X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটারের ইশতেহার

তুষার আবদুল্লাহ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৯আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:২৯

তুষার আবদুল্লাহ সৈয়দপুর উড়ে এলাম উড়োজাহাজে। মূল গন্তব্য রংপুর। ইচ্ছে হলো মহাসড়ক ধরে না গিয়ে গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে যাওয়ার। ফসলের মাঠের রঙ এখন সবুজ। শরতের দুপুর দেখার লোভ। কতদিন দেখি না গ্রামের অলস দুপুর। নিজেরও আরেকটু আলসে হওয়ার ইচ্ছে হলো। ইজিবাইক নিয়ে সহজ পথ ধরি। মাটির ঘর উঠোন পেরিয়ে যাচ্ছি। নারী, কিশোরীরা আয়েশ করে আলাপ জমিয়ে দিয়েছে। বাজার-হাটও বিশ্রামে। বন্ধ দোকানের সামনের আড্ডায় ক্লান্তি নেই। ফসলের মাঠের পাশে মাচা বেঁধে সুখনিদ্রায় কৃষক। ইজিবাইক ঝিমুনি তালে চলছে। কিছুটা ঝিমুনি পেয়ে বসে আমাকেও। তাই নেমে পড়ি এক চায়ের আড্ডায়। হয়ে যাই আড্ডার একজন। আড্ডা তখন উথাল-পাথাল। সেখানে মনভেলা ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ি। তর্কের বিষয় ভোট। এ পর্যন্ত আসতে আসতে কত মনোনয়ন-প্রত্যাশীর শারদীয় শুভেচ্ছা নিতে হলো। পুরনোদের সঙ্গে নবীনেরাও আছেন। কারও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি, কারও বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার। এই তর্কে চলছে  ময়নাতদন্ত। অতীতের জনপ্রতিনিধিরা কতটুকু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছিলেন, জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন কারা,  নতুন যারা বদলে দেওয়ার কথা বলছেন তাদের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জমায়েতে ব্যক্তি ও দল নিয়ে বিভক্তি আছে। তবে তাদের ঐক্যের জায়গা হচ্ছে ভোট দিতে চান সবাই। তারা চান ভোটের অঙ্কের মীমাংসা ভোটকেন্দ্রেই হোক। সেই মীমাংসার দায়িত্বটি ভোটের দিন থাকুক তাদের হাতেই।

ভোট হচ্ছে কিনা, এ নিয়েও বিস্তর সংশয় আছে। গুজবের চাষ এখানে হচ্ছে ভালোই।  রাজধানীসহ দশদিকের রকমারি পূর্বাভাস নিয়ে এখানে নির্বাচনকেন্দ্রিক  নানা নকশা আঁকা হচ্ছে। কেন এমনটা? কারণ হিসেবে জনপদের মানুষেরা বলছেন–রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যেমনটা জনমুখী রাজনীতির প্রত্যাশা তারা করেন, তেমন রাজনীতি দেখা যাচ্ছে না বহুদিন। রাজনীতি এখন ব্যক্তি ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক ব্যক্তির সম্পদ আহরণের মাধ্যম হয়ে উঠেছে রাজনীতি। সেই জন্য ভোটাররা এখন আর কদরে নেই। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবেন কী যাবেন না, তা নিয়ে রাজনীতিবিদদের ভাবনা নেই। কারণ রাজনীতিবিদরা মনে করেন কিছু নগদ ও প্রকাশ্য লেনদেনের মাধ্যমে ভোট চলে আসবে বাক্সোয়। তর্কের মানুষেরা এই ভাবনার কাঠামোতে আঘাত করতে চান।

এক আড্ডা ছাড়িয়ে অন্য আড্ডায় গিয়ে দেখি সেখানেও প্রতিপাদ্য ভোট। ভোটাররা বলছেন, তারা সবাই নানান রাজনৈতিক দল ও মার্কায় বিভক্ত হলেও, প্রত্যেকেই চান বর্তমান রাজনৈতিক ধারার বদল। আসুক যোগ্য প্রার্থী। রাজনীতির জন্য ত্যাগী নেতা আসুক। নিজের ব্যবসা ফুলিয়ে তোলার জন্য রাজনীতিতে নাম লেখানো প্রার্থী তারা চান না। একজন বললেন, এখন তো সালামের অভাব নেই। ভোটে জিতলে বাড়ির দরোজা, অফিসের দরজায় গেলে বলেন, নেতা রেস্টে আছেন। পরের ভোট পর্যন্ত আর বিশ্রাম ফুরোয় না।

তাই এক প্রকার ক্লান্তি এসেছে ভোটারদের মাঝেও। তারা প্রচলিত রাজনীতি, প্রদর্শিত গণতন্ত্র, ভোট এলে নাম না জানা রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্র থেকে মুক্তি চান। ১৯৯০’র থেকে রাজনৈতিক অনুশীলন যতটা অগ্রসর, জনমুখী ও উদার হওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে বিপরীত যাত্রা করেছে আমাদের রাজনীতি। ভোট এলেই একই বিষয়ের দরকষাকষি, ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা, মনোনয়ন নিলামে ওঠা, এই মুখস্থ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? মাঠের মানুষের কাছে যুত্সই ফর্মুলা আছে। রাজধানীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব, চিন্তক শ্রেণি—সেদিকে কান পাতলেই সমাধান পেয়ে যাবেন। কিন্তু আত্মগরিমার দেয়াল ভেঙে তারা এদিকটায় কান পাতবেন, ততটা উদারমনস্কতা কি এবারের ভোটেই দেখাবেন? উত্তর দেবেন কে?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধ্যক্ষসহ তিন পদে নিয়োগ
কাঁঠালবাড়ী নুরুল্লাহ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসাআদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধ্যক্ষসহ তিন পদে নিয়োগ
সূর্য ডুবে যাওয়ায় সুন্দরবনের আগুন নেভানোর কাজ স্থগিত
সূর্য ডুবে যাওয়ায় সুন্দরবনের আগুন নেভানোর কাজ স্থগিত
পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হচ্ছে ঋণের সুদহার
পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হচ্ছে ঋণের সুদহার
সংকটে পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে সশস্ত্র বাহিনী: প্রধানমন্ত্রী
সংকটে পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে সশস্ত্র বাহিনী: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ