কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। তার দর্শন ছিল সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাকে একটি স্থায়ী কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একমাত্র ব্যক্তি, যিনি এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যেটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ’ শীর্ষক সেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সদস্য দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা অংশ নেন।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে কমিউনিটি ক্লিনিকের অবদান ব্যাপক। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এই ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে এবং বিনামূল্যে ২৭ ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো, যাতে তৃণমূলের কেউই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কমিউনিটি ক্লিনিককে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। এ জন্য আইন করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। এটি কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সমাজের মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে, যাতে মালিকানা জনগণের কাছেই থেকে যায়। কমিউনিটি গ্রুপের মানুষই এখানে সেবা দেয় এবং কমিউনিটির মানুষই এখানে সেবা পায়।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগে আমি কতগুলো সৌন্দর্য অনুভব করি। মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ছয় হাজার মানুষ সেবা পেতে পারে। বাংলাদেশের মতো সমতল ভূমিতে ছয় হাজার মানুষের কাছে পৌঁছানো খুব সহজ বিষয়। তবে সব সময় সব জায়গায় তা না-ও হতে পারে। তাই ভৌগোলিক স্থান সম্পর্কে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। তাতে অন্য দেশগুলো আমাদের অভিজ্ঞতা নিজ দেশে কাজে লাগাতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, কমিউনিটির জন্য যেকোনও উদ্যোগ প্রসারে কমিউনিটির সঙ্গে যোগসূত্র অবশ্যই থাকতে হবে। আর কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে জায়গায় সেবা দেওয়া হচ্ছে, সেই জায়গাটি কমিউনিটির; সরকার অবকাঠামো করে দিচ্ছে তাদের নিজেদের হাতে। কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সহায়তা করছে রোগীর ব্যবস্থাপনায়, রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করছে।
সেশনের শুরুতেই কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়বস্তু নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলম।
মহাপরিচালক জানান, সারা দেশে ১৪ হাজার ২১০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৬ জন, মাসে ৫৭৬ জন এবং বছরে ৯ হাজার ৬১৮ জন সেবা নিয়ে থাকে। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রায় ২৭ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে, যাতে কেউ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী না হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারের জনস্বাস্থ্য বিভাগের রোগ নিয়ন্ত্রণের উপপরিচালক ডা. কয় ক্যান কং। সেশনটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, ঢাকায় দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি চলবে আগামীকাল বুধবার (১২ জুলাই) পর্যন্ত।