X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় ভারতের ভয়াবহতা ও আমাদের পদক্ষেপ

আসাদুজ্জামান কাজল
০৭ মে ২০২১, ১৯:১৪আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ১৯:১৬
আসাদুজ্জামান কাজল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত দ্বিতীয় সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষ হয়ে তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেছে। এই কঠোর লকডাউনের ইতিবাচক ফল পেয়েছে বাংলাদেশ। আগের তুলনায় প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যা ও সংক্রমণের হার দুটোই কমেছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতিসহ জনজীবনকে স্বাভাবিক রূপ দিতে ইতোমধ্যে দোকান ও শপিং মল খুলে দেওয়া হয়েছে।
 
যাইহোক, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিদিন সেখানে আড়াই হাজারের উপরে মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। শ্মশানঘাট-কবরস্থানে মৃতদেহ সৎকার ও দাফনের জন্য চলছে দীর্ঘ লাইন। জায়গা না পেয়ে অনেকেই বসতবাড়ির পাশেই মৃতদেহ সৎকারের কাজ করছে। হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় প্রায় পাঁচ-ছয়গুণ বেশি রোগী আসছে প্রতিদিন। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি না করে ফেরত পাঠাচ্ছে। যেসব রোগী হাসপাতালে আসছে তাদের শতকরা নব্বই ভাগেরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদনকারী দেশের একটি হচ্ছে ভারত এবং সেই ভারতেরই প্রতিটি হাসপাতালে চলছে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। রোগীকে অক্সিজেন দিতে না পারায় রোগীর স্বজনরা অন্যদের থেকে অক্সিজেন ছিনতাইও করেছে। বাধ্য হয়ে অক্সিজেন আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার। কিন্তু, আমদানিকৃত অক্সিজেন ভারতে পৌঁছনোর পূর্বেই মৃত্যু ঘটবে অসংখ্য রোগীর।

ভারতের এই অবস্থা, আমাদের নতুন করে ভাবনার উদ্রেক ঘটিয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই আমাদের দেশের রোগীদেরও অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে এখন অক্সিজেনের চাহিদা কয়েকগুণ বেশি। দেশের অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাড়তি চাহিদা কতটুকু মেটাতে পারবে সেটা বিবেচনা নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এখনই। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় যদি দেশে অক্সিজেনের মজুত পর্যাপ্ত না থাকে তাহলে সরকারের উচিত এখনই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজ করা এবং প্রয়োজনের সময় সেটি নিশ্চিত করা। কেননা, বর্তমানে বেশিরভাই রোগীরই অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন না হলেও অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। অনেকেরই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না কিন্তু অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। তাই, অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে হাসপাতালে জায়গা না পেলেও বাসায় চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবে এবং ভারতের মতো অক্সিজেনের অভাবে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে না। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দেশে এই মুহূর্তে অক্সিজেনের ঘাটতি নেই।

ভারতের ডাবল কিংবা ট্রিপল মিউটেড ভ্যারিয়েন্ট যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষ্যে সরকার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যা অবশ্যই একটি সময়োপযোগী ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত। কেননা, আকাশপথ ছাড়াও-স্থল বন্দর দিয়েও প্রতিদিন দুই দেশের অসংখ্য নাগরিক যাতায়াত করে। পথ চালু রাখার অর্থই হচ্ছে নিজেদের নিজেরাই কঠিন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া। পূর্বে আমরা লক্ষ করেছি, নানা বাস্তবতায় আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চালু রাখলেও যখন আমাদের দেশে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে তখনই সেসব দেশ বাংলাদেশকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছে। যেমন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ চালু রেখেছিল। কিন্তু, বাংলাদেশে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। সুতরাং, সাময়িক সুবিধার জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ চালু রাখলে খুব দ্রুতই আমরা বিশ্বের নানা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতাম। তাই, এই সময়ে ভারতে মানুষের যাতায়াতের জন্য আকাশপথ, রেলপথ ও স্থলপথ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, যা আমাদের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ও ভারতের মতো ভয়াবহ বিপদ উভয় থেকে রক্ষা করবে।

এছাড়াও, ভারতের ওপর আমরা নানা কারণে নির্ভরশীল এবং ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেশে প্রবেশ না করলে সেসব পণ্যের দাম দেশের বাজারের হু হু করে বেড়ে যাবে। যা দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আরেকটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সে কারণেই, মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, জরুরি ওষুধসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ব্যবস্থা চালু রাখা প্রয়োজন এবং এখন পর্যন্ত সেটা চালু রয়েছে। কিন্তু, এই প্রক্রিয়ায় যারা যুক্ত থাকবে তাদের মাধ্যমে দেশে যেন করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যারা দেশে প্রবেশ করবে তাদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে তাদের কোয়ারেন্টিনের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে হবে এবং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সেখানে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এ কারণেই, দেশের যেসব অঞ্চলে স্থলবন্দর রয়েছে সেসব অঞ্চলের নির্ধারিত স্থানে জরুরি ভিত্তিতে কোয়ারেন্টিনের জায়গা নির্বাচন করতে হবে। কোয়ারেন্টিন শেষে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার পূর্বে তাদের অবশ্যই করোনার নেগেটিভ টেস্ট নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ভারতের সঙ্গে সাময়িক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেশের জন্য সাময়িক ভোগান্তি হলেও এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না এবং ভারতের মতো ভয়াবহ অবস্থা থেকে রক্ষা পাবে।  

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি নেতাদের কথা মাঠকর্মীরা শোনে না: ওবায়দুল কাদের
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
আফসোসে পুড়ছেন হৃদয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ