যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর নিকারাগুয়া ১৩৫ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মানবিক কারণে মুক্তি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউজ এই তথ্য জানিয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্তরা প্রথমে গুয়াতেমালা যাবেন ও পরে আইনত যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও দেশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
এই মুক্তি ‘মাসব্যাপী আলোচনার ফল’ বলে যুক্তরাষ্ট্র ও গুয়াতেমালা যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত সবাই নিকারাগুয়ার নাগরিক ও এর মধ্যে খ্রিস্টান ইভানজেলিকাল সংগঠনের সদস্য, ক্যাথলিক ধর্মপ্রাণ জনগণ ও শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।
গত বছরও নিকারাগুয়া ২০০ জনের বেশি রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিল। ওই সময় প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা এই পদক্ষেপকে ‘অপরাধীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যারা নিকারাগুয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল বলে তার দাবি। এবারের মুক্তি নিয়ে ওর্তেগার প্রশাসন তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি।
বৃহস্পতিবার সকালে গুয়াতেমালায় পৌঁছায় মুক্তিপ্রাপ্তদের বহনকারী বিমানটি। গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট বার্নার্দো আরেভালো জানান, বন্দিরা গুয়াতেমালায় থাকবেন ও সেখানে তারা অন্য দেশে যাওয়ার জন্য আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরিবহন, খাদ্য ও থাকার ব্যবস্থা করেছে বলে যুক্ত বিবৃতিতে জানানো হয়।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ওর্তেগার পুনর্নির্বাচনকে ‘ভুয়া’ বলে নিন্দা জানিয়ে তার সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ওই সময় তার প্রতিপক্ষদের গ্রেফতার এবং সাংবাদিক ও ধর্মীয় নেতাদের বন্দি করা হয়েছিল।
মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন টেক্সাসভিত্তিক ইভানজেলিকাল সংগঠন মাউন্টেন গেটওয়ের সদস্য। সংগঠনটি জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে ১১ জন পাদ্রি গ্রেফতার হন এবং এ বছরের শুরুতে তাদের অর্থপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, যা সংগঠনটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।
প্রেসিডেন্ট ওর্তেগা এর আগেও গির্জার নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন, বিশেষ করে ২০১৮ সালে ক্যাথলিক গির্জা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করলে তা সরকার দমন করে। সেই সময় ওর্তেগার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয় বলে মানবাধিকার সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন। এরপর থেকে সরকার বহু ক্যাথলিক পুরোহিতকে গ্রেফতার বা বহিষ্কার করেছে এবং কয়েক হাজার বেসরকারি সংগঠন বন্ধ করে দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগকেই আর্থিক অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।