মঙ্গলবার বিকাল ৪টার কাছাকাছি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে ক্যানোপি ১-এর দিকে আসার জায়গাটিতে প্রবাসীদের জটলা। যাত্রীদের কোনও সমস্যা বা অন্যকিছু ঘটেছে কি না দেখতে কৌতুহলবশত সামনের দিকে এগোনো। গিয়ে তেমন কিছুই দেখা গেলো না । ক্যানোপি ১-এর দিকে যেতে বসানো দুটি টেলিফোন বুথের সামনে জটলা। সবাই তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে নির্ধারিত স্থান জেনে নিয়ে তারপর বের হবেন।
সেখানে দেখা যায়, এক নারী কথা বলছেন, ‘মা, এক নম্বর গেটে আসো, আমি এই দিকে দিয়েই বের হবো’।
কথা শেষ করে বের হওয়ার মুহূর্তে কথা হয় ওই নারীর সঙ্গে। দীর্ঘ ৩ বছর পর এসেছেন জর্ডান থেকে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ওই নারী জর্ডানে কাজ করেন।
প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ফেসবুকে দেখলাম বিমানবন্দরে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। আজ নিজ চোখে দেখলাম। টেলিফোনের কথাটি আগেই শুনেছিলাম। আমাকে নিতে আমার বয়স্ক মা এসেছেন। বাইরে অপেক্ষা করছেন তিনি। ক্যানোপির সামনে থাকা ফোন ব্যবহার করে তাকে ১ নম্বর গেটে আসতে বলালাম।’
আমিনা নামে ওই নারী বললেন, বিমানবন্দরের বর্তমান চিত্র অনেক ভালো। এই যে আমি আমার মাকে সহজেই আসতে বলতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
ওমান থেকে আসা আরেক প্রবাসী সোলাইমান। তিনিও অপেক্ষা করছিলেন টেলিফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। স্বজনদের তিনিও ক্যানোপি ১-এ আসতে বলছিলেন।
সোলাইমান বেশ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, এতদিন তো শুধু ফেসবুকে দেখেছি। এখন নিজে চোখে দেখলাম। আবার কথাও বললাম। আমার কাছে খুব ভালো লাগলো।
তিনি বলেন, লাগেজ-বেল্ট সময়মতো পাওয়া, অযথা হয়রানির শিকার না হওয়া, এ ধরনের সুবিধা পেলেই আমাদের মতো প্রবাসীরা খুশি।
তিনি বলেন, আমাদের তো অন্য কিছু চাওয়ার নেই। আমরা শিক্ষিতও না। বিমানবন্দরের অনেক কিছু আমরা ওইভাবে বুঝতেও পারি না। আমাদের একটু হাসি-মুখে সহায়তা করলেই আমরা খুশি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে যে পরিবেশ দেখলাম, এটি অব্যাহত থাকলে সব প্রবাসীই খুশি হবে।
জানা যায়, বিমানবন্দরের এই টেলিফোন বুথটি প্রায় বছরখানেক আগে স্থাপন করা। কিন্তু সেটি ক্যানোপির (বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার আগে যানবাহনের জন্য যাত্রীরা যেখানে অপেক্ষা করেন) সামনে ছিল না। অতিসম্প্রতি সেটি গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে ক্যানোপি ১-এর লাগোয়া স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে এটি এখন সবার চোখেও পড়ছে। অনেকে ব্যবহারও করছেন।
অনেক প্রবাসী বিমানবন্দরে নেমে তাদের জন্য অপেক্ষা করা আত্মীয়-স্বজনকে খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়েন। তাদের ফোন করার জন্য নানা উপায় খুঁজতে হতো। বর্তমানে টেলিফোন বুথটি সামনে আনার পর এই সমস্যাটি একেবারে দূর হয়ে গেছে। তারা সহজেই ফোন করে যে টার্মিনাল দিয়ে বের হবেন সেটি বলে দিচ্ছেন।
দেশে আগত প্রবাসীরা বলছেন, ফ্লাইট থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন, লাগেজ পাওয়া এখন অনেক সহজ হচ্ছে। তারা এমনটিই চান।
ওমান থেকে আসা আরও এক প্রবাসী আজাদ বলেন, বিমানবন্দরের চিত্র দেখে আমরা খুব খুশি। বিশেষ করে এই টেলিফোন আর দ্রুত লাগেজ পাওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে অনেক ভালো লাগছে।
সম্প্রতি ইতালি প্রবাসীর ইউরো হারানোর ঘটনায় বিমানের ৫ কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা, লাগেজ তল্লাশির নামে আরেক প্রবাসীকে হেনস্থা করার অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন প্রবাসীরা।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, টেলিফোন বুথটি আগে থেকেই ছিল। এখন এটি সামনে নিয়ে আসায় আরও সহজভাবে প্রবাসীরা ব্যবহার করতে পারছেন।
তিনি বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়েই সেবা নিশ্চিত করতে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষসহ সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। প্রবাসীসহ এই বন্দর ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।