X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

চাই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বাজেট

ড. আতিউর রহমান
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৬আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০৪

আর দুই মাসের মধ্যেই মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। এটি হবে সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। আগামী পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক ভিত্তি বছর হিসেবে আসন্ন অর্থবছরের বাজেট তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দেশীয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় পেশ হতে যাচ্ছে আগামী বাজেট।

এই প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নটি এবারে মুখ্য বলে বিবেচিত হবার কথা। তাই বরাবর যে মাত্রায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাড়ানো হয় এবার তা হচ্ছে না বলেই মনে হয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থেই এবার সংকোচনমুখী বাজেট হতে যাচ্ছে।

ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ অতটা বলশালী না হওয়ায় আমাদের প্রবৃদ্ধি মূলত নির্ভর করে সরকারি ব্যয়ের ওপর। কাজেই কাটছাঁটের বাজেট করলে প্রবৃদ্ধির চাকা তুলনামূলক কম গতিশীল থাকবে। এমনিতেই চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কমে এসেছে। ২০২৩-এর অক্টোবরে আইএমএফ চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করলেও এ বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি এসে তা কমিয়ে ৫.৭ শতাংশ করেছে। এ অবস্থায় কাটছাঁটের বাজেট করলে আসছে অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি খুব গতিশীল হবে না- এ কথা বলাই যায়। ভোগ ও বিনিয়োগ সংকোচনের কারণেই যে এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।

তবে আমার মতে, প্রবৃদ্ধি নয়, বরং আসছে বছরে মনোযোগ দিতে হবে সামষ্টিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার দিকেই। সে জন্য সংকোচনমুখী বাজেটই কাম্য। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে প্রবৃদ্ধির চাকা কিছুটা ধীর হয়ে আসলেও বৈশ্বিক বাস্তবতার বিচারে বাংলাদেশ তুলনামূলক বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিগুলোর কাতারেই থাকবে। কেননা, অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে গোটা বিশ্বেই প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে আসছে। আর হালের ইরান-ইসরায়েল ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে এই আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

আসছে অর্থবছরে যেহেতু তুলনামূলক সংকোচনমুখী বাজেট হতে যাচ্ছে, সেহেতু সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে বরাদ্দের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার সময়ও বাজেটপ্রণেতাদের বরাবরের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল হতে হবে। তবে সম্পদ বরাদ্দের যথাযথ অগ্রাধিকার (বাজেটের ব্যয়ের দিক) নিশ্চিত করার পাশাপাশি সম্পদ সমাবেশ অর্থাৎ বাজেটের আয়ের দিক নিয়েও একই রকম সংবেদনশীলতা কাম্য। বেশ কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতিবিদেরা বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর দিকে নীতি-মনোযোগ আকর্ষণ করে আসছেন। জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারের আহরিত করের পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচেই রয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরাও এখন কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আসন্ন বাজেটে এই সংস্কারের প্রতিফলন ঘটার সম্ভাবনা যথেষ্ট।

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আমাদের বহিঃঅর্থনীতি নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে আমদানি কমেছে। তাই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বহিঃঅর্থনীতির সংকটের কারণে মোটাদাগে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিই কমে এসেছে। এ কারণেও রাজস্ব আহরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই পরিমাণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।

সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোর কোনোটিতেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সামষ্টিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এ বছরও এত বড় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তাই পরবর্তীতে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই কমিয়ে আনা লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ শতাংশের কিছু বেশি অর্জন করা গেছে।

রাজস্ব আহরণের দক্ষতা বাড়াতে এই প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাইজেশনের যে কোনও বিকল্প নেই সে কথাটি বারবার সামনে আনছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অংশীজনেরা। এনবিআর-সহ সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছেন। আসছে অর্থবছর থেকে ১০ লক্ষ টাকা বা এর বেশি ভ্যাট পরিশোধের জন্য ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে ৫০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি ভ্যাট পরিশোধে ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক। এছাড়া ইলেকট্রনিকস টেক্সট ডিটেকশন সোর্স (ইটিডিএস) অনলাইন প্ল্যাটফরম চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করদাতাদের কর জালে আনতে বিআরটিএ,  সিটি করপোরেশন, ডিপিডিসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

ডিজিটাইজেশনকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ করতে নেওয়া এনবিআর-এর এসব উদ্যোগ যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে ততই মঙ্গল। উল্লেখ্য, প্রায় এক কোটির মতো টিনধারীর মাত্র এক তৃতীয়াংশ বাস্তবে কর দেন। বাদবাকিদের করজালে আনার জন্য নতুন করে ভাবনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয়। সে ভাবনার অংশ হিসেবেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা এআই ব্যবহার করা যেতে পারে।

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ঢালাওভাবে করের বোঝা বাড়াতে হবে- এ ধারণা এখন সেকেলে হয়ে গেছে। বরং করছাড় দিয়ে বেশি বেশি করদাতাকে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে পারলে রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়তে পারে। বাংলাদেশের ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০২২ থেকে ২০৪১ সময়কালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে আরোপিত কর ৩৩ শতাংশ কমানো গেলে ওই সময়ের ব্যবধানে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে সরকারের রাজস্ব ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২২৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে (যা জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশের সমান হবে)।

শুধু তাই নয়, এর ফলে জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও ২.২ শতাংশে উন্নীত হবে (বর্তমানে ০.৩ শতাংশ)।

দেখা যাচ্ছে, ঢালাওভাবে আরোপিত কর না বাড়িয়ে ক্ষেত্রবিশেষে করছাড় দিয়েও রাজস্ব আহরণ বাড়ানো সম্ভব। করছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সেটি নিয়েও নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। পুরো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সাম্প্রতিককালে কমতে থাকলেও কৃষির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আমাদের সুরক্ষা দিয়ে চলেছে। বিবিএস-এর পরিসংখ্যান মতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প এবং সেবা খাতের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট প্রবৃদ্ধি কমেছে (যথাক্রমে ১০ শতাংশ থেকে কমে ৩.২৪ শতাংশ এবং ৬.৬২ শতাংশ থেকে কমে ৩.০৬ শতাংশ হয়েছে)। অথচ কৃষির ক্ষেত্রে এই পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট প্রবৃদ্ধির হার কমে না গিয়ে বরং বেড়েছে (৪.২২ থেকে বেড়ে ৪.৬৫ শতাংশ হয়েছে)। আসন্ন অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়ার সময় সামষ্টিক অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে কৃষির এই ভূমিকাটি আমাদের বাজেট প্রণেতারা নিশ্চয় বিবেচনায় রাখবেন। তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভর্তুকি দেওয়ার যে প্রশংসনীয় ধারা তারা বিগত দেড় দশকে তৈরি করেছেন তা আসছে বছরেও বহাল রাখবেন। এছাড়াও কিছু রাজস্ব সুবিধা বাড়িয়েও কৃষিকে প্রণোদিত করা যায়। যেমন, বিভিন্ন কৃষি ইনপুটস (যেমন: সার, বীজ, ইত্যাদি)-এর ওপর আরোপিত ভ্যাট কিংবা রেগুলেটরি শুল্কের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিলে কৃষি উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত সকলেই এর সুবিধা পাবেন। একই কথা তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর পণ্য ও সেবার বেলায় খাটে। এই খাত ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। কিছুতেই এই খাতকে দেওয়া করছাড় তুলে নেওয়া ঠিক হবে না। এমনকি বস্ত্র খাতে দেওয়া কর সুবিধাও খুব চিন্তাভাবনা করে ধীরে ধীরে তুলে নেবার কথা ভাবতে হবে।

কর আহরণ বিষয়ক অনুশীলনগুলোতে কিছু পরিবর্তন করে বিদ্যমান উৎসগুলো থেকেও আরও বেশি বেশি কর আদায় সম্ভব। যেমন, সিগারেটের দাম প্রতি বছর বাজেটে অল্প অল্প করে বাড়ানো হয়। কিন্তু তামাকবিরোধী গবেষকদের হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, এই ক্ষতিকারক পণ্যটির দাম এক ধাক্কায় অনেকখানি বাড়িয়ে তার থেকে কর আহরণ করলে, একদিকে সিগারেটের ব্যবহার যেমন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমবে, অন্যদিকে সিগারেট বিক্রি থেকে আরও বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা কর পাওয়া সম্ভব।

রাজস্ব আদায় তথা বাজেটের আয়ের দিককে বলশালী করতে আসছে বছরে নিশ্চয় বাজেটপ্রণেতারা নতুন নতুন সময়োচিত উদ্ভাবনী নীতি-উদ্যোগ নেবেন। তারপরও (আগেই যেমনটি বলেছি) বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আমাদের নিজস্ব সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর প্রেক্ষাপটে আসছে অর্থবছরে বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল একটি ব্যয় পরিকল্পনাই দরকার। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা এখানে তুলে ধরতে চাই-

০১) মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে জনগণকে বিশেষত নিম্ন আয়শ্রেণির পরিবারগুলো সুরক্ষিত রাখাকেই প্রধানতম অগ্রাধিকার হিসেবে দেখতে হবে। ইতোমধ্যে ওএমএস কার্যক্রম এবং এক কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে কম দামে নিত্যপণ্য সরবরাহ করার উদ্যোগগুলো বিশেষ কার্যকর হয়েছে। এসব কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো এবং এমন নতুন নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে (বিশেষত নগরাঞ্চলের জন্য) বেশি বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।

০২) জ্বালানির দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর প্রভাব বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে পড়েছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় বলা যায় নিশ্চিতভাবেই আসছে অর্থবছরে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দামে অস্থিরতা থাকবে। জ্বালানির দাম খুব বেশি বেড়ে গেলে দরকারবোধে বাড়তি ভর্তুকি দেওয়ার জন্য কিছু সম্পদ বাজেটে আলাদা করে বরাদ্দ করা যেতে পারে। জনগণকে স্বস্তি দিতে এলপি গ্যাসে কিছু রাজস্ব ছাড়ের কথাও বিবেচনা করা যায়।

০৩) জ্বালানি কেনাকাটার জন্য আমরা বেশি মাত্রায় ব্যক্তি খাতের ওপর নির্ভরশীল। সরকার এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের গ্যারান্টর হিসেবে ভূমিকা রাখে। সরকার নিজে সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি কেনা শুরু করলে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের কার্যক্রমও শুরু হবার পথে। দেরিতে হলেও এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। পাশাপাশি সবুজ জ্বালানির ক্ষেত্রগুলো আরও প্রসারিত করার জন্য বাজেটারি উদ্যোগ নিতে হবে।

০৪) যেহেতু কৃষিই আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির রক্ষাকবচ, তাই বিভিন্ন কৃষি ইনপুটসে যতটা সম্ভব করছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। পাশাপাশি কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ভর্তুকি দেওয়ার ধারাবাহিকতাও বজায় রাখতে হবে। কেননা, কৃষিতে দেওয়া এই ভর্তুকি মূলত এক ধরনের গণমুখী বিনিয়োগ। কৃষির সুরক্ষায় নেওয়া বাজেটারি উদ্যোগগুলো দেশের কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তায়ও ভূমিকা রাখবে।

০৫) প্রবাসী আয় প্রবাহ বলশালী করার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের দক্ষতা একটি বড় প্রতিবন্ধক। এ লক্ষ্যে প্রবাসগামী শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাজেট বরাদ্দে বিশেষ মনোযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষাকে যথাযথ অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিখন ও প্রশিক্ষণে বাড়তি নীতি সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।

০৬) অবকাঠামোগত উন্নয়নে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংযমী হতেই হবে। তবে যেসব প্রকল্প দেশের শিল্পায়নকে গতিশীল করবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে সেগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ বরাদ্দ দিতে হবে।

০৭) অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়ানোর জন্য এবারের বাজেটে হয়তো কর-ছাড় ও ও প্রণোদনার নানাদিক যৌক্তিক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নিঃসন্দেহে এমন সংস্কার কাম্য। তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন এগুলোর ফলে দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত না হয়। বিশেষ করে সাতশ’রও বেশি এমএফআইগুলো যে ছোটখাটো ঋণ দেয় তার এক-তৃতীয়াংশ যায় কৃষিতে। আরেকটি বড় অংশ যায় এমএসএমই খাতে। এর বেশিরভাগ সুবিধা পায় নারী ও প্রান্তিক উদ্যোক্তারাই। এমএফআইকেও তাই করারোপের প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখাই শ্রেয় হবে। এ খাতে করারোপ করলে গ্রামীণ ভোগ কমে যাবে। ভ্যাট আহরণও কমে যেতে পারে।

০৮) পুরো জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়টিকেই বেশি বেশি গুরুত্ব দিতে হাবে আগামী দিনের বাজেটগুলোতে। বাংলাদেশকে জলবায়ু তহবিলের ন্যায্য হিস্যা দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা বিশেষভাবে আগ্রহী। তাই জাতীয় বাজেটে জলবায়ু-বান্ধব উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে পারলে সে জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া সহজ হবে। বাজেটপ্রণেতাদের তাই প্রতিটি খাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে যতোটা সম্ভব জলবায়ু-সংবেদনশীল করে সাজাতে হবে।

সর্বোপরি বাজেট এবং মুদ্রানীতির একটি কার্যকর ও সময়োচিত সমন্বয় নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বোচ্চ নীতি-মনোযোগ নিশ্চিত করতেই হবে। কেননা, বহিঃঅর্থনীতির চ্যালেঞ্জ, রিজার্ভ ক্ষয়রোধ, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, বিনিময় হারে ভারসাম্য রক্ষার মতো বড় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সরকারের বাজেট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করার কোনও বিকল্প নেই। আসছে বছরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বাজেট প্রণয়নের সময় আমাদের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন বলেই আশা করি।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
রোগীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসে সড়কে প্রাণ গেলো ৩ জনের
রোগীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসে সড়কে প্রাণ গেলো ৩ জনের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ