X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাই বড় না বউ বড়?

প্রভাষ আমিন
০২ মে ২০১৬, ১৪:১৯আপডেট : ০২ মে ২০১৬, ১৪:৪৬

প্রভাষ আমিন ক’দিন আগে বাংলা সিনেমার একটা পোস্টার দেখেছিলাম- 'মা বড় না বউ বড়?' এমন প্রশ্ন যার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এসেছে, তার আসলে সিনেমা না বানিয়ে মাথায় আলু চাষ করা দরকার ছিল। হঠাৎ সেই সিনেমার নাম মনে এলো, কারণ পরিচালক মাথায় আলু চাষ বন্ধ রেখে আরেকটি সিনেমা বানাতে পারেন। আগের সিনেমার সিক্যুয়েল হবে এটি, নাম হবে- 'ভাই বড় না বউ বড়?' সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিতব্য এই সিনেমার মূল চরিত্রে থাকবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ। আর তার দুই পাশে থাকবেন পার্টির সদ্য নিযুক্ত সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ, অন্যপাশে থাকবেন পার্টির সম্প্রতি নিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের আপন ভাই জিএম কাদের। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি- এই ছবির সুপারহিট হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না। এরমধ্যে প্রথম দুজন মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করছেন, তৃতীয় জন সাবেক মন্ত্রী।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় পার্টিকে ‘যাত্রা পার্টি’ বলে ডাকি। শুরুতে মজা করে ডাকলেও পরে দলটি তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে আমার ডাকের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নানা নাটকীয়তায় দলটি আরও কিছু বিশেষণ প্রাপ্ত হয়েছে। কেউ বলে ‘সার্কাস পার্টি’, কেউ বলে ‘পেন্ডুলাম পার্টি’। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নিজেকে কারাগারের বাইরে রাখতে এরশাদ কখনও আওয়ামী লীগ, কখনও বিএনপির সঙ্গে জোট বেধে রাজনীতির ভারসাম্য বজায় রাখছেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টি যা করেছে, শুধু এই কারণেই দলটিকে ‘যাত্রা পার্টি’ বলা যায়। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এরশাদকে অসুস্থতার অজুহাতে সিএমএইচে আটকে রাখা হয়। কিন্তু নির্বাচনের পর এরশাদ সিএমএইচ থেকে সরাসরি বঙ্গভবন গিয়ে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে ফেরেন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব নিয়ে। এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের কোনও দায়িত্বপালন করেন না। আবার ছাড়েনও না। পদমর্যাদাটা তিনি উপভোগ করছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিশ্বের ইতিহাসে এক অভিনব বিরোধী দলের আবির্ভাব ঘটে। একই সঙ্গে সরকারি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী। আবার জাতীয় পার্টির দুজন মন্ত্রিসভায়ও আছেন। সংসদে বিরোধী দল অবশ্য পোষা, মাঝে মধ্যে ফোঁসফাঁস করলেও তাতে বিষ থাকে না। তবে সংসদের বাইরে জাতীয় পার্টির ‘অসাংসদ’ নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বোঝাই যায় এই পোষ মানা আর সোচ্চার থাকার ভিত্তি হলো পাওয়া না পাওয়ার হিসাব- নিকাশ।

আরও পড়তে পারেন: ‘মেঘ কেটে গেছে, সামনে জাতীয় পার্টির আলোকিত দিন’

এরশাদ অবশ্য খুব কৌশলের সঙ্গে এই ভারসাম্যের রাজনীতি বজায় রাখছেন। একসময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে, কাজী জাফরকে দিয়ে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। জাতীয় পার্টির মধ্যে এই দুই ধারা বরাবরই বজায় আছে। এখন যেমন এরশাদের নেতৃত্বে ‘অসাংসদরা’ সরকারের বিরুদ্ধে, রওশনের নেতৃত্বে সাংসদ গ্রুপ সরকারের পক্ষে। এরশাদ মাঝে মধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে গরম-গরম বক্তৃতা দেন, একা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখেন। ক’দিন আগে তিনি তার ভাই, এ সরকারের আগের মেয়াদের মন্ত্রী জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান মনোনীত করেন এবং তার অবর্তমানে পার্টির উত্তরাধিকার হিসেবেও ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি সরকারপন্থী জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সরিয়ে সরকার বিরোধী হাওলাদারকে পার্টির মহাসচিব বানান। এতেই বেঁকে বসেন রওশনন্থীরা। পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি চলতেই থাকে। এরমধ্যে পার্টির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা হলে সমস্যা আবার চাঙা হয়। এরশাদ আর রওশন পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে জাতীয় পার্টির আবার ভাঙনের শঙ্কায় পড়ে। এরমধ্যে সংসদে একদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। আমাদের দেশে বিরল হলেও সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা অস্বাভাবিক নয়। রওশন এরশাদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি এলাকার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন’। হয়তো করেছেনও, তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না, তিনি আসলে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথা জানাতে গিয়েছিলেন। রওশন এরশাদ হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন- ‘আপা, আমার উনি তো কথা শুনছেন না। আপনি একটু বকা দিয়েন’। হাতে হাতে তার সুফল পেয়েছেন রওশন এরশাদ। সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতার বৈঠকের দুদিনের মধ্যে এরশাদ রওশনকে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বানিয়ে দেন। ব্যস, এখন সব ঠাণ্ঠা। সব ফোঁসফাঁস চুপচাপ।

আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশি ব্লগারদের নরডিক দেশগুলোতে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান

ঝামেলা মেটানোর কাজটা অবশ্য শেখ হাসিনা ভালোই করেন। নিজের দলের অভ্যন্তরীণ ঝামেলা তো মেটানই, তাকে নজর রাখতে হয় জাতীয় পার্টি, জাসদসহ মহাজোটের অন্য দলগুলোর দিকেও। বিএনপি ছাড়া বাকি সবকিছুর ভালোমন্দের দেখভালের দায়িত্ব এখন শেখ হাসিনার। অন্য সব কাজের মতো এ কাজটাও নিশ্চয়ই তিনি দক্ষতার সঙ্গেই করেন। সবাই তার কাছে বিচার পান বলেই হয়তো বিচার দেন। তবে এরশাদকে বশে রাখার কৌশলটা সরকার খুব ভালো জানে। এরশাদ বেশি সরকার বিরোধী হয়ে গেলেই মঞ্জুর হত্যা মামলা নড়াচড়া শুরু হয়। ব্যস এরশাদ আবার একান্ত বাধ্যগত প্রভুভক্ত।

অন্য সব ছবির মতো- ‘ভাই বড় না বউ বড়?’ সিনেমারও শুভ সমাপ্তি ঘটবে। এরশাদ বুঝিয়ে দিলেন মনে যাই থাকুক, কার্যত তার কাছে বউ বড়। তাই রওশন এরশাদই পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং উত্তরাধিকার। ছোট ভাই কো-চেয়ারম্যান হিসেবে বড় ভাই এবং ভাবির পাশেই থাকবেন। ছবি শেষ হতে পারে জিএম কাদেরের কণ্ঠে একটি গান দিয়ে- ‌‘ভাইয়া তোমার বর, আমি যে দেবর। ভেবে দেখো ভাবি, কার বেশি দাবি, কারে তুমি করবে আপন, করবে কারে পর?’

লেখক:  অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পরীমণির মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছালো
পরীমণির মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পেছালো
রুমায় জঙ্গলে পড়ে ছিল গুলিবিদ্ধ দুই মরদেহ
রুমায় জঙ্গলে পড়ে ছিল গুলিবিদ্ধ দুই মরদেহ
বনানীতে বাসচাপায় আহত মোটরসাইকেলের চালক মারা গেছেন
বনানীতে বাসচাপায় আহত মোটরসাইকেলের চালক মারা গেছেন
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত: কাদের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির লজ্জা পাওয়া উচিত: কাদের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ