X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

সুর নরমে যুক্তরাষ্ট্র

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
৩১ আগস্ট ২০১৬, ১৪:৪২আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০১৬, ১৫:০৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা একদিনের ঝটিকা সফর করে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। যা অনুধাবন করা গিয়েছিল আগেই, সেকথা শোনা গেলো কেরির নিজের মুখেই। নিরাপত্তার প্রসঙ্গটা গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা ছিল এবং পেয়েছেও তাই। সাংবাদিকদের কাছ থেকে মাত্র দুটি প্রশ্ন নিয়েছেন কেরি। বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে তার দেশ। এ ব্যাপারে দুই দেশ বাড়তি পদক্ষেপ নেবে, যেন উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
তবে সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ বিষয়ে দ্বিমত যে রয়েছে দু’দেশের অবস্থানে তা আরও একবার বোঝা গেল। তরুণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় জড়িতদের সঙ্গে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর বাংলাদেশের অবস্থান সেই আগের মতোই যে, স্বদেশে গড়ে ওঠা জঙ্গিদের সঙ্গে আইএস বা আল-কায়েদার সরাসরি কোনও সম্পর্ক এখনও পাওয়া যায়নি।
গণতন্ত্র নেই বলে যে ধারণাটি বিএনপি ও সুশীল সমাজের একটি অংশ বারবার সামনে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে, জন কেরির সফরে তা উচ্চারিত হয়েছে খুবই ক্ষীণভাবে। এতে বোঝা যায় ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের একটি শীতল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও বর্তমানে সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সেই নির্বাচনের পর যতই দিন গড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেই তাগিদ বেশি লক্ষ করা গেছে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার।
জন কেরি ঢাকা থেকে সরাসরি গিয়েছেন দিল্লি। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত স্ট্র্যাটেজিক ডায়লগে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ থাকবে। কারণ বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি ভারতের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই শেখ হাসিনার সরকারের স্থায়িত্ব দুই দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।

বিষয়টি আচমকা ঘটেনি। বাংলাদেশে ভোট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কিছু ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। যে জামায়াতকে এক সময় যুক্তরাষ্ট্র মডারেট ইসলামিক দল বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল, একটু দেরিতে হলেও যুক্তরাষ্ট্র অনুধাবন করছে বিএনপি’র মিত্র জামায়াতের সঙ্গে আইএসআই ছাড়াও অন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোরও যোগসাজস রয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা উপজাতিদের নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাতেও যে জামায়াত যুক্ত–এমন খবরও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাছে আছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে স্বাক্ষাৎ দিয়েছেন নিজ দেশের দূতাবাসে। কিন্তু এ থেকে যে খুব একটি ফল লাভ হয়নি সেটা বোঝা গেছে বিএনপি নেতাদের বডি ল্যাংগুয়েজেই। বিএনপি’র প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা তারা পাবেন আগামী দিনগুলোতে। আসলে দেশে বিরোধী দলের সেই রাজনৈতিক জোর যে আর নেই তা স্পষ্ট হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। যুক্তরাষ্ট্র বুঝে নিয়েছে বাইরে থেকে হাওয়া দিয়ে কোনওে দলকে বেশিক্ষণ ভাসিয়ে রাখা যায় না। ড. ইউনূসের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক খারাপ হওয়াটা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করেনি। কিন্তু নিজের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে গেলে এসব ব্যক্তিগত ইস্যুকে মনে রাখেনা কোনও দেশ। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সে পথেই হাঁটছে। হোয়াইট হাউজ বাংলাদেশে সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভিন্নমতাবলম্বী এবং সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের জন্য যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করে, তেমনি মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এর লক্ষ্য অর্জন ও জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির জন্য হাসিনা সরকারের প্রশংসা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার বিষয়টি ফের সামনে এসেছে এই সফরের মাধ্যমে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ‘নিক্সন-নীতির’ সত্যিই কোনও পরিবর্তন হলো কিনা, তা এখনই বলা যাবে না। তবে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো দেশটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নতুন ভাবনা জাগছে বলেই ধারণা দেয়। দর্শনার্থী বইয়ে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে জন কেরি লেখেন, ‘একটি সহিংস ও কাপুরুষোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে সাহসী ও উজ্জ্বল এক নেতৃত্বকে কেড়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এখন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে তারই কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু হতে পেরে গর্বিত এবং তার সেই স্বপ্নপূরণে দৃঢ় সমর্থক। আমরা শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’ এই বক্তব্য শেখ হাসিনার প্রতি মার্কিন প্রশাসনের আস্থারই দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশ নিয়ে নয়া মার্কিন মনোভাবকে শেখ হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে দাবি করা যায়। মাত্র বছর দুয়েক আগেও পরিস্থিতিটা ভিন্ন ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের দাবি অগ্রাহ্য করে, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে না দাঁড়িয়েই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। গোটা ঘটনার জেরে সহিংসতা তুঙ্গে ওঠে। তখনই প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে হাসিনার অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলোর সময়ও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রতিক্রিয়া ছিল বাংলাদেশবিরোধী। কিন্তু দেশের ভেতরে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতি বড় রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকার পরও দৃঢ়তার সঙ্গে জঙ্গি মোকাবিলা করে চলেছেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টাও একইভাবে দৃশ্যমান। এমন বাস্তবতায় জন কেরিকে বলতেই হয় যে এক বিস্ময়কর সাফল্যের গল্প বাংলাদেশ।

দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিমা বিশ্বের উচিত বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা। জামায়াতসহ জঙ্গি গোষ্ঠীর হিংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য দেশের পরিস্থিতি কোনওভাবেই যেন আফগানিস্তান বা পাকিস্তান না হয় সেই নিশ্চয়তা কেবল সম্ভব বর্তমান সরকার যেভাবে এই গোষ্ঠীকে মোকাবিলা করছে তার প্রতি আস্থাশীল থাকা। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের ফিরিয়ে আনা ও জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ব্যাপারে কথা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার বাস্তবায়ন কতদূর তা সময়ে বোঝা যাবে। 

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তৃণমূলের আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
তৃণমূলের আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
জমি নিয়ে বিরোধ, বৈদ্যুতিক শকে চাচাতো ভাইকে ‘হত্যা’
জমি নিয়ে বিরোধ, বৈদ্যুতিক শকে চাচাতো ভাইকে ‘হত্যা’
আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং
আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ