X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটে পর্যটন ভাবনা কতটুকু?

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৪আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৬

তুষার আবদুল্লাহ দেশের আকাশসীমায় মাঝে-মধ্যে উড়াল দিতে হয়। দীর্ঘ বিরতিতেই উড়াল দেই। সড়ক, রেল, নৌপথে কুলিয়ে না উঠতে পারলে। এবার যেদিন উড়াল দিলাম, তার আগের দিন যে রানওয়েতে জরুরি অবতরণ হলো একটি উড়োজাহাজের, আমার গন্তব্য সেই রানওয়ে। বিমান বন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে তাড়া থাকে, চঞ্চলতা থাকে। এবার সেই উচ্ছ্লতা অনুপস্থিত। চোখেমুখে এক ধরনের ভীতি সামলে নিয়ে যাত্রা করছেন সবাই। টার্মিনাল থেকে উড়োজাহাজ পর্যন্ত গাড়িতে যেতে যাত্রীদের কলরব নেই। মৌনসংগীত গেয়ে চলেছেন সবাই।
নিরাপত্তা নির্দেশিকা সব যাত্রীকে এমন মনোযোগী শিক্ষার্থী হয়ে শুনতে, দেখতে দেখিনি আগে। সবাই ফোনে পরিজনদের কাছ থেকে শুভকামনা নিয়ে রাখলেন। প্রিয়জনকে ইমো, স্কাইপে দেখেও নিলেন কেউ কেউ। উড়োজাহাজ উড়াল দিলো। সুনসান সবকিছু। কোনও এক শিশু বায়না ধরেছে বিমান চালানোর। ক্রুরা এসে জল খাবার দিয়ে গেলেন। কারও সেদিকে আগ্রহ আছে বলে মনে হলো না।
আমার পাশে যিনি বসেছিলেন, তিনি চট্টগ্রামেরই লোক। বললেন–সব কয়টা চাকা খুলবে তো? আমি তাকালাম তার দিকে। শঙ্কা তো আমার মধ্যেও আছে। কষ্টে হাসি দিলাম। তিনি বললেন–পাইলটের বিচক্ষণতার জন্য কতগুলো মানুষ বেঁচে গেলো। এমন হতেই পারে তাই না? চালকের হাতে কতটুকুই আছে, সবই যন্ত্রের মেজাজ মর্জি। আমি সায় দিলাম। তিনি বলেন, রাতে যাচ্ছি। জানালা দিয়ে বাইরেরটা দেখা যায় না। দেখা যাক বা না যাক, আমি জানালার পাশে বসবোই। অন্ধকার দেখেও আমি অনুভব করি আমার বাংলাদেশকে। জানেন, এই দেশটাকে আমরা না পারলাম নিজেরা দেখতে, না দেখাতে পারলাম বাইরের মানুষকে। একটা গাছ, একটা ঘর, একটা নদী, একটা গ্রাম, একটা পথও তো দেখার মতো হতে পারে। এমন রত্ন তো ছড়ানো ছিটানো পুরো দেশেই। দিনের আলোয় যখন ভেসে যাই, মুগ্ধ হই, কষ্ট পাই দেশটাকে নিয়ে।

তিনিই আবার জানতে চাইলেন, পর্যটন দিবস গেলো বুঝি দুই-একদিন আগে? আমি সায় দিলাম। তিনি বলে যাচ্ছেন, ঘটা করে দিবস পালন করা ছাড়া আমরা কী করতে পেরেছি? পারিনি বিছানাকান্দি, রাতার গুল, যাদুকাঁটা নদীতে যাওয়ার সড়ক মেরামত করতে। পতেঙ্গা সৈকত আর উপভোগের জায়গায় রাখতে পারিনি। পারকি বিচকেও হত্যা করা শেষ। ভাঙছে কুয়াকাটা সৈকত। পাহাড় দেখেছেন, কী নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে?  নদী, হাওর, বিল সব আজ  সভ্যতার সমাধি।

আলাপে বের হয়ে এলো তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্র রাজনীতি করতেন। এখনও সক্রিয় ক্ষমতাসীন রাজনীতির সঙ্গে। তবে তিনি রাজনীতির ওপর সন্তুষ্ট নন। এখন নাকি রাজনীতির মানুষের কদর নেই। অনু্প্রবেশকারীদের দরদ বেশি। তারাই লুটেপুটে খাচ্ছে সব। দলের প্রতি, দেশের প্রতি এদের মায়া নেই। কেবল লুটপাট।

তিনিই বললেন–এই যে ধরেন ভোট আসছে। কত রকম প্রতিশ্রুতি। কেন্দ্র থেকে যেমন আসছে, স্থানীয়ভাবে প্রার্থীদের কাছ থেকেও আসছে। কিন্তু কোথাও দেখছেন পর্যটন নিয়ে কথা হচ্ছে, কোনও প্রতিশ্রুতি? কথা হবেই বা কী করে, তারা তো আর এই দেশের পর্যটক নন। ঘুরে বেড়ানোর সখ জাগলে বিদেশ বিভূঁই যখন তখন। দেশের পর্যটন এলাকায় তাদের পা পড়ে না। সুতরাং এদেশের পর্যটন নিয়ে তারা ভাববেন কেন? উড়োজাহাজ সময়ের আগে নেমে পড়ে। আমরা নেমে দেখি জরুরি অবতরণের বিমানটি দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বললেন, পর্যটনকে সুষম করতে বেসরকারি বিমানখাতকেও আস্থা ও নিরাপদ জায়গায় আনতে হবে। আমি করমর্দন করে সায় দিলাম।

তারপর বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে ঝলমলে পতেঙ্গা। ইচ্ছে হলো কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা যেতে। কর্ণফুলীতে তখন ভাটা। ঘাটে এসে দেখি যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। একই ঘাট দিয়ে মালামাল উঠানো-নামানো হচ্ছে। ট্রলারের নদীর বুকে মনে হলো, নিজের দেশের পর্যটকদের জন্য কি এই নদীতে কোনও আয়োজন। অনেক ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর ও নৌ চ্যানেলেও কিন্তু পর্যটকদের বঞ্চিত করা হয়নি। আনোয়ারা মূলত আরাকান রাজ্যের দেয়াং পাহাড়। আরাকান রাজ্যের। অপরাধীদের এখানে বন্দি করে রাখা হতো। পদ্মাবতীর কবি আলাওলও এখানে বন্দি ছিলেন। কর্ণফুলী সার কারখানা, কাফকো, চট্রগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা, কোরিয়ান ইপিজেড এবং পারকি ছাড়াও আলাওল স্মৃতি বিজড়িত সবুজ সেই দেয়াং হতে পারে পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গা। পারকিতে গিয়েছিলাম। মন খারাপ হলো। রিসোর্টের নামে কিছু দালান, স্থাপনা গড়ে উঠেছে যা পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যহানীই ঘটিয়েছে শুধু। যাওয়ার পথের সড়ক সরু। ফিরে আসার পথে চট্টগ্রাম সড়ক পথেই ফিরতে চাইলাম। ফিরতে গিয়ে দেখি ভয়ানক অবস্থা। খানাখন্দ নয় ডোবা, পুকুর। নির্বাচনকে সামনে রেখে সালাম, শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কিন্তু কেউ এলাকাটি পর্যটকবান্ধব করার অঙ্গীকার করছেন না। স্থানীয়দের তাই আগামীতেও এলাকাটি পর্যটন আকর্ষণের সক্ষমতা পাচ্ছে না। একই ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে আছে হয়তো দেশের অন্য পর্যটন এলাকার জন্যও।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সংসদ অধিবেশন শুরু, চলবে ৯ মে পর্যন্ত
সংসদ অধিবেশন শুরু, চলবে ৯ মে পর্যন্ত
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ওপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ওপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা
গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার
গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার
পরপর দুবার কমলো এলপিজির দাম
পরপর দুবার কমলো এলপিজির দাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ