X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়েছে রাষ্ট্র

গোলাম মোর্তোজা
০১ জুন ২০১৬, ১২:১২আপডেট : ০১ জুন ২০১৬, ১৩:৩৫

গোলাম মোর্তোজা শিশু-কিশোরদের অসহায়ত্বের চিত্র টেলিভিশনের পর্দা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনলাইনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এমন প্রায় সব মানুষ দেখেছেন। যারা অনলাইনের সঙ্গে নেই, তাদেরও অনেকে দেখেছেন। গ্রামের চায়ের স্টলে একজনের মোবাইলে দলবেঁধে মানুষ দেখছেন, আর হাসছেন। হাসছেন শিশু-কিশোরদের অসহায়ত্ব দেখে। মানুষের বিনোদনের খোড়াক হয়েছেন এই শিশু-কিশোররা। প্রশ্ন উঠেছে সাংবাদিকতার এথিকস নিয়ে। এভাবে শিশু-কিশোরদের সাক্ষাৎকার গণমাধ্যম প্রচার করতে পারে কি না? পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে। যুক্তি দু’পক্ষেই আছে।
এই যুক্তিতর্ক, কেন আজকের শিশু-কিশোরদের এই অবস্থা হলো, দায় কার? শিশু-কিশোরদের, অভিভাবকের, শিক্ষকের, না শিক্ষা ব্যবস্থা যারা পরিচালনা করেন তাদের? যারা এখন সাংবাদিকতায় এথিকসের কথা বলছেন, এই অবস্থা তৈরি হওয়ার সময়ে এথিকস কতটা মেনে চলেছেন? অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সরলভাবে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছি।
১. ‘আই অ্যাম জিপিএ ফাইভ’, ‘নেপালের রাজধানী নেপচুন’ ‘এভারেস্ট ইংল্যান্ডে’- এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ বা ভালো রেজাল্ট করা শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছে। যা দেখে দু’রকমের প্রতিক্রিয়া হয়েছে-
ক. হায় হায় একি সর্বনাশ, সব গেল...।
খ. এভাবে শিশু-কিশোরদের দেখানো ঠিক হয়নি। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন, এটাই সার্বজনীন চিত্র নয়।
‘সব গেল, সব গেল’- বলে হায় হায় যারা করছেন, তারা কি এই প্রথম বুঝলেন যে, শিশু-কিশোরদের পরিণতি এমন হতে যাচ্ছে? আগে বুঝতে পারেননি? যখন প্রাইমারি স্কুলের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো, সেই প্রশ্ন অভিভাবকরা টাকা দিয়ে কিনে, শিশুকে সারারাত মুখস্থ করিয়ে সকালে পরীক্ষা দিতে নিয়ে গেলেন, তখন মনে হয়নি এই শিশুর পরিণতি কী হবে?
২. শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে ‘পাস করাতে হবে’ যে মৌখিক নির্দেশনা পাঠালো, তা কি আমরা জানতাম না? আপনি জানতেন না? ৭৫-এ পরীক্ষা, ২৫-এ পাস। শিক্ষকদের বলে দেওয়া হলো- ‘ফেল না করানোর চেষ্টা করতে হবে। যে শিক্ষার্থী ১২ পাবে তাকে ১৫ দিয়ে দেবেন। আর ১৫ দেওয়া গেলে ২০ দিয়ে দেবেন। ২০ পর্যন্ত যদি নেওয়া যায় তাকে আর ফেল করাবেন না। অর্থাৎ ১২ পেলে পাস নম্বর ২৫ দিয়ে পাস করিয়ে দেবেন’। আমাদের সবার চোখের সামনেই তো এই ঘটনা ঘটেছে, এখনও ঘটছে। আমরা কী করেছি? ‘এথিকস’, ‘দায়িত্ব’- যা পালন করার কথা ছিল, তা করেছি? না,‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ জাতীয় কর্মকাণ্ড করেছি?

আরও পড়তে পারেন: 'অজ্ঞ শিক্ষার্থী' বনাম 'মূর্খ সাংবাদিক'

৩. জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি’র প্রশ্নপত্র নিয়মিতভাবে ফাঁস হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিৎকার করে, হুমকি দিয়ে অস্বীকার করেছে। তথাকথিত তদন্ত কমিটি করে ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে। একবার দুইবার নয়, বারবার আবারও বলছি বারবার। তখন কি নাগরিক হিসেবে, পেশাজীবী হিসেবে, শিক্ষাবিদ হিসেবে, আমরা দায়িত্ব পালন করেছি? কয়জন করেছি? অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ এমন অল্প কয়েকজন ছাড়া, কেউ কথা বলেছেন? শিশু-কিশোরদের নিয়ে করা এই প্রতিবেদনে কথা বলেছেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ আইকন চরিত্র অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। পিএসসি থেকে এইচএসসি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস, পাস করিয়ে দেওয়ার নির্দেশ, এসব বিষয় নিয়ে তিনিও তো কোনও কথা বলেননি। কেন বলেননি? দায় কি তার বা তাদের নেই? দায় নিতে হবে না?

৪. এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। প্রায় প্রতিটি পরীক্ষার আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগে অনলাইনে প্রশ্নপত্র চলে আসছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে স্মার্টফোন নিয়ে বসে অভিভাবক-শিক্ষকদের সহায়তায়, প্রশ্নের উত্তর জেনে পরীক্ষা দিতে ঢুকছে। সবাই জানেন, অথচ গণমাধ্যমে সংবাদটি গুরুত্বই পেল না। কারণ কী? সাংবাদিকতার এথিকস কী বলে? নীরব থাকা সমর্থন করে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষামন্ত্রীর কোনও উদ্যোগ নেই, ব্যবস্থা নেই, বক্তব্য নেই। সে বিষয়ে গণমাধ্যমেরও কোনও অবস্থান নেই। কারণ কী? শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদরা চুপ কেন?
৫. ফিরে আসি ‘মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের’ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের চেহারা দেখিয়ে যেভাবে সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে, তা কোনওভাবেই উচিত হয়নি। এটা সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থী। রিপোর্টার যে ধরনে, যে ভাষায় প্রশ্ন করেছেন, তা নিয়েও আমার আপত্তি আছে।

লজ্জা-ঘৃণায় এই শিক্ষার্থী শিশু-কিশোরদের কেউ ভয়ঙ্কর কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে, প্রতিবেদন তৈরির সময় তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। এর প্রেক্ষিতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, দায় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ বা রিপোর্টার এড়াতে পারবেন না। চেহারা না দেখিয়েও প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার প্রচার করা যেত। এথিক্যালি সেটাই হতো সঠিক। তা না করাটাই এই রিপোর্টের বড় দুর্বলতা। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ আবার পুরো বিষয়টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিনয়ের সঙ্গে একটি কথা বলি, সাংবাদিকতার এথিকস নিয়ে সুস্থ তর্ক করেন, সামগ্রিকভাবে করেন। এথিকস আলোচনা করতে গিয়ে, শিক্ষা ব্যবস্থার যে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে, শিক্ষামন্ত্রীর মতো তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আজ যারা বলছেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গিনিপিগ বানানো হয়েছে। হ্যাঁ, অভিযোগটি মিথ্যে নয়। এটাও অসত্য নয় যে, পুরো বাংলাদেশের ৯৫% শিক্ষার্থীদের (৫% ইংরেজি মাধ্যম বাদে) শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা রাষ্ট্র গিনিপিগ আরও আগে বানিয়েছে। আমরা তখন প্রায় কোনও কথা বলিনি। শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়েছে, তোমাদের পড়াশোনা করার দরকার নেই। শিক্ষকরা উত্তর বলে দেবে। তাও যদি লিখতে না পারো, পাস করিয়ে দেবে।
এই রিপোর্টে রাষ্ট্রের বানানো গিনিপিগদের অল্প কয়েকজনের চিত্র কিছুটা হেয় করে দেখানো হয়েছে মাত্র। হেয় না করে, ছবি ব্লার করে দিলে, রিপোর্ট নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকত না। সবকিছুর পরও এই রিপোর্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় মনে করছি। একটা জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা কী করে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, তা খুব সহজ-সরলভাবে মানুষকে বোঝানো গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৯৫% পাস করতে না পারায় যা বোঝানো যায়নি, ড. জাফর ইকবাল শহীদ মিনারে বসে থেকে যা বোঝাতে পারেননি, এথিক্যালি একটি ভুল করেও প্রতিবেদনটি দিয়ে তা বোঝানো গেছে।

৬. আর সাংবাদিকতার এথিকস? আমরা তা হারাচ্ছি বেশ কিছু বছর ধরে। অনেকটা শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মতোই। দলীয় আনুগত্য এবং সুবিধা পাওয়ার জন্যে আমরা যা করছি, তা কোনও এথিকসে পড়ে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক-সাংবাদিক হয়ে আমরা যা করি, তা দেখেও দেশের মানুষ বিনোদনের খোড়াক খুঁজে পান। অনেকটা এই শিশু-কিশোরদের ভুল বা উত্তর দিতে না পারার মতোই, মানুষ আমাদের আচরণে বিনোদিত হন।

৭. কয়েকজন শিক্ষার্থী সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি বা ভুল উত্তর দিয়েছে, এভাবে দেখলে ভুল হবে। দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার ধস বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে। মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের দোষ-ত্রুটি বের করা যাবে, বলা যাবে আমেরিকা বা ইউরোপের লোকজনও তাদের মন্ত্রীদের নাম জানেন না, তাদের কয়টি রাজ্য হিসাব রাখেন না। এমন অসংখ্য যুক্তি দেওয়া যাবে। তা দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা যাবে না।

আমাদের উপলব্ধিতে আসা দরকার যে, একটি জাতির ৯৫% মানুষের সন্তানরা যে শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করেন, তা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী একটি কথা বলতেন, ‘কার্পেটের নিচে ময়লা লুকিয়ে রেখে আমরা পরিচ্ছন্নতার ভান করি।’

আমাদের এই লুকিয়ে বা চাপা দেওয়ার মানসিকতা ত্যাগ করা জরুরি। স্বীকার করতে হবে যে, সাধারণের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। যারা এই ধ্বংসের জন্যে দায়ী, তাদের বিষয়ে জোরালো চাপ তৈরি করা, কথা বলাটা গণমাধ্যমসহ সমাজের সব মানুষের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যদি পালন না করি, দায়সারাভাবে যদি পালন করি এবং সুবিধাজনক সময়ে যদি এথিকসের কথা বলি, তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

৮. মনে রাখতে হবে এই লজ্জা শিশু-কিশোরদের নয়। লজ্জা সবচেয়ে বেশি যার পাওয়ার কথা ছিল, তিনি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু কোনও লজ্জাই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। 'অস্বীকার ' করে লজ্জা পাওয়া থেকেও বিরত থাকাতে পারেন। শিক্ষামন্ত্রী লজ্জা না পেলেও, এই লজ্জা আমার-আপনার, নীতি নির্ধারক সবার। অবশ্য লজ্জা আমরা কেউই পাচ্ছি কিনা সন্দেহ আছে। লজ্জা থাকলে কী সন্তানের হাতে প্রশ্ন কিনে দিতাম!

শিশু-কিশোররা কেউ না পড়ে পাস করতে চায়নি। তারা বলেনি যে, আমার উত্তর বলে দাও, ১২ পেলে ২৫ দিয়ে পাস করিয়ে দিতে হবে। জিপিএ ফাইভ তারা কেউ চেয়ে নেয়নি। আপনার রাজনৈতিক সাফল্য দেখানোর জন্যে শিশু-কিশোরদের গিনিপিগ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যা শুধু অন্যায় নয়, মহা অন্যায়। একজন নূরুল ইসলাম নাহিদের হাত দিয়ে যা সংঘটিত হচ্ছে।

৯. শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বহু আগে থেকে ধ্বংস করা শুরু হয়েছে। আট দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এখন একজন শিক্ষক চাকরি পান। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কখনও খুব ভালো ছিল না। তবে এর চেয়ে ভালো ছিল সব সময়। এখন চূড়ান্ত খারাপ অবস্থা চলছে। ধারা অব্যাহত থাকলে ভয়ঙ্কর ফল পাওয়া যাবে ১৫ থেকে ২০ বছর পর থেকে। যখন এই শিশু-কিশোররা কর্মক্ষেত্রে ঢোকার বয়সে আসবে। মানব সম্পদের এমন অধপতন ঘটিয়ে কোনও দেশ উন্নতি করেছে, পৃথিবীতে এমন নজীর একটিও নেই।

১০. দেশের জনগণের লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, চুরি, অপচয়- হয়তো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শিক্ষা ব্যবস্থার যে ক্ষতি ইতোমধ্যে সাধিত হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ১৫ বছর লাগবে, আজ থেকেও যদি শুরু করা হয়। যদিও তেমন কোনও লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিকতার এথিকস খুব সামান্য বিষয়, বড় বিষয় ধ্বংস করে দেওয়া দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। সাংবাদিকের ত্রুটি যা হয়েছে, তা সারানো খুব কঠিন কিছু নয়। ধ্বংস করে দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যুগ যুগের ব্যাপার, তাও কতটা সম্ভব -সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। 

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সিরি আ’য় এবারই প্রথম এক ম্যাচে সব নারী রেফারি
সিরি আ’য় এবারই প্রথম এক ম্যাচে সব নারী রেফারি
ফেরিঘাটে টেম্পুর ধাক্কায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত
ফেরিঘাটে টেম্পুর ধাক্কায় কলেজশিক্ষার্থী নিহত
পাকিস্তানে উপ-প্রধানমন্ত্রী হলেন ইসহাক দার, পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ পিটিআইয়ের
পাকিস্তানে উপ-প্রধানমন্ত্রী হলেন ইসহাক দার, পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ পিটিআইয়ের
দুই দফা অভিযানেও খোঁজ মেলেনি শিশুটির
দুই দফা অভিযানেও খোঁজ মেলেনি শিশুটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ