X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বেসিস নির্বাচন: তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনে নারীর অংশগ্রহণ

নুরুন্নবী চৌধুরী
০২ মে ২০২৪, ১৪:৫৯আপডেট : ০২ মে ২০২৪, ১৪:৫৯

দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। সংগঠনটির ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন হবে আগামী ৮ মে। এরই মধ্যে প্রার্থী পরিচিতি শেষে নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সংশ্লিষ্ট নানা মাধ্যমের উন্নয়ন থেকে শুরু করে বেসিস সরকারের সঙ্গে যেমন যৌথভাবে নানা বিষয়ে কাজ করে তেমনি সদস্যরা কীভাবে দেশে এবং দেশের বাইরে কাজ করতে পারে সেটি নিয়েও কাজ করে।

তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলো এখন বেশ সক্রিয়। হার্ডওয়্যার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিং বা বিপিও সংশ্লিষ্টদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্ক্য), ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বর্তমানে সক্রিয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সংগঠন। এসব সংগঠনগুলো সদস্যদের নানা ধরনের কাজে সহায়তার পাশাপাশি সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে নানা ধরনের যৌথ উদ্যোগেও কাজ করে থাকে।

এর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। সংগঠনটি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখন পর্যন্ত বিসিএসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা তিন হাজার ৫০০ জন। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, সবচেয়ে পুরনো হলেও এখন পর্যন্ত ২০টি ইসিতে কখনোই কোনও নারী সদস্য ছিলেন না। আরেকটি পুরনো সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। এ সংগঠনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০০১ সালে প্রথম ইসি কাজ শুরু করে সংগঠনটির যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা এক হাজারের বেশি। আইএসপিএবি ও একইভাবে হেঁটেছে বিসিএসের সঙ্গে। যাত্রা শুরুর পর থেকে কোনও ইসিতেই নেই নারীর অংশগ্রহণ। কিছুটা ব্যতিক্রম বিপিও খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্ক্য)। এ সংগঠনটির ২০১৪-১৫ ইসিতে প্রথমবারের মতো পরিচালক হন ফাদিহা খান। পরবর্তীতে ২০১৯-২১ সালে জারা মাহবুব এবং ২০২২-২৪ সালে ডা. তানজিবা রহমান পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের তুলনামূলক নবীন সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই নারীদের দারুণ অংশগ্রহণ রয়েছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আছেন নাজমা কাদের, শমী কায়সার এবং নাজনীন নাহার। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির ২০১৬-১৭ সালের ইসিতে পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন নাসিমা আক্তার নিশা, ২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১ সালে সভাপতি শমী কায়সার এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ২০২২-২৪ ইসিতে যুক্ত আছেন তিনজন নারী। যার মধ্যে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শমী কায়সার, সহ-সভাপতি সৈয়দা আম্ব্রিন রেজা এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাসিমা আক্তার নিশা। এখন পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একমাত্র সংগঠন ই-ক্যাব যার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক দুটি পদেই দুইজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন।

এবার আসা যাক বেসিসের কথায়। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোর মধ্যে নানা দিক থেকেই এগিয়ে আছে বেসিস। তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য রয়েছে বেসিসের। নানাভাবে বেসিসের সদস্যরা দেশেও দেশের বাইরে সমানতালে সফটওয়্যার সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন, যা দেশের জন্য দারুণ খবর। বেসিসের প্রথম ইসির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। সেই থেকে পরবর্তী ৬ ইসিতে ছিল না কোনও নারীর অংশগ্রহণ। ২০০৮-০৯ ইসিতে প্রথমবারের মতো কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফারহানা এ রহমান। পরবর্তীতে ২০১০-১২ সালে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩-১৪ ইসিতে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সামিরা জুবেরী হিমিকা। এরপর ধারাবাহিক ভাবে ২০১৬-১৮ ইসিতে প্রথমবারের মতো দুইজন নারী যুক্ত হন। এতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফারহানা এ রহমান এবং পরিচালক হিসেবে সোনিয়া বশির কবির। ২০১৮-২১ সালে একই ধারাবাহিকতায় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফারহানা এ রহমান এবং পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রয়াত লুনা শামসুদ্দোহা দায়িত্ব পালন করেন। সবিশেষ ২০২২-২৩ ইসিতে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সামিরা জুবেরী হিমিকা। এর বাইরে অবশ্য বেসিস ইসিতে চাকরিরত আছেন ৯ জন নারী যা আর কোনও তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের ইসিতে নেই। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর বাইরে তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) বর্তমান ইসির সভাপতি নাজনীন নাহার প্রথমবারের মতো একজন নারী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী অংশগ্রহণ বাড়াতে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উইম্যান ইন টেকনোলজি (বিডাব্লিউআইটি)। তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট নানা খাতের নারীদের নিয়ে নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে।

বেসিসের দুই হাজার ৪০১ জন সদস্যের মধ্যে এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১ হাজার ৪৬৪ জন। যার মধ্যে সাধারণ ৯৩২, সহযোগী ৩৮৯, অ্যাফিলিয়েট ১৩৮ ও আন্তর্জাতিক সদস্য ভোটার ৯ জন। ১১ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন করতে এবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে জেনারেল ক্যাটাগরি থেকে ৮জন এবং অ্যাসোসিয়েট, অ্যাফিলিয়েট ও আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরি থেকে ১ জন করে নির্বাচিত হবেন। এই ৩৩ জন প্রার্থী মূলত তিনটি প্যানেলে ভাগ হয়ে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই তিনটি প্যানেলের নাম ‘টিম স্মার্ট’ ‘ওয়ান টিম’ ও ‘টিম সাকসেস’। এর মধ্যে প্রার্থী হিসেবে টিম স্মার্টে আছেন সৈয়দা নওশাদ জাহান, টিম সাকসেসে আছেন ফারজানা কবির এবং সৈয়দা নাফিজা রেজা। তবে টিম ওয়ান প্যানেলে নেই কোন নারী প্রার্থী।

নানাভাবেই তথ্যপ্রযুক্তি খাতগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম। এই কমের মধ্যেও বিভিন্ন খাতের মতোই তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে নারীদের সফল অংশগ্রহণ যেমন আছে তেমনি সফলতাও আছে। তবে সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রে ইসিতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও অনেক কম। যদিও প্রতিটি সংগঠনেই সদস্য হিসেবে আছেন অনেক নারী। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি খাতের অন্যতম সংগঠন হিসেবে বেসিসের এবারের নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বেশ হতাশাব্যঞ্জকই বটে। স্বাভাবিকভাবেই এসব বাণিজ্য সংগঠনের নারী নেতৃত্ব যত বাড়বে ততই এগিয়ে যাবে সংশ্লিষ্ট খাতগুলো। বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে সংগঠনগুলো ভাবতে পারে। শুধু ভাবনার মধ্যেই থেমে থাকলেও অবশ্য হবে না বলেই বিশ্বাস করি। কীভাবে আরও নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় সেটিও ভাবা যেতে পারে।

অন্য অনেক খাত থেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাত কিছুটা ভিন্ন। এখাত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে তাই যে কেউ চাইলেই যুক্ত হতে পারেন না। তবে যারা যুক্ত আছেন তাদের আরও বেশি ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এ খাত অনেক এগিয়ে যেতে পারে। বেশ কিছু কাজে ইতিমধ্যে এর প্রমাণও মিলেছে। একবার এক আড্ডায় বিষয়টি খোলাশা করেছিলেন দোহাটেকের চেয়ারম্যান প্রয়াত লুনা শামসুদ্দোহা, যিনি বাংলাদেশ উইম্যান ইন টেকনোলজির (বিডাব্লিউআইটি) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশের বাইরে ভিন্ন ভিন্ন দেশে সরকারি পর্যায়ে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া যা ই-জিপি নামে পরিচিতি সেটি সফল ভাবে কাজ করেছে।

ধীর পায়ে হলেও দীপ্তভাবে এগিয়ে যাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে সেটাই বিশ্বাস করি। সমানতালে পথচলার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহণ নতুন পথ উন্মুক্ত করবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক ও গবেষক

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেনাপোলে পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি
বেনাপোলে পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপযুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ
জাবালিয়ায় হামাসের শক্ত ঘাঁটিতে প্রবেশ ইসরায়েলের, অগ্রগতি নেই রাফায়
জাবালিয়ায় হামাসের শক্ত ঘাঁটিতে প্রবেশ ইসরায়েলের, অগ্রগতি নেই রাফায়
সর্বশেষসর্বাধিক