X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘টার্গেট কিলিংয়ের’ শিকার রোহিঙ্গা নেতারা

আবদুর রহমান, টেকনাফ
১২ আগস্ট ২০২২, ১০:০০আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ১০:০০

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়েছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। গত চার মাসে রোহিঙ্গা নেতাসহ ১২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডে মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ রোহিঙ্গা নেতাদের।

তবে ক্যাম্পে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার কার্যক্রম নেই। অপহরণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মাঝেমধ্যে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। সেইসঙ্গে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) উখিয়ার জামতলি ১৫ নম্বর ক্যাম্পের সি-৯ ব্লকের পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের প্রধান মাঝি আবু তালেব (৪০) এবং সাব-ব্লকের মাঝি সৈয়দ হোসেনকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বজনদের দাবি, আরসার সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করায় এবং অপরাধীদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেওয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তারা। এ ঘটনায় আতঙ্কে আছেন স্বজনরা।

আরও পড়ুন: উখিয়ার ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক দল দায়িত্ব পালনের পর থেকে মাঝিরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মাঝেমধ্যে রোহিঙ্গা নেতারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থাকে অপরাধীদের তথ্য সরবরাহের কারণেও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পাশাপাশি নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।’

আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গত চার মাসে ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মো. ইব্রাহীম (৩০) নামে এক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন হাবিব উল্লাহ (২০) নামে এক রোহিঙ্গা। ৪ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ১ আগস্ট বিকালে উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নুরুল আমিন (২৬) নামে এক রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন: ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা যুবকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

গত ২২ জুন কথিত আরসা নেতা মোহাম্মদ শাহ এবং ১৫ জুন একই গ্রুপের সদস্য মো. সেলিম (৩০) সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ১৬ জুন রাতে উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. সলিমুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হন। ১০ জুন কুতুপালংয়ের চার নম্বর ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ সমিন (৩০) এবং ৯ জুন রোহিঙ্গা নেতা আজিম উদ্দিনকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মে মাসে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা সানা উল্লাহ (৪০) ও সোনা আলী (৪৬)। এসব ঘটনায় ৯টি মামলায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচার ও আধিপত্য বিস্তারসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু রোহিঙ্গা। এসব অপরাধ, আধিপত্য বিস্তার ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধিকে কেন্দ্রে করে গত পাঁচ বছরে ৯৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে ৬৭টি ঘটনায় ৮৭ জন নিহত হন। এদের ৯ জন বন্দুকযুদ্ধে, বাকিদের গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৬, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত ৩২, ২০২২ সালের জুন থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ৯ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এসব ঘটনায় শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমার থানা এলাকায় ৬৭টি ঘটনায় ৮৭ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্যাম্পে এপিবিএনের পাশাপাশি পুলিশও সন্ত্রাসীদের ধরতে নিয়মিত কাজ করছে।’

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে গুলি করে হত্যা 

রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কের মধ্যে আছি। টার্গেট করে রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হচ্ছে। ক্যাম্পে যেসব মাঝি ও নেতা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আমাদের। কারণ আরসার সঙ্গে এসব মাঝি ও নেতার সম্পর্ক আছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই এসব মাঝিকে ক্যাম্পে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আরসার সংগঠনে যুক্ত। তারা তথ্য পাচার করছে, হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’

তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের সঙ্গে জড়িত মাঝি ও নেতাদের দায়িত্ব থেকে না সরালে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। কারণ রোহিঙ্গাদের ভালো-মন্দ নিয়ে যেসব রোহিঙ্গা নেতা কাজ করছেন তারা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। তাই সরকারের কাছে আবেদন, এসব নেতার সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হোক।’

আরও পড়ুন: টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আর্মড পুলিশের গোলাগুলি

আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের-৮ (এপিবিএনের) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ কামরান হোসেন বলেন, ‘গত দুই মাসে আমার ক্যাম্পে তিন রোহিঙ্গা নেতা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন হত্যার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এগুলো টার্গেট কিলিং এবং পরিকল্পিত বলে ধারণা করছি আমরা। ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্বেচ্ছাসেবীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি পুলিশের টহল জোরদার করেছি আমরা।’  

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আরসাকে দায়ী করে আসছে নিহতের পরিবার। একই বছরের ২২ অক্টোবর ১৮ নম্বর ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুলি করে ছাত্র-শিক্ষকসহ ছয় জনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তারাও ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ শিকার বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

/এএম/
সম্পর্কিত
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
প্রতারণার অভিযোগে সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা
দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা