X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজ্ঞাপন ও মাঠের আত্মীয়তা বাড়ুক

তুষার আবদুল্লাহ
১৫ মে ২০২১, ১৬:০৬আপডেট : ১৫ মে ২০২১, ১৬:০৬

তুষার আবদুল্লাহ এবার ফেরার লড়াই। সবাই মুঠোফোনের ক্যামেরা খুলে বসুন। আকাশে ড্রোনও উড়িয়ে রাখতে পারেন। কাজের শহরে ফিরতে শুরু করছে মানুষ। ফিরবে তারা জীবন বাজি রেখেই। ওরা যদি না ফেরে, আমরা কীভাবে ‘ভিআইপি’ রবো? আমাদের মান ইজ্জত রক্ষা করতে ফিরতেই হবে ওদের। না ফিরলে শুরু করে দেবো খেদাও অভিযান। কাজ হারাবে ওরা। জীবনের বিনিময়ে যারা শহর ছেড়ে ছিল ফেরি, ট্রাক, মুরগির খাঁচার লরিতে করে, তারা কি শুধু পরিবারের মায়াতেই গেছে? সমাজ ও অর্থনীতি নিয়ে যারা তত্ত্ব-তালাশ করেন, তাদের এই কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে তাদের কাছাকাছি যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, শহরে অনিশ্চিত জীবন ও খাবার থেকে নিজেকে মুক্তি দিতেই ছিল তাদের জীবন বাজির যাত্রা। যারা উড়ে গেছেন, ব্যক্তিগত বাহনে গেছেন, তাদের যাত্রার উপলক্ষ ছিল শতভাগ উদযাপন। উৎসবের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে তারা ফিরবেন একই উপায়ে। কিন্তু লুঙ্গি বা শাড়ির খুঁটে বাঁধা রোজগার শেষ করে ফিরবেন যারা, তাদের আবারও একই রণে ঝাঁপ দিতে হচ্ছে। সঙ্গে অনিশ্চিত রোজগারের মন পীড়ন। লকডাউন বেড়ে গেলে কাজ সুলভ হতে আরও সময় লাগতে পারে, ওই সময়টুকু শহরে একা বা পরিবার নিয়ে টিকে থাকাও অসহনীয় হয়ে উঠবে। গ্রামে থাকতে হলেও সুদ-কর্জ ছাড়া বিকল্প নেই। জীবন যাদের সত্যিই সর্বহারার, তাদের দিকে জীবন নিজেই মুচকি হাসে, আমরা কেন আরও হাসাহাসি করে যন্ত্রণা বাড়াই। বরং আমাদের উচিত ছিল ঈদের আগেই তাদের ফিরে আসার সহজ উপায় খুঁজে দেওয়া ।

ব্যাপারটি এমন যেন যারা ফেরিতে শরীর ঘেঁষে গিয়েছে, শুধু তারাই করোনার বিস্তার ঘটাবে। বাকিরা ছিল নিরাপদ গণ্ডিতে। তাই স্বাস্থ্য দফতর থেকেও বলা হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে দেরিতে ফেরাতে। শুধু লকডাউন দিয়ে, আগের মতো ফেরি গণপরিবহন বন্ধ রেখে শহরে ফেরা বন্ধ রাখা যাবে? দফতরগুলো এবং তাদের কর্তারা এমন ভাবে কথা বলেন যেন, দেশ চলে সোনার কাঠি রুপোর কাঠিতে। মাঠের বাস্তবতা থেকে তারা দূরে থাকেন। কাজের জন্য যে ফিরবে তাকে কোনও বাঁধে আটকানো যাবে না। আটকানোর কোনও অবকাঠামো আমরা তৈরি করতে পারিনি। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করা যায়নি, তেমনি সড়ক ও পরিবহন অবকাঠামোটাও নড়বড়ে। সুতরাং মানুষ ফিরবেই, তাদের ফিরে আসাটা কতটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত করা যায়, তারই নকশা করা উচিত ছিল। কিন্তু এক দফতরের সঙ্গে অপর দফতরের সমন্বয় না থাকা, প্রজ্ঞাপন আর মাঠের মধ্যে সম্পর্কটা অনেক দূরের হওয়ায় সকল পরিকল্পনার পরই হাওয়া হয়ে যায়। বাস্তবে তাদের পাওয়া যায় না।

বলা হচ্ছে লকডাউন বাড়তে পারে। মাস্ক না পরলে মাঠে জরিমানা করার বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হবে পুলিশকে। পুলিশকে দেওয়া ঠিক নাকি সেনাবাহিনীকে, এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে। সাধারণের কথা হচ্ছে, যাকেই দেওয়া হোক, কেউ যেন অতি প্রয়োগের বাড়াবাড়িতে চলে না যায়। ‘কান ধরে কান ধরা’র ছবি যেন আর আমাদের দেখতে না হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সত্যি চলে গেছে কিনা জানি না। তৃতীয় ঢেউ’র ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে। ভয়াবহতার উদাহরণ হিসেবে আছে ভারত। দুরু দুরু বুকে ঈদ পার হলো। করোনাকালে তৃতীয় ঈদ পার করলাম। অবয়বপত্র উদযাপনের বিজ্ঞাপনে ঢেকে গেছে ঠিকই, বিজ্ঞাপনের আড়ালে ঠিকই জেঁকে বসে আছে স্বজন হারানোর বেদনা, আক্রান্তের যন্ত্রণা এবং রোজগারের অনিশ্চয়তা। করোনা থেকে মুক্ত হয়তো নিকট অতীতে হতে পারবো না। তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ বা সইয়ে আনার পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত উৎসবের পুরনো হাসি ঠোঁটে মুখে ফিরিয়ে আনা যাবে না।

করোনা নিয়ে কথা বলতে বলতে মনে পড়লো বাংলা ট্রিবিউন তাদের সাত বছরে পূর্ণ করলো। এই সাত বছরে তাদের সাফল্যের বিস্তারে না গিয়ে শুধু যদি করোনাকালের কথাই বলি, তাহলে বলতে হবে কোভিড-১৯ নিয়ে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা তারা করেছেন। আড়ালে থাকা বা নজর রাখা উচিত কোভিড-১৯ সম্পর্কিত এমন অনেক বিষয় তারা পাঠকের সামনে তুলে এনেছেন। কোভিড যে শুধু রাষ্ট্র বা ব্যক্তির একক লড়াই নয়, প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিরোধের, এই নির্যাস রয়েছে বাংলা ট্রিবিউনে। এই নির্যাসটুকু সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া জরুরি। তাই শেষে এসেও বলছি– প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে মাঠের আত্মীয়তা বাড়ুক। তাহলে কমবে জনদুর্ভোগ ও ঝুঁকি।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
নির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
উপজেলা নির্বাচননির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ