X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘ফুটপাতে যে শীতের কাপড় কিনতে পারছি, এটাই অনেক’

আতিক হাসান শুভ
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:০৫আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:১৮

পৌষের আগেই রাজধানীতে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। এতে নাকাল রাজধানীবাসী। শীত শুরুর অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও এতদিন শীতের কাপড় কেনার আগ্রহ দেখায়নি নগরবাসী। তবে গত এক সপ্তাহে নড়েচড়ে বসেছে সবাই। শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাত—সব জায়গায় শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে বিভিন্ন শপিং মলের তুলনায় ফুটপাতেই হিড়িক পড়েছে বেশি।

সরেজমিন পুরান ঢাকার সদরঘাট ও লক্ষ্মীবাজারের ফুটপাতে দেখা গেছে, স্বল্প মূল্যে প্রয়োজনীয় ও পছন্দনীয় পোশাক কিনছেন ক্রেতারা। ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে যেকোনও বয়সী মানুষের শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতে। ভিড় করে দাঁড়িয়ে বেছে বেছে পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের কাপড় কিনছে মানুষ।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব এলাকার ফুটপাতগুলোয় নিম্নবিত্তের চেয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি।

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকা থেকে ছেলেমেয়েদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন পেশায় গৃহিণী জেবুন্নেছা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সবারই আগেরবারের শীতের কাপড় ছিল। সেটাই পরতে শুরু করেছি। আমার ছেলে কলেজে পড়ে, মেয়ে হাইস্কুলে পড়ে। তারা জেদ ধরেছে শীতের নতুন পোশাকের জন্য। কিন্তু ওদের বাবা এখনও বেতন পাননি। গতকাল রাতে বেতন নিয়ে বাসায় এসেছে, তাই আজ বিকালে বের হয়েছি ওদের পছন্দের জ্যাকেট হুডি কিনতে।

ফুটপাত থেকে কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ফুটপাতে কাপড়ের মান ওত বেশি খারাপ না। তা ছাড়া ফুটপাতে পছন্দনীয় জামাকাপড় পাওয়া যায়। দোকান থেকে এখানে অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। এখানে আসার আগে আমি প্রথম গ্রেট ওয়াল মার্কেটে গিয়েছি। সেখানে একটা হাইনেক গেঞ্জির দাম চেয়েছে ৫০০ টাকা। দোকানদার ৪০০ টাকার কমে দিতে রাজি হননি। সেই হাইনেক গেঞ্জি এখান থেকে কিনেছি ২০০ টাকা দিয়ে। ফুটপাত বলে এটাকে অন্যভাবে দেখার কিছু নেই। ফুটপাতে যে আমরা শীতের কাপড় পাচ্ছি, এটাই আমাদের জন্য অনেক।

এসব এলাকার ফুটপাতগুলোয় নিম্নবিত্তের চেয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি

প্রায় ২০ মিনিট ধরে কাপড়ের স্তূপ থেকে একটা সোয়েটার আর একটা ফুল হাতা গেঞ্জি বাছাই করে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মবিন মিয়া। অনেক দরদামের পরে একটা পলিথিনের ব্যাগে নিলেন পোশাক দুটি। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বলেন, স্ত্রী ও ছেলের জন্য কিনেছেন এই পোশাক।

ফুটপাতে কেনাকাটার বিষয়ে মবিন মিয়া বলেন, এখন যেকোনও জিনিস কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের প্রথম পছন্দ ফুটপাত। কারণ, প্রয়োজনীয় ও পছন্দনীয় সব জিনিস স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় ফুটপাতে। দীর্ঘ সময় ধরে বাছাই করে কাপড় কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, কম দামের পোশাকে একটু-আধটু সমস্যা থাকে। তাই দেখেশুনে কিনলাম, যেন কাপড়ে কোনও সমস্যা না থাকে।

রিকশা থামিয়ে ফুটপাত থেকে শীতের কাপড় কিনতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন চালককে। নিজের জন্য শীতের কাপড় কেনার লক্ষ্যে রিকশা থামিয়ে পোশাক দেখছিলেন ইদ্রিস আলী নামের এক রিকশাচালক।

বাংলা ট্রিবিউনকে ইদ্রিস বলেন, ‘শীতের রাইতে গরম কাপড় ছাড়া রিকশা চালানো যায় না। অনেক ঠান্ডা লাগে। বাতাসের মধ্য দিয়া রিকশা চালানো মেলা কষ্টের কাম। তাই বড় দেইখা গরম একটা সোয়েটার কিনলাম।’

এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় ভিড় যেমন বেড়েছে, বেচাকেনাও বেড়েছে বিক্রেতাদের। এতে কিছুটা স্বস্তিবোধ করছেন তারা।

রিকশাচালক থেকে শুরু করে অনেক ভদ্রলোক এখান থেকে পোশাক কেনেন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় শীতের কাপড় বিক্রেতা মো. আনিস বলেন, এক মাস হলো শীতের পোশাক বিক্রি শুরু করেছি। এতদিন তেমন বেচাকেনা ছিল না। কারণ, তেমন শীত ছিল না। অপেক্ষায় ছিলাম কবে শীত বাড়বে। এখন শীত পড়তে শুরু করেছে, তাই বেচাকেনাও বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দিনে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যেতো। চাঁদা ও নিজের খরচের পর পকেট খালি থাকতো। এখন আলহামদুলিল্লাহ দৈনিক পাঁচ-সাত হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। আশা করি আগামী এক সপ্তাহ এমন বেচাকেনা হলে চালান উঠে আসবে।

লক্ষ্মীবাজার এলাকার শীতের কাপড় বিক্রেতা তানভীর বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শীত কম, তাই বেচাকেনাও তেমন সুবিধার না। তবে এই এলাকায় যে কয়জন বিক্রেতা আছে, সবার কমবেশি ভালো বিক্রি হয়। এখান থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে ভালো ও মানসম্মত শীতের কাপড় কেনা যায়, যেটা শপিং মলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ জন্য এখানে সবাই আসে।

ফুটপাত থেকে কারা সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করে, এমন প্রশ্নে এই বিক্রেতা বলেন, এখান থেকে সবাই জামাকাপড় কেনে। রিকশাচালক থেকে শুরু করে অনেক ভদ্রলোক এখান থেকে পোশাক কেনেন। কে ধনী আর কে গরিব, সেটা তো কারও গায়ে লেখা থাকে না। এভারেজ সবাই আসে। শপিং মলের তুলনায় কম দামে পেলে মানুষ তো কিনবেই!

/এনএআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
৩০০ ফুট সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ‘ওভার স্পিড’ মামলা
সড়কে অসুস্থ হয়ে আনসার সদস্যের মৃত্যু
বুদ্ধ পূর্ণিমা ঘিরে কোনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ দেখছে না ডিএমপি
সর্বশেষ খবর
আজ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস
আজ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদের পরিবারের সাক্ষাৎ
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদের পরিবারের সাক্ষাৎ
দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন
দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরনায় ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরনায় ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়