X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৯ বৈশাখ ১৪৩২

সেন্ট্রাল হাসপাতালকে দুষছেন ডা. সংযুক্তা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ জুন ২০২৩, ১৫:৪৯আপডেট : ২০ জুন ২০২৩, ১৬:০৮

মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহা। মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর পরীবাগে নিজের বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হাসপাতালের ওপর দায় চাপান।

ডা. সংযুক্তা বলেন, মাহবুবা রহমান আঁখিকে যখন ভর্তি করা হয়, তখন তিনি হাসপাতালে ছিলেন না। তাকে না জানিয়েই তার (সংযুক্তা সাহা) কথা বলে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করেন, সেন্ট্রাল হসপিটাল আমার নাম ব্যবহার করে অনিয়ম করেছে। তারা এমন অনিয়ম করবে, আমি ভাবতেও পারিনি।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তির আগে আমার কাছ থেকে মৌখিক বা লিখিত কোনও ধরনের সম্মতি নেওয়া হয়নি। আঁখিকে হাসপাতালে ভর্তির সময় আমার উপস্থিতির ব্যাপারে হাসপাতাল মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছে যে আমি বাংলাদেশে আছি। যে মানুষটা দেশেই নাই, তার নাম করে কেন রোগী ভর্তি করবেন? এটা কার স্বার্থে? আমি যদি অপারেশন না করি, যদি নাই থাকি, তাহলে রোগী ভর্তি করালেন কোন আক্কেলে?’

এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে যে গত ১০ জুন আঁখিকে ভর্তির সময় আমার সঙ্গে নাকি যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, একটি হলেও প্রমাণ হাজির করুন। যদি আপনাদের কথা বিন্দুমাত্র সত্য হয়ে থাকে, আপনারা কল রেকর্ড হাজির করুন।’

সেন্ট্রাল হাসপাতাল

ভিডিও কলের মাধ্যমে তিনি অপারেশন দেখছিলেন– এমন অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন ডা. সংযুক্তা সাহা। ভ্রমণের ই-টিকিটের কপি দেখিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি তখন জমিন থেকে ৩৬ হাজার ফিট উঁচুতে ফ্লাইটে অবস্থান করছি। ভিডিও কলের মাধ্যমে অপারেশন দেখার তথ্য বাস্তবতা বিবর্জিত এবং মিথ্যা৷ আমার ২৩ বছরের ক্যারিয়ারে কখনও ভিডিও কলের মাধ্যমে অপারেশন করিনি।’

ডা. সংযুক্তা সাহার অভিযোগ, সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ করার জন্য তিনি যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছেন, তার বিরুদ্ধে একটা পক্ষ এসব কাজ করছে।

তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এবং নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

তিনি দাবি করেছেন, তার কোনও রোগী লাইফ সাপোর্টে যায়নি। এক চিকিৎসকের স্ত্রীর ওভারিয়ান সিস্ট সার্জারি করতে গিয়ে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে এবং ওই চিকিৎসকের ১১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে– এমন অভিযোগে তিনি এই দাবি করেন। সংযুক্তা বলেন, ‘নো ওয়ে! এটা ভুল তথ্য। আমার কোনও রোগী লাইফ সাপোর্টে যায়নি।’ 

সময় দিতে পারেন না– রোগীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে আমি বিভাগীয় প্রধান ছিলাম। দূরত্বজনিত কারণে আমি প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। কেউ কেউ বলছেন আমি চাকরিচ্যুত। এটা কিন্তু অবজেকেশনেবল কথা। আমি নিজে থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। মাঝখানে আমি ল্যাব এইড হাসপাতালে প্র্যাকটিস করতাম, ছেড়ে দিয়েছি। উত্তরায় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করতাম, দেখা গেছে যে সেখানে এক ঘণ্টাও ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। কারণ আমার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অনেক বেশি ব্যস্ততা থাকে।’

তিনি বলেন, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালে রোগীকে এক থেকে দুই মিনিট সময় দেই– আসলে কথাটা ঠিক না। এত কম সময়ে রোগী দেখা যায় না। প্রথমে রোগীর হিস্ট্রি নেওয়া হয়, তারপর আমার সঙ্গে যারা পোস্টগ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক থাকেন তারা শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন। কারও পাঁচ বছরের পুরনো হিস্ট্রি থাকে। সব পর্যালোচনা করার পর আমার কাছে ফাইল আসে, আমি রোগী দেখি। অন্তঃসত্ত্বা মাকে কিন্তু জুনিয়র দেখে না, আমি দেখি।এখন পর্যন্ত আমার অনুপস্থিতিতে কোনও মেডিক্যাল অফিসার সিজার করেনি।’

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন দিনগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠায় মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত ১৪ জুন (বুধবার) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসা’ ও কর্তৃপক্ষের ‘প্রতারণা’র অভিযোগ তোলেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী। তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা যায় তাদের নবজাতক সন্তান।

মাহবুবা রহমান আঁখি

ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। রবিবার (১৮ জুন) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এদিকে সন্তানের মৃত্যুর পর গত ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মোট ছয় জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ থেকে ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এই মামলা করা হয়। যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা হলেন ডা. মিলি, ডা. এহসান, অধ্যাপক সংযুক্তা সাহার সহকারী জমির এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপক পারভেজ।

মামলাটিতে গ্রেফতার দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা এরইমধ্যে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে চিকিৎসাজনিত অভিযোগের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পরিদর্শন দল ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনে আইসিইউতে রোগীর রাখার উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যায়নি। এজন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ করে দেওয়াসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- 

আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ 

সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক কারাগারে

নবজাতকের মৃত্যু: সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের দায় স্বীকার

ডা. সংযুক্তা সাহার কারণেই আজ এই অবস্থা: সেন্ট্রাল হাসপাতাল

সেবার নামে অরাজকতা চলে যেখানে

ফেসবুক ব্যবহার করে ‘রোগী ডাকতে’ না করলো সেন্ট্রাল হাসপাতাল

ল্যাবএইডের বিল দিতে হবে সেন্ট্রাল হাসপাতালকে

সেন্ট্রাল হাসপাতালের সেই প্রসূতির মৃত্যু

 

 

/এসও/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
দক্ষিণখানে প্রতিবন্ধীর ব্যবসা দখল বিএনপি নেতার, প্রতিবাদে মানববন্ধন
বনশ্রীতে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে গৃহকর্তা গ্রেফতার
শাহবাগ এখনও অবরোধ রেখেছেন জুলাই আহতরা
সর্বশেষ খবর
সুন্দরবন দিয়ে পুশ-ইন করা ৭৪ জন বাংলাদেশি, ৪ জন ভারতীয় নাগরিক
সুন্দরবন দিয়ে পুশ-ইন করা ৭৪ জন বাংলাদেশি, ৪ জন ভারতীয় নাগরিক
পা দিয়ে লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেলেন সেই মানিক
পা দিয়ে লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেলেন সেই মানিক
‘জনগণের মতামত ছাড়া করিডোর-বন্দর চুক্তির সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির প্রতিবাদ‘জনগণের মতামত ছাড়া করিডোর-বন্দর চুক্তির সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না’
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন