X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ এখন কী করবে?

মামুন রশীদ
২৮ মার্চ ২০২০, ১৬:৪০আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২০, ১৮:৩০

মামুন রশীদ আমদানি, রফতানি, অন্তর্মুখী রেমিট্যান্স, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সাহায্য এবং বিদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সেবাখাতের জন্য অর্থ প্রেরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাংলাদেশের জিডিপিতে বহিঃখাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজ তাই বৈশ্বিক অর্থনীতির ঘটনাবলির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। অপেক্ষাকৃত ছোট বা অতীতে অন্তর্মুখী অর্থনীতি থাকলেও বিশ্বায়নকে আর এড়িয়ে যাওয়ার পথ নেই, পথ নেই আর একা একা দুধেভাতে বেঁচে থাকারও। অভ্যন্তরীণভাবে ক্ষতি যদি কমও হয়, তথাপি বহিঃঝুঁকির কারণে বাংলাদেশের ওপর করোনা অভিঘাতের প্রভাব হতে পারে অনেক গভীর।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে এই বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশ তাহলে করোনা অভিঘাত কীভাবে সামাল দেবে? এটি যে একটি রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, তার কারণ বোধকরি সবাই মানবেন। আমাদের দেশ, সরকার, মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি ডাক্তার কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও সিদ্ধান্তের জন্য অনেকটা একজনের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এখানে ক্রান্তিকালেও নতুন বা অভিনব কোনও সিদ্ধান্ত নিতে সবাই থাকেন দ্বিধাগ্রস্ত। স্বাভাবিক কারণেই এখানে কোনও জাতীয় কমিটি করে নতুন কোনও মত বা আইডিয়া পাওয়া যাবে না। সরকারি কর্মকর্তা বন্ধুমহলে একটি কৌতুক প্রচলিত আছে—‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাছে গাল-মন্দের ভয়ে মাননীয় মন্ত্রীরা নাকি সোমবারের বৈঠকে নিজ মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট নোটও পড়ে আসেন না, এই আশায় যে অত্যধিক পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী নিঃসন্দেহে নিজেই তা পড়ে আসবেন’। আমার আবার এটাও মনে হয় না হঠাৎ করে কেউ চাইলেও বহু বছরের এই অভ্যাস পরিবর্তন দ্রুতলয়ে ঘটবে।  

তাহলে আমরা কী করবো? ১) বাজারে তারল্য সৃষ্টি করতে হবে; ২) বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পিছিয়ে দিয়ে টাকার সাশ্রয় করতে হবে; ৩) আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাছে অবিলম্বে কার্যকর সহায়তা চাইতে হবে; ৪) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি তালিকার পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং ৫) পণ্য বিক্রেতার চাইতে বেশি করে বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতাদের কাছে ধর্না দিতে হবে। বাজারে তারল্য সৃষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একটি কার্যকর মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে। সৃষ্ট তারল্য কিছুতেই যাতে চিরচেনা ‘কুমিরদের’ পেটে না চলে যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের ক্ষমতা ও সক্ষমতা দুটোই বাড়াতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনকে সকল চলমান বৃহৎ প্রকল্পগুলোর রিভিউ বা পর্যালোচনা করে তেমন প্রয়োজন নেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কিংবা ব্যয় বরাদ্দ পিছিয়ে দিতে হবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় নতুন করে রিভিউ করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। আমরা আমাদের জ্বালানি তেলের বর্তমান গড় ক্রয়মূল্য বিবেচনায় যদি অর্ধেক মূল্যেও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের অর্ধেক তেলও একটি নির্দিষ্ট নিম্নদামে কেনার চুক্তি করতে পারি, তাহলেও অনেক টাকার সাশ্রয় হবে। একই কাজ করতে হবে অন্যান্য বৃহৎ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও। ভারতসহ অন্যান্য সমপর্যায়ের দেশ প্রায়ই এটি করে থাকে। বিদ্যুৎ ক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি ইনডেমনিটি কাজ করে তবে পণ্যের ‘ফিউচার মার্কেটে’ অংশগ্রহণ বা অপারেট করার ক্ষেত্রেও করতে হবে।

এবার আসি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর দ্রুত পুনর্বাসন ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্প দাঁড় করিয়ে সাহায্যের প্রস্তাব উপস্থাপন। দৌড় ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা কিংবা হতদরিদ্রদের ভরণপোষণ হতে পারে এই সাহায্য চাওয়ার প্রধান উপলক্ষ। এক্ষেত্রে ইআরডি, অর্থবিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রী এমনকি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে তৎপর হতে হবে। বেইজিং, টোকিওতে রাষ্ট্রদূত কিংবা বিশ্বব্যাংকে আমাদের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পালন করতে পারেন বিরাট অনুঘটকের ভূমিকা।  

আমরা এতদিন পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য বা বিভিন্ন স্বল্প কিংবা অনালোচিত কারণে বৃহৎ বিক্রেতা দেশের সঙ্গে সম্পর্কে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি। এবার দ্রুত তাকাতে হবে চীন, জাপানসহ অনেক ক্রেতা দেশ বা প্রতিষ্ঠানের দিকে। প্রয়োজনে তারা আমাদের দেশ থেকে কিনে অন্য কোনও বাজারে পুনঃরফতানি করুক। এমনকি খাদ্যাভ্যাসে সম্ভাব্য পরিবর্তনের জন্য চীন আমাদের কাছ থেকে মিঠাপানির মাছ কিনতে পারে। যেমনটি জাপানসহ অনেক দেশ কিনতে পারে জরুরি ব্যক্তি নিরাপত্তা চিকিৎসা সরঞ্জাম। আমার মনে পড়ে না, গেলো দশ বছরে আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী কবে আমাদের পণ্যের সেরা দশটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা নেই, তেমনি ট্রেড ডিপ্লোম্যাসি বা বাণিজ্য দূতিয়ালিতেও শুরু আছে শেষ নেই। তাহলে শুরু হয়ে যাক জাপানের ‘ইউনিক্লো’ দিয়ে। তাদের প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন করতোয়ায় শুরু হয়ে যাক দিনভর আলোচনা আর আপ্যায়ন। ইউনিক্লোর প্রধানকে আমরা বলি তার এশীয় সকল স্টোরে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে। তার জন্য আমরা না হয় প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় ডিসকাউন্ট নিয়ে আলোচনা করি। একে একে আলোচনা হোক এইচএন্ডএমসহ সম্ভাব্য সকলের সঙ্গে। আমি নিশ্চিত কিছু একটা ঘটবেই। এতদিন আমরা সময় দিয়েছি বোয়িং, সিমেন্স, স্যামসাং আর ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিকে, এবার দিন শুরু হোক বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতাদের দিয়ে। বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ প্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে সংযোগ বা চীন ও জাপানের সরকার প্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্য কেনার আকুতি জানিয়ে।  

বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে পারে না। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’। আমরা শুধু আমাদের যুদ্ধের কৌশলে কিছুটা নতুনত্ব আনবো। বৃহত্তর স্বার্থে তা আনতেই হবে। 

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ