X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোট ও ভোটার

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:০২আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:০২

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা নির্বাচন কমিশন গঠিত অনুসন্ধান কমিটি আজ বা আগামীকাল রাষ্ট্রপতির কাছে দশজনের নাম পাঠিয়ে দেবে। সেখান থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ পাঁচজন নিয়োগ পাবেন। বিএনপি আলোচনায় যায়নি, অনুসন্ধান কমিটিতে নামও দেয়নি। এতে কমিশন গঠনে কোনও বিঘ্ন সৃষ্টিও হয়নি।

প্রশ্ন এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে? নির্দলীয়-নিরপেক্ষ ও তদারকি সরকারের যে দাবি বিএনপি তুলেছে, সেটিও হচ্ছে না বলেই ধারণা করা যায়। তাহলে কি বিএনপি ২০১৪-এর মতো নির্বাচনি ট্রেনে উঠবে না?

এসব প্রশ্নের বাইরে সবচয়ে বড় প্রশ্ন – কেমন হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন? এমন প্রশ্ন উঠছে এ কারণে যে, ২০১৪-এর নির্বাচনে বিএনপি আসেনি, প্রতিহত করতে চেয়েছে, ভোটাররা সহিংসতার শঙ্কায় ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পেয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দেড়শোর বেশি সাংসদ বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। আর ২০১৮-এর নির্বাচনে বিএনপি জোট করে অংশ নিয়েছে এবং সেই নির্বাচন নিয়ে এই জোটের দিক থেকে নানা অভিযোগ আছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে এই নির্বাচন নিয়ে এক প্রকার অস্বস্তিও আছে।

বিতর্কমুক্ত নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটি অলীক ভাবনা। আজ পর্যন্ত কোনও নির্বাচন কমিশনই বিতর্কমুক্ত ছিল না। যাদের পরিচালিত নির্বাচন প্রশংসিত হয়েছে, তাদের নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে পরে নানা তীর্যক মন্তব্য করেছে। ফলে এমন একটি নিম্নমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কমিশন খুব ভালো নির্বাচন করে ফেলবে এই ধারণাটাও অলীক। তবে, তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যে করা যায় তার দৃষ্টান্ত আছে অবশ্যই।

দেশে নিয়মিত নির্বাচন হয়, আর রাজনৈতিক দল ও নেতারা তাকে যথেষ্ট গুরুত্বও দিচ্ছেন, এটি অবশ্যই একটি ভালো দিক। সেই গুরুত্ব থেকেই আইন করে অনুসন্ধান কমিটি করা হলো, তারা নানা দল ও ব্যক্তির সঙ্গে বসলেন, গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হলো, আলোচনা হলো, পাতার পর পাতা লেখা হলো। কিন্তু নির্বাচনি মাঠের প্রধান যারা, অর্থাৎ মানুষ, তাদের কথা কমই উচ্চারিত হয়েছে। এবং এটা হয়ও না কখনও।

কোনও নেতাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়– ভোটদাতা তার সম্পর্কে কী ভাবছেন, তাকে গুরুত্ব দেন? দেখবেন সদুত্তর পাবেন না। কারণ সিস্টেমটা এমন হয়েছে যে, ভোটারদের নিয়ে ভাবতে হয় না। এক বড় সমস্যা হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রমুখিতা খুব বেশি। শীর্ষ নেতারা যা বলবেন, তার বাইরে আর কোনও কথা নেই। কে কেমন কাজ করছেন, কে কতটা সৎ, কতটা জনবান্ধব, তার গুরুত্ব সামান্য। প্রার্থীর কাছে একমাত্র প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, দলনেতা কি আমাকে পছন্দ করেন? এই প্রশ্ন এমনই সর্বগ্রাসী যে, নিজের এলাকায় কে কী কাজ করলেন, সেটা এলেবেলে হয়ে যায়। কেউ প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে পারেন না, আমি ভালো কাজ করেছি, তাই আবার টিকিট পাবো। তদবির, কানেকশন, মনোনয়ন বাণিজ্যের বাজারি সিস্টেমে মানুষ তার প্রতিনিধি সত্যিকার অর্থে খুঁজে পায় না।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শুধু কমিশন একাই করতে পারে না। কমিশনের প্রধান ও তার কমিশনারদের মেরুদণ্ড অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা ন্যায্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারলো, রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের প্রার্থীরা কতটা সংযত আচরণ করলো তার ওপরই বেশি নির্ভরশীল। তারাই ভোটারদের মনে আস্থা সৃষ্টি করেন।

সম্প্রতি শেষ হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে সহিংসতা মানুষ দেখলো, যেভাবে নির্বাচনটি খুন জখমের উৎসবে পরিণত হয়েছিল, তাতে আন্দাজ করা যায় মানুষ হয়তো এখন ভোটই চান না। 

নির্বাচন মানেই মানুষের ওপর কোনও সাংবিধানিক জবরদস্তি নয়। মানুষের নিজের স্বতঃস্ফূর্ততাই বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা। সংবিধানে দেশের প্রত্যেক মানুষকে ভোট প্রয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনেই দেখি নির্বাচনের ঘণ্টা ঠিকঠাক বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক-বিষোদগার। সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে হাজির থাকে নির্বাচনি সন্ত্রাস।

নির্বাচন কমিশন কেমন হবে, কারা দায়িত্ব পাবেন এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক তরজমা ও মিডিয়ার প্রচারে জনগণের তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যেই। আসলে ভোটের আগে, ভোটের সময় এবং ভোটের পরে সার্বিক চালচিত্র কখনই মানুষের জন্য কোনও সুখকর বার্তা নিয়ে আসেনি। সবকিছুর শেষে মানুষ কেবল নিরীহ ভোটার।

যে কোনও দেশে গণতন্ত্রের ভিত যত মজবুত হবে এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ যত দৃঢ় হবে, নির্বাচনি সন্ত্রাস ততই কমবে, নির্বাচন নিয়ে বিতর্কও কম হবে এটাই স্বাভাবিক। সংঘাতময় রাজনীতির কারণে নির্বাচনি সহিংসতা, নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক অনেকটাই যেন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। তাই জনগোষ্ঠীর কাছে নির্বাচন এখন যথেষ্ট চাপ এবং উদ্বেগের। আমাদের বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থায় বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় না বিধায় নির্বাচনি সন্ত্রাসে অভিযুক্ত দল বা প্রার্থী জিতে চলেছেন, এমন উদাহরণ প্রচুর। ভোটাররাও হিংসাশ্রয়ীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা উদার কিনা সেটিও প্রশ্ন। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোটারদের মনে বিশ্বাস সঞ্চারিত করা যে দেশে ভালো ভোট হয়।

লেখক: সাংবাদিক

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিএনসিসির কাওরান বাজার আঞ্চলিক অফিস যাচ্ছে মোহাম্মদপুরে
ডিএনসিসির কাওরান বাজার আঞ্চলিক অফিস যাচ্ছে মোহাম্মদপুরে
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
সরকারি চাকরির আশ্বাস ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
সরকারি চাকরির আশ্বাস ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ