X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
গীতিকবির গল্প

গানের জন্য একমাত্র পুত্রকে হারানো এবং...

মাহমুদ মানজুর
মাহমুদ মানজুর
১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৪আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪৯

দেশীয় সংগীতে এমন মানুষ বিরল। চার দশকেরও অধিক সময় ধরে যার হাত বাজিয়ে চলেছে গিটার, সঙ্গে সচল কাগজে কলমেও। গিটার শিক্ষক হিসেবে তার শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন অগণিত, গীতিকবি হিসেবে জনপ্রিয় গানের সংখ্যাও অনেক। এর বাইরে রয়েছে শিশুতোষ অনুষ্ঠান নির্মাণের বিস্তৃত কৃতিত্ব। সেই মানুষটি এখনও পার করে চলেছেন আটপৌরে জীবন। নেই কোনও উচ্চাভিলাষ, যেমনটা ছিল না কখনও। ইচ্ছা, আমৃত্যু এভাবেই যেন কাটাতে পারেন- সৃষ্টি, শিক্ষা, সংগীত ও সম্মানের মায়াজালে-

নতুন গান সৃষ্টি নিয়ে মগ্ন লিটন অধিকারী রিন্টু ও কুমার বিশ্বজিৎ বিশ্বজিৎ আর অভিজিৎ

শুরুতেই বলা ভালো, বাংলা সংগীতের অন্যতম মানিকজোড়; বিশ্বজিৎ আর অভিজিৎ। ১৯৮০ সালের কোনও এক সন্ধ্যায় দুজনের পরিচয় মগবাজার মোড়ের এক চিলেকোঠার বাসায়। এরপর থেকে এই লেখা প্রকাশ পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক অটুট রয়েছে একই আবহে। একে অপরের সর্বাধিক গানের অংশীদারও তারা।

কিন্তু কে এই অভিজিৎ? তার সঙ্গে লিটন অধিকারী রিন্টু কিংবা কুমার বিশ্বজিতের সম্পর্ক কী! শুধু ‘আছে’ বললে ভুল হবে। বলতে হবে তাদের মধ্যে ‘নিবিড়’ সম্পর্ক। এই অভিজিৎই মূলত লিটন অধিকারী রিন্টু। তার ভাষায়, ‘আমার আসল নাম লিটন অভিজিৎ অধিকারী রিন্টু। আবার আমার প্রথম গান রেকর্ড হয় কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে। গীতিকার হিসেবে নাম দেওয়ার সময় একটু কেমন যেন লাগছিল। মনে হলো শিল্পী ও গীতিকারের নামটা একই রকম হয়ে যায়। মানুষ বলবে বিশ্বজিৎ আর অভিজিৎ দুই ভাই। যদিও তারা ভাবে, আমরা গান করতে গিয়ে স্বজনপ্রীতি করেছি। তাছাড়া আমার নামটাও বেশ বড় মনে হলো। তাই অভিজিৎ ফেলে দিয়ে লিটন অধিকারী রিন্টু নামটি ব্যবহার শুরু করি। কাগজে কলমে এখনও আমি অভিজিৎ আছি। তবে গানে সেটা নাই।’ এজি মিশন অফিসে দাফতরিক কাজে মগ্ন লিটন অধিকারী রিন্টু

গীতিকবি জানান, চার দশকের ক্যারিয়ারে ক্যাসেট, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, রেডিও- সবখানে রিন্টুর অভিষেক হয়েছে কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠের মাধ্যমে। যদিও প্রথম দিকে রিন্টু মূলত গান লিখেছেন অকাল প্রয়াত বন্ধু শেখ ইসতিয়াকের জন্য। যদিও সেসব গাওয়া হতো মুখে মুখে, স্টেজে বা স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের ফাঁকে।

১৯৮২ সালে লিটন অধিকারী রিন্টুর প্রথম গান রেকর্ড হয় বাংলাদেশ বেতারে, কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে।

এক নজরে

নাম: লিটন অভিজিৎ অধিকারী রিন্টু
জন্ম: ২৪ ফেব্রুয়ারি, বরিশাল শহরের বেলস পার্ক পাড়া 
পিতা: স্বর্গীয় জগন্নাথ অধিকারী
মাতা: স্বর্গীয় সুখদা অধিকারী
ছয় ভাই এক বোন, ভাইদের মধ্যে পঞ্চম

বাদক থেকে লেখক

গিটারের সুবাদে মূলত সখ্য গড়ে ওঠে শেখ ইসতিয়াকের সঙ্গে। দুজনেই তরুণ। বয়সের ব্যবধান দুই তিন বছরের। বসবাস একই এলাকায়, মগবাজারে। সময়কাল ১৯৭৫। একসঙ্গে সিনেমা দেখা আর গিটার নিয়ে গবেষণা করা ছিল তাদের বন্ধুত্বের মূল উপলক্ষ।  

‘‘সম্পর্কটা বন্ধুত্বের হলেও আমরা সবসময় একে অপরকে গুরু বলে ডাকতাম। তো একদিন মতিঝিল মধুমিতা হলে গিয়ে দুজনে একটা ইংরেজি ছবি দেখলাম। মর্নিং শো। ব্ল্যাকে চড়া দামে টিকিট কেটেছি। দুজনের পকেট ফাঁকা। সিনেমা দেখে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরছিলাম। রমনা পার্ক দিয়ে হাঁটছিলাম। এখন যেটা রমনা বটমূল। সেখানে ঘাসের মধ্যে শুয়ে পড়লাম। কারণ, খুব ক্লান্তি লাগছিল। তো শুয়ে থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তে একটা লাইন বললাম। লাইনটা এমন ছিল- ধূসর গোধূলির মায়াজাল ছিঁড়ে গেছে/ প্রেমের সাগর মরু সাহারা হয়েছে/ দিকহারা পাখি তাই ক্লান্ত হয়ে মরু ঝড়ে ডানা ভেঙেছে...। কথাগুলো শুনেই শোয়া থেকে ইসতিয়াক উঠে বসলো। অবাক হয়ে বললো, ‘গুরু তুমি কি কবিতা লেখ?’ বললাম, ‘না। ভুলেও না।’ এরপর ও বলে, ‘গুরু তুমি গান লেখো, সেটা তো বলোনি কখনও!’ ওর কথা শুনে আমি নিজেও অবাক। কী বলে এসব। গান-কবিতা লিখবো কেমন করে? ও বিশ্বাস করলো না। এরপর বলে, ‘তুমি যা যা বললা এখন, সব মনে রাখো। এটাসহ একটা গান লিখে দাও। যা মনে আসে লিখে দাও।’’

শেখ ইসতিয়াকের মাধ্যমে রিন্টুর গান লেখার সূত্রপাত হলো এভাবেই। নিজের অফিসে ছড়িয়ে থাকা পুরনো গানের কাগজে চোখ বোলাচ্ছেন লিটন অধিকারী রিন্টু

রিন্টু জানান, তিনি গিটার বাজানোর চেষ্টা করলেও প্রফেশনালি তখনও তেমন কিছু করতেন না। এটা সত্তর দশকের শেষদিকের কথা। তবে শেখ ইসতিয়াক প্রফেশনালি গিটার বাজাতো বিভিন্ন রেকর্ডিংয়ে। ছোট ছোট স্টেজ শো করতো। তখনও তার কোনও গান রেকর্ড হয়নি। রমনা পার্কের সেই গানের সূত্র ধরে শুরু হয় দুজনার আরও নিবিড় পথচলা। সেই গানটি লিটন অধিকারী রিন্টু লিখে দেন। তাতে শেখ ইসতিয়াক সুরও দেন। সুযোগ পেলেই সেই গানটি অন্যদের গেয়ে শোনাতেন শেখ ইসতিয়াক। এভাবে রিন্টু আরও বেশ কিছু গান লিখেন ইসতিয়াকের জন্য। যদিও সেগুলো ঘুরে ফিরে গাওয়া হতো বিভিন্ন আড্ডায় বা রেকর্ডিংয়ের ফাঁকে। ফলে গানগুলো আর আনুষ্ঠানিক গান হয়ে উঠছিল না।  

রিন্টু বলেন, ‘গানগুলো যে রেকর্ড হচ্ছে না সেটা নিয়ে আমার ভেতর কোনও চাপ ছিল না। ইসতিয়াক যে আমার লেখাগুলোতে সুর দিতো, গাইতো- সেটাই আমার জন্য বড় আনন্দ ছিল। তবে বিভিন্ন স্টুডিওতে ও আমার গানগুলো গেয়ে শোনাতো। সবাই একটু অবাক হতো। বলতো, কথাগুলা তো একটু অন্যরকম। কে লিখেছে। এরপর অনেকেই আমার কাছে গান চেয়েছে। কিন্তু লেখা হয়নি। কারণ, আমি তো ইসতিয়াকের প্রেসারে লিখতাম। গীতিকবি হওয়ার জন্য লিখতাম না।’

পরিবার পরিচিতি

স্ত্রী: শেলী এলিজাবেথ অধিকারী, পেশায় শিক্ষক
একমাত্র ছেলে: আকাশ (মৃত)
দুই মেয়ে: অনন্যা ও ঐশী
একমাত্র নাতনি: অহনা

গিটার ও গীতিকবিতার প্রথম রেকর্ড

লিটন অধিকারী রিন্টু ও শেখ ইসতিয়াকের সংগীত বন্ধুত্ব অনেকটা ফলাফলশূন্য কিংবা রিহার্সাল টাইমও বলা যেতে পারে। তাদের পাঁচ ছয় বছরের সম্পর্কে একটি গানও রেকর্ড হয়নি। এরমধ্যে গিটার বাদক হিসেবে প্রফেশনাল কাজ শুরু করে দিয়েছেন রিন্টু। যদিও এই গিটার শেখা বিষয়ে রয়েছে গীতিকবির বড় একটা যুদ্ধ। সেটি না হয় পরে শোনা যাবে। তার আগে জেনে নেওয়া যাক কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে পরিচয় ও পথচলার গল্প। কুমার বিশ্বজিৎ ও হানিফ সংকেতকে ঘিরে সবাই

রিন্টুর ভাষায়, ‘১৯৭৭ সালের নভেম্বরে প্রথম ফোয়াদ নাসের বাবু (ফিডব্যাক) ভাইয়ের সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনের জিংগেলে গিটার বাজাই। মনে পড়ে, কাকরাইল মোড়ে ইফসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে সেটি হয়েছিল। ২০০ টাকা সম্মানি পেয়েছিলাম! সেসময় এটা অনেক টাকা। বলা যেতে পারে, গান-বাজনা থেকে এটাই আমার প্রথম আয়। পরবর্তীতে ময়মনসিংহে বন্ধু সুরকার ফরিদ আহমেদের সংগীত দল সিভার্স-এর সঙ্গে সাথে মিউজিশিয়ান হিসেবে যুক্ত হই। এরপর ১৯৭৮ সালের মার্চে প্রথম বিটিভিতে ৫০ টাকা পারিশ্রমিকে গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করি। তারপর বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে নিয়মিত গিটার বাজানো শুরু করি। পরবর্তীতে ইয়ুথ ফর ক্রাইস্ট সংগীত দলে সুযোগ পাই এবং সেই সংগীত দলে তখন প্রধান ভূমিকায় ছিলেন বড় ভাই স্মীথ অধিকারী, ডেভিড প্রণব দাশ, মেথিউ দিপক বোস ও পিটার সরকার মহাশয়। তাদের সঙ্গে থেকে খ্রিষ্টীয় সংগীত লেখা ও সুর করা সম্পর্কে আমি অনেক কিছু শিখেছি ও জ্ঞান অর্জন করেছি। যা পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে লেগেছে।’ লিটন অধিকারী রিন্টু

এটা তো গিটারিস্ট হিসেবে লিটন অধিকারী রিন্টুর শুরুটা শুনলেন। কিন্তু গীতিকবি রিন্টুর অভিষেক হলো কেমন করে; সেটিও জানা জরুরি। খুলে বসলেন স্মৃতির ঝাঁপি। বললেন, ‘‘এরমধ্যে ঢাকায় আমাদের মহল্লাতেই থ্রি স্টার হোটেলের ছাদের চিলেকোঠায় উঠলো কুমার বিশ্বজিৎ। বন্ধু ইসতিয়াক প্রতি সন্ধ্যায় সেখানে যেতো আড্ডা দিতে। একদিন ইসতিয়াক বললো, ‘গুরু তোমার গান তো বিশ্বজিৎ শুনে পছন্দ করেছে। আমাকে ধরেছে, তোমাকে তার জন্য গান দিতে হবে।’ এটা ৮২ সালের কথা। আমি বললাম, ‘তোমাকে যেগুলো দিয়েছি, সেগুলো তোমার কাছেই রাখো। আমি নতুন কিছু দেখি পারি কিনা।’ একদিন আমিও গেলাম সেই চিলেকোঠায় আড্ডা দিতে। কুমার বিশ্বজিৎ বললো, ‘আগামী সপ্তাহে রেডিওতে রেকর্ডিং আছে। আমাকে লিখে দেন একটা গান। এই গানটা দিয়ে শুরু করি একসঙ্গে।’ এরপর লিখে দিলাম- প্রদীপের আলোতে ছায়া পড়ে জানি/ প্রেমের ভাঁজে ভাটা আসে তাও মানি/ তবুও প্রদীপ জ্বালি ভালোবাসি আমি...।’’

একসঙ্গে ৮০/৯০ দশকের জনপ্রিয় গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম জুটির জন্ম হলো সেই গানটি দিয়ে। যা এখনও বহমান। দুজনার সৃষ্টি ‘যারে ঘর দিলা সংসার দিলা’, ‘প্রেমতো চরের জমি নয়’, ‘কিছুই নাকি দেইনি তোমায়’, ‘জন্মিলে মরিতে হবে’, ‘আমার ভালো থাকার কথা শুনে’-সহ অসংখ্য গান। যার অনেকটাই কালজয়ী।

রিন্টু জানান, তাদের একসঙ্গে তৈরি গানের সংখ্যা দুই শতাধিক। এটুকুও বলতে দ্বিধা করলেন না, ‘আজ আমি যেটুকুই এসেছি বা অর্জন করেছি, তার পুরোটাই আমাকে দিতে হবে বড় ভাই স্মীথ আর অধিকারী, শেখ ইসতিয়াক, কুমার বিশ্বজিৎ আর হানিফ সংকেতকে। এই চারজনকে বাদ দিলে আমার অস্তিত্ব আসলে থাকে না।’

প্রথম কাজ

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বিমানের জন্য তৈরি একটি জিংগেলে গিটার বাজানো, সম্মানী পেয়েছেন ২০০ টাকা

১৯৭৮ সালে বিটিভিতে প্রথম গিটার বাজান, সম্মানী পেয়েছেন ৫০ টাকা

হানিফ সংকেত ও সালমান শাহ

গীতিকবি একটু আগেই বলেছেন, তার ক্যারিয়ারে কুমার বিশ্বজিতের পাশাপাশি বড় অংশজুড়ে আছেন নির্মাতা-সঞ্চালক হানিফ সংকেত। যে সংকেতের সুবাদে ‘ইত্যাদি’তে গাওয়া চিত্রনায়িকা দিতির কণ্ঠে প্রথম গান হয় রিন্টুর কথায়। তা-ই নয়, অমর নায়ক সালমান শাহ প্রথম যে গানটিতে অভিনয় করেন ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে; সেটিও লিখেছিলেন রিন্টু। এরপর তো ‘ইত্যাদি’র বিষয়ভিত্তিক গান মানেই লিটন অধিকারী রিন্টুর নাম।  

গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ-এর প্রথম কমিটি, সবার ডানে রিন্টু সংগীতশিল্পী না হয়েও হানিফ সংকেতের সঙ্গে কেমন করে হলো গীতিকবি রিন্টুর এই দীর্ঘ ও গভীর সখ্য। শুনুন গীতিকবির বয়ানে, ‘‘১৯৮৬ সালের কথা। ‘যদি কিছু না মনে করেন’ অনুষ্ঠানের জনক ফজলে লোহানী সাহেব মারা গেলেন ৮৫ সালে। বিটিভি থেকে বাদশা ভাই (বিটিভির অনুষ্ঠান কর্তা) ফোন করে জানালেন, লোহানী ভাই স্মরণে একটা গান লিখতে হবে। মকসুদ জামিল মিন্টু সুরে। গেলাম, লিখলাম। কথাগুলো এমন- থাকতে জীবন জীবনের দাম পায় বলো কয়জনে/ মরলে পরে সুনাম শুনি গুণী বলে সব জনে...। শিল্পী ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ, আর এটিই আমার বিটিভির জন্য লেখা প্রথম গান। মূলত এই গানটি করার সুবাদে হানিফ সংকেতের সঙ্গে পরিচয়। তখন তো লোহানী ভাইয়ের প্রায় পুরোটাই দেখতেন হানিফ সংকেত। যাহোক, লোহানী ভাইয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের পরিচয় ও সখ্য হলো। এরপর হানিফ সংকেত ‘কথার কথা’ ও ‘ঝলক’ নামের দুটি অনুষ্ঠান করেন। সেখানেও গান লিখেছি। এরপর ১৯৮৯ সালে ‘ইত্যাদি’ শুরু হওয়ার পর আর থামা হয়নি আমাদের।’’ একটি আয়োজনে একসঙ্গে আসিফ ইকবাল, মিতালী মুখার্জি, লিটন অধিকারী রিন্টু ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

কিন্তু না থামলেও অনেকটা থমথমে মনে হয়। কারণ, ‘ইত্যাদি’ মানেই লিটন অধিকারী রিন্টুর এক বা একাধিক গান। কিংবা হানিফ সংকেতের কণ্ঠে এখন আর খুব বেশি শোনা যায় না, ‘গানটি লিখেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু...।’ এড়িয়ে যাননি সরলতায় মোড়ানো মানুষটি। বললেন, ‘সংকেতের সঙ্গে যে বন্ধুত্ব, সেটা এখনও সমান ধারায় বহমান। এখনও আড্ডা মারি, দাওয়াত খাই এবং মাঝে মধ্যে গানও লিখি। এটা ঠিক, গানের সংখ্যা এখন আমার কম। কারণ, আয়োজনটি এখন জেলাভিত্তিক হয়ে গেছে। একেকটি পর্ব একেক অঞ্চল নিয়ে করে। ফলে সেই অঞ্চলের শিল্পী-গীতিকবিদের সুযোগ দেওয়া হয়। তাই আমার লেখা কম হয় এখন। আর জেলার বাইরে যে দু’একটি গান থাকে সেগুলো মূলত মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ভাই লেখেন। আমি তো মনে করি, বাংলা গীতিকবিদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠতমদের মধ্যে অন্যতম।’ ‘ইত্যাদি’র সেটে রিন্টু (বামে)

না। ‘ইত্যাদি’ প্রসঙ্গ এখানেই শেষ নয়। লিটন অধিকারী রিন্টু জানালেন দুটি ভালোলাগার মতো স্মৃতি। যার একটি হলো চিত্রনায়িকা দিতি। অন্যটি অমর নায়ক সালমান শাহ। দুজনই এখন প্রয়াত। যে দুজনকে গীতিকবি পেয়েছেন তাদের প্রথম দুটো কাজে। কবির ভাষায়, ‘‘১৯৮৯ সালে হানিফ সংকেত শুরু করে ‘ইত্যাদি’। প্রথম পর্বেই একটা গান নিলো। পরে শুনলাম সেটি নায়িকা দিতির কণ্ঠে ‘ইত্যাদি’র জন্য প্রথম গান। এটা একটা ভালো লাগার বিষয়। তবে তারচেয়েও বড় ঘটনা হয় দ্বিতীয় পর্বে। ড্রাগস নিয়ে একটা বিষয়ভিত্তিক গান লেখার জন্য বললেন হানিফ সংকেত। কারণ, তখন আসলেই যুবসমাজের মধ্যে ড্রাগসের অবস্থা ভয়ংকর ছিল। লিখলাম ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’। শুটিংয়ে গিয়ে দেখি, সেই গানের মডেল হবেন এক অচেনা তরুণ। নাম ইমন। তখন অবশ্য মনে মনে ভাবছিলাম, ছেলেটা একটু প্রমিনেন্ট কেউ হলে গানটা আরও ভালো লাগতো দর্শকদের। এরপর তো দেখলাম ভোজবাজির মতো সেই ইমনই হয়ে উঠলো সালমান শাহ! হানিফ সংকেত ও ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে এমন অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে আমার, যা আসলে বলে শেষ করা যাবে না।’’

যাদের উৎসাহে গান লেখা

১৯৭৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় সংগীত রচনা করতেন লিটন অধিকারী রিন্টু

১৯৮১ সাল থেকে প্রয়াত গায়ক শেখ ইসতিয়াকের উৎসাহে আধুনিক গান লেখা শুরু করেন

পরবর্তীতে কুমার বিশ্বজিৎ, হানিফ সংকেত, মকসুদ জামিল মিন্টু, আলী আকবর রুপু, ফরিদ আহমেদ, নকীব খান, আইয়ুব বাচ্চু, প্রণব ঘোষসহ অনেকের উৎসাহে গান রচনায় নিয়মিত হন

রেডিও-বিটিভিতে আজও তালিকাভুক্ত নন

গিটারিস্ট হিসেবে বিটিভিতে তালিকাভুক্ত লিটন অধিকারী রিন্টু। তবে বিস্ময়কর তথ্য হলো, গীতিকবি হিসেবে রেডিও আর বিটিভিতে এনলিস্টেড নন তিনি! যার পেছনেও রয়েছে গীতিকবির জীবনে ছোট্ট একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা।

গিটার স্কুলের একটি ছবি কবির ভাষায়, ‘রেডিও আর টিভির এনলিস্টেড না আমি। বিশেষ করে বিটিভিতে অনেক গান লিখলেও কোনও রয়্যালটি পাই না। এটার দায় অবশ্য আমারই। কারণ, আমি এটার জন্য শ্রম দিতে পরিনি। রেডিওতে আমি গানই জমা দিইনি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য। অথচ প্রথম গানই রেডিওতে করেছি কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে। তবে বিটিভিতে একবার ২৫টা গান নিয়ে গিয়েছিলাম। যেগুলো অলরেডি রেকর্ডেড। এনলিস্টেড হওয়ার জন্য। ৮৪/৮৫ সালের দিকে, তখন বিটিভিতে গান বাছাই করতেন একজন স্বনামধন্য প্রযোজক। ওনার কাছে দিলাম। আমার গানের পাণ্ডুলিপি উল্টে ৫/৬টা গানে লাল কালি দিয়ে বললো, ‘এগুলো রিপেয়ার করে আনেন’। বললাম, এগুলো তো অলরেডি রেকর্ডেড গান। নামি-দামি শিল্পীর ক্যাসেটে আছে। কেমন করে রিপেয়ার করবো! রিপেয়ার করলে তো বিতর্কিত হবে। তিনি বললেন, ‘রেকর্ডেড হলেও করতে হবে’। আমি বললাম, ঠিক আছে। সেই যে এলাম, আর যাইনি। ফলে এখানে কারও দোষ নাই। আমিই এটা নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি কখনও। আর বেতারে তো মাত্র ৮/১০টি গান করেছি। সেখানেও তালিকাভুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিকতায় যাইনি কখনও।’ গীতিকবির সংগ্রহশালা

এই সুযোগে বলে রাখা দরকার, লিটন অধিকারী রিন্টু সম্ভবত একমাত্র গীতিকবি, যার কোনও গানের ডায়েরি বা খাতা ছিল না কখনও। পুরোটা জীবন লিখেছেন হাতের কাছে যে কাগজ পেয়েছেন সেটাতে। এমনকি সেই কাগজগুলোও যত্ন করে সংরক্ষিত নেই। তবে ফেলেও দেননি সব। তার অফিসের এদিকে সেদিকে অনেকটা বস্তাবন্দি করা আছে অসংখ্য গানের কাগজ। যেগুলো খুলে খুলেও দেখালেন তিনি। যদিও এখন আধুনিক যুগে বাধ্য হয়ে কম্পিউটারে গান লেখার চেষ্টা করেন।

শিক্ষাজীবন

বরিশাল ব্যাপ্টিস্ট চার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় (শিশু থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত)
ঢাকা শাহানূরী মডেল হাই স্কুল (তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত)
বরিশাল ব্যাপ্টিস্ট মিশন হাইস্কুল (সপ্তম থেকে এসএসসি পর্যন্ত)
ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী কলেজ (এইচএসসি পর্যন্ত)
ঢাকা সিটি কলেজ (বিএ ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত)

পাকিস্তান বেতারের প্রথম স্প্যানিশ গিটার বাদক ওস্তাদ সূরুজ মিয়ার কাছে মূলত হাতেখড়ি। এরপর কোরিয়ান পিয়ানো বাদক মিসেস কিমের কাছে স্টাফ নোটেশনের হাতেখড়ি। বাকিটা নিজের প্রচেষ্টায়।

সিনেমার গানে অপারগতা

আনুষ্ঠানিকতায় অপছন্দ এই মানুষটি সিনেমার স্বর্ণালি সময় পুরোটা পেয়েও এড়িয়ে গেছেন সন্তর্পণে। পুরো ক্যারিয়ারে দুটি ছবির জন্য মাত্র ৫টি গান লিখেছেন। যে সিনেমার নামও এখন আর প্রকাশ করতে চাইছেন না। তবে সিনেমায় গান এর বেশি না লেখার পেছনে তার কোনও অভিমানও নেই। বরং প্রকাশ করেছেন অপারগতা। গীতিকবির সংগ্রহশালা

রিন্টু বলেন, ‘সিনেমায় মাত্র ৫টা গান করেছি। তাও বহু কষ্টে। গেয়েছেনও বিখ্যাত শিল্পীরা। যথারীতি প্রথম গানটি লিখেছি কুমার বিশ্বজিতের জন্য। এরপর রবি চৌধুরী আর হৈমন্তী শুক্লাও গেয়েছেন। তো ৫টা গান করার পর দেখলাম, ফিল্মের গান লেখার যে যোগ্যতা সেটা আমার নাই। ওটা আলাদা যোগ্যতা। আর আমার লেখার ধরনটাও আসলে সিনেমার জন্য ফিট না। আমার বেশিরভাগ গানই জীবনভিত্তিক। আমি যখন দেখলাম, সিনেমায় যথেষ্ট সময় দিতে হয়। শব্দের প্রয়োগ, ধরনও আলাদা। তখন নিজ থেকেই পিছিয়ে যাই। বিশেষ করে, সিনেমার গান লেখার সময় তখন নিয়ম ছিল- সুরকার, পরিচালক, প্রযোজকরা একসঙ্গে বসে গানের কথা আর সুর তৈরি করতো। সবার সামনে বসেই লিখতে হতো। কিন্তু এটা আমার ভাল্লাগতো না। তাই মাফ চেয়ে সিনেমার গান লেখা ফেলে চলে এসেছি। তখন কোয়ালিটিফুল অনেক গান হতো, সন্দেহ নাই। কিন্তু ওই পরিবেশে আমি লিখতে পারতাম না। এটা অপারগতা আমার।’

আলোচিত কিছু গান

যারে ঘর দিলা সংসার দিলা, প্রেমতো চরের জমি নয়, কিছুই নাকি দেইনি তোমায়, জন্মিলে মরিতে হবে, আমার ভালো থাকার কথা শুনে
কণ্ঠ: কুমার বিশ্বজিৎ

একদিন ঘুম ভেঙে দেখি সুখের সমুদ্র শুকিয়ে গেছে
কণ্ঠ: শেখ ইসতিয়াক

আকাশ হারায় নীল হারায় আলোর দিন
কণ্ঠ: রবি চৌধুরী

মরণ যদি হয় তোমার প্রেমের আঘাতে, আরও বেশি মিশে রব তোমাতে
কণ্ঠ: শুভ্র দেব

কখনও জীবন যেন সুরভিত ফুল, নীল দরিয়ার মাঝি
কণ্ঠ: রুনা লায়লা

এই তৃতীয় বিশ্বের আজ বড় বেশি প্রয়োজন, সব চাওয়া কাছে পাওয়া,
কণ্ঠ: সাবিনা ইয়াসমিন

মনের মিলন মধুর মিলন সেই মিলনই আমরা চাই
কণ্ঠ: মমতাজ

বাঘের পিছে বাগ লাগে না
কণ্ঠ: ফকির আলমগীর ও ফেরদৌস ওয়াহিদ

সাপ এখন বনের চেয়ে বেশি থাকে মনে
কণ্ঠ: ডলি সায়ন্তনী

কখনও কখনও একটি কথায় কত কিছু ঘটে যায়
কণ্ঠ: নিয়াজ মহম্মদ চৌধুরী ও শাকিলা জাফর

কি করে আমায় তুমি ভুলবে, যদি ফুল না-ই দাও
কণ্ঠ: শাহনাজ রহমতুল্লাহ

পরেছি লাল শাড়ি, সুখের ঘরে লেগেছে গ্রহণ
কণ্ঠ: বেবী নাজনীন

ও মানুষ তুমি মানুষ বাড়াতে পারো পৃথিবীকে বাড়াতে তো পারবে না
কণ্ঠ: রেনেসাঁ ও সোলস

 

তিনটি অপমান আজও তৃপ্তি দেয়

লিটন অধিকারী রিন্টু যে ধরনের মানুষ, তাতে বুকের ভেতর ক্ষোভ পুষে রাখার কথা নয়। তবু জীবনের এই প্রান্তে এসে যখন পেছনে ফিরে তাকান, তিনটি অপমানের গল্প তার স্মৃতিতে আজও কড়া নাড়ে। এবং তিনি এই তিনটি ঘটনা মনে করে তৃপ্তি লাভ করেন। ভাবেন, এই তিক্ত অভিজ্ঞতা তার জীবনে না এলে হয়তো গান লিখে আর গিটার শিখিয়ে এতটা পথ আসা হতো না। লিটন অধিকারী রিন্টু

প্রথম অপমানের গল্পটি এমন, ‘‘১৯৭৬ সালের শুরুর দিকের কথা। বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক ক্লিফ রিচার্ড ঢাকায় এসেছিলেন। তখন তাকে গ্রিন রোডে একজন ব্রিটিশ মিশনারির বাসায় নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। সেদিন ক্লিফ রিচার্ড আমাদের সবার সামনে গান করেন, গিটার বাজান। একজন বাঙালি গিটার বাদকও সেখানে তার গিটারটি নিয়ে এসেছিলেন। বর্তমানে তিনি বিদেশে থাকেন। তো সেদিন অনুষ্ঠান শেষে সেই বাঙালি গিটার বাদকের গিটারটা একটু ধরে বাজাবার চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটু ধমকের সুরে বললেন, ‘তুমি কার অনুমতি নিয়ে গিটার ধরলে’। অনেক লোকের সামনে কথাটা শুনে প্রথমে হতবাক হই, পরে চরম অপমান বোধ করলাম। সেই অপমানটি আমাকে গিটার শেখার জেদ ধরিয়ে দিলো। কয়েক দিন পর অপু নামে আমার এক বন্ধুর বাসাতে একটি স্প্যানিশ গিটার পড়ে থাকতে দেখলাম। ওকে বলে গিটারটি কিছু দিনের জন্য নিলাম। শেখার চেষ্টা করলাম। কিছু দিন পর আমার বড় ভাই সিঙ্গাপুর গেলেন অফিসের কাজে এবং ফেরার আগের দিন জানাতে চাইলেন কিছু লাগবে কিনা। আমি তখন সুযোগটা নিলাম। বৌদিকে বললাম, দাদাকে যেন গিটারের কথা বলেন। এটাও বললাম, আমি আর কোনোদিন কিছু আর চাইবো না তার কাছে। দাদা সত্যি সত্যি সিঙ্গাপুর থেকে একটি ক্ল্যাসিকাল গিটার এনে দেন। সেই গিটার দিয়েই আমার সংগীতের পেশাগত জীবন শুরু। একই বছর (১৯৭৭) নভেম্বর মাসেই অর্থের বিনিময়ে প্রথম ফোয়াদ নাসের বাবু ভাইয়ের সঙ্গে ২০০ টাকা সম্মানিতে প্রথম গিটার বাজাই। পুরনো এত কথা বলার কারণ, অপমান আমাকে সামনে হাঁটতে শেখায়। পেছনে নয়।’’ বাজারের ব্যাগে সংরক্ষিত গানের লিরিকগুলো খুলে দেখাচ্ছিলেন রিন্টু

লিটন অধিকারী রিন্টু বিজ্ঞাপনে বাজিয়ে খুশি থাকেননি। পরের বছরই (১৯৭৮ সালের মার্চ) প্রথম বিটিভিতে ৫০ টাকা পারিশ্রমিকে গিটার বাজান। প্রফেশনাল গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত হতে থাকেন বিভিন্ন আয়োজনে। ১৯৮০ সালে বড় ভাই স্মীথ অধিকারীর সহযোগিতা ও উৎসাহে মগবাজার দিলুরোডে এভরিহোম মিউজিক স্কুল থেকে গিটারের প্রশিক্ষক হিসেবে জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৮২ সালে সুর সম্রাট সমর দাশের অনুপ্রেরণায় ও এনসিসিবি’র সহযোগিতায় মগবাজার জাতীয় চার্চ পরিষদের বিল্ডিংয়ে দ্বিতীয় গিটার স্কুল গড়ে তোলেন রিন্টু। যা এখনও চলছে তারই নেতৃত্বে।

দ্বিতীয় অপমানের গল্পটি এমন, ‘‘১৯৮৫/৮৬ সালের কথা। তখন গীতিকার হিসেবে কিছুটা লাইম লাইটে এসেছি। বিটিভি থেকে একদিন ফোন এলো। গান লিখতে হবে। সুর করবেন শেখ সাদী খান। গাইবেন আবিদা সুলতানা। ভাবলাম দারুণ হবে, এটা তো আমার জন্য বড় ভাগ্যের বিষয়। দৌড়ে গেলাম। সাদী ভাই, আবিদা আপার সঙ্গে প্রথম গান করবো। সকাল সকাল বিটিভির স্টুডিওতে চলে যাই। দুপুর পর্যন্ত বসে গানটা লিখলাম। সাদী ভাই, আবিদা আপাও ছিলেন। গানটার নাম বলবো না। সুর ও লেখা সব ঠিক। প্রযোজক খুশি। বিকালেই গানটির চূড়ান্ত রেকর্ডিং। দুপুরের পর হন্তদন্ত হয়ে একজন এলেন স্টুডিওতে। আমি তাকে চিনতাম। উনিও আমাকে চিনতেন। তো তিনি এসে আমাকে বললেন, ‘তুমি এখানে কেন? এই অনুষ্ঠানে তো আমার লেখার কথা। তোমাকে কে ডেকেছে?’ আমি বিব্রত স্বরে বললাম, বাদশা ভাই (অনুষ্ঠান প্রযোজক শেখ রিয়াজ উদ্দিন বাদশা) ডেকেছেন। উনি লিরিকটা আমার হাত থেকে নিলেন, সাদী ভাই ও আবিদা আপার সামনে। লিরিকটা পড়ে বললেন, ‘এটা একটা গান হলো?’ এটা বলে আমার মুখের ওপর ছুড়ে মারলেন কাগজটা। তখন সে অত্যন্ত পাওয়ারফুল গীতিকার। এখন অবশ্য বেঁচে নেই। কিন্তু তার সেদিনের অগ্নিমূর্তি আমি এখনও বয়ে বেড়াই। এখনও আমার কানে বাজে ‘এটা একটা গান হলো?’ যাইহোক, একটু পর বাদশা ভাই এসে হাতজোড় করে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, ‘রিন্টু তোমার গানটা ব্যবহার করতে পারবো না। কারণ তিনি অভিযোগ করেছেন জিএম-এর কাছে। তুমি তো এনলিস্টেড গীতিকার না।’ আমি এক আকাশ অপমান বুকে চেপে বেরিয়ে আসি। বহু দিন পর, এক অনুষ্ঠানে সেই গীতিকারই সবার সামনে বললেন, ‘আরে এখন তো রিন্টুদের সময়। যা লেখে সবই হিট।’ সম্ভবত সেটুকুই আমার প্রশান্তি।’’ লিটন অধিকারী রিন্টু

তৃতীয় অপমানের গল্পটি এমন, ‘‘কৈশোরে আমার ঘনিষ্ঠ দুজন বন্ধু ছিল। ১৯৮০ সালের কথা। একদিন এক বন্ধুর মা আমাকে ডেকে বললেন, ‘আমি চাই না তুমি আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করো।’ অপরাধ একটিই, আমি পড়াশুনা-কাজ বাদ দিয়ে গিটার নিয়ে ঘুরে বেড়াই। কথাটি আমাকে প্রচণ্ড অপমানিত করলো। প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেলাম সেদিন। একই সময়ে আমার আরেকটা ক্লোজ বন্ধুর মা দেখলেন আমি সিগারেট খাই। এরপর তিনিও আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি আমার বাসায় আর কোনোদিন না আসলে খুশি হবো।’ আমি তখন দুই মায়ের কথাই রেখেছি। দুই বন্ধুকে আর কাছে টানিনি। কারণ, আমি চাইনি আমার জন্য ওদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক। ওদের মা কষ্ট পাক। যদিও নষ্ট হওয়ার মতো মানুষ আমি ছিলাম না। তবু বন্ধুর মা তো আমারও মায়ের মতোই। তাই তাদের অনুরোধটা অপমানের হলেও রক্ষার চেষ্টা করেছি। তো অনেক পরে যখন আমার গান নিয়মিত বাজছে টিভিতে বা ক্যাসেটের দোকানে, তখন এক বন্ধুর মা ডেকে বললেন, ‘আমার ছেলেটা কেন তোমার মতো হলো না।’ আরেকজন বন্ধুর মা ডেকে বললেন, ‘এখন তো টিভি খুললেই তোমার গান, তোমার নাম। আমার ছেলেপেলেরা কী করলো জীবনে।’

লিটন অধিকারী রিন্টু বিশ্বাস করেন, মূলত এই তিনটি অপমানের গল্পই তার জীবনে জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। তিনি অপমানগুলোকে শক্তিতে রূপান্তর ঘটিয়েছেন। সুনামের সঙ্গে নিভৃতে লিখছেন ও বাজাচ্ছেন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে।

আলোচিত আরও কিছু গান

যদি কখনও জানতে পারো কোনও এক আরোগ্য নিকেতনে
কণ্ঠ: তপন চৌধুরী

রাতের খবরে আবহাওয়া বার্তা যাই থাক
কণ্ঠ: বাদশা বুলবুল

শহর এখন বিদেশমুখী
কণ্ঠ: আযম খান ও মমতাজ

পুরাতন শেষ হয়ে নতুন জন্ম নেবে; আজও যাদের বাবা আছে
কণ্ঠ: সামিনা চৌধুরী

প্রতিটি শিশুর মন স্বর্গের তুল্য
কণ্ঠ: ফাহমিদা নবী

দম ফুরাইলে দেহ ফেলে প্রাণ যাবে যখন; কবির স্বপ্ন শুধু কবিতা 
কণ্ঠ: খালিদ হাসান মিলু

ওরে মানুষ আর করবি কত ভুল
কণ্ঠ: এন্ড্রু কিশোর

সুন্দর সাজানো রঙে রঙে রাঙানো
কণ্ঠ: খুরশিদ আলম ও ফেরদৌসি রহমান

সোনালি এই দিন সাজাবো
কণ্ঠ: প্রতীক হাসান, কণা, ঐশী ও প্রীতম হাসান

অন্তরের সুখ হারায় কারও নিজের স্বভাব দোষে
কণ্ঠ: চন্দনা মজুমদার

হাজার মানুষ বাজার ভরা
কণ্ঠ: ফজলুর রহমান বাবু

সারা জীবন তোমায় খুঁজে
কণ্ঠ: আইয়ুব বাচ্চু

দিন আসে দিন যায় পৃথিবীটা বদলায়
কণ্ঠ: আজম খান, পিলু মমতাজ, ফকির আলমগীর ও ফেরদৌস ওয়াহিদ

গান লেখায় মগ্ন থেকে জীবনের বড় অঘটন

অনেকেই হয়তো এই নির্মম ঘটনাটি জানেন না। যেটি ঘটে গেছে লিটন অধিকারী রিন্টুর জীবনে। তাও আবার সেটি গান লেখার জন্যই। গীতিকবি শুরুতেই বলেছিলেন, রেডিও, টিভি এবং সিনেমা; প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার লেখার শুরুটা হয়েছে কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে।

রিন্টু পরিবারের সদস্যরা রিন্টু বলেন, ‘‘১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবরের ঘটনা। হঠাৎ সেদিন খেয়াল হলো একদিনের জন্য আমার মাকে দেখতে যাবো। বরিশাল শহরে বাড়ি। আজ রাতে যাবো। দিনটা থেকে কাল রাতে চলে আসবো ঢাকায়। লঞ্চে ছেলের একটাই আবদার, বাড়ি গেলে তাকে নৌকায় ঘোরাতে হবে। সে কুমার বিশ্বজিতের অন্ধভক্ত ছিল। তার প্রিয় গান- যারে ঘর দিলা। বিশ্বজিৎ দু’দিন আগে আমেরিকা গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো, ‘রিন্টু ভাই একটা টিউন দিয়ে গেলাম, গানটা শেষ করে রাখবেন। এসেই ভয়েস দেবো।’ সাত দিনের জন্য গেছে সে। বাড়ি গিয়েই ভাবলাম গানটা লিখে ফেলি। বিশ্বজিৎ এলে তো গান চাইবে। সকালে গিয়ে বাবার বাড়িতে উঠলাম। চা-নশতা করে শ্বশুরবাড়িতে গেলাম। বাড়ির দূরত্ব তখন ১০ টাকা রিকশা ভাড়া। ১০টা পর্যন্ত থেকে ১১টার দিকে আবার নিজের বাড়িতে ফিরে এলোম। কারণ, বিকালে আবার নৌকায় ঘোরাতে হবে তাকে। ভাত খাওয়ার আগে ভাবলাম একটু সময় আছে। গানটা নিয়ে বসি। অঞ্জন দত্তের ক্যাসেট ছেড়ে ছেলেকে গান শুনতে দিলাম। আমি খাতা কলম নিয়ে বসলাম। অঞ্জনের গান শুনে ছেলে দৌড়ে এসে বললো, ‘বাবা গিটার কই’। বললাম, আনি নাই তো বাবা। এরপর বিছানার ওপর উঠে সলার ঝাড়ু দিয়ে গিটার বাজানোর অভিনয় করছিল। বয়স মাত্র তিন বছর। ঢাকায় ফিরে প্লে গ্রুপে ভর্তি করার পরিকল্পনা করছিলাম। তবে বয়স অনুপাতে বেশ ম্যাচিউর ছিল। তো ও নাচছে বিছানার ওপর, আমি টেবিল চেয়ারে বসে গান লিখছি। এর মধ্যে আমার বউ এসে রাগ করলো, ‘তুমি কেমন বাপ। সারাটা রাত লঞ্চে ছিল ছেলেটা। ওকে একটু ঘুম পাড়াও’। আমি বললাম, রাখো তোমার ঘুম। একেবারে ঘুমাবে।’’ লিটন অধিকারী রিন্টু

হুম, রিন্টুর ছোট্ট আকাশ সেদিন সত্যি সত্যিই একেবারেই ঘুমিয়ে গেলো। গানটা লেখা হলো বটে, কিন্তু আকাশ আর জাগেনি।

‘ও খাটের ওপর নাচছে আর আমি লিখছি। সকাল সাড়ে ১১টার মতো বাজে। তখনই হঠাৎ দেখলাম খাট থেকে নেমে দরজা দিয়ে বারান্দার দিকে গেলো। আমি তো গান লেখায় মগ্ন। লিখলাম- শান্তি আছে অশান্তিতে/ সুখের পরাণ যায়/ নীতি আছে দুর্গতিতে/ বিবেক শুইয়া ঘুমায়...। গানের কথাটাই আমার জীবনে সত্যি হলো। গানটা লেখা শেষ করতেই আকাশের মা এসে বললো, ‘আকাশ কই?’ বললাম, এখানেই তো ছিল। বারান্দায় আছে মনে হয়। এরপর বারান্দা, উঠোন, পুকুর পাড়, খেলার মাঠ- সব খুঁজেও পেলাম না। নাই নাই নাই। আধা ঘণ্টা পর পুকুরে দেখলাম আকাশ নিজেই নৌকা হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। শুনলাম, পাশের বাসার দুই তিনটা বাচ্চাসহ খেলতে খেলতে ওকে হয়তো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।’

বছর তিরিশ আগে ঘটে যাওয়া জীবনের সবচেয়ে বেদনার ঘটনাটি এভাবেই বললেন লিটন অধিকারী রিন্টু।

গীতিকবির সুরে

শুধু লিখেই যাননি, চলতি পথে অনেক গানের সুরও করেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু। তার কথা-সুরে গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর, চন্দনা মজুমদার, ফাহমিদা নবী, অনিমা মুক্তি গোমেজ, এসআই টুটুল, পুলক, সাব্বিরসহ অনেকেই।

রঙ-তুলি থেকে সংগীতের সঙ্গে সখ্যতা

গান-বাজনা নয়, লিটন অধিকারী রিন্টু শৈশব থেকেই চেয়েছেন চিত্রকর হতে। রঙ-তুলি তাকে টানতো খুব।

তার ভাষায়, ‘একসময় স্বপ্ন ছিল ছবি আঁকা নিয়েই থাকব। রঙ-তুলির সঙ্গে সারা জীবন কাটাবো। সেই চিন্তা নিয়ে ঢাকা আর্ট কলেজের পেছনে ঘুরে (বর্তমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ) দু’বছর নষ্ট করেছি। যেহেতু ভাগ্যটা সংগীতের সঙ্গে লেখা, তাই হয়তো ছবি আঁকার দিকে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারিনি।’

ছোটবেলা থেকে বাবার কণ্ঠে চার্চের গান শুনতে শুনতে গানের প্রতি ভালোবাসার জন্ম নেয় শিশু রিন্টুর মনে। এরপর ১৯৭৪ সালে বরিশাল ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিষ্টীয় সংগীতের দলীয় প্রতিযোগিতায় বন্ধুদের নিয়ে একটি গানের দল তৈরি করে অংশ নেন। সেখানে তারা একটি গান পরিবেশন করেন। গানটি ছিল, ‘আকাশে চন্দ্র তারা/ বনগিরি নদী ধারা/ তোমার মহিমা গায় প্রভু/ তোমার মহিমা গায়’। গানটি পরিবেশন শেষে অনেক প্রশংসা পায় উপস্থিত শ্রোতা ও বিচারকদের কাছ থেকে। সেখান থেকেই সংগীতের মঞ্চে ওঠার পালা শুরু। ছোটদের অনুষ্ঠান সম্পাদনায় ব্যস্ত লিটন অধিকারী রিন্টু (মাঝে) ‘এরপর (১৯৭৬ সাল) আমি ঢাকায় আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই স্মীথ আর অধিকারীর বাসায় থেকে পড়াশোনা করছি। একদিন দেখতে পেলাম দাদার খাটের নিচে একটা বাক্সের মধ্যে পুরোনো একটা পিয়ানো অ্যাকোর্ডিয়ান। সেটা দেখে বাজাবার শখ জাগলো। দাদার কাছে অনুমতি চাইতেই সঙ্গে সঙ্গে শেখার অনুমতি দিলো। নিজে নিজে কিছু অনুশীলন করার পর একদিন দাদা দেখতে পেলো যে আমি মোটামুটি বাজাতে পারি। তখন তিনি আমাকে ঢাকা বেথেল চার্চের কয়ারে প্রতি রবিবার বাজাবার সুযোগ করে দেন। এর পরের অধ্যায়, ১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক ক্লিপ রিচার্ড ঢাকায় এসেছিলেন, তাকে দেখে এবং সেই অনুষ্ঠানে গিটার নিয়ে একটা বিব্রতকর ঘটনার রেশ ধরে মনে জেদ চাপে। এরপর একই বছর সিঙ্গাপুর থেকে দাদা একটি গিটার এনে দেন। গল্পগুলো একটু আগেই বলেছি আপনাকে। এভাবেই আমি জীবনের সঙ্গী হিসেবে গিটারকে বেছে নিয়েছি’- বললেন লিটন অধিকারী রিন্টু।

পছন্দের গীতিকবি

‘প্রথমে বলতে হবে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ভাইয়ের নাম। আমি মনে করি উনি গানের একজন উত্তম চিকিৎসক। ওনার মতো ডিগ্রিধারী ভালো চিকিৎসক আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই। কেননা, শুদ্ধ ও সুস্থ গান রচনার ক্ষেত্রে উনি অনবদ্য। তিনি গানের রোগ যেমন ধরতে পারেন, তার সুচিকিৎসাও দিতে পারেন। এরপর আরও আছে। যারা গান হিসাব করে লেখেন। তবে আমি অতোবেশি হিসাব করে লিখিনি। আমি গ্রামারের চেয়ে আবেগে লিখেছি বেশি।’ নিজের পছন্দের গীতিকবি প্রসঙ্গে এভাবেই শুরুটা করলেন রিন্টু।

এরপর একে একে জানালেন তার আরও কয়েকজন পছন্দের গীতিকবির নাম। যেমন- গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কাওসার আহমেদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাবু, নুরুজ্জামান শেখ, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, জুলফিকার রাসেল, কবির বকুল, আসিফ ইকবাল, মিল্টন খন্দকার, মিলন খান, মাকসুদুল হক, আহমেদ রিজভী, শফিক তুহিন।

রিন্টু বলেন, ‘আরও অনেক নাম আছে, যারা সত্যিই চমৎকার লেখেন। এই জেনারেশনের অনেকেই ভালো লেখে। যাদের লেখায়  বৈচিত্র্যময় বিষয় ও উপমা দেখতে পাই তারা সবাই আমার প্রিয়।’ মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের (মাঝে) জন্মদিনে বাঁ থেকে জুলফিকার রাসেল, মিল্টন খন্দকার, লিনট অধিকারী রিন্টু, নীহার আহমেদ ও শহীদুল্লাহ ফরায়জী

বর্তমান ব্যস্ততা

বর্তমান নয়, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ল্যাসিকাল গিটারের প্রশিক্ষক হিসেবে খণ্ডকালীন কাজ করছেন। এছাড়া এজি মিশনের অডিও ভিজুয়াল প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। যার মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রেডিও ও টেলিভিশন ম্যাগাজিন প্রোগ্রাম তৈরি করছেন নিয়মিত। এছাড়া চার দশক ধরে শিশুদের জন্য তৈরি করে আসছেন শিক্ষণীয় টিভি অনুষ্ঠান।

গীতিকবিতার বাইরে যত কর্মকাণ্ড

# ভারতের মাদ্রাজে টিভি প্রডাকশনের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
# দিল্লিতে রেডিও প্রোগ্রামিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
# বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এডুকেশনাল টিভি প্রোগ্রামিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়া।
# ছোটদের শিক্ষামূলক টেলিভিশন অনুষ্ঠান তৈরি করা, যা ২০০১ সাল থেকে এখনও চলমান।
# যুবকদের জন্য শিক্ষামূলক রেডিও ম্যাগাজিন তৈরি করছেন নিয়মিত।
# দীর্ঘ ৪৩ বছর ক্ল্যাসিকাল গিটারের একজন প্রশিক্ষক।
# বিভিন্ন মিউজিক্যাল রিয়ালটি শোর একজন অডিশন জাজ হিসাবে কাজ করছেন নিয়মিত।

যতো স্বীকৃতি

গীতিকবি জানান, শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণের সুবাদে ইউনিসেফ-মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস-এ মোট চারবার মনোনীত হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে দু’বার জয়ী হয়েছেন। এছাড়া এনসিসিবি কর্তৃক প্রদত্ত দিশারী স্বর্ণপদক পেয়েছেন সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য। এর বাইরে বেশ কিছু সংস্থা থেকে গীতিকার ও সুরকার হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন।

গীতিকবির সঙ্গে সেলফিতে প্রতিবেদক মাহমুদ মানজুর

ছবি: মাহমুদ মানজুর ও গীতিকবির অ্যালবাম থেকে সংগ্রহ করা

/এমএম/এমওএফ/
টাইমলাইন: গীতিকবির গল্প
১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৪
গানের জন্য একমাত্র পুত্রকে হারানো এবং...
সম্পর্কিত
অনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
গীতিকবির গল্পঅনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
মনিরুজ্জামান মনির: জন্মদিনে জানালেন বই প্রকাশের খবর
মনিরুজ্জামান মনির: জন্মদিনে জানালেন বই প্রকাশের খবর
যে দেশে বৃক্ষ নাই, সেখানে ভেরেণ্ডা গাছই বটবৃক্ষ: নাসির আহমেদ
গীতিকবির গল্পএখন হরিদাস পালই হয়ে গেছে শামসুর রাহমান: নাসির আহমেদ
একটা গান লেখার জন্য অনেক কষ্টে ঢাকায় এসেছিলাম: জীবন
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২একটা গান লেখার জন্য অনেক কষ্টে ঢাকায় এসেছিলাম: জীবন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
একসঙ্গে এই অভিনেতারা...
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!