X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু: একজন মহাপুরুষ

ড. জেবউননেছা
১৭ মার্চ ২০২২, ০০:৩১আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২২, ১৮:৩৮

ড. জেবউননেছা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান? /যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান/ তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি/ চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি’।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতাটি হৃদয়ে ‘দাগ কেটে যায়, গতি আনে দেমপ্রেমের মন্ত্রে।  ১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সুদূর বাগদাদের হাসানপুর থেকে হজরত বায়েজীদ বোস্তামী (রা.) এর সাথে আসেন এই বাংলায় শেখ দরবেশ আউয়াল। তিনি ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বর্ধিষ্ণু পরিবারে বিয়ে করেন। অতঃপর শেখ দরবেশ আউয়ালের চতুর্থ বংশধর শেখ বোরহানউদ্দিন ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে গোপালগঞ্জের গিমাডাঙ্গায় যাতায়াত করতেন। তিনি টুঙ্গীপাড়ার সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে বিয়ে করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। শেখ বোরহানউদ্দিনের পৌত্র শেখ আব্দুল হামিদের সন্তান শেখ লুৎফর রহমানের সংসারে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ১৩২৭ সনের ৩ চৈত্র, ইংরেজি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রোজ মঙ্গলবার বাদ মাগরিব রাত আটটায় ধন্য জননী সাহেরা বেগমের কোলজুড়ে আসেন। জন্মের সময় তিনি সাধারণ শিশুদের মতো কেঁদে উঠেননি, নিরব ছিলেন তিনি ছিলেন পিতামাতার প্রথম পুত্র। তারা ছিলেন ৪ বোন এবং দুই ভাই। শিশুটির নাম রাখা হলো ‘মুজিব’। ‘মুজিব’ শব্দটি পবিত্র কোরআন মজিদে সূরা হুদের পঞ্চম রুকুর শেষ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। ‘মুজিব শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘উত্তর দেওয়া’। পারিবারিক ধর্মীয় অনুশাসনের মাঝে শিশু মুজিব বেড়ে উঠেছেন। তাঁর প্রথম শিক্ষক ছিলেন পন্ডিত শাখাওয়াৎ উল্লাহ। ১৯২৭ সালে গোপালগঞ্জের গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়।  ১৯৩১ সালে মাদারীপুর ইসলামিয়া হাই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে তিনি ভর্তি হন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মথুরানাথ ইনস্টিটিউট  মিশনারি স্কুলে পুনরায় ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই বিদ্যালয় থেকেই এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই সময় তাঁর পিতা বাসায় একজন গৃহশিক্ষক রাখেন যার নাম ছিল কাজী আব্দুল হামিদ। প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্তে স্কুল জীবনে একবার কয়েক ঘণ্টা এবং আর এক দফায় সাত দিন জেল খেটেছেন। অদম্য তরুণ শেখ মুজিব ভলিবল, ফুটবল খেলেতে ভালোবাসতেন। সবচেয়ে পছন্দের ছিল গুরুসদয় দত্তের ‘ব্রতচারী নৃত্য’। তিনি ছিলেন স্বল্পভোজি। কাচকি মাছের চচ্চড়ি এবং মাগুর মাছের ঝোল ছিল তাঁর প্রিয়।

কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হবার পূর্বেই তিনি ‘নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্র লীগ’ এবং ‘নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের’ কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪১ সালে তিনি যখন চোখের চিকিৎসার জন্য কলকাতায়, তখন তিনি ‘হলওয়েল মনুমন্ট’ অপসারণের মিছিলে যোগ দেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’  গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘‘তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি। খেলার দিকে আর নজর নাই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে। নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নাই’।

১৯৪৩ সালে তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সদস্য হন। ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের সময় তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় একটি রিলিফ ক্যাম্প পরিচালনা করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। টুঙ্গীপাড়ায়  ১৯৪৪ সালে তিনি আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) এর  কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন নেতাজী সুভাস বসুর ‘ফরোয়ার্ড ব্লকের’ আদর্শ তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।  ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্ট ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ শুরু হলে তিনি কলকাতার বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় রিলিফ ওয়ার্কের পর বিহারের দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকা সফর করেন। তিনি ছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অগ্রজ শরৎচন্দ্র বসুর স্নেহভাজন। ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী বিহারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কলকাতার এলগির রোডে (লালা লাজপুত রায় সরনী) নেতাজী ভবনে শরৎচন্দ্র বসুর উদ্যোগে সর্বদলীয় দাঙ্গা প্রতিরোধে কমিটির একজন সদস্য নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। কলেজের সহপাঠী কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ফারসি বিভাগের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, কলেজের যে কোনও অনুষ্ঠান, কলেজ ইউনিয়নের পরিচালনা, নির্বাচন সব কিছুই ছিল শেখ মুজিবের নেতৃত্বে’। 

১৯৪৫ এর কলকাতার অবিস্মরণীয় ‘রশিদ আলী দিবসে’ দুর্জয় সাহস নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এ হোস্টেলের সুপারিনটেন্ডেন্ট অধ্যাপক সাইদুর রহমান তাঁর স্মৃতিকথায় বলেন, ‘জনসেবা থেকে ছাত্রসংগঠন যা করতো আন্তরিক এবং সৎ ভাবেই করতো, তাছাড়া ওর একরোখা স্বভাবের কথাও জানতাম’। বেকার হোস্টেলে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন। উক্ত হোস্টেলের তৎকালীন দারোয়ান গোলাম রসুল  তাঁর স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, ‘মুজিব সাহেব তো তখন থেকেই লিডার ছিলেন।’ তিনি বেকার হোস্টেলের ২৩/এ এবং ২৭/বি কামরায় থাকতেন। শেখ মুজিবুর রহমানের আইএ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তাঁর প্রবেশপত্র ডাকযোগে  ৯ ফেব্রুয়ারি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর রোল নম্বর ছিল CAL N 469,  ১৯৪৭ সালের ৯ জুন বি এ পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছিল CAL 104  ১০৪ এবং  ১৯৪৮ সালের ২৯ নভেম্বর তারিখে বিএ পাশের ডিপ্লোমা নিয়েছিলেন। ইসলামিয়া কলেজের আরেকটি রেজিস্ট্রারে দেখা যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের রেজিস্ট্রেশন নম্বর 9579 of 1942-1943 তিনি ১৯৪৩ সালের ২০ এপ্রিল রেজিস্ট্রার খাতায় ইংরেজিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করার পর ঢাকায় ফিরে প্রথমে এসে উঠেন ১৫০ মোগলটুলীতে। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র। রোল নম্বর ছিল ১৬৬। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সভায় ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’ গঠন করা হয়।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ পালনের দিন ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার হয়। এই ছিল পরিণত বয়সে প্রথম কারাবরণ। ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে সভায় তিনি  প্রথম সভাপতিত্ব করেন।

১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি দাওয়া আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করার ফলে ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ শেখ মুজিবসহ ২৭ জন  ছাত্রনেতাকে বহিস্কার ও জরিমানা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৫ জন ছাত্রের প্রত্যেককে ১৫ টাকা করে জরিমানার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। চারজন মুচলেকা জমা দিয়ে জরিমানা পরিশোধ করলে শেখ মুজিবুর রহমান করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হলো। ১৯৪৯ সালের ৩১ মার্চ। সেদিন তিনি বলেছিলেন, সম্মান ছাড়া কোনোদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করবেন না। ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তাঁর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেন।  ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ’ গঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন তিনি ছিলেন কারাগারে।  ১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দানের ছাত্রদের ঘোষিত ২১ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভের সমর্থনে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাগারে অনশন শুরু করেন। ১৯৫৪ সালের ১৫ মে, তিনি প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী। ১৯৫৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীত্ব পেলেও দলকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রীপরিষদ থেকে প্রত্যাহার করেন।  ১৯৬৬ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ছয় দফা পেশ করেন। কিন্তু এই প্রস্তাব আমলে না নেওয়ায় তিনি ফিরে আসেন। ১৯৬৬ সালের ১ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৬৬ সালের আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে ছয় দফা পেশ করেন যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।  ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ তারিখে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের অধিবেশনে তাঁর নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬ দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক আর একটি বই প্রচার করা হয়। এই বইয়ে লাহোর প্রস্তাব (১৯৪০) এবং একুশ দফা (১৯৫৪) উল্লেখ ছিল। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সরকারের বিভিন্ন নির্যাতনমূলক তৎপরতা সত্ত্বেও গোটা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা  ও সিএসপি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৯ সালে ৫ জানুয়ারি ছয় দফা সহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যহার করলে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিদান করা হয়। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় । উক্ত সভায় প্রায় ১০ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তবে তাঁর পূর্বে তিনি ১৯৪৭ সালে দলের সদস্যদের বলেছিলেন আমাদের দেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’ এবং সেই সময় তিনি শ্লোগান দেন ‘জয়বাংলা’। এরপর ১৯৪৮ সালের ২১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের বায়তুল আমানে এক ঘন্টা বিশ মিনিটের বক্তব্যে আমাদের দেশের নাম ‘বাংলাদেশ’ বলে উচ্চারণ করেন। উল্লেখ থাকে যে, এই বায়তুল আমানেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নাম চূড়ান্ত হয়েছিল। দলের সদস্যদের মধ্য থেকে নাম চাওয়া হলে ২৪ টি নাম জমা পড়ে। খান সাহেব ওসমান আলী আওয়ামী লীগের নামে টিক চিহ্ন প্রদান করেন। পরবর্তীতে বায়তুল আমান পুলিশ ঘিরে ফেললে নেতাকর্মীরা এদিক সেদিক ছড়িয়ে যান। অতঃপর নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার মিউচুয়াল ক্লাবে দলটি গঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের’ অভিষেক হয় ।

১৯৭০ সালের বির্বাচনে ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচন এবং ১৭ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করেন। ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ আসন থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদে নির্বাচনে নির্বাচিত হন। ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু ‘জাতির জনক’ উপাধিতে ভূষিত হন। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে  ৭ মার্ট ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ তাদের দলের নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। রাত ১.৩০ মিনিটে অভিযান পরিচালনা করে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। ২ দীর্ঘ নয়মাস পাক হানাদার বাহিনী পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ কারাগার থেকে ডিসেম্বরে  মিনাওয়ালী কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। এই কারাগার থেকে মুক্তি পাবার আগে ৫ জানুয়ারি ১৯৭২ পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা রাজা আনার খানকে ফেরার সময় ফিওদর দস্তয়েভস্কির লেখা উপন্যাস ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট' বইয়ে লিখেন, ‘সত্য ও মিথ্যার দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে প্রথমে মিথ্যা জয়ী হয়,কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় সত্য’। এই কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত নজরদারিতে রাখতেন। 

১৯৭২ এর ৯ জানুয়ারি  বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ এডওয়ার্ড হীথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। ঐদিনই দিল্লিতে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ এ দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে বক্তব্য রাখেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির সরকারি বিমান রাজহংসে  মহাপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে তিনি প্রত্যাবর্তন করেন। বিমানবন্দরে নেমেই সরাসরি চলে যান রেসকোর্স ময়দানে। বক্তব্যে বলেন, ‘আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে, বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন। 

১৯৭২ সালের ১৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে পদার্পন করেন। এই মাসেই ভারত বাংলাদেশ ২৫ বছর মেয়াদী মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে তিনি ১৭ মার্চ, ১৯৬৭ সালে লিখেছেন, ‘আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগের আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস! ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি নূরে আলম- আমার কাছে ২০ সেলে থাকে, কয়েকটা ফুল নিয়ে আমার ঘরে এসে উপস্থিত। ছোট মেয়েটা আর আড়াই বৎসরের ছেলে রাসেল ফুলের মালা হাতে করে দাড়াইয়া আছে। মালাটা নিয়ে রাসেলকে পরাইয়া দিলাম। সে কিছুতেই পরবেনা। আমার গলায় দিয়ে দিল। রাসেল ও বুঝতে আরম্ভ করেছে, এখন আর আমাকে নিয়ে যেতে চায়না। আমার ছোট মেয়েটা খুব ব্যথা পায় আমাকে ছেড়ে যেতে, ওর মুখ দেখে বুঝতে পারি। ব্যথা আমিও পাই, কিন্তু উপায় নেই। রেণুও বড় চাপা, মুখে কিছুই প্রকাশ করেনা।’ এমনভাবে হয়ত বছরের পর বছর জন্মদিন অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু নিজের দিকে, পরিবারের দিকে তাকাননি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত ছিলেন। হাজারো মানুষের ভিড়ে বঙ্গবন্ধু সেই ফুল অর্পন করতে  যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধিতে। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু অসুস্থ ছিলেন বিধায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তাঁর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর দুই নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। জীবনের শেষ জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু  পিতার চরণ স্পর্শ করে আশীর্বাদ নেন। ১৯৭৩ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সাধারণ মানুষের জন্য গণভবনের দ্বার উন্মোচন করা ছিল। হাজার হাজার মানুষ ফেস্টুন পতাকা নিয়ে জয় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু দীর্ঘজীবী হউন, জয় মুজিববাদ ধ্বণি প্রদান করে গণভবনে প্রবেশ করে। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা গণভবনে যান। মহাখালী স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বঙ্গবন্ধুকে পবিত্র কোরআন শরীফ প্রদান করে। ১৯৭৫ সালের জীবেনর শেষ জন্মদিনে গণভবনে তাঁর  ১৫ মিনিট শিশুদের সাথে বরাদ্দ থাকলেও দেড় ঘণ্টার বেশি সময় কাটান। শিশুদের সাথে লেকের পাড়ে মাছের খেলা দেখেন। শিশুদের সাথে গান করেন। হাঁটু গেড়ে এক শিশুর দেয়া স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে নেন। কচি কাঁচার মেলায় শিশুরা বঙ্গবন্ধুকে ব্রতচারী গান শোনায়। শিশুদের সাথে সময় কাটিয়ে গণভবনের প্রধান গেট পর্যন্ত চলে আসেন। বঙ্গবন্ধু যখন কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতেন তখন তার ছোট ছেলে পাশের বাড়ির প্রতিবেশীদের সাথে খেলা করত, তাঁর গাড়ির শব্দ পেলে ব্যাট, স্ট্যাম্প রেখে সবাই রঙ্গন গাছের নিচে লুকিয়ে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু কচি পা দেখে বুঝে যেতেন। এরপর বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করতেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা প্রেসক্লাবে দশদিনব্যাপী শিশু মেলায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,এই পবিত্র শিশুদের সাথে মিশি মনটাকে হালকা করার জন্য। শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার উপহার হিসেবে প্রতিবছর ১৭ মার্চ ‘জাতীয় শিশু দিবস’ পালন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন পরিক্রমায় ছায়ার মত যিনি পাশে থেকেছেন তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। যিনি শত প্রতিকূলতায় ভেঙ্গে পড়েননি। বাচ্চাগুলোকে একাই মানুষ করেছেন। সংসার ও সামলিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কখনও প্রেসিডেন্ট হাউজের খাবার খেতেন না। একটি এলুমিনিয়ামের টিফিন ক্যারিয়ারে বঙ্গমাতা দেশি মাছ, পাকা পেপে, পুডিং পাঠাতেন। মাঝে মাঝে তাঁর অফিসের কর্মকর্তাদের তিনি খেতে বলতেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন স্নেহশীল পিতা। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে আমি সন্তান হিসেবে এতটুকু বলতে পারি, আমার বাবা আমাদের যতটুকু ভালোবাসতেন, আমার মনে হয় তার থেকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসতেন এদেশের মানুষকে’। ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বলেন, ‘আব্বা জেলে থাকলে ওটাকে আমি মেনে নিতে পারতাম না। কারণ স্কুলে যখন সবার অভিভাবকেরা যেতেন, আমাদের ও হয়তো মাকে যেতে হতো। আবার কোন অনুষ্ঠানে সবার বাবা মা আসছেন,আমার বাবা মা দুজনে একসঙ্গে আসতে পারছেননা। তখন খুব খারাপ লাগতো।’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণে তাঁর  বোনের মেয়ে হুরুন্নেসা বলেন, ‘মামা আমাদের ভীষণ ভালবাসতেন, আমাদের কাউকে ছুটির দিনে দেখতে না পেলে খবর নিতেন, কেন যাইনি মামার বাড়ি’। আর এক বোনের মেয়ে ডলি জামান বলেন, আমার ভাই ছাদ থেকে পড়ে মারা গিয়েছিল, মামা এই কথা শুনে ৩২ নম্বর থেকে আমাদের বাড়িতে হেঁটে চলে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বোনের ছেলে  আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, ‘তিনি একবার আবদার করেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে সভা দেখতে যাবেন। বঙ্গবন্ধু রাজি হন। তাকে বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ফেরার পথে গ্রেফতার হয়ে যান। পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখেন তার মামা বাসায় নেই। মানুষের ভিড়ে তার জুতো হারিয়ে গেলে বঙ্গমাতা তাকে একই রকম জুতো কিনে দেন’।

বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গেলে বঙ্গবন্ধু তার কাছে একটি গানই শুনতে চাইতেন, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’। পরবতীতে, যে কোনও রাষ্ট্রীয় অতিথি বাংলাদেশে এলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবিনা ইয়াসমিনকে বলা হতো, এই গানটি যেন পরিবেশন করেন তিনি। স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের লেখক ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামের স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু অম্লান, তিনি বলেন, ‘অনেক সময় গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে দুপুর হয়ে যেতো, তখন তিনি বঙ্গমাতাকে ফোনে বলতেন, আমীর সাথে আছে, ওর জন্য খাবার পাঠিয়ে দিও’। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো: কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘শেখ কামালের বিয়েতে বিকেল বেলা হালকা খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল,কোন উপহার না নেওয়ার জন্য সবাইকে বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ভীষণ নিরাভরন এবং মনখোলা মানুষ ছিলেন’। বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব তোয়াব খান বলেন, ‘গণভবনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে লেকে মাছ এসে জড়ো হতো। কারণ বঙ্গবন্ধু নিয়মিত মাছদের খেতে দিতেন। বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রের বিয়েতে যত উপহার এসেছিল, সব উপহার বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাষ্ট্রীয় তোষাখানায় জমা দেয়া হয়। যার সকল প্রক্রিয়া আমি করেছিলাম’। বিশিষ্ট লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল সাহস। আর সবচেয়ে দুর্বলতা ছিল তিনি শত্রু মিত্র সকলকে ক্ষমা করে দিতেন’। সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্যুভনির,‘বাংলাদেশ’ এ প্রথম পৃষ্ঠায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবু সাইদ চৌধুরীর ছবি তাঁর পরে দেয়ায় তিনি রাগান্বিত হয়েছিলেন’। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি  বড়, তাই তাঁর ছবি আগে যাবে। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ছবি যাবে রাষ্ট্রপতির পরে।’ ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রকাশিত তিনটি বই নতুন প্রজন্ম যদি পাঠ করে, তাহলে জানতে পারবে, বঙ্গবন্ধু কত বড় মাপের নেতা ছিলেন’।

বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ জামালের বন্ধু সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, আই এ পাস করার পর বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘ব্যবসা করার জন্য, আর জামালকে বলেছিলেন, আর্মিতে যোগ দেবার জন্য’। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু খেলাধূলা ভীষণ পছন্দ করতেন এবং আমাদেরকে উৎসাহ দিতেন’। সাবেক ছাত্রনেতা শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর বাড়ির দেয়াল কখনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র স্থাপনের জন্য ফুটো করা হয়নি’। সাবেক ডিএসপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় থেকে আমি অনেক কিছু দেখতে এবং শিখতে পেরেছিলাম। আমি কর্তব্য পালনের সময় দেখেছি এই মহান মানুষটি কিভাবে কতটা প্রজ্ঞা, কতটা দেশপ্রেম নিয়ে দিনরাত দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন’। ১৯৭১ এর  কলম সৈনিক কবি মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, ‘১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী মাঠে বলেছিলেন, তিনি যখন যেমন, তখন তেমন নীতিতে বিশ্বাস করেন না।’

বঙ্গবন্ধুর বাসার কাজের সহকারী আব্দুর রহমান তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, বঙ্গবন্ধু একবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে গোপালগঞ্জ যান, যাবার পথে তিনি যাত্রা বিরতি দিয়ে নদীতে সাঁতার কাটেন। যে স্মৃতি তিনি ভুলতে পারেন না। এই আমাদের বঙ্গবন্ধু, যিনি কিনা সাধারণের চেয়ে সাধারণ ছিলেন। শত ব্যস্ততায়ও ছেলেমেয়ের সাথে সময় কাটাতেন। তিনি ছিলেন তিন পুত্র, দুই কন্যা সন্তানের জনক। সন্তানের জন্য হাহাকার তাঁর বিভিন্ন লেখায় পাওয়া যায়। বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ছিল চোখে পড়ার মতো।

বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসা ছিল গ্রামীণ পরিবেশের মতো। তাঁর বাসায় কবুতর পোষা হতো। গরু পালন করা হতো। তিনি জানান, ‘বঙ্গবন্ধু তাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেন বাড়ি ছেড়ে যেতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিনি যদি বাড়ি ছেড়ে চলে যান, তাহলে পাক হানাদাররা ঢাকা শহরের সবাইকে হত্যা করবে।’ সত্যি সেদিন বঙ্গবন্ধু বাড়ি ছেড়ে যাননি।

টুঙ্গীপাড়ার যে ছেলেটি ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলার প্রধানমন্ত্রীকে তাদের স্কুলের সংস্কারের দাবি জানান, যেই ছেলেটি এক মুষ্ঠি চাল ভিক্ষা করে দরিদ্রদের বিলিয়ে দিতেন, নিজের জামা, ছাতা মানুষকে দিয়ে দিতেন। মহাত্মা গান্ধীকে দাঙ্গায় অত্যাচারিতদের ছবি প্যাকেটে করে হাতে  দেন।  সেই ছেলেটি ৩০৫৩ দিন কারাবাস করে  তার ব্যক্তিত্বে, ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু। কাছের মানুষদের বিশ্বাস করতেন, তারই ফলশ্রুতিতে কাছের মানুষদের ষড়যন্ত্রেই তিনি ৫৫ বছর ৪ মাস ২৯ দিন বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে প্রাণ হারান। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলার কোন গ্রামে ধান ক্ষেতের পাশে কিংবা বাশ বাগানের কবর হলেই চলবে। কবরে শুয়ে যেন বাংলার মাটির স্বাদ পাই, বাংলার পাখির গান শুনি আর বাংলার সোনালী ধানের ঘ্রাণ পাই’। সত্যি বঙ্গবন্ধু গ্রাম বাংলায় শুয়ে আছেন নীরবে।

শুভ জন্মদিন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহাপুরুষ আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম।  

লেখক: অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ