X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বড় মাছের লেজে পা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক?

শওগাত আলী সাগর
১৯ জানুয়ারি ২০১৬, ১৭:৪৩আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১১:৪৫

শওগাত আলী সাগর তখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। শাহ এএমএস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী। ডাকসাইটে আমলা এম এ সাঈদ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান। (পরে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন)। ইতিহাসের বৃহত্তম শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতাদের আইনের মুখোমুখি করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে এসইসি। এ চেষ্টার পেছনে স্বয়ং অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া। অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেই দিয়েছিলেন, ‘মাত্র একদিনের জন্য হলেও কেলেঙ্কারির নায়করা আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াবে- সেটা আমি দেখতে চাই।’ ফলে এসইসির সাহস বেড়ে গিয়েছিল বেশ।
অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার শতভাগ সমর্থন থাকলেও সরকারের সকল মহলের সমর্থন অবশ্যই ছিল না সেই উদ্যোগে। কিছুদিন পরেই দেখা গেলো- অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ডেকে পাঠিয়েছে এসইসির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। একজন রিপোর্টার হিসেবে সেই বৈঠকের সংবাদ সংগ্রহ করতে আমিও হাজির ছিলাম। বৈঠক থেকে বেরিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না এম এ সাঈদ। তার ‘লাল’ চেহারাটা যেন আরও লাল হয়ে গেছে। যেন কেউ আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েছে তার মুখে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসইসি চেয়ারম্যানকে যতোটা না প্রশ্ন করা হয়েছে- তারচেয়ে বেশি হেনস্তা করেছিলন কমিটির সদস্যরা। হেনস্তা হয়েছিলেন অন্য কর্মকর্তারাও। এরপর দেখা গেলো প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই এসইসির ডাক পড়ে। এমনকি নানা সাব কমিটির বৈঠকেও ‘তলব’ করা হয় এসইসির কর্মকর্তাদের। কুমিল্লার এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফ তখন অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। আজকের পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তাফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ছিলেন কমিটির সদস্য। তার বিরুদ্ধে তখন শেয়ারবাজারে নানা অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার গুঞ্জন। ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যায়, শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির নায়কদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের পাল্টা জবাব হিসেবে সংসদীয় কমিটি এসইসির কর্মকর্তাদের হেনস্তা করছে। পত্রিকায় এসব খবর বেরোয়, সংসদীয় কমিটির এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলে মিডিয়া। তুমুল সমালোচনার মুখে সংসদীয় কমিটি ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নেয়। কিন্তু কেলেঙ্কারির নায়কদের পক্ষ নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তলব করে হেস্তনেস্ত করার ‘সংসদীয় সংস্কৃতির’ একটি উদাহরণ তৈরি হয়ে যায়।
অনেকদিন পর আবার একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ‘পেছনে লেগেছে’ আরেকটি সংসদীয় কমিটি। পত্রিকায় দেখলাম, সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক কর্মকাণ্ডের নিরীক্ষা প্রতিবেদন চেয়েছে। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের নিরীক্ষা বিভাগকে ব্যাংকটির ওপর বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করে তার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদনও দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। খবরটি পড়তে পড়তেই ছিয়ানব্বইর আওয়ামী লীগ শাসনের অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৎপরতার স্মৃতিটা মনে পড়ে গেলো। কাকতালীয় কি না জানি না, আওয়ামী লীগের দুই শাসনামলে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ‘টানা হ্যাঁচড়া’র ঘটনা ঘটিয়েছে দুই সংসদীয় কমিটি। সেই সময়ে অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য কমিটির সদস্য লোটাস কামালকে নিয়ে শেয়ারবাজার সংক্রান্ত অনিয়মের গুঞ্জন ছিল। এবার খোদ সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সেই অর্থে এবার কোনও লড়াইয়ে যায়নি। তাদের ক্ষমতার ন্যূনতম প্রয়োগ ঘটিয়েছে মাত্র। ফারমার্স ব্যাংকে যে অনিয়মের অভিযোগ আসছে সেটা কি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে টের পায়নি? সেগুলো কি তারা বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল? কিংবা অনিয়মের তথ্যগুলো তারা জনসম্মুখে নিয়ে আসেনি কেন? বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০ কোটি টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেননি। কোনও পত্রিকা বা মিডিয়াও আর সেটি নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি। সেটি কি তাহলে ফারমার্স ব্যাংকেরই ঘটনা ছিল?

বাংলাদেশ ব্যাংক– দেশের আর্থিকখাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিপূর্ণভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে- তা আমরাও মনে করি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অক্ষমতা আছে, সীমাবদ্ধতাও আছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিয়ন্ত্রকের চেয়েও সরকারের বিভাগের মতোই আচরণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব অক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা নিয়ে তদন্ত, অনুসন্ধান, নিরীক্ষা- সবকিছুই হতে পারে।

কিন্তু ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বলে যে টার্মটা আছে, সেটিও বিবেচনায় রাখা দরকার।

আচ্ছা, সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কি কেবল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেই তদারকি করতে পারে? কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে কোনও ভূমিকা রাখার সুযোগ কি তাদের আছে? কমিটির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন ব্যাংকের অনিয়ম এবং সেই অনিয়মে চেয়ারম্যানের কী ভূমিকা ছিল- সংসদীয় কমিটি কি তা নিরীক্ষা করতে পারে? এগুলো নিয়ে হয়তো আলোচনার সুযোগ আছে। কিন্তু আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে, নির্ভয়ে কাজ করতে না দিলে রাষ্ট্রকেই ভুগতে হতে পারে। কোনও অভিযুক্ত ব্যক্তি সংসদীয় ক্ষমতাকে নিজের অপরাধের ঢাল হিসেবে, নিয়ন্ত্রকদের অপদস্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে- সেটা কোনওভাবেই কাম্য হতে পারে না।
লেখক: টরেন্টোর বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ-এর প্রধান সম্পাদক

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
কান উৎসব ২০২৪কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
বৃষ্টি নিয়ে সুখবর, থাকতে পারে সোমবার পর্যন্ত
বৃষ্টি নিয়ে সুখবর, থাকতে পারে সোমবার পর্যন্ত
সর্বশেষসর্বাধিক