X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
মুফতি হান্নানের জবানিতে হামলা

​টার্গেট শেখ হাসিনা, ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে দফায় দফায় সভা

উদিসা ইসলাম
২১ আগস্ট ২০১৬, ১০:১৪আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৬, ১০:১৫


স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিওতে মুফতি হান্নান

‘ইসলাম বিরোধিতা’ ও ‘দেশের ভাবমূর্তি’ ধ্বংস করা হচ্ছে অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাকে চিরতরে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনায় লিপ্ত হয়েছিল বিএনপি, জামায়াত, হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশসহ (হুজি) জঙ্গি সংগঠনগুলো। হুজির নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই হত্যা-পরিকল্পনার বর্ণনায় জানা যায়, ২১ আগস্টের হামলার জন্য অন্তত তিন দফায় মিলিত হয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা।

হান্নানের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে (বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে পরিচিত) আলোচনায় বসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভূমি উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একজন (মেজর নূর), জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও জঙ্গি সংগঠন আল মারকাজুল ইসলামীর এক নেতা।

মুফতি হান্নানের বক্তব্য অনুযায়ী, সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা সাজানো হয়েছিল হাওয়া ভবনেই। ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট একান্ত গোপনীয় সেই বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ অন্তত ৯ জন। পরবর্তীতে দফায় দফায় মিটিং করে হামলা নিশ্চিত করা হয় এবং বাবরের তত্ত্বাবধানে গ্রেনেড সরবরাহ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আর বাঁচতে দেওয়া হবে না। তাকে মারতেই হবে।

জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান বলেছেন, শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকে। তাকে প্রথম টার্গেট করা হয় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। পরবর্তীকালে জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আর সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিওতে মুফতি হান্নান বলেছেন, ‘হাওয়া ভবনের সভায় তারেক জিয়া (রহমান) বলেন, বর্তমানে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। শেখ হাসিনা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দেশকে উচ্ছৃঙ্খল এবং নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে আমাদের একটা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

মুফতি হান্নানের জবানিতে হামলার চিত্র

এসময় মুজাহিদ বললেন, ‘আপনার কথা সত্য, শুধু তাই নয়, ইসলামের বিরুদ্ধেও ( শেখ হাসিনা) কাজ করছে। অতএব এটা নিয়ে কাজ করা দরকার। যে অরাজকতা তা রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক মোকাবিলা করতে হবে নচেৎ তাকে এ দেশকে চিরবিদায় দিতে হবে, শেষ করে দিতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামি মেজর নূর সেখানে উপস্থিত ছিল দাবি করে হান্নান বলেন, ‘এসময় উনাকে (মেজর নূর) ইশারা করা হলো কিছু বলার জন্য। উনি বললেন, রাজনৈতিকভাবে আপনারা অবশ্যই মোকাবিলা করবেন। আমিতো রাজনীতি করি না। আমি জানি তাকে মোকাবিলা করতে হলে তিনটা পদক্ষেপ নিতে হবে। এক. তার বাড়িতে আক্রমণ করতে হবে, অথবা আসা যাওযার পথে আক্রমণ করে মেরে ফেলতে হবে, নচেৎ তার কোন মিটিং এ আক্রমণ করে তাকে শেষ করে ফেলতে হবে।’ তবে জনগণের যত কম ক্ষতি করে তাকে শেষ করা যায় সে বিষয়েও আলাপ হয়।

সেসময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বাবর তার কাছে গ্রেনেড আছে এবং এ গ্রেনেড ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানায়। হান্নান বলেন, ‘তখন উনি (বাবর) বললেন, গ্রেনেড যদি হয় তাহলে রাস্তায় আক্রমণ করা যাবে না, উনি (শেখ হাসিনা) একই জায়গায় অবস্থান করবেন যেখানে সেখানে আক্রমণ করতে হবে।কোনও মিটিং এ আক্রমণ করলে কামিয়াব হওয়া যাবে।’

সেদিনই সবকথা শেষ না করে পরেরদিনই আবার একটা মিটিং করা হয়।ওখানে আবার আলোচনা হয়। আলোচনার পরে একটা সিদ্ধান্ত দেয়, গ্রেনেড যখন আছে, আমাদের রাইফেল বা অস্ত্রও প্রয়োজন হবে। তারপর ঠিক হয় গ্রেনেড ব্যবহার হবে। ওখানে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২১তারিখ যে মিটিং ডেকেছে। মুক্তাঙ্গনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারা অফিসের সামনে (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) অনুমতি চেয়েছে, এখানে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এরপর একটি মিটিং হয় বাবরের মিন্টু রোডস্থ সরকারি বাসভবনে। এরপরের মিটিং হয়েছিল আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায়। মুফতি হান্নানের দাবি, সেখানে তার দলের নেতারাসহ উপস্থিত হওয়ার পর সালামের ছোট ভাই তাজউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়।

মুফতি হানন্নান ওই স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিওতে আরও জানান ‘আমরা অপেক্ষা করার পরে দুইটা গাড়ি আসে। কালো পাজেরো গাড়ি। প্রথম গাড়ি থেকে বাবর ও একজন নামেন। দ্বিতীয়টা থেকে তিনজন নামেন। তারা বৈঠক করেন। এরপর আমাদের সঙ্গে বসেন। সেখানে গ্রেনেডগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন বাবর।’

হামলার ঠিক আগের মুহুর্তের কার্যক্রম বর্ণনা করতে গিয়ে ওই ভিডিওতে হান্নান জানান, ২১ আগস্ট দুপুরে তারা রামপুরার একটি বাসায় মিলিত হয়। সেখানেই গ্রেনেডগুলো সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এরপর মুফতি হান্নানসহ ১৫ জন ক্যাডার জনসভার আশপাশে অবস্থান নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলার পর হামলাকারীরা ভিড়ের মধ্যে মিশে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান দলীয় সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু, গ্রেনেডের সরাসরি আঘাতে নিহত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন প্রায় চারশ’ নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রেনেডের বিষাক্ত স্প্লিন্টার।

আরও পড়ুন:
একুশ আগস্টের ভিকটিমদের ভোলেননি শেখ হাসিনা

আজ রক্তাক্ত ২১ আগস্ট

শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয় যেভাবে

সেই জজ মিয়া এখন কোথায়?

গ্রেনেড হামলার এক যুগ: আর মাত্র দুই সাক্ষী বাকি

কান্না থামেনি রতনের পরিবারের

কুদ্দুসের পরিবার পালিয়েছিল ৬ মাস

নেত্রীর জীবন বাঁচাতে শহীদ হয়েছিলেন মুলাদীর সেন্টু

জন্মদিনের জামা আনা হয়নি মিথিলার বাবার

রেজিয়ার স্বজনদের দাবি ঘাতকদের দ্রুত বিচার

অর্থাভাবে সংস্কার হয় না মাহবুবের কবর

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
রাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
‘জেসির অভিজ্ঞতা বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
‘জেসির অভিজ্ঞতা বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?