দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৯৮ আসনে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭৮ সদস্যের মধ্যে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৮ জন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
একাদশের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া দুই জনসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নতুন মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ১৪ জন নেতা। অপরদিকে একাদশ সংসদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, এমন চার জন নেতা এবার মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সভাপতিমণ্ডলীর ১৬ জন সদস্যদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ১৪ জন। সম্পাদকমণ্ডলীর ৩৩ জন সদস্যের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ১৯ জন। এর মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের চার জনের সবাই এবং আট জন সাংগঠনিক সম্পাদকের ছয় জন মনোনয়ন পেয়েছেন। কমিটির ২৭ জন কার্যনির্বাহী সদস্যের মধ্যে সাত জন মনোনয়ন পেয়েছেন।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে। ১৯৯৬ সাল থেকে টানা এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন শেখ হাসিনা।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও সিমিন হোসেন রিমি মনোনয়ন পেয়েছেন।
এদের মধ্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান এবার নতুন মনোনয়ন পেয়েছেন। অবশ্য এই তিন নেতা একাদশে মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও নবম ও দশম সংসদে দলের এমপি ছিলেন।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে মনোনয়ন পাননি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও জেবুন্নেছা হক। অবশ্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের আসনে এবার তার ছেলে স্টার সিনেপ্লেক্সের কর্ণধার মাহবুবুর রহমান রুহেল মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র।
গত তিন টার্মের ধারাবাহিকতায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল-আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। অপরদিকে দশমের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম একাদশে বঞ্চিত হলেও এবার মনোনয়ন পেয়েছেন।
নোয়াখালী-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়ে পুনরায় লড়বেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আসনটি থেকে টানা তিন বারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এবার লড়বেন চতুর্থবারের মতো।
আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত এমপি দলের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এবার মনোনয়ন পাননি। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তার ছেলে রাশেক রহমান।
দলের আট জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে এবার ছয় জন মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা হলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এদের মধ্যে আহমদ হোসেন, এসএম কামাল ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। এবার নমিনেশন পাওয়া আফজাল হোসেন একাদশের শেষ সময়ে উপনির্বাচনে দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজিত রায় নন্দী মনোনয়ন পাননি। বিএম মোজাম্মেল হক নবম সংসদের এমপি ছিলেন। সুজিত রায় নন্দী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির নির্বাচনি এলাকা একই।
সম্পাদকমণ্ডলীর অপর সদস্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল মনোনয়ন পেয়েছেন। এদের মধ্যে শাম্মী আহমেদ, ফরিদুন্নাহার লাইলী ও ড. সেলিম মাহমুদ এবার নতুন নমিনেশন পেয়েছেন।
দলের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান (সংরক্ষিত আসনের এমপি), আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, , মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান এবং উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম মনোনয়ন পাননি। অবশ্য এদের মধ্যে কেউ কেউ দলের মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেননি।
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, দীপঙ্কর তালুকদার, ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক আলী আরাফাত, সানজিদা খানম, ইকবাল হোসেন অপু ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মনোনয়ন পেয়েছেন। এদের মধ্যে ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সানজিদা খানম, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নতুন করে মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া অধ্যাপক আলী আরাফাত উপনির্বাচনে একাদশের এমপি হয়েছেন।
অপর কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বিপুল ঘোষ, আমিরুল আলম মিলন, বেগম আখতার জাহান, প্রফেসর মেরিনা জাহান, পারভীন জামান কল্পনা, সফুরা বেগম রুমি, তারানা হালিম, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজি, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি ও তারিক সুজাত মনোনয়ন পাননি। এদের মধ্যে আমিরুল আলম মিলন ও প্রফেসর মেরিনা জাহান উপনির্বাচনে একাদশ সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দলের ৪৪ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু, রমেশ চন্দ্র সেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ডা. আ ফ ম রুহুল হক ও সালমান ফজলুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও একেএম রহমতুল্লাহ একাদশের এমপি হলেও দ্বাদশে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন-
দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি আ.লীগ