X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেয়াল চাপা জীবন

তুষার আবদুল্লাহ
১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৬:০৪আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৬:০৪

তুষার আবদুল্লাহ আমরা হয়তো খুব বড় কিছু নিয়ে ভাবি। চিন্তিত হই। জাতীয় বিতর্ক তৈরি করি, যোগ দেই। ইউপি নির্বাচন, ধর্ষণ নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, পরিবেশ, বাণিজ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন, এসব নিয়ে ‘তর্কাতর্কি’কে বড় তুচ্ছ মনে হয়। কী এসে যায় জীবনে এগুলো নিয়ে আলোচনা না করলে? যখন জীবন চাপা পড়ে যায় দেয়ালে।

দৃশ্যটি সরছে না চোখ থেকে। গলিপথটি আমার চেনা। আজিমপুরের দিকে গেলে ওই পথে প্রায়ই যাওয়া হয়। মেয়ে যখন জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল, ওয়েস্ট অ্যান্ড স্কুলে সিট পড়েছিল, তখন তো টানা একমাস গেছি ওই পথে। সপ্তাহ খানেক আগে গিয়েছিলাম আজিমপুর। দেখি পুরনো কলোনি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। উঠবে বহুতল সরকারি আবাসন। আজিমপুরের এই পুরনো কলোনি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কত ইতিহাস। আজিমপুর কলোনিতে গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর বাসায় আড্ডা দেওয়ার স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল। সেদিন ছেলেকে নিয়ে আজিমপুর কলোনি ঘুরতে ঘুরতে খুঁজছিলাম কাওসার ভাইয়ের কলোনিটি। দেখলাম জানালা দরজা খুলে নেওয়া শেষ। কাঠামোটা দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে দেয়াল ভাঙার কাজ চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সেদিন ছেলেকে নিয়ে সরে এসেছিলাম।

আমাদের এখানে নির্মাণ কাজে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না। সরকারি, বেসরকারি দুই খাতেই। নগরজুড়ে নানা নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ চলছে। তার মধ্যে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল। নগরবাসীর স্মৃতিতে থাকার কথা সায়েন্সল্যাব মোড় এবং ভাটারা এলাকায় ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের সময় গার্ডার ধসে প্রাণহানীর কথা। ভুলে যাওয়ার কথা নয় নির্মাণাধীন ভবন থেকে পান্থপথে পথচারীর মাথায় ইট পড়ে মৃত্যুর ঘটনা।

এমন অসচেতন নির্মাণ পর্বে আহত-নিহতের ঘটনা কম হয়নি। তারপরও সচেতনতা তৈরি হয়নি। নিয়ম রক্ষার্থে সাবধান বানীর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয় সুরক্ষা ছাড়াই। শুধু যে পথচারীর মৃত্যু ঘটছে, তা নয়। নির্মাণ শ্রমিকদেরও প্রাণহানী ঘটছে।

স্কুল ছাত্র জিসান যে দেয়ালে চাপা পড়লো, সেই দেয়ালের পাশে নর্দমা তৈরি হচ্ছিল ঝুঁকি নিয়েই। পুরনো দেয়াল, তার পাশে নর্দমা। এ বিষয়ে পিলখানা গণপূর্ত বিভাগ সর্তক করেছিল দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গণপূর্ত বিভাগের সতর্কতাকে আমলে নেয়নি। তারা নর্দমা নির্মাণ কাজ চালিয়েই গেলো। ফলাফল বাবা’র হাত ধরে স্কুলে যাত্রা করা জিসান দেয়াল চাপা পড়ে প্রাণ হারালো।

আমাদের বসবাস রাজধানী কিংবা ছোট কোনও শহরেই হোক, আমরা মৃত্যুর ফাঁদের মধ্যেই বসবাস করি। অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ, আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সামগ্রীর বেচাকেনা সবই চলছে। যতটা সরকারি দফতর, ততটাই ব্যক্তিগতভাবে আমরা এই ফাঁদ তৈরি করে রাখি। নিজেরাই আটকা পড়ে যাই সেই মৃত্যু ফাঁদে। জোর দিয়ে বলতে পারছি না, জিসানই সর্বশেষ। কারণ সরকারি দফতর মোটেও আত্মগ্লানীতে ভুগে শুদ্ধ হবে কিনা জানি না। নিজেরাও শুধরাতে পারলাম, সেই দাবিও করারও আস্থাহীনতায় আছি। তাই দেয়ালে চাপা পড়া দুঃস্বপ্নের জীবনের কাছে, জীবনের চাবি তুলে দিয়ে পথে নামছি।

আপাতত সাবধানে পথ চলছি। তবে অন্যের বেপরোয়া ও অসাবধান চলাচল, আমার যাপন বিপন্ন করে তুলতে পারে যে কোনও মুহূর্তেই। অতএব একা নয়, দরকার সকলের সতর্ক যাপন।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ