ভোগান্তির আরেক নাম ছিল ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। উত্তরের এই পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো গাড়িচালক ও যাত্রীদের। এই ভোগান্তি নিত্যদিনের। অবশেষে এই মহাসড়ক চার লেন হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, মিলছে স্বস্তি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, যানজটে আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের। গত ঈদেও এই মহাসড়কে অসহনীয় যানজট ছিল। চন্দ্রা থেকে চার লেনের সুবিধায় গাড়িগুলো এলেঙ্গায় পৌঁছে দুই লেনে চাকা ফেলার পরই আটকে যেতো। এ কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ের ১৩ কিলোমিটার সড়কে। যানজট থেকে মুক্তির জন্য এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত ১৩ দশমিক ছয় কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। আব্দুল মোনেম লিমিটেড নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়।
সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প ফেইজ ২-এর অধীনে এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পে ১৩ দশমিক ছয় কিলোমিটার মহাসড়কে একটি ফ্লাইওভার, আটটি ব্রিজ, ১০টি কালভার্ট ও দুটি আন্ডারপাসসহ একটি সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০১ কোটি টাকা। প্যাকেজ-৫-এর অধীনে কাজ বাস্তবায়ন চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর থেকে উত্তরবঙ্গের ১৭টিসহ ২৩ জেলার গাড়ি ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। গাড়ির তুলনায় মহাসড়ক সরু হওয়ায় প্রতিদিন যানজটসহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ দিতে হতো যাত্রী ও চালকদের।
বিশেষ করে ঈদের সময় ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ অবস্থায় সড়কটির চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলেও বর্তমানে মহাসড়কের পুরো কাজই শেষ হয়েছে। ফলে মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত কোনও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না যাত্রী ও চালকদের। সড়ক দুর্ঘটনাও আগের তুলনায় কমেছে।
তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত দুই লেনের সড়কে এখনও কিছুটা ভোগান্তি রয়ে গেছে। প্রায় প্রতিনিয়ত যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ভোগ কমাতে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত ১৩ দশমিক ছয় কিলোমিটার সড়ক চার লেনসহ সার্ভিস লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ের কাছাকাছি থেকে মহাসড়কের দুই পাশে দিনরাত পাইপযোগে সড়ক নির্মাণের জন্য ফেলা হচ্ছে মাটি। আবার গাড়ি দিয়েও মাটি ফেলা হচ্ছে। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি সমান করা হচ্ছে। শ্রমিকরা কাজ করছেন দিনরাত।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল-ধোপাকান্দি ব্রিজ পর্যন্ত ১৯ দশমিক ছয় কিলোমিটার সড়কের চার লেনের কাজ চলছে। এছাড়া হাটিকুমরুল থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের কাজও চলছে।
চালক ও যাত্রীরা জানান, যানজটে আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন হওয়ায় এখন খুব সহজে যাতায়াত করা যাচ্ছে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়কটিতে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। যানজট কমাতে সরকার এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চার লেনে উন্নীত করছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জেও চার লেনের কাজ চলমান। কাজ শেষ হলে এই সড়কে যাতায়াতকারীদের স্বস্তি মিলবে। খুব সহজে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছাতে পারবেন যাত্রী ও চালকরা।
এ বিষয়ে এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ের চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ‘২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত চারলেনের কাজ শুরু হয়। এক বছরে এক শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিচ্ছি। তারপরও তারা কাজটি দ্রুত করছে না। এভাবে কাজ চলতে থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে না।’
এ ব্যাপারে আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) আহমদ হোসেন বলেন, ‘এখন পুরোদমে কাজ চলছে। এ পর্যন্ত দুই শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’