X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বল রাষ্ট্রই সাংবাদিকতার ওপর আঘাত করে

স্বদেশ রায়
২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:০৭আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:০০

স্বদেশ রায় মানুষ ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করে দ্রুতগতিতে রাজ্য জয় করেছে। বোমারু বিমান দিয়ে মুহূর্তে বোমা ফেলে হত্যা করেছে লাখ লাখ মানুষ। এখন মিসাইল দিয়ে যুদ্ধ জয় ও নরহত্যা দুটোই মুহূর্তে ঘটাতে সমর্থ। যার ফলে ঘোড়ার গতি এখন সুদূর অতীত। তারপরেও সত্য হলো, মানুষ সভ্যতার গতিকে প্লেন তো দূরে থাকুক ঘোড়ার পিঠেও তুলতে পারেনি। তাই সভ্যতা এখনও পায়ে হেঁটে বা হামাগুড়ি দিয়ে চলছে। যার ফলে ২০২০-এর তুলনায় ২০২১-এ পৃথিবীজুড়ে জেল খেটেছে বেশি সাংবাদিক। ২০২০-এ পৃথিবীতে জেলে নেওয়া হয়েছিল ২৮০ সাংবাদিক। ২০২১-এ জেল জীবন কাঁটাতে হয়েছে ২৯৩ সাংবাদিককে। এ হিসাব কমিটি টু প্রটেক্ট  জার্নালিস্টের। এর বাইরেও যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরও কিছু নেই তা নয়। তাছাড়া আইনের যেমন সুন্দর হাত আছে তেমনি তার একটা কালো ঢালও আছে। সে কালো ঢালের আড়ালে সব সাংবাদিক কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে জেলে যায় না। নানান মোড়কে তা চিহ্নিত করা হয়। তারপরেও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের হিসাবে এই যে ২৯৩ জনকে জেলে নেওয়া হয়েছে, এ সংখ্যাটি অপরাধমূলক কোনও পেশা নয়, এমন একটি পেশার জন্যে ভয়াবহ সংখ্যা।

জেল জীবন ছাড়াও সরাসরি মৃত্যুকে মেনে নিতে হয়েছে ২৪ সাংবাদিককে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে মারা গেছেন আরও ১৮ জন।

যদি সভ্যতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয় তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও যুদ্ধক্ষেত্রে ছাড়া আর কোথাও পেশাগত কারণে সাংবাদিক মারা যাবার কথা নয়। সাংবাদিকতার কারণে জেলে যাবারও কথা নয়। তবে বাস্তবতা, কেউ যখন সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করে, এবং যদি সে প্রকৃতই সাংবাদিকতা করতে চায়, তাহলে তাকে ধরে নিতে হবে- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি ও  রাষ্ট্র বিপ্লবের খবর সংগ্রহে তার যেমন মৃত্যু হতে পারে তেমনি তার জন্যে রয়েছে রাজরোষ বা রাষ্ট্রীয়রোষ, গোষ্ঠীরোষ ও বিভিন্ন ধরনের সুবিধাবাদীদের রোষ। এ কারণে তাকে জেলে যেতে হতে পারে, অন্যায় বিচারের আওতায় পড়তে হতে পারে; আবার রাষ্ট্রের হাতে বা গোষ্ঠীর হাতে আইনের মোড়কে বা বেআইনিভাবে তাকে হত্যা করা হতে পারে। এই সত্য মেনে একজন সাংবাদিককে একটা যোদ্ধা মন নিয়েই সাংবাদিকতায় আসতে হয়।

প্রশ্ন হলো, বর্তমানে আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের পৃথিবী বলে সারাক্ষণ সব রাষ্ট্র চিৎকার করছে, তারপরেও এ পৃথিবীতে রাষ্ট্রের রোষে কেন পড়তে হচ্ছে সাংবাদিককে? শুধু ২০২১ নয়, এর পেছনে আরও পাঁচ বছর দেখলে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীজুড়ে প্রতি বছরই ২৫০ জনের ওপর সাংবাদিককে জেলে যেতে হচ্ছে। নিহত হওয়ার ঘটনা এমনি ১০-এর কাছাকাছি বা ওপরে থাকছে সব সময়ই। এবং এটা ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি ২০২০ ও ২০২১ দুটি কোভিডের বছর পার করলেও সেখানে সাংবাদিক নির্যাতন ও নির্যাতনের ফলে মৃত্যু বা আরও খারাপভাবে নিহত হওয়ার সংখ্যা  বেড়েছে। এ সংখ্যা যতই বাড়ছে ততই প্রশ্নবিদ্ধ করছে আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারকে।

যেকোনও সাংবাদিকের সংবাদ প্রকাশ করা তার মৌলিক অধিকার। তার এ মৌলিক অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব আধুনিক পৃথিবীতে সকল ধরনের রাষ্ট্রের। এ কারণে কোনও রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে যে কারোর দ্বারা তথ্য বা মতামত প্রকাশে  বাধা পেলেই সে দায় ওই রাষ্ট্রের ওপরই পড়ে।  কোনও রাষ্ট্রে কখনও কখনও  কোনও সাংবাদিককে সন্ত্রাসীরা কিডন্যাপ করে।  কখনও কখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা আইনগত সন্ত্রাসীর মতো সাংবাদিককে কারও কারও স্বার্থে গ্রেফতার করে। এমন ঘটনা অনেক সময় রাষ্ট্রের নিজের স্বার্থে ঘটে না। রাষ্ট্র ক্ষমতা বলয়ের কোনও একটি বিশেষ সুবিধাবাদী গ্রুপ তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে এ কাজ করে।  আবার দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্র সাংবাদিককে কোনও না কোনও আইনের আওতায় গ্রেফতার করে থাকে। সে আইনগুলো আসলে নির্বতনমূলক আইন। এই ধরনের আইন স্বৈরতন্ত্রী দেশে যেমন আছে তেমনই গণতান্ত্রিক দেশেও আছে। বর্তমানে সাইবার ক্রাইমসহ নানান বিষয় নিয়ন্ত্রণের নামে এ ধরনের আইনগুলো তৈরি করে বেশিরভাগ রাষ্ট্রই তা ব্যবহার করছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এছাড়াও  সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতনের ফলে সাংবাদিক যেমন মারা যাচ্ছে তেমনই মারা যায় অনেক সময় আইনের পোশাক পরা রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদের নির্যাতনের ফলেও।

এই নানান মোড়কে সাংবাদিকদের  মত প্রকাশে বাধা দেওয়া, সাংবাদিকদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও  সর্বোপরি সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা সাধারণ স্বৈরতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলোতে সব থেকে বেশি ঘটে। এর পরে ঘটে কম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে। ২০২১ এর এই সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্রে, নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে আছে চীন, দ্বিতীয় মিয়ানমার এর পরে ধারাবাহিক ভাবে মিশর, ভিয়েতনাম, বেলারুস প্রভৃতি দেশ। এখন মোটা দাগে বলা যায় শীর্ষে থাকা এই পাঁচ দেশের কোনও দেশেই গণতন্ত্র নেই। সবগুলোতে অথরেটিয়ান শাসন। এর ভেতর মিয়ানমারে সরাসরি সামরিক স্বৈরতন্ত্র। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের তথ্য অনুযায়ী  শীর্ষ এই পাঁচের পরে এসেছে কম গণতান্ত্রিক দেশগুলো। বাস্তবে একজন সাংবাদিকের নিহত হওয়ার ঘটনা বা নির্যাতনের ঘটনা কোনও রাষ্ট্র যদি ঠেকাতে না পারে ওই রাষ্ট্র সে সময়ে ভিন্নভাবে চিহ্নিত হয়।  স্বাভাবিকই আইনের শাসক, মানবাধিকার রক্ষক ও গণতান্ত্রিক হিসেবে ওই রাষ্ট্রের সূচক নিচে নেমে যায়। রাষ্ট্রের পোশাকপরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেআইনি নির্যাতনের শিকার হয় কখনও কখনও সাংবাদিকরা।  সে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে অনেক সময়।  এই নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা যে রাষ্ট্রে ঘটে ওই রাষ্ট্র অনেক কম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা ছদ্ম-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এর ভেতর দিয়ে মনে হতে পারে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে সাংবাদিকরা ও সাংবাদিকতা নিরাপদ। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস সে কথা বলে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় বেশি। সে সময়েও কি সত্যি অর্থে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছিলো?  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এক দিকে একের পর এক ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হয়।  সৃষ্টি হয় অনেক স্বাধীন রাষ্ট্রের। সে রাষ্ট্রগুলোর একটি অংশ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ওই রাষ্ট্রগুলোতে মিডিয়া ছিল সরকার ও সরকারি পার্টি নিয়ন্ত্রিত। তাই সে মিডিয়া ছিল মূলত ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’। এর বিপরীতে গণতান্ত্রিকর রাষ্ট্রগুলো তুলনামূলক মিডিয়ার স্বাধীনতা দেয়, সাংবাদিকের স্বাধীনতা দেয়। তারপরেও ওই সময়ে ওই দেশগুলো মিডিয়ার একটি বড় অংশকে কাজে লাগায় প্রচারণায় ( প্রোপাগান্ডায়)। বাদ বাকি যেটুকু থাকে সেখানেও নানান নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাই  ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও এশিয়া মিলে হাতে গোণা কয়েকটি রাষ্ট্রে মিডিয়ার ও সাংবাদিকতার আগের থেকে একটু বিকাশ ঘটে। কিন্তু তাও সে বিকাশ পরিপূর্ণ স্বাধীনভাবে হয়নি। তাছাড়া ওই সময়ে পৃথিবী জুড়ে সমাজতান্ত্রিক ব্লক তাদের আওতা বাড়াতে থাকে। একের পর এক দেশ সমাজতান্ত্রিক হয়। সেখানে মিডিয়া যথারীতি ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েজ’ হয়ে যায়। গণতান্ত্রিক ব্লকও একই কাজ করে। তারাও তাদের আওতা বাড়ায়। তবে সেখানেও মিডিয়া পরিপূর্ণ স্বাধীনতা পায় না। আবার দুই দলই কম বেশি সিভিল শক্তির থেকে এই পরিধি বাড়ানোর কাজে সামরিক শক্তিকে গুরুত্ব দেয়। তখন দুই ধরনের সামরিক শাসন কবলিত দেশের আবির্ভাব ঘটে। এক ধরনের সামরিক শাসনের মাধ্যমে তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে সামরিক শাসনের মাধ্যমে তথাকথিত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশের সৃষ্টি হয়।  সামরিক শাসনের দ্বারা সমাজতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নামক এই ‘সোনার পাথর বাটি’ বাস্তবে আধুনিক রাষ্ট্রের বদলে উদ্ভট রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। ওই উদ্ভট রাষ্ট্রগুলোয় সাংবাদিকতার কোনও বিকাশ ঘটেনি। স্বাধীনতাও পায়নি সাংবাদিক। বরং সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করে অনেকে জীবন দেয়। এর ফলে আধুনিক রাষ্ট্রীয় বলয় গড়ে ওঠে না সঠিকভাবে। নতুন সৃষ্টি হওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে যে দেশগুলো ছিল,  যাদের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার কথা ছিল- তারা বস্তুত সামরিক শাসনের পৃষ্ঠপোষক হয়ে যায়। নানানভাবে তারা মেনে নিতে থাকে মত প্রকাশের বাধাকে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর এই দুই ভাগে ভাগ থাকা বিশ্বে মূলত প্রকৃত সাংবাদিকতার সুযোগ হয়নি। সাংবাদিকও নিরাপদ হয়নি। 

এরপরে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের বড় অংশের পতনের পরে একক শক্তির পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক শক্তি তাদের নতুন শত্রু আবিষ্কার করে ‘টেরোরিজম’। টেরোরিজমের বিরুদ্ধে’র যুদ্ধে এক পর্যায়ে তাদের স্লোগান হয়- ‘তুমি আমার পক্ষে, না হয় আমার বিপক্ষে’। মাঝখানে কোনও সত্য থাকে না। তাদের এই চাপে সাংবাদিকতারও একটা অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। আর যারা সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করে তাদের অনেককে নিহত হয়। বেশি সংখ্যক নির্যাতনের স্বীকার হয়। অর্থাৎ আগের ঔপনিবেশিক যুগেও পৃথিবীর দেশে দেশে সাংবাদিকদের অবস্থা যা ছিল এ সময়েও তার থেকে বেশি কোনও পরিবর্তন ঘটে না। টেরোরিজমের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ দুই দশকের বেশি সময় পার হতেই একদিকে ইউরোপে ডানপন্থী দলগুলো বাড়তে থাকে। যারা সামাজিকভাবে মিডিয়াকে চাপে ফেলে দেয়।  আবার গণতান্ত্রিক বিশ্বের মূল নেতৃত্ব দেওয়া দেশ আমেরিকার ক্ষমতায় আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতায় আসার আগেই আমেরিকান সোসাইটিতে বর্ণবাদের সংকীর্ণতা এনে মানবাধিকারের ওপর আঘাত হানেন। এই ঘৃণার নীতিকে সমর্থন করে তার অনেক সাংবাদিক ও বেশ কিছু মিডিয়া হাউজ। আর এ সময়ে ‘হয় তুমি আমার পক্ষে না হয় আমার বিপক্ষে’ এ স্লোগানেরও পরিবর্তন হয়। তখন আরো ভয়ংকর স্লোগান আসে, ‘আমার বিরুদ্ধে যে কথা বলছে সে আমার শত্রু’। আর এই শত্রুতার সূত্র ধরে সাংবাদিকও শত্রু হয়ে যায়। সাংবাদিকতাও আরও বদলে যায়। বস্তুত অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা অধীনস্থ হয়ে পড়ে। 

গণতান্ত্রিক বিশ্বে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে যখন এ পরিবর্তন ঘটছে সে সময়ে পৃথিবীর অর্থনীতিতেও বড় পরিবর্তন এনেছে চীন। সম্পূর্ণ অথরেটিয়ান দেশ হিসেবে সে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। মিডিয়ার মাধ্যমে না হলেও আর্থিক সুবিধা, বিশেষ করে ঋণ সুবিধা দিয়ে বিশ্বের বহুদেশের কাছে নিজেকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণ মডেল না মানলেও তাকে অস্বীকার করতে পারছে না এশিয়া ও আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ। তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চীন মডেল নানান ক্ষেত্রে গ্রহণ করছে। ‘পক্ষে না হয় বিপক্ষে’,  ‘আমার শত্রু’ এ সব স্লোগানের চেয়ে তাদের স্লোগান আরও আকর্ষণীয় ‘উন্নয়নের স্বার্থে সীমিত গণতন্ত্র, সীমিত মত প্রকাশ’। এর ফলে বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে, টেরোরিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কোনও কোনও স্বাধীন মতকে বা তথ্যকে বলা হতো এটা টেরোরিজমের পক্ষে। চীনের বর্তমান নীতি যে সব দেশ মানছে তারা এখন মত প্রকাশ বা তথ্য প্রকাশকে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে’ বলে চিহ্নিত করছে। এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের নেতা ও জনগণের একটা বড় অংশ এ নীতি সচেতন বা অবচেতনভাবে মেনেও নিয়েছে। এর ভেতরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মাতৃভূমি ব্রিটেনে ব্রেক্সিটসহ নানান কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আগের অবস্থানে নেই। অন্য দিকে ১৯৪৭ এর পর থেকে ভারতে ধীরে ধীরে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাড়ছিলো, সাংবাদিকতা ধীরে ধীরে স্বাধীন হচ্ছিলো, সেখানে ধর্মীয় মোড়কের খাড়া পড়েছে।

পৃথিবীর এই বাস্তবতায় স্বাধীন সাংবাদিকতা ও নিরাপদ সাংবাদিকতা এখন অনেক বেশি ঝুঁকিতে। তাই ২০২১ এ রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিকের জেল ও মৃত্যু দেখে যেমন চমকে উঠতে হচ্ছে, তেমনই এটাও সত্য এ ধারা কমবে না- যদি রাজনীতি, অর্থনীতি বর্তমানের স্রোতধারায় চলতে থাকে। আর এ স্রোতধারায় রাজনীতি অর্থনীতি চললে যেমন রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিক বর্তমানে জেলে যাচ্ছে তেমনি ভবিষ্যতে রেকর্ড সংখ্যক রাষ্ট্র গণতন্ত্রও হারাবে। গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে শেষ বিচারে কোনও টেকসই অর্থনীতি গড়ে ওঠে না। যে যাই বলুক না কেন- সবই তাসের ঘর। এক সময়ে ভেঙে পড়ে।

এই অর্থনীতি ভেঙে পড়া থেকে, গণতন্ত্রহীনতা থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে অনেক শক্তিকে একত্রে কাজ করা দরকার।  সে কাজে সামনের কাতারের অন্যতম শক্তি নিঃসন্দেহে মুক্ত সাংবাদিকতা।  মুক্ত সাংবাদিকতার পেছনে রাজনৈতিক শক্তিকে সৎ ও শক্ত অবস্থান নিতে হয় বাস্তবে রাষ্ট্রের স্বার্থে। কারণ, মিডিয়ার স্বাধীনতা, সাংবাদিকের স্বাধীনতা মূলত প্রতিটি রাষ্ট্রের সব ধরনের স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম পিলার। মিডিয়া ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা থাকলে কখনই ওই দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হয় না। তেমনি টেকসই অর্থনীতিও গড়ে তোলার অন্যতম শক্তিও মিডিয়ার স্বাধীনতা।  তাই পৃথিবীর দেশে দেশে শুধু সৎ রাজনীতিক নয়, সচেতন জনগণকেও শক্ত হয়ে দাঁড়ানো দরকার মিডিয়া ও সাংবাদিকের পক্ষে। তাদের সকলকে দুঃখিত হতে হবে- ২০২১ এর এই রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিকের জেল জীবন দেখে।  নিশ্চয়ই এ নির্যাতন ও মৃত্যু চোখ খুলে দেয়, সাংবাদিকতার ওপর জবরদস্তি কোন পর্যায়ে গিয়েছে। মনে করিয়ে দেয়, সাংবাদিকদের ওপর আঘাত মূলত দেশের সব ধরনের সার্বভৌমত্ব, মৌলিক অধিকার ও টেকসই অর্থনীতির ওপর আঘাত। বাস্তবে দুর্বল রাষ্ট্রই মূলত সাংবাদিকতার ওপর আঘাত করে।  

লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক          

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ