X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নৃশংসতা দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ

তৌহিদ জামান, যশোর
২৩ আগস্ট ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২০, ১০:৪৪

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরকে হত্যা

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) অমানুষিক নির্যাতনে তিন কিশোর নিহত এবং ১৫ কিশোর আহত হওয়ার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে নারাজ অভিভাবকরা। স্থানীয় লোকজনও বলছে, এটি দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতিরও বহিঃপ্রকাশ। সরকারি এই সংশোধন কেন্দ্রে আসন সংখ্যা ১৫০ হলেও এখানে অনেক বছর ধরেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি রাখা হচ্ছে। এখনও (২২ আগস্ট) এখানে রয়েছে ২৯৭ জন বন্দি কিশোর। 

কী ঘটেছিল সেদিন

যশোর সদরের পুলেরহাট রয়েছে শিশু-কিশোর সংশোধনের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালক)’। গত ১৩ আগস্ট বেলা ১২টা থেকে বিকাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ১৮ কিশোরকে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাদের অনুগত ৮ কিশোর পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে। ভুক্তভোগী কিশোরদের হাত-পা বেঁধে ও মুখের ভেতরে কাপড় গুঁজে লোহার রড, পাইপ ও কাঠ দিয়ে বেদম মারধর করা হয়। নির্যাতনের মাত্রা এমন ছিল যে, প্রথমবার মারধর করার পর তারা অচেতন হয়ে যায়। এরপর অচেতন অবস্থায় থেকে জ্ঞান ফেরা মাত্রই আবারও দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়। মারধরের পর তাদের ডরমেটরিতে ফেলে রাখে কর্তৃপক্ষ। সেদিন এমনিতেই তাপমাত্রা ছিল বেশি, তারপর সেদিন তাদের কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। নির্যাতন, ক্ষুধা আর চিকিৎসাহীন অবস্থায় এক জায়গায় গাদাগাদি করে রাখায় সন্ধ্যার দিকে পর পর তিন কিশোর মারা যায়। 

ঘটনার সূত্রপাত

কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৮ জন কিশোরকে ভয়াবহ এ নির্যাতনের ঘটনাটি বাইরে কেউ অবগত ছিল না। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে পাঠানোর পরও সেখানে তিন কিশোরকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণার পরই মূলত বিষয়টি প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে খবর হওয়ার পাশাপাশি তখনই বিষয়টি অবহিত হয় পুলিশ প্রশাসন। তবে এর মধ্যে কেটে যায় প্রায় ৬ ঘণ্টা! অর্থাৎ নির্যাতনের পর বিনা চিকিৎসায় এসব কিশোরকে ৬ ঘণ্টা ধরে ফেলে রাখা হয়েছিল।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ড নূর ইসলাম সেখানে বন্দি হৃদয় নামের এক কিশোরকে তার চুল কেটে দিতে বলেন। ঈদের আগে হৃদয় কেন্দ্রের প্রায় দুইশ’ শিশু-কিশোরের চুল কেটে দেয়। এ কারণে তার হাত ব্যথা ছিল। এ কারণে সে হেড গার্ডের চুল কেটে দিতে ওইদিন অপারগতা প্রকাশ করে। পরে কেটে দেওয়ার কথা জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হেড গার্ড বিষয়টি অতিরঞ্জিত আকারে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহকে অবহিত করেন। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ অন্য কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। নূর ইসলাম তাদের জানান, হৃদয় ও অপর বন্দি পাভেল নেশা করে অসংলগ্ন অবস্থায় রয়েছে। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগও তোলে হেড গার্ড। সে আরও অভিযোগ করে, নেশা ও সমকামিতার কারণে বলার পরেও তার চুল কেটে দেয়নি হৃদয়, উল্টো তাকে গালিগালাজ করেছে। ওই সময় সেখানে থাকা আরেক বন্দি নাঈম বিষয়টি পাভেলকে জানায়। এ কথা জানতে পেরে সেখানে বন্দি থাকা অপর কিশোর পাভেল ও তার সহযোগীরা হেড গার্ড নূর ইসলামকে সুযোগ পেয়ে মারধর করে ও তার একটি হাত ভেঙে দেয়।

পুলিশ জানায়, ১৩ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জাতীয় শোক দিবস পালনের লক্ষ্যে একটি সভায় মিলিত হন। সভাশেষে উপস্থিত কর্মকর্তারা ৩ আগস্টের ঘটনায় সম্পৃক্তদের  ‘শায়েস্তা’ করার সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে মারধরের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও সাক্ষীদের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে ডরমেটরিতে ডেকে পাঠানো হয়। কেন্দ্রের কর্মকর্তারা সেখানে তাদের অনুগত বন্দি ৮ কিশোরকে ডেকে আনেন। এরপর তাদের দিয়ে ১৮ জনকে মারধর করান। তারা প্রত্যেক কিশোরকে ধরে জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে দু’হাত ঢুকিয়ে অপরপাশে আরেকজন দিয়ে হাত ধরায়, পা বাঁধে এবং মুখে কাপড় ঢুকিয়ে লাঠি ও লোহার পাইপ দিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যাপক হারে পেটায়। কর্মকর্তারা তাদের নির্দেশ দেন- অচেতন না হওয়া পর্যন্ত যেন পেটানো হয়। মারের চোটে কিশোররা অচেতন হয়ে পড়লে তাদের ফেলে রাখা হয় এবং জ্ঞান ফিরলে আবারও একই কায়দায় মারধর করে ডরমেটরিতে ফেলে রাখা হয়। সেদিন তাপমাত্রাও বেশি ছিল। সারাদিন কিছু খেতে না দেওয়া ও চিকিৎসা না করে সেখানে ফেলে রাখা হয়। অবস্থা গুরুতর হলে একজন কম্পাউন্ডারকে ডাকা হয়। ব্যর্থ হয়ে সন্ধ্যায় মরণাপন্ন অবস্থায় নাঈম নামে এক কিশোরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। এরপর এক এক করে মোট তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর হাসপাতাল সূত্রেই এই লোমহর্ষক ঘটনার খবর জানতে পারে পুলিশ। এরপর কেন্দ্রে গিয়ে ডরমেটরি থেকে আহত ১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাটি পুলিশ, জেলা প্রশাসন বা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাউকেই জানাননি। 

হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আহত বন্দিদের। (ফাইল ছবি)

এটিই প্রথম ঘটনা নয়

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা এটিই প্রথম ঘটনা নয়। লাশ উদ্ধার, মারপিটের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ২০১১ সালের ২৯ আগস্ট আকাশ (১২) নামে এক শিশুকে প্রথমে শ্বাসরোধ ও পরে টিনের টুকরো দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এছাড়া ২০১৪ সালে ৫ মে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দর্শনার্থী একজন অভিভাবককে মারধরের অভিযোগের জের ধরে এই সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।

২০১৯ সালের ৩০ জুন কেন্দ্রে নূর ইসলাম (১৫) নামে এক শিশু আত্মহত্যা করে। অবশ্য, তার বাবা আব্দুল মতিনের দাবি, কেন্দ্রের ভেতরের অব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধায়কের অনিয়ম দুর্নীতির বলি তার ছেলে। তার ছেলে নূর ইসলামকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। কেননা মরদেহে তারা দেখতে পান ছেলের হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

আরও পড়ুন:
মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি আরও সময় চেয়েছে

'সংশোধন নয়, অপরাধপ্রবণ হচ্ছে বন্দিরা'

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আরও ৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

বন্দি ৭ কিশোর শ্যোন অ্যারেস্ট

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

বন্দি শিশু-কিশোর ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, অপরাধীদের সংশোধন নয়, বরং অপরাধের আখড়া করা হয়েছে কেন্দ্রটিকে।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রটিতে বন্দিদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। পরিবার থেকে দেওয়া খাবার সংশ্লিষ্ট বন্দির কাছেও পৌঁছানো হয় না। পয়সার বিনিময়ে চলে মাদকদ্রব্য সেবনও। অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা। বন্দি নির্যাতনের জন্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের মদতে তৈরি ও ব্যবহার করা হয় আরেকদল অনুগত বন্দিকে। তাছাড়া, এখানে বন্দিদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে নেই পর্যাপ্ত কোনও ব্যবস্থা। সাইকোসোশ্যাল অফিসার পদে যিনি রয়েছেন তিনি প্রশিক্ষিত নন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রে নিজেদের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখতে কর্তৃপক্ষ বন্দি কিশোরদের একটি অংশকে মদত দেয়। ১৩ আগস্ট কেন্দ্রে মারা যাওয়া তিন বন্দির ওপর নির্যাতন চালায় কর্তৃপক্ষের অনুগত ৮ কিশোর। যাদের পুলিশ ইতোমধ্যে গ্রেফতারও করেছে। যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ঘটনার দু’দিন পর নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে যেসব তথ্য উপস্থাপন করেন, তাতেও এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়।

খুলনার দৌলতপুর থেকে আসা কবীর শেখ বলেন, ‘আমার ছেলে সোহাগ আড়াই বছর ধরে এখানে থাকে। এখানে খাবার-দাবারের সমস্যা। ছেলে ফোন করে এসব অনেকবার জানিয়েছে। চিকিৎসাও মেলে না।’

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রেজাউল করীম ও গোপালগঞ্জ থেকে আসা বন্দি শরিফুলের মা শিউলি বেগমও একই ধরনের কথা বলেন।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘এই কেন্দ্রে শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানো অতি সাধারণ ঘটনা। ভয়ে শিশুরা অভিভাবকদেরও কিছু বলতে চায় না। আর টাকা দিলে মেলে মাদকদ্রব্যও।’

তিন কিশোর হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তফা হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এটি দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বহিঃপ্রকাশ। কেন্দ্রে কর্মরতরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তাদের কোনও অধিকারই নেই শিশুদের ওপর নির্যাতন করার।’

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (ফাইল ছবি)

ঘটনার পরপরই মিথ্যা প্রচারণা

কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদতে ১৮ কিশোরকে মারধরের ফলে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রথমে মিথ্যাচার করা হয়। কেন্দ্রের প্রবেশন অফিসার মুশফিক আহমেদ বলেছিলেন, সম্প্রতি কেন্দ্রে বন্দি কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে ১৩ আগস্ট বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রডের আঘাত ও মারপিটে মারাত্মক জখম হয় কিশোররা। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশঙ্কাজনক আহতদের একে একে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে নাইম, পারভেজ ও রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এই বক্তব্য অসত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ঘটনার পরপরই রাত দুইটার দিকে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তারাই এই ঘটনার মূল সাক্ষী। মৃত্যুপথযাত্রী কেউই মিথ্যা কথা বলে না। তাদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে তাদের বিষয় গুরুত্ব পাবে।’

১৫ আগস্ট যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে পৈশাচিক এই হত্যাকাণ্ডে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কসহ পাঁচ কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। যে কারণে তাদের গ্রেফতার ও রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা তৎপর হলে ঘটনা এতদূর গড়াতো না’ (ভিডিও)

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর হত্যা, ৫ কর্মকর্তা রিমান্ডে

কর্মকর্তারাই চালিয়েছেন পৈশাচিক নির্যাতন: পুলিশ সুপার

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন জনকে হত্যা: পাঁচ কর্মকর্তাসহ ‘জড়িত’ ১২ জন শনাক্ত

 

মামলা নম্বর ৩৫/১৪.০৮.২০২০

তিন কিশোর নিহতের ঘটনার পরদিন কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত পারভেজের বাবা রোকা মিয়া। তিনি খুলনার মহেশ্বরপাশা গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। মামলা নম্বর ৩৫/১৪.০৮.২০২০। মামলার বাদী রোকা মিয়া বলেন, সরকারি একটি শিশু সংশোধনাগারে এ ধরনের নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডে সন্তান হারিয়ে আমার পরিবার ভেঙে পড়েছে। সন্তান হত্যার বিচার পেতে মামলা করেছি।

সমাজসেবা অধিদফতরের তদন্ত কমিটির প্রধান ও অধিদফতরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো. নুরুল বাসির

তদন্ত কমিটি

১৪ আগস্ট সমাজসেবা অধিদফতর দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কমিটির প্রধান করা হয় সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মোহাম্মাদ নুরুল বাসিরকে। তার সঙ্গে তদন্ত কাজে সহায়তা করেন উপপরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এসএম মাহমুদুল্লাহ। একইদিন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দেয়। এই কমিটির প্রধান হলেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছ।

সমাজসেবা অধিদফতরের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তাদের তদন্তকাজ সম্পন্ন করে ঢাকায় ফিরে গেছেন। অবশ্য প্রতিবেদন এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে, মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ৫ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা অতিরিক্ত ৭ দিনের আবেদন করে। মন্ত্রণালয় যা ইতোমধ্যে অনুমোদনও দিয়েছে।

এছাড়া, পুলিশ প্রশাসন তো আলাদাভাবে তদন্ত করছেই। যশোরের চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনসপেক্টর রকিবুজ্জামান এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন।

আরও পড়ুন:

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর নিহতের ঘটনায় মামলা, মরদেহ হস্তান্তর

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক সাময়িক বরখাস্ত, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নৃশংসতা: ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

 

নিহতদের স্বজনদের ক্ষোভ

তিন খুনের ঘটনায় স্বজনরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে তারা শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন। গত শুক্রবারও (২১ আগস্ট) সকালে কেন্দ্রের সামনে স্বজনদের অবস্থান ও কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।

নিহত কিশোর পারভেজের বাবা খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার রোকা মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে প্রায়ই ফোনে বলতো এখানকার পরিবেশ ভালো না। কেন্দ্রে শিশু-কিশোরদের নির্যাতন করা হয়। গতকাল সকালেও সে ফোন করে তাকে বড় জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। পারভেজ আরও বলে, আমাকে যদি না নিয়ে যাও, তাহলে আমার লাশ নিয়ে যেতে হবে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোকা মিয়া বলেন, ‘সত্যি সত্যিই আজ আমার সন্তানের লাশ নিয়ে যেতে হচ্ছে।’

তিনি আক্ষেপ করেন, ‘সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের বর্বরতা কখনোই কাম্য নয়। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

নিহত অপর কিশোর রাসেলের ভাই বগুড়ার শেরপুর এলাকার ফরহাদ আলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজে ভাই হারানোর বেদনা বোঝেন। তিনি নিশ্চয়ই এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করবেন।’

তিনি জানান, কেন্দ্রে থাকাকালে তার ভাই এখানে খাবার দেওয়ায় অনিয়মসহ বন্দিদের ওপরে নানাধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছিল। তার ভাইসহ অন্যদের অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি এই ঘটনার বিচার চান।

নিহত নাঈমের ভাই বগুড়ার শিবগঞ্জ এলাকার শামিম প্রামাণিক জানান, তার ভাই এই কেন্দ্রে ছয় মাস আগে আসে। মৃত্যুর সংবাদ তাদের পরিবারের কাউকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘টিভিতে খবর দেখে ছুটে এসেছি। হাসপাতাল মর্গে আমার ভাইয়ের লাশ দেখছি।’

এ ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসেন খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম। পরে সাংবাদিকদের তিনিই প্রথম জানান, ঘটনাটি একপাক্ষিক, কর্মকর্তারাই জড়িত।

৫ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত, গ্রেফতার ৮ কিশোর

১৪ আগস্ট কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে প্রথমেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর ১৭ আগস্ট সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) মো. ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম এবং সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে কেন্দ্রের ৮ কিশোরকে।

সংশ্লিষ্টরা কে কী বলছেন

শিশু সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট তাহমিদ আকাশ বলেন, যেখানে শিশু কিশোরদের সংশোধনের জন্যে রাখা হয়, সেখানে এমন নৃশংসতা ঘটানো হলে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ ঘটনায় দোষীদের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

যশোর সরকারি এমএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র শিশু-কিশোরদের সংশোধন ও মানসিকতার উন্নয়নের জন্যই করা। কিন্তু যশোর কেন্দ্রে শিশুদের সংশোধনের চেয়ে অপরাধপ্রবণ হওয়ার তীব্রতা দেখেছি। আমার মনে হয়েছে, এখানে শিশুদের বয়স নির্ধারণ একটা ফ্যাক্টর। ৭-১০ বছরের শিশু ও ১৫-১৮ বছরের শিশুদের এখানে একইভাবে ট্রিট করা হয়। এটি একটা সমস্যা। কেননা ৯ বছরের শিশু আর ১৮ বছরের শিশুর মানসিক অবস্থা কখনোই একরকম হবে না। এখানে যিনি কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি এই কাজকে কেবল পেশা হিসেবে নিয়েছেন। একটি শিশুর মনোজগতের পরিবর্তন করে তাকে নৈতিকতার শিক্ষায় উপনীত করার কাজকে আসলে নেশা হিসেবে নিতে হবে। রেগুলার কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মোটিভেট করতে হবে। তাহলে উন্নয়ন কেন্দ্রে আসা শিশুরা অপরাধপ্রবণ নয় বরং মানবিক গুণসম্পন্ন হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘এখানে যেসব কর্মকর্তা কাজ করছেন, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা সেটি একটা প্রশ্ন। এখানকার শিশু-কিশোরদের নিয়ে সুদূরপ্রসারী কোনও চিন্তা ভাবনা রয়েছে কিনা, বিশেষ করে তাদের মানসিক উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলো আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আমার মনে হয়েছে, এখানে তাদের যা করার, সেটি তারা করছেন না। তাই শিশু-কিশোররা সংশোধন না হয়ে আরও বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে।’

সমাজসেবা অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা বলেন, ‘এই কেন্দ্রে শিশু-কিশোরদের আসন রয়েছে ১৫০টি। কিন্তু এখন রয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। লোকবল সংকট থাকলেও এখানে খাবার প্রদানে দুর্নীতি, মাদক, চিকিৎসায় অবহেলা, অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে, তা অমূলক। যেহেতু এই ঘটনায় তদন্ত চলছে, বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে।’

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের নতুন তত্ত্বাবধায়ক মো. জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে কেন্দ্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। অভিভাবকরা দেখা করতে আসছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ (২২ আগস্ট) কেন্দ্রে মোট বন্দি রয়েছে ২৯৫ জন। আসনের প্রায় দ্বিগুণ বন্দির অনেকেই ডরমেটরিতে থাকছে। মারধরে আহত ১৫ কিশোরের মধ্যে দুজন বাদে অন্যদের অবস্থা বেশ ভালো বলে জানান তিনি।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র

রাজনীতিকরা যা বলছেন

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মিলন বলেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটি একটি অমানবিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, শিশুদের সংশোধনের জন্যই এই কেন্দ্র করা হয়েছে; কিন্তু তারা যদি নিরাপদই না থাকে তাহলে সে উদ্দেশ্য সফল হবে না। এখানে কর্তৃপক্ষের কর্মপদ্ধতিতে যথেষ্ট ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। শিশুদের কেবল আটকে রাখলেই হবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতেই এগোতে হবে। প্রশাসনকে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, এটি সাধারণ কোনও জেলখানা নয়; বাচ্চাদের সংশোধন হওয়ার কেন্দ্র। সে কারণে তাদের খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে। সেই বরাদ্দ তারা পায় না। এখানে ম্যানেজমেন্টে একটা দুষ্টচক্র রয়েছে। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যদি ক্ষুব্ধ হয়, তাহলে সেই অনিয়ম দূর করা উচিত। কিন্তু তারা সেগুলো না করে পিটিয়ে হত্যা করছে, যা অপরাধ। কেননা বাচ্চাদের সংশোধনের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, এদের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার।

সর্বশেষ অবস্থা

১৭ আগস্ট নিহত ৩ কিশোরের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের পায়ে, পিঠে ও মাথায় আঘাতের কারণে মস্তিষ্ক জখমপ্রাপ্ত হয়।

১৮ আগস্ট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নতুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন সমাজসেবা অধিদফতরের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (খুলনা) সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন। সমাজসেবা অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে যশোরে তদন্ত কাজ শেষ করে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটিকে তদন্ত কাজ শেষ করতে আরও ৭ কর্মদিবসের সময় দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর রকিবুজ্জামান জানিয়েছেন, এ মামলায় আটক ৫ কর্মকর্তার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার অপর ৮ কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। বিচারক এখনও শুনানির দিন ধার্য করেননি।

আরও পড়ুন: 



শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১০ কর্মকর্তা পুলিশ হেফাজতে

‘হাত-পা-মুখ বেঁধে পেটায়, ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়’

যশোরে তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় কেন্দ্রের কর্মকর্তা দায়ী হতে পারেন, ইঙ্গিত ডিআইজি’র

নিজেদের সংঘর্ষের পর কিশোররা মার খায় কেন্দ্র কর্মকর্তার হাতেও!

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ৩ কিশোর নিহ

/টিএন/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ, শহরজুড়ে আতঙ্ক
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ, শহরজুড়ে আতঙ্ক
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৭ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলা বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৭ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলা বৃষ্টির পূর্বাভাস
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫