X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণমাধ্যমে বিভীষণ

তুষার আবদুল্লাহ
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:০৩আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:০৩

তুষার আবদুল্লাহ আমি লজ্জিত। নিজ সহকর্মীদের নিয়ে। পেশার মানুষদের বোকামি দেখে। গণমাধ্যমকে কীভাবে পুষ্টিহীন করে তুলছে পেশার মানুষেরাই। গণমাধ্যমকে বিকলাঙ্গ করার জন্য বাইরের শত্রু’র প্রয়োজন নেই। নিজ ঘরেই আছে বিভীষণ। এখানে স্বীকার করতে হবে সকলে সাংবাদিকতা করতে এই পেশায় আসেননি। আবার নিজ যোগ্যতায় ফোলা আঙুল হননি সকলে। পরজীবী অর্কিড হয়েই কেউ কেউ ফুটে আছেন। যোগ্যতার ঘাটতিতে থাকা মানুষেরা ধীরে ধীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে। লক্ষ্য, যোগ্যদের কোণঠাসা করা। যোগ্যদের সহজ-সরল সৃজনশীল বিস্তার ঘটানোই তাদের মিশন। আজকাল প্রমাণ বা বাস্তবের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না থাকলেও কারও নামের সঙ্গে, কাজের সঙ্গে মিথ্যের লেবাস এঁটে দেওয়া সহজ। সেই কাজটি একে-অপরের বিরুদ্ধে দিব্যি করে যাচ্ছি আমরা। প্রবাসে বসে দেশে সাংবাদিকতা যারা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা বচন চালিয়ে যাচ্ছেন। আর দেশের ভেতরেও একে-অপরের বিরুদ্ধে যেন ‘জেহাদে’ নেমে পড়েছি আমরা। সাংবাদিকতা আড়াল হয়ে যাচ্ছে নিজেদের ভেতরকার সাংঘর্ষিক আবহাওয়ায়।

সব পেশার মতো সাংবাদিকতা পেশার মানুষদের ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সেই ভুল প্রকাশ্যে আনার দায়িত্বটি কেন সহকর্মী হিসেবে আমি নেব? অপ্রমাণিত ও মিথ্যে তথ্য সরবরাহ করেও আমরা পাশের সহকর্মীকে বিব্রত করছি। যে বিষয়ে অন্য সহকর্মীর নামে কুৎসা ছড়াচ্ছি, সঠিক রিপোর্টিং করলে দেখা যাবে, ওই দোষে আমি নিজেই দোষী। কেন করছি এ কাজগুলো? যখন নিজের যোগ্যতা নিয়ে আমি নিজেই আত্মবিশ্বাসী নই, আমরা প্রয়োজনের সঙ্গে জড়াচ্ছি, আত্মার নয়। এই বোধ গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমার, আমাদের থাকা উচিত। কিন্তু দেখছি আমরা ক্রমশই বোধশূন্য হয়ে পড়ছি।

সহকর্মীদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কটা ঈর্ষার হতেই পারে। যা তাড়িত করবে কাজের মাধ্যমে একজন, আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। সেটা অবশ্যই কাজের মাঠে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। মহল্লার খেলার মাঠে দেখেছি, যে দলটি খেলে জিততে পারবে না নিশ্চিতভাবে জানতো, তারাই গোল দিতে না পেরে খেলার মধ্যখানে বা শেষে গোলমাল বাঁধাতো। প্রতিদ্বন্দ্বী যেই হোক- ছোট দল, বড় দল, উভয়কেই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মোকাবিলা করাটাই বীরের কাজ। খেলার মাঠে যারা গোল বাধায় তাদের কেউ কখনও সেরা বা বীর বলে স্বীকৃতি দেয় না।

গণমাধ্যমকে সুষম ও পুষ্টিকর শুধু নিজ স্বার্থে হতে হবে তা নয়। রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, রাজনীতি ও জনগণের স্বার্থেই এর প্রয়োজন। আমরা স্বাধীকার আন্দোলন, স্বৈরাচার আন্দোলনের সময় দেখেছি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গণমাধ্যম কীভাবে সহচরের ভূমিকা পালন করেছে। রাজনীতির শুদ্ধতা এবং শুভচিন্তার অনুশীলন, সর্বোপরি বাংলাদেশের বিজয় উদযাপন প্রবাহমান রাখতে, ‘আত্ম-কাজিয়া’ থেকে বেরিয়ে এসে, নিজের কাজ অর্থাৎ সাংবাদিকতায় মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

গণমাধ্যমের ভেতরকার দূষিত ও গুমট আবহাওয়ার জন্য বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তাদের আমি দায়ী করি না। কারণ গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর লু’ হাওয়া প্রবাহিত করার নকশাগুলো,আমরাই তাদের এঁকে দেই। নকশায় নীল রঙ ঢেলে দেওয়ার কাজটিও আমাদের করা। কালো পিচ ঢেলে সেখানে নাম খোদাই করার কাজটিও আমরাই করি।

স্মরণে এলো– একুশে টেলিভিশন বন্ধ হওয়ার পরে, এনটিভি নামের একটি চ্যানেল অন এয়ারে আসে। সেখানে একুশের সহকর্মীদের প্রায় সকলেই যোগ দিতে পারলেন। আমরা কয়েকজন পারিনি। কারণ আমরা নাকি ‘আওয়ামী সাংবাদিক’। কাজটি কারা করেছিলেন? আমাদের সহকর্মীরাই।

আমাদের সকলকেই স্মরণে রাখা দরকার, এই পেশার সবার আমলনামাই প্রকাশিত। সাময়িক সম্পাদনা করে, মুছে ফেলা যাবে না। সত্যের জলছাপ রয়েই যাবে। তাই অপকাজে বৃথা ঘাম না ঝরিয়ে আসুন, মাঠে মেধার পরীক্ষায় মনোযোগী হই। বিভীষণের রূপ থেকে বেরিয়ে এসে কুশলী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠি একে অপরের। মেধার লড়াইয়ে যদি হেরেও যাই, জয়ীদের প্রতি নিরন্তর আমার টুপি খোলা অভিনন্দন।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ