক সফলতা না থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা উভয়ে সিনিয়র মানুষ আর ব্যাপক পরিচিত লোক। নির্বাচন করার ব্যাপারেও তাদের কোনও অনীহা নেই। জোট-নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখনও দোটানায়।
আওয়ামী লীগ সরকারও নির্বাচন নিয়ে গড়িমড়ি করতে চায় না। তারাও নির্বাচনের সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করে রেখেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সরকার কোনও বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবে না এমন জেদের বশীভূত হয়ে দশম সংসদ নির্বাচনকে ভণ্ডুল করে দিতে চেয়েছিল। অর্ধেক সিটে নির্বাচন না হওয়ার পরও তারা পরিপূর্ণভাবে অবশিষ্ট অর্ধেক সিটে নির্বাচন ভণ্ডল করতে পারেনি। হয়তো ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল।
আওয়ামী লীগের সঠিক নির্বাচন আর বিএনপি জামায়াত জোটের অবৈধ নির্বাচন অনুরূপ হরিবোলে মধ্যে দশম সংসদের মেয়াদও শেষ, এখন একাদশ সংসদের নির্বাচন এসে উপস্থিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষণে এ কথা বলা যায় যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসা ছাড়া বিকল্প কোনও পথের সন্ধান হয়তো পাবে না। কারণ, তাদের সংকট জটিল এবং গভীর, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই ধীরে ধীরে সংকট উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। তাদের দলের চেয়ারপারসন জেলে আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে, যার দেশে আসার সম্ভাবনা আপাতত খুবই কম।
অপরদিকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ গত দশ বছর একটানা ক্ষমতায়। সুতরাং তারা অ্যান্টি ইনকামভেন্সির সম্মুখীন হওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে কিছু ভুল ত্রুটি সব সরকারেরই হয়। শেখ হাসিনার সরকারেরও হয়েছে। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে তার বিকল্প কেউ নেই। এ কথা তার দুশমনও বিশ্বাস করে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তার অবস্থান ভালো।
পত্রপত্রিকায় তো দেখছিই। ক’দিন আগেও বলেছি আমি এবার সৌদি বাদশার আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে হজ করতে গিয়েছিলাম। ৫৯টা দেশের ১৪০০ মেহমান ছিল। আমাদের মক্কায় ও মদিনায় থাকার ব্যবস্থা করেছিল। প্রত্যেক দিন সব দেশের মেহমানদের সঙ্গে দেখা হতো। বাংলাদেশের মানুষ বললে অন্য দেশের মানুষ পুলকিত হতো। বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান মুসলিম বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তি।
দেশের মানুষও এখন রাষ্ট্রীয় কোনও বিপদ দেখলে ভীত হয় না। জনগণ ভাবে শেখ হাসিনা তার অপরিসীম প্রাণশক্তি ও লড়াকু মনোভাবের জোরে সবকিছু মোকাবিলা করে ফেলবেন। মানুষের এই আস্থা অর্জন সহজ কথা নয়। সম্ভবত বিএনপি ড. কামাল এবং বি. চৌধুরীর সঙ্গে শর্তহীন জোট করতে চাচ্ছে লিডারশিপ ক্রাইসিস থেকে উত্তরণের জন্য। এই জোট কতটুকু সফলভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে তা নিয়ে এখনও সংশয় আছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ড. কামালের ঘরে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মনোমালিন্যের কারণে সে বৈঠক হয়েছে বি. চৌধুরীর বাসায়। তাতে ড. কামাল অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে উপস্থিত হননি। লিয়াজোঁ কমিটি হওয়ার কথা ছিল। বিএনপির পর্যবেক্ষক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর অনুরোধে কমিটি গঠনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বৈঠকে বিকল্পধারার এক লিখিত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে হলে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হবে। ড. কামালও মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জামায়াতের ব্যাপারে স্পষ্ট নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপির পরেই এখন জামায়াতে ইসলামীর স্থান। জামায়াতের কাছে লড়াকু কর্মী রয়েছে। বিএনপির চেয়ারম্যান জেলে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারেক সহজে দেশে ফিরতে পারবে না। সর্বোপরি আগামী ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হবে। প্রশিকিউশন চূড়ান্ত শাস্তির দাবি করেছে। তারেক রহমান সে মামলার আসামি। রাজনৈতিক নেতারা জনসাধারণের কথা বলে যে দোহাই দেয় সেই জনসাধারণই বিশ্বাস করে যে হাওয়া ভবন এ গ্রেনেড হামলার হোতা।
তখন বিএনপি ক্ষমতায়। জজ মিঞাকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট দাখিলসহ সব বিতর্কিত কাজ তারাই করেছে। সুতরাং রায়ে কারো লঘু শাস্তি হবে বলে মনে হয় না। মুক্তিযুদ্ধের পর এটিই ছিল বৃহত্তম হত্যাকাণ্ড।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ আর আব্দুল আওয়াল মিন্টু বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে বহু কিছু ঘটে যাবে। বিএনপি মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে। ২০১৪ সালের সংগ্রামে রাজধানীর পতন না হওয়ায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়নি। এবার বিএনপি পরিকল্পনা করেছে আগামী ১০ অক্টোবরের আগেই তারা রাজনীতিতে তাদের বিপুল কর্মীর সমাবেশ ঘটাবে এবং জামায়াত কর্মীরা লড়াকু ভূমিকা নিয়ে বিএনপিকে সাহায্য করবে। বিএনপি আপাতত নম নম করলেও চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তারা জামায়াতকে ছাড়তে পারবে মনে হয় না। আর বিএনপি ঢাকা দখলের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নিরুর বাঁশি বাজাবে না। তারাও প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করবে। সুতরাং দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণ্ডগোলের সূত্রপাত হবে এবং দীর্ঘায়িত করার প্রচেষ্টায় সফল হলে দেশ প্রচণ্ড এক অস্থিরতার সম্মুখীন হবে।
অস্থির রাজনীতিতে ড. কামাল হোসেন আর বি. চৌধুরী কি করবেন? তারা তো দখল বেদখলের রাজনীতি কখনও করেননি। আর দেখলাম জোটে নেতৃত্ব নিয়েও দ্বন্দ্ব আছে। এক ঘরে দুই পীরের অবস্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেই। সুতরাং আপাত দৃষ্টিতে বলা যায় এই জোট তেমন কার্যকর হবে না।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক
[email protected]

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ