X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁদছেন নিহত বিজিবি সদস্যের স্ত্রী, বললেন ‘দুই শিশুসন্তান মানুষ করবো কীভাবে’

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৪৭আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:০৬

যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইশুদ্দীনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকালে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। মরদেহ দেখে অঝোরে কাঁদছিল তার দুই শিশুসন্তান ও স্ত্রী। 

রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার চার বছরের মেয়ে ও চার মাস বয়সী ছেলেসন্তান কাঁদছে। বাবার মৃত্যুর বিষয়টি দুই শিশু হয়তো উপলব্ধি করতে পারছে না। তবে দুই সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন রইশুদ্দীনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অঝোরে কাঁদছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দুই অবুঝ শিশু আর আমাকে একা ফেলে চলে গেলো। তাদের মানুষ করবো কীভাবে? তাকে ছাড়া আমরা চলবো কীভাবে?’

ছেলের মরদেহ দেখে কাঁদছিলেন রইশুদ্দীনের বাবা কামরুজ্জামান। তিনি জানান, তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রইশুদ্দীন ছিলেন সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পুরো পরিবার অসহায়। পুত্রবধূ ও দুই নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নাতি-নাতনিকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের সহায়তা চান তিনি।

রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা সাহাপাড়ার শ্যামপুরে। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হেলিকপ্টারে মরদেহ শিবগঞ্জে পৌঁছায়। পরে সাহাপাড়ার শ্যামপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছালে শোকে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজ গ্রাম ভবানিপুর গোরস্থানে জানাজা শেষে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

এর আগে গত সোমবার ভোরে ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন। নিহত হওয়ার দুদিন পর মরদেহ ফেরত পায় বিজিবি। বুধবার সকালে শার্শা উপজেলার শিকারপুর ও ভারতের গাঙ্গুলিয়া সীমান্তে বিএসএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিজিবির প্রতিনিধিদলের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন। বিজিবির পক্ষে যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল ও সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা মরদেহ গ্রহণ করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত শেষ করতে দুপুর ১টা বেজে যায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাবিদ রায়হান, যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হুসাইন, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী প্রমুখ।

ময়নাতদন্তের বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী বলেন, ‘মরদেহের তলপেটে একটি গুলি পাওয়া গেছে।’

বিজিবি সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বিজিবি সদস্যরা যশোর সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুরে ৪৯ বিজিবি প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। দুপুরে জানাজা শেষে বিজিবি কার্যালয়ে কর্মকর্তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হেলিকপ্টারে মরদেহ শিবগঞ্জে পৌঁছায়। হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে পুলিশের নিরাপত্তায় সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় নিহতের পরিবারের সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি এবং যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রইশুদ্দীনের নিহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার রাতে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল জামিল স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে বিজিবি টহল দল। এ সময় টহল দলের সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করলে দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। পরে ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিএসএফের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে।

জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সোমবার ভোরে তারা অন্তত সাত-আট রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছেন। সকালে সীমান্তের ওপারে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে জানতে পারেন বিজিবি সদস্য। বিএসএফের গুলিতে আহত হন তিনি। এরপর বিএসএফ সদস্যরা তাকে ভারতের বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

আরও পড়ুন: বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্যের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বেল পাড়া নিয়ে সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত
‘সম্পত্তির লোভে’ মনজিলকে হত্যা: ৭ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
গাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চার শতাধিক ইসরায়েলি হামলা
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা