X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে এখনই

ড. প্রণব কুমার পান্ডে
১৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪১আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪১

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক অনুশীলনের এক নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হবার পরে এটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল যে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নিরলস অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে। তবে দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে যে সরকারের মধ্যে উন্নয়নের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রের একটি অশুভ ছায়া লুকিয়ে রয়েছে, যারা দেশের উন্নয়নের গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। দেশ যখন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অনুঘটকরা নিজেদের ঘৃণ্য লাভের জন্য দেশের অগ্রগতিকে বাধা দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। এই গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী গোপন চক্রান্ত করে যাচ্ছে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে।

নির্বাচন-পরবর্তী সময়কালকে ঐক্য এবং একতার সময়কাল হিসাবে কল্পনা করা হয়েছিল, যেখানে বিভিন্ন মতের জনগণ ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করবে এবং একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অনুসরণে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তবে, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ না করে ভিন্নধর্মী কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের বাহ্যিক মিত্রদের দ্বারা চালিত হয়ে সরকারি কর্তৃত্বকে দুর্বল করতে এবং দেশের অগ্রগতির চাকাকে বাধা দেওয়ার জন্য দেশবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। 

এই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের উন্নয়নের কাঠামোর জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক চক্রান্তের অন্ধকার করিডোরে গড়ে ওঠা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রতিটি পরিকল্পনা জাতির অগ্রগতি যে সকল ভিত্তির ওপর নির্ভর করে সেই সকল ভিত্তিতে দুর্বল করে দিতে চাইছে। যারা বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। খুব বেশি দেরী হলে এই রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি পুনরায় সংগঠিত হতে পারে।

দেশের বৃহত্তর মঙ্গলের প্রতি আনুগত্যকে অস্বীকার করে এই ঘৃণ্য পরিকল্পনাকারী অপরাধীরা নির্লজ্জতার সাথে কাজ করে চলেছে। তাদের কাজ নিছক রাজনৈতিক বিরোধিতার ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর সম্মিলিত আক্রমণের শামিল। বহিরাগত অনুঘটকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তারা কেবল দেশের  নাগরিকদের বিশ্বাসের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করছে না, বরং জাতি-রাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসনকেও বিপন্ন করেছে। এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকতাকে সমর্থন করা যায় না এবং যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের অবশ্যই আইনের পূর্ণ শক্তি মাধ্যমে জবাবদিহি করতে হবে।

তাছাড়া এই প্রতারণামূলক ষড়যন্ত্রগুলোর বিরুদ্ধে কেবল আইনি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যথেষ্ট নয়, দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে বাহ্যিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার জন্য জাতির সহনশীলতাকে জোরদার করার জন্য সক্রিয় প্রচেষ্টা নিতে হবে।

বাংলাদেশকে অবশ্যই বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরক্ষা জোরদার করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকে ধ্বংস ও নাশকতা থেকে রক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি এবং দেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাহ্যিক চাপকে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলগুলিকে শক্তিশালী করা।

একই সময়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা অবশ্যই বাড়াতে হবে। গণতান্ত্রিক শাসনের কাঠামোর মধ্যে বৈধ অভিযোগগুলোর সমাধান এবং ভিন্নমতকে গঠনমূলকভাবে গ্রহণ করার লক্ষ্যে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশে এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র বিকশিত হতে না পারে এবং দেশের উন্নয়নের জন্য  ঐক্যমত্য গড়ে তোলা এবং জাতীয় সংহতির সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

যারা দেশের উন্নয়নকে দুর্বল করার কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত তাদের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করাকে সরকারের দুর্বলতা হিসাবে দেখার কোনও অবকাশ নেই। ফলে, যারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের অবশ্যই তাদের কর্মের পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। ন্যায়বিচার অবশ্যই দ্রুত এবং দ্ব্যর্থহীন হতে হবে, যা একটি স্পষ্ট বার্তা প্রদান করবে যে জাতির সার্বভৌমত্ব এবং কল্যাণ পবিত্র এবং আপসহীন।

বস্তুতপক্ষে, বাংলাদেশ অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ষড়যন্ত্র ও বিঘ্ন সৃষ্টিকারী শক্তিগুলি এই যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা জয়ী হবে না। দৃঢ় ও অটল সংকল্প এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করবে এবং আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এখন সময় এসেছে ষড়যন্ত্রের আগাছা উপড়ে ফেলার এবং আগামী প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বীজ বপন করার।

দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের উচিত অভিন্ন মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আসুন আমরা মতবিরোধ ও বিভাজনের এজেন্টদের প্রত্যাখ্যান করি এবং শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির ভবিষ্যতের দিকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাই। বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ। ফলে, আমরা সকলে মিলে আমাদের সম্মিলিত স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার যোগ্য ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব-এটিই কামনা হওয়া উচিত সকলের।

জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে আরও শক্তিশালী করবে। বর্তমান সময় একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য দেশের যাত্রার টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে বিবেচিত হবে অনাদিকাল। ফলে, আমাদের সকলের প্রত্যাশা ষড়যন্ত্রের ছায়া থেকে মুক্ত এবং সকলের জন্য আশা ও সুযোগের প্রতিশ্রুতিতে পূর্ণ একটি আগামীকাল গড়ে তুলবো আমরা সকলে মিলে। ঐক্যবদ্ধ জাতি অনেক শক্তিশালী। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি জাতিকে দুর্বল করবে। আসুন বাংলাদেশ এবং পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে আমরা এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করি।

লেখক: অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আইনগত সহায়তা পাওয়া করুণা নয়, অধিকার: আইনমন্ত্রী
আইনগত সহায়তা পাওয়া করুণা নয়, অধিকার: আইনমন্ত্রী
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সুস্থ আছে জোড়া মাথা আলাদা করা রাবেয়া-রোকেয়া
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সুস্থ আছে জোড়া মাথা আলাদা করা রাবেয়া-রোকেয়া
পঞ্চম বারের মতো কমলো সোনার দাম
পঞ্চম বারের মতো কমলো সোনার দাম
নেত্রীর জন্য জান দেবেন আর সিদ্ধান্ত মানবেন না, সেটা উচিত না: দীপু মনি
নেত্রীর জন্য জান দেবেন আর সিদ্ধান্ত মানবেন না, সেটা উচিত না: দীপু মনি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ