X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

অপারেশনের শুরুতে উত্তেজনায় কাঁপছিলাম

নুরুজ্জামান লাবু
০১ জুলাই ২০১৭, ০৮:২৮আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৭, ১০:৫৫
image

রিপোর্টার্স ডায়েরি

১ জুলাই, ২০১৬। রাত তখন ৯টা পেরিয়েছে। অফিসের নিচে চায়ের দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ খবর এলো গুলশানে গোলাগুলি হচ্ছে। ক্রাইম রিপোর্টিং করি বলে গোলাগুলি বা খুন-জখম আমাদের প্রায় প্রতিদিনের খবরের উপাদান। স্বাভাবিকভাবেই নিজে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি এক সহকর্মীকে বললাম খোঁজ নিতে। তখনও বুঝতে পারিনি এই গোলাগুলির খবর এতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।

বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনও পুলিশ কর্মকর্তাই ফোন ধরছেন না। কাউকে কাউকে ব্যস্ত পাচ্ছি। গুলশান থানা থেকে জানালো ‘বড় ঘটনা’, আশেপাশের সব থানার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন। এর মধ্যেই এসবির এক কর্মকর্তাকে পেয়ে গেলাম ফোনে। তিনি আমাকে বরং একটু ধমক দিয়েই বললেন যে, এত বড় ঘটনা তবু ঘটনাস্থলে যাচ্ছি না কেন? তিনি নিজে ঘটনাস্থলে। বুঝলাম বড় কিছু। তিনি অবশ্য প্রাথমিক কিছু তথ্য জানালেন। তারপর অফিসে বড় কর্তাদের জানিয়ে ছুটলাম গুলশানের দিকে।

অভিযানের পর ২ জুন সকালে হলি আর্টিজান থেকে বেরিয়ে আসেন হাসনাত করিম

গুলশানের শ্যুটিং ক্লাবের কাছে পৌঁছাতেই বিশাল জ্যাম। রাস্তা বন্ধ। উল্টো পথে এগিয়ে গেলাম কিছু দূর। পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। কাউকেই গুলশানের দিকে ঢুকতে বা গুলশান এলাকা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে যেতে দিলেন। বাইক নিয়ে পৌঁছে গেলাম গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের চৌরাস্তার একটু আগে।

স্পটে গিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া। বিশাল ঘটনা। আগে আঁচই করতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য সদস্য সেখানে হাজির। হোলি আর্টিজানের কাছাকাছি যেতেই দ্রুম...দ্রুম...ঠা...ঠা... গুলি ও বোমার আওয়াজ। রক্তাক্ত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে দেখলাম। জঙ্গিরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছে। একটু পর রক্তাক্ত অবস্থায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ ভাইকে দেখলাম। তার শরীরে স্প্লিটার বিদ্ধ হয়েছে। তিনি জানালেন, ‘ওসি সালাউদ্দিন অল রেডি ডেড।’ আমি নোট নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনও কূল কিনারা পাচ্ছি না। একপাশে দেখলাম র‌্যাব-১ এর সিও তুহিন ভাই ফাস্ট এইড নিচ্ছেন। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর ও থমথমে। জঙ্গিরা হামলা করেছে একটি রেস্টুরেন্টে। জিম্মি করে রেখেছে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের। ঢাকার ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এরকম কোনও ঘটনা আমি কাভার করিনি কখনও। একেবারে যুদ্ধের মতো অবস্থা।

বের হয়ে আসছেন হাসনাত করিমের স্ত্রী সারমিনা করিম

র‌্যাবের পক্ষ থেকে টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ বন্ধ এবং ক্যামেরা দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে রিপোর্টারদেরও। বড় কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে কৌশল নির্ধারণ করছেন। সোয়াতের একটি টিমকে প্রস্তুতি নিতে দেখা গেলো। র‌্যাবের সদস্যরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘটনার আশেপাশে থেকে সব সাংবাদিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে থেকে গেলাম, সঙ্গে এক সহকর্মী। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম সাদা পোশাকের দুই-তিন জন গোয়েন্দা সদস্যের সঙ্গে চৌরাস্তায়। মাঝে কয়েকবার পুলিশ এসে আমাদের জিজ্ঞেস করলো,  আপনারা কারা? ওরা নিজেদের পরিচয় দিলো। তাদের কল্যাণে রক্ষা পেলাম আমরাও। বড় কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন। কিন্তু অপারেশন শুরু হচ্ছে না। আরও কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে দেখা হলো। আমরা একসঙ্গে দাঁড়াচ্ছি না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি। কারণ, একসঙ্গে এত সাংবাদিক দেখলেই সরিয়ে দেওয়া হবে। দূরে গেলে তথ্য হয়তো পাবো, কিন্তু অপারেশনটা নিজ চোখে দেখা হবে না।

নাহ। অপারেশন হলো না। এরইমধ্যে সেহরির সময় হয়ে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ সেহরি খেতে যাচ্ছেন। এ সময় নিরাপত্তায় একটু ঢিলেঢালা মনে হলো। প্রায় ঘণ্টাতিনেক দাঁড়িয়ে ছিলাম। পিপাসা লেগেছে। রাতে খাইনি, প্রচণ্ড ক্ষুধার্তও। এদিকে শোনা যাচ্ছে, সেনা কমান্ডোরা অপারেশনে অংশ নেবেন। অপারেশন হবে ভোরের আলো ফোটার পর। তাই রণে ভঙ্গ দিয়ে আমি বেড়িয়ে এলাম। সোজা ৭৯ নম্বর সড়ক ধরে। এদিকটায় পরিচিত সাংবাদিক ভাই-ব্রাদারদের অনেকের সঙ্গে দেখা হলো।

বের হয়ে আসেন আরেক জিম্ম তাহমিদ হাসিব খান

খাবারের দোকান খুঁজতে খুঁজতে গেলাম গুলশান এক নম্বরে। খাওয়া শেষে ভোর চারটা নাগাদ ফের যখন স্পটে ফিরে এলাম, তখন দেখি অপারেশনের তোরজোর শুরু হয়েছে। কিন্তু কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। আগের জায়গায় আর ফিরে যেতে পারছি না। এরইমধ্যে কয়েকবার গুলির শব্দ ভেসে এলো। একটু হতাশ হলাম। খাবার খেতে বের হওয়াটা উচিত হয়নি। এসময় শুরু হলো বৃষ্টি। ঠাঁই নিলাম এক অ্যাপার্টমেন্টের গ্যারেজে। সেখানে দেখা হলো ডিবির দুই কর্মকর্তার সঙ্গে। এদের একজন দুদফায় ওই রেস্টুরেন্টে ঢোকার চেষ্টারত বাহিনীর দলে ছিলেন। তিনি বললেন, অল্পের জন্য তার প্রাণ বেঁচেছে। তার কাছ থেকে রেস্তোরাঁর পরিস্থিতি কিছুটা জানা গেলো।

রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু

বৃষ্টি থামলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই। রাস্তায় বেরিয়ে আসার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, বিকল্প পথ দিয়ে আগের সেই চৌরাস্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গেলাম ডানের রাস্তায়। ইরান দূতাবাসের সামনে দিয়ে কাছাকাছি চলে গেলাম চৌরাস্তার। পুলিশ বাধা দিলো না ঠিকই, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিসি গুলশান হ্যান্ড মাইক নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া সবাইকে চলে যেতে বলছেন। জায়গা ফাঁকা করছেন। আমি কৌশলে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ির পেছনে একটু অন্ধকার জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আবারও বৃষ্টি এলো। আমি হাঁটছি ফুটপাত ধরে। ভাবছি বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হলে আমাকে ব্যারিকেডের বাইরে আশ্রয় নিতে হবে। একবার ব্যারিকেড পার হয়ে গেলে আর ভেতরে ঢুকতে পারবো না। সিদ্ধান্ত নিলাম ভেতরেই থাকার। ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসলাম ইরান দূতাবাসের সামনে। সেখানে কাকভেজা হয়ে ছোট্ট একটা আশ্রয় পেলাম। দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বৃষ্টির আঁচ গায়ে লাগছে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িতে গিয়ে বসলাম। একটিই মাত্র চ্যানেলের গাড়ি। সারারাত ঘুমাইনি। গাড়িতে বসে ঝিমাচ্ছি। পরিচিত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করে অপারেশন কখন শুরু হতে পারে, তার খোঁজ-খবর নিচ্ছি। এরইমধ্যে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা গাড়িটি সরিয়ে নিতে বললেন। এক সাব ইন্সপেক্টর এসে কিছুটা চোটপাট করে গেলেন। আরেক এডিসির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি আমার ঘনিষ্ঠ। গাড়ি থেকে নেমে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললাম। অপারেশন নিয়ে বিভিন্ন কথা হলো। উনি চলে গেলেন।

ভাবলাম টিভি চ্যানেলের গাড়িতে আর বসা যাবে না। কারণ,  গাড়িটি নিশ্চয়ই বের করে দেবে! আমি ওদের পাশ কাটিয়ে এগোতে থাকলাম সামনের দিকে, ফুটপাত ধরে। হাঁটতে হাঁটতে কাঙ্ক্ষিত সেই চৌরাস্তায়। এখানে থাকতে পারলে অপারেশনটা চাক্ষুষ দেখা যাবে। ভেতরে ভেতরে ভয় করছে। না জানি কে কখন জেনে যায়। কৌশল করে হাতে মোবাইল আর প্যাড নিয়ে এমন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছি, যেন আমিও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্য। এদিকটায় ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবির গোয়েন্দা সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সঙ্গে মিশে আছি।

অভিযানের পর বের হয়ে আসছেন ভারতীয় নাগরিক সত্য প্রকাশ

এদিকে আমার পা লেগে আসছে। কোমর ব্যথা করছে। সারারাত না ঘুমানো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। কষ্ট হচ্ছে। বাহিনীর লোকদের এত কষ্টের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমার নাই।  সহকর্মী সাংবাদিকদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে কথা হচ্ছে মোবাইলে। এক বন্ধুকে বললাম, আমি আর পারছি না। বের হয়ে যাই। ও বললো, কষ্ট করে থাকো। বের হয়ো না। তুমি থাকলে কিছু তথ্য শেয়ারে পাবো। আমিও ভাবলাম, এত কষ্ট যেহেতু করেছি, আরেকটু করি। অপারেশনটা নিজের চোখে দেখি।

এরইমধ্যে এক পুলিশ সদস্যের কাছে ধরা খেলাম। সাদা পোশাকের উনি একটা বাইকের ওপর বসে ছিলেন। উনি উঠে গেলে আমি গিয়ে সেখানে বসলাম। একটু পর উনি ফিরে আসলেন। আমি ভদ্রতা করে উঠে গেলাম। উনি নিজে বসে আমাকেও বসার জন্য বললেন। আমি না বলেছি। উনি জিজ্ঞেস করেলন, আপনি কি পুলিশের? আমি বললাম, ওই রকমই। উনি হাসলেন। বললেন, সাংবাদিক? আমি বললাম, হুম। উনি বললেন, সাংবাদিক তো অ্যালাও না। আপনি এলেন কিভাবে? আমি একটু বিনয় প্রকাশ করলাম। উনি আর কিছু বললেন না। উল্টো তার সঙ্গে আমার একটু খাতির হয়ে গেলো।

অপারেশনের শুরুতে উত্তেজনায় কাঁপছিলাম

সকাল হয়ে গেছে। চারদিকে আলো ফুটছে। সেনাবাহিনীর একটি দুটি গাড়ি আসছে। বোঝা যাচ্ছে তারা বড় কর্মকর্তা। অভিযান যে শিগগির শুরু হবে তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ চলে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। তখন ৭টা বেজে ২০ বা ২৫ মিনিট হবে। হঠাৎ করেই সেনাবাহিনীর একাধিক জিপ এসে চৌরাস্তায় দাঁড়ালো। ভেতর থেকে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছে কমান্ডোরা। উত্তেজনায় আমার বুক ধরফর করছে। কিন্তু হাতের মোবাইলক্যামেরা চালু করার সাহস পাচ্ছি না। নোট তো আরও দূরের কথা। আপাতত মাথায় রাখছি সব। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা একসঙ্গে জড়ো হয়ে গেলেন। তাদের কমান্ডার একটা শর্ট ব্রিফিং দিলেন। তারপর মুভ বলার সঙ্গে সঙ্গে তারা দুভাগে ভাগ হয়ে ফুটপাতে ক্রলিং করে এগোতে থাকলেন। এক দলের পর আরেক দল। এর আগেই সাঁজোয়া যান এসে হাজির হয়েছে। হোলি আর্টিজানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কমান্ডোরা। গলির ভেতর থেকে সংকেত এলো- সাঁজোয়া যান পাঠানোর। মুহূর্তেই লাফিয়ে উঠে পড়লেন কমান্ডোরা। সেই দৃশ্য দেখার মতো। গর্জে উঠে সেগুলো ছুটলো হোলি আর্টজানের দিকে। একটার পর একটা। কিছুক্ষণ পর পর ব্যাকাপ টিম যাচ্ছে। সবার হাত অত্যাধুনিক অস্ত্র। মনে হচ্ছে, সিনেমা দেখছি।

তাহানা তাসমিন

৭টা ৩৫ মিনিটে কয়েকজন জিম্মি বেড়িয়ে এলেন। নারী-পুরুষ-শিশু। অন্যদের মতো আমিও ভিডিও করলাম। প্রথমে দুজন তরুণী। পরে জানতে পেরেছি এই দুজন ফাইরুজ মালিহা ও তাহানা তাসমিয়া। তাদের চোখে-মুখে আতঙ্ক আর ভয়। এরপর আরও কয়েকজন। প্রকৌশলী হাসনাত করিম এলেন পরিবারসহ। ছোট্ট ছেলে, এক মেয়ে আর স্ত্রী শারমিনা এলেন সবার পেছনে। এর আগেই ভারতীয় নাগরিক সাত প্রকাশ বেরিয়ে এলেন। তাহমিদ দুই হাত উঁচু করে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমার বিপরীত দিকের একটি বাসায়। যেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবস্থান করছিলেন। এক বিদেশি নাগরিককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বের করে আনা হলো। তাকে দ্রুত তুলে দেওয়া হলো অ্যাম্বুলেন্সে। বেরিয়ে এলেন শ্রীলঙ্কান দম্পতিও।

এদিকে গুলি শুরু হয়ে গেছে। ঠা...ঠা...ঠা...ঠা... টানা গুলির শব্দ। মাঝে মধ্যেই গ্রেনেড বিস্ফোরণের মতো বিকট আওয়াজ। কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। বিরতি দিয়ে দিয়ে চলছে গুলি। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো ফায়ার সার্ভিসের। ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি প্রস্তুতই ছিল। গাড়িটি স্টার্ট নিলো। পর মুহূর্তেই সেনা কর্মকর্তারা বললেন, গাড়ি নয় ফায়ার স্ট্রিংগুইশার নিয়ে যাওয়ার জন্য। রেস্তোরাঁর সামনে ফায়ারের গাড়ি যাওয়ার জায়গা নেই। কারণ, সেখানে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান রয়েছে। স্ট্রিংগুইশার হাতে দৌড় দিলেন ফায়ারকর্মীরা। তখনও গোলাগুলি চলছে। ঠা...ঠা...ঠা... আওয়াজ আসছে। একটু পর ডাক এলো বোম্ব ডিসপোজাল টিমের। র‌্যাবের বোম্ব টিম চলে গেলো ভেতরে। এভাবে আরও কিছুক্ষণ চলার পর সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গুলির আওয়াজ বন্ধ হলো। মনে হচ্ছে অপারেশন শেষ। কিন্তু ভেতরের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এই মুহূর্তেই রাস্তার মোড়ে আসলেন সেনা প্রধানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আইজিপি এগিয়ে গেলেন তার দিকে। এর কিছুক্ষণ পরই সেনা প্রধানসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এগিয়ে গেলেন হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর দিকে।

হলি আর্টিজান থেকে বের হয়ে আসেন শ্রীলঙ্কার দম্পতি

কমান্ডোরা কেউ কেউ ফিরছেন। তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তি। বোঝা যাচ্ছে অপারেশন সাকসেসফুল। জঙ্গিরা হয়তো পাকড়াও হয়েছে, নয়তো মারা পড়েছে। এরপর আরও ঘণ্টাদুয়েক দাঁড়িয়ে থাকলাম। লাশ বের করার অপেক্ষায়। শোনা যাচ্ছিল ভেতরে অনেক লাশ। কিন্তু সঠিক তথ্য পাচ্ছি না। ঠিক কতজন? নাহ, তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। একেকজন একেক সংখ্যা বলছে। কেউ বলছে ২০, কেউ ২২, কেউ ২৪। পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দুপুরে আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হলো অপারেশনের বিস্তারিত। আমি স্পট থেকে বাসায় ফিরলাম। একটু ঘুমিয়ে নিয়ে ছুটলাম অফিসের দিকে। কারণ, চোখে দেখা ঘটনা তো জানাতে হবে পাঠকদের।

ছবি: নুরুজ্জামান লাবু

/এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

হলি আর্টিজান কেন বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা?

হামলার পরিকল্পনা রাজশাহীতে, কৌশল নির্ধারণ গাইবান্ধায়, চূড়ান্ত অপারেশন প্ল্যান ঢাকায়

হলি আর্টিজান এখন

 

দুঃস্বপ্নের রাত, মমতার ইতিকথা

অবিন্তা নেই, বেঁচে আছে তার স্বপ্ন

তুমি কোথায়, ‍গুলশানে জঙ্গি হামলা!

দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন তারা

‘হয় আমি মরবো, না হয় ওদের মারবো’

এসি রবিউলের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন এডিসি আব্দুল আহাদ

গুলশান হামলায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠান নিয়ে দূতাবাসগুলোয় সতর্কতা

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ