X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ দেশব্যাপী অস্থিরতার সমালোচনা!

মাসুদা ভাট্টি
০৭ এপ্রিল ২০১৬, ১২:০৭আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৬, ১৩:০৮

মাসুদা ভাট্টি হঠাৎ করেই দেশটাকে অস্থির করে তোলা হয়েছে। এই অস্থিরতা যে খুব পরিকল্পিত এবং সাজানো-গোছানো তা এর ধরনই বলে দিচ্ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; তাতে বলা হয়েছে যে- দেশে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫-১৬ সালে নারী নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, শতকরা ৬৮ ভাগ নারী নির্যাতনের ঘটনার কোনও রিপোর্ট হয় না বা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় না।
বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ীও দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। ২০১৫ সালে ২১ হাজার ২২০টি নারী নির্যাতনের ঘটনা পুলিশের নথিতে যুক্ত হয়েছে। ২০১৬ সালের তথ্য এখনও সেখানে পাওয়া যায়নি। নারী নির্যাতনের এই সামগ্রিক চিত্রকে ধরে গত কয়েক দিনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টকে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাই, হঠাৎ করেই যেন ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে, অন্তত সেগুলো সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট আকারে আসছে। এর মধ্যে কুমিল্লার ময়নামতির কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে আলোচিত। কিন্তু অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডকে নিয়ে বিভিন্ন মহলের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলছেন। এবং দেখাও যাচ্ছে যে, তনু হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন করার চেয়ে এই হত্যাকাণ্ডকে একটি রাজনৈতিক ইস্যু বানানোতেই যেন অনেকের আগ্রহ বেশি। অথচ, দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনার এই ভয়াবহ চিত্রই প্রমাণ করে যে, অবিলম্বে এটি বন্ধ করতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি। বিষয়টি সামগ্রিক এবং একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ একান্তই প্রয়োজন। বিশেষ করে, গ্রামে বসবাস করেন কিংবা শহরে থাকেন এমন দু'একজন নারীর সঙ্গে কথা বলে একথা জানা গেছে যে, নারী যাতে ঘরের বাইরে না যেতে পারে সে জন্য দেশের মোল্লাবাহিনীর মধ্যে এক ধরনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই সব নারীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বেশ কয়েকটি মসজিদে গত কয়েক শুক্রবার ধরে নারীকে ঘরে আবদ্ধ রাখার ফতোয়া দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী জুম্মা আদায়কারী পুরুষদের অনেকেই একথা এসে তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের বলেছেন। এখন যদি এই প্রশ্ন তোলা হয় যে, দেশের নারী সমাজকে সম্পূর্ণভাবে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যদি একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত আয়োজন হয়েই থাকে নারী নির্যাতনের যার মধ্যে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের অন্য সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে তাহলে সেটা কি খুব অবান্তর হবে?

একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করেছি, যদিও এটি সম্পূর্ণ আমার পর্যবেক্ষণ। অন্য অনেকের সঙ্গেই হয়তো এর মিল নাও থাকতে পারে। বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন তারা হঠাৎ করেই একেকটি বিষয় নিয়ে চরম বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। এর আগে যখন ফেসবুক বা এরকম কোনও মাধ্যম ছিল না তখন তারা নিজেদের এই চরম আবেগকে কোথায় কীভাবে দমন করে রাখতেন সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে কিন্তু কী ক্রিকেট, কী রাজনীতি কিংবা যে কোনও তুচ্ছ ঘটনাতেই ফেসবুক জুড়ে শুরু হয় বিপ্লব, যা হয়তো ফেসবুক না থাকলে আমরা জানতেও পারতাম না। এদিক দিয়ে অন্য অনেক দেশের মানুষের সঙ্গে আমাদের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। যেমন- ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের বাবার বিশাল অঙ্কের টাকার কর ফাঁকির ঘটনা ফাঁস করেছে পানামা পেপারস, ভারতেও অমিতাভ-ঐশ্বরিয়া সহ প্রায় ৫০০ জনের কর ফাঁকির ঘটনা ফাঁস হয়েছে। ইংল্যান্ডের বন্ধুদের অনেকেই দেখতে পাচ্ছি বিষয়টি নিয়ে এতো কম মতামত দিচ্ছে যে, মনে হতে পারে তারা এ বিষয় নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। হতে পারে তারা জীবন, জীবিকা ও অন্যান্য অনুসঙ্গ নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে, রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর পিতার কর ফাঁকি দেওয়া নিয়ে তারা মোটেও চিন্তিত নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘটে যাওয়া অর্থ হ্যাকিং-এর ঘটনায় আমরা দেখেছি যে, কিছু কিছু ফেসবুক বিপ্লবী জোর করে হলেও নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে দোষী বানিয়েই ছাড়তে চাইছেন। অথচ যে ব্যক্তি প্রতিদিন জীবনের তাগিদে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি খেটে মরছেন তার হয়তো বিষয়টি ঠিকই জানা আছে কিন্তু তিনি বিষয়টিকে রাষ্ট্রের হাতেই ছেড়ে দিতে চান। তাই বলে প্রতিবাদ হবে না? বা প্রতিবাদ করা যাবে না? অবশ্যই প্রতিবাদ হবে এবং প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের মাধ্যম যদি সহিংস হয় কিংবা সৃষ্টি করে ভয়ঙ্কর জনদুর্ভোগের তাহলে সেই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ কি প্রকৃত জনকল্যাণ নিয়ে আসতে পারে কিনা সেটি যেমন প্রশ্ন তেমনই এ প্রশ্নও এখন তোলা প্রয়োজন যে, ফেসবুকে বিপ্লবের নামে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জনগণকে উস্কে দেওয়াটাও কি গ্রহণযোগ্য কিনা? আমরা দেখেছি যে, বাংলাদেশে মূলধারার গণমাধ্যম থেকেই ব্লগারদের বিরুদ্ধে ধর্মকে উস্কে দিয়ে একের পর এক ব্লগারকে হত্যার পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত ব্লগার হত্যাকাণ্ডের কোনও সুরাহা করতে পারেনি। নিশ্চয়ই অজুহাত হিসেবে রাষ্ট্র একথাই বলবে যে, তাদের হাতে এরই মধ্যে আরও অনেক কাজকর্ম জমা হয়েছে তদন্তের বা সুরাহার। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্ব কমে না, বরং বাড়ে। তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনগণের মনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তাকে কাজে লাগিয়ে দেশে ধর্ষণ-বিরোধী একটি প্রচারণায় কাজে লাগানো সম্ভব হতো তনু হত্যাকারীদের একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে।

কিংবা ধরুন, সারা দেশে শিশু-হত্যার ঘটনাগুলোর কথা। একের পর শিশু-হত্যার নৃশংস ঘটনা ঘটেছে বিগত সময়ে। অথচ কোনওটিরই কি সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হয়েছে? জনগণ যদি এতে রাষ্ট্রের ওপর হতাশ হয় তাহলে জনগণকে কি দোষ দেওয়া যাবে? কিন্তু সেই একই প্রশ্ন, আবারও তুলতে হয়, সরকার বা রাষ্ট্র কিন্তু আপনি বা আমি বা আমরা দ্বারাই পরিচালিত হয়। আমরা কেউই নিজের দায় ও দায়িত্বকে অবহেলা করতে পারি না। পারি কি? রাষ্ট্র এইসব সহিংস ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয় একথা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই।

হ্যাঁ, রাজনৈতিক সুবিধাভোগী শ্রেণি এই সুবিধাটুকু নিতে চায় নিজেদের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে। কিন্তু জনস্বার্থ বিবেচনায় রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের ছাড় দিতে বর্তমান সরকার পিছপা হয় এমন প্রমাণ বহু থাকলেও সরকার-প্রধান বা শেখ হাসিনা এসব ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান নেন বলেই জানি। তাহলে সমস্যাটা আসলে কোথায়? আমার বিশ্বাস, আজকের সকল বিশৃঙ্খলা ও পরিস্থিতির অবনতিগুলোর শেকড় এই প্রশ্নটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সকলেই চাইছে সরকারকে প্যাঁচে ফেলতে, দুর্বল করে ফেলতে এবং তারপর লুটেপুটে খেতে। এই প্রবণতাই আজকে যারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে তাদের ভেতর কাজ করছে।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায় ও দায়িত্ব সরকারের এবং আরও যদি সংকুচিত করে বলি তাহলে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু এতো বিশাল জনসংখ্যা ভারের দেশটি কি মাত্র কয়েক লাখ নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শৃঙ্খলাভূক্ত রাখা সম্ভব? পৃথিবীর কোনও দেশেই কি কেবলমাত্র নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীই দেশটির সর্বময় শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করে থাকে? নাকি এতে জনগণেরও রয়েছে ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগ ও দায়িত্ব? চলতি সপ্তাহে ঢাকামেট্রো পলিটন পুলিশ-এর পক্ষ থেকে 'জননিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা' শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পুলিশ ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে নানাবিধ বক্তব্য এসেছে। কিন্তু মূল কথাটি আসলে এটাই বলা হয়েছে যে, কোনও দেশেই জননিরাপত্তা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়, যদি না জনমনে 'আত্ম-পুলিশ' জাগ্রত হয়। যে কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিশেষ করে আমরা যাদেরকে প্রতিদিন উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে সার্টিফিকেট দেই সেখানে জনদায়িত্ব বলে একটি বিশাল দায়বোধ কাজ করে, যা জনগণ নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পালন করে থাকে। বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, আমরা কথা বলি উন্নয়নের কিন্তু নিজেরা দেশটার সঙ্গে, প্রতিবেশির সঙ্গে, আত্মীয়ের সঙ্গে, এমনকি অপরিচিতের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে কোনও প্রকার ছাড় দিতে রাজিই নই, এমনকি আমরা অন্যেরটা কেড়ে নিতেও দ্বিধাবোধ করি না। পুলিশ জনগণের বাইরের কোনও 'বস্তু' নয়। বরং পুলিশের সদস্যরা জনগণের ভেতর থেকেই পুলিশ বাহিনীতে ভর্তি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পুলিশ এই সমাজেরই অংশ, ফলে তাদের আচার-আচরণেও সমাজেরই চেহারা-চরিত্র প্রতিফলিত হয় বা হচ্ছে। যেসকল অভিযোগ আজকে আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে তুলছি সেটা আমাদের সমাজের অন্য যে কোনও সাধারণ সদস্যের ওপর আরোপ করে দেখুন, একদম হুবহু মিলে যাবে, অবস্থার কোনও হেরফের হবে না। তাহলে পুলিশকে দোষ দেওয়া কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? হ্যাঁ, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী বা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান নিজে থেকে চলে না, বা চলতে পারে না, তাকে চালায় সমাজ থেকে আসা মানুষ। আজকে যারা পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করছেন তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কোনও দুর্বলতা থাকলে সেটা গোটা বাহিনীর ওপর পড়বে বা পড়ছেও, এক্ষেত্রে সেই ত্রুটি সারানোটা জরুরি, ব্যক্তি সমালোচনার চেয়ে।

যে কথা আগেই বলেছি, সরকারকে দুর্বল করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুযোগ গ্রহণের পায়তারা শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে সরকার-বিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রান্ততো আছেই। এমনকি এর সঙ্গে আমরা দেশের ভেতর কাজ করা ধর্মাশ্রয়ী শক্তিগুলোর ক্ষমতা দখলের খায়েশকেও যদি যোগ করি তাহলে এই মুহূর্তে সরকারের সমালোচনাকারীদের চেয়ে শত্রুর সংখ্যা অনেক অনেক বেশি বলেই প্রতীয়মান হয়। সরকারের দুর্বলতা নেই, ভুল-ত্রুটি নেই সেকথা বলছিনা কিন্তু সরকারের সফলতা বা জনকল্যাণের সদিচ্ছারও যে অভাব আছে সেটা প্রমাণিত নয়। যারা সমালোচনা করেন তারা কেবল দুর্বলতা, দোষ-ত্রুটি ধরেই করেন আর যারা প্রশংসা করেন তারা কেবল সাফল্যকেই প্রাধান্য দেন কিন্তু এর মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে কথা বলার মানুষের বড় অভাব দেখা যাচ্ছে।

আমার মনে হয়, এখন সেইসব মানুষকেই মূলত দরকার যারা সরকারকে গঠনমূলক সমালোচনা করে পথচ্যুত হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন এবং পারবেন সরকারের সাফল্যকেও তুলে ধরতে। কিন্তু ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার কাজটি যারা নিয়ত করে চলেছেন তারা সরকারের বন্ধু নয় সেটাতো সত্যই কিন্তু তারা আসলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রেরও শুভাকাঙ্ক্ষী নন।

লেখক: কলামিস্ট

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ