X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
সিনেমা সমালোচনা

এমআর-৯: ‘মাসুদ রানা’ আছে ‘মাসুদ রানা’ নেই!

আহসান কবির
আহসান কবির
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:০২আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:০৫

‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’: রেটিং ৭/১০

কাজী আনোয়ার হোসেনের অমর সৃষ্টি ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ‘ধ্বংসপাহাড়’ অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’। দারুণ লোকেশন আর আধুনিক অস্ত্রবাজির এক ড্যাসিং ছবি ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’। আবার অস্ত্রবাজি আর আরোপিত অ্যাকশনের ভেতর মানবিক মাসুদ রানা এবং তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী কবীর চেীধুরীকে তেমন খুঁজে না পাওয়ার এক ছবি ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’। ধ্বংসপাহাড়-এর গল্পের সাথে প্রায় মিল না থাকা এক ছবি ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’। লোকেশন,অ্যাকশন আর আধুনিক নির্মাণ সমৃদ্ধ এক ছবি ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’। আসিফ আকবর পরিচালিত বাংলাদেশ-আমেরিকার যৌথ প্রযোজনার এক ছবি ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’।

বিদেশি গল্প অবলম্বনে লেখা হলেও মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বইয়ের নাম ছিল ‘ধ্বংসপাহাড়’, যা মৌলিক। ১৯৬৬ সালে কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা এই বইয়ের গল্প গড়ে উঠেছিল কাপ্তাই বাঁধ উড়িয়ে দেয়া নিয়ে যা মূলত দেশদ্রোহী কবীর চৌধুরী ও দেশপ্রেমিক মাসুদ রানার যুদ্ধ এবং কবীর চৌধুরীর পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। কিন্তু ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’ ছবিতে তার খুব সামান্যই আছে। কবীর চৌধুরীর ভূমিকাও সামান্য। বেশি আছে ‘রস’ (রোনাল্ড ও রোমান রস) দুই ভাইয়ের স্মাগলিং আর বোমা সংগ্রহের চেষ্টায় বাধা দেয়া ও তাদের ধ্বংস করা। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দুর্ধর্ষ স্পাই মাসুদ রানাকে নির্দেশ দেয়া হয় রস ব্রাদার্সের আস্তানায় ঢুকে তাদের নিশ্চিহ্ন করে আসতে। রস ব্রাদার্সের এই ষড়যন্ত্র জানে শুধু সিআইএ এবং বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স। মাসুদ রানা নির্দেশ অনুযায়ী ‘সুবীর সেন’ সেজে যায় রস ব্রাদার্সের আস্তানায়, তার বান্ধবী সুলতা রাওয়ের সাথে এবং সেখানে যেয়ে সে ধরা পড়ে যায়। প্রযুক্তি ও বিবিধ কারণে গুলিবিদ্ধ হলেও রানা সুলতার কারণে পালাতে সক্ষম হয়। এরপর রানার আস্তানায় হামলা চালায় রস ব্রাদার্স। রানা সেখান থেকে ভয়াবহ বন্দুক যুদ্ধের পর রক্ষা পেলেও আবারও তাদের মুখোমুখি হতে হয় কবীর চৌধুরীর আস্তানায়। কবীর চৌধুরী এবং জুনিয়র রস সেখানে থেকে চলে যেতে পারলেও রানার হাতে খুন হয় সিনিয়র রস ও তার ছেলে। বেঁচে থাকা রস ব্রাদার্সের একজন পালিয়ে যান চীনে। রানা সেখানে আক্রমণ চালানোর জন্য আগেই ‘টু বি কন্টিনিউড’ হিসেবে শেষ হয় ১৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি। ছবির পরের পর্বে হয়তো গল্পের আরও কিছু দিক উন্মোচিত হবে। 

প্রথমেই বলা হয়েছে ‘ধ্বংসপাহাড়’-এর খুব সামান্যই আছে ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’ ছবিতে। প্রযুক্তি নির্ভর এবং হাতে হাতে মারপিটের ভিড়ে কাহিনির জট কিংবা অভিনয়ের কারিশমা বিকশিত হয়েছে কম। মাসুদ রানা সিরিজের পরিচিত ও প্রেমিক মাসুদ রানাকে এখানে হয়তো ওভারস্মার্টও মনে হয়েছে। প্রথমেই ‘সুবীর সেন’কে খুন হতে দেখা যায়। জানা যায় এই ঘটনা দক্ষিণ আফ্রিকার। এরপর আমেরিকার লাস ভেগাস, লস এঞ্জেলেস, মরিশাস ও বাংলাদেশে দেখা যায় মাসুদ রানাকে। 

মাসুদ রানা ছাড়া বাংলাদেশি অভিনেতা অভিনেত্রীদের পর্দায় তুলনামূলক অল্পই দেখা গেছে। কবীর চৌধুরী কিংবা রাহাত খানের উপস্থিতিও কম। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস, লস এঞ্জেলেস, মরিশাস, হিমালয়ের পাশে, বাংলাদেশের পুরনো ঢাকা ও সদরঘাটের চমৎকার লোকেশনে এই ছবির শুটিং হয়েছে।
 
আহসান কবির ছবিতে মাসুদ রানার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এবিএম সুমন। তাকে সুগঠিত শরীরের অ্যাকশন হিরোই মনে হয়েছে যদিও তার মুখে সংলাপ খুব বেশি নেই। বার বার বলেছেন ‘কপি’। সুলতা রাও চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্ডিয়ান মডেল ও অভিনেত্রী সাক্ষী প্রধান। তিনি পর্দায় যথেষ্ট স্মার্ট ছিলেন। কবীর চৌধুরীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আনিসুর রহমান মিলন। খানিকটা পাগলাটে টাইপ চরিত্রে তিনিও সপ্রতিভ থাকার চেষ্টা করেছেন। রাহাত খানের ভূমিকায় শহীদুল আলম সাচ্চু, মাসুদ রানার বাবার ভূমিকায় জাহিদ হোসেন শোভন, মা’র চরিত্রে এলিনা শাম্মী ও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের বাংলাদেশ অংশে টাইগার রবি ছাড়াও বিদেশি অংশে মাইকেল জে ই হোয়াইট, ফ্রাংক গ্রিলো, কেলি গ্রেসন, ম্যাট পাসমোর এবং দ্য গ্রেট কালী অভিনয় করেছেন।

এই ছবির চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যামেরিকান আসিফ আকবর। ছবির চিত্রনাট্য আরও লিখেছেন নাজিম উদ দৌলা এবং আব্দুল আজিজ। 

সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন অ্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী রিকি কেজ। ছবিটি হলিউডের এল ব্র্যাভো ফিল্মস, চেজিং বাটারফ্লাই পিকচার ও বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়ার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে এবং প্রযোজক ছিলেন আসিফ আকবর, হেমডি কিওয়ানুকা, কলিন বেটস, ফিলিপ তান ও আব্দুল আজিজ।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আধুনিক প্রযুক্তিতে চিত্রায়িত ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’ ছবির সাথে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে।

জয় হোক বাংলা ছবির

সমালোচক: রম্যলেখক, সাংবাদিক ও কবি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

আরও সমালোচনা:

১৯৭১ সেই সব দিন: ৫৩ বছর আগের বাস্তবতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা

আম কাঁঠালের ছুটি: দুরন্ত শৈশব মনে করিয়ে দেয়া এক ছবি

প্রিয়তমা: পরিচিত গল্প আর ‘তাড়াহুড়ো’য় নির্মিত ছবি!

প্রহেলিকা: ছবিটি দেখলে কিছু প্রশ্ন উঠবেই

‘পরাণ’-এর আরেক ভার্সন ‘সুড়ঙ্গ’!

সুলতানপুর: ফর্মুলায় আক্রান্ত ধারাবাহিকতাহীন ছবি

আদিম: ‘বস্তি ঘনিষ্ঠ’ এক অপরূপ ছবি!

পাপ: শেষ না হওয়া এক থ্রিলার গল্পের ছবি

কিল হিম: বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন অনন্ত, কিন্তু সেটা নড়ে না!

লিডার: স্বস্তি আর অস্বস্তির পাঁচ-ছয়

লোকাল: রাজনীতির ব্যানারে প্রেম ও প্রতিশোধের ছবি!

জ্বীন: ‘জিন ছাড়ানো’র কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছবি!

/এমএম/
সম্পর্কিত
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
ওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার
সিনেমা সমালোচনাওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার
রাজকুমার: ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ এক বিয়োগান্তক ছবি
সিনেমা সমালোচনারাজকুমার: ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ এক বিয়োগান্তক ছবি
কাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সিনেমা সমালোচনাকাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু
বাংলা গানের উন্নয়ন ও বিকাশে ‘অংশীজন সভা’
বাংলা গানের উন্নয়ন ও বিকাশে ‘অংশীজন সভা’
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বোনকে নিয়ে সনু নিগমের প্রথম গান!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...