X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ম বলতে মানুষ বুঝি

তুষার আবদুল্লাহ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৪৭আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:০২

তুষার আবদুল্লাহ ধর্ম কি স্পর্শকাতর বিষয়? ব্যক্তিগতভাবে আমি তা মনে করি না। কারণ মানুষের প্রাত্যহিকতার অংশ ধর্ম। ব্যক্তিগতভাবে মানুষ ধর্ম অনুশীলন করে। মানুষের অধিকার আছে যেকোনও মতবাদ, ধর্মগ্রন্থের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের। এর মধ্য দিয়ে যদি ব্যক্তি মানুষ প্রশান্ত জলাশয়ের দেখা পান, তাহলে অন্যের ক্ষতি কী? মানুষ কোন ধর্মে আস্থা রাখবে সেই বিষয়ে অন্য ব্যক্তির প্রভাব বা জোর করারও কোনও সুযোগ নেই। সকল ধর্মই সুন্দর।
ব্যক্তির অসহায়ত্ব, নিঃসঙ্গতা, নির্বাণে সঙ্গ দেয় ধর্ম। একজন মানুষের একাধিক ধর্মে আগ্রহ থাকতে পারে। কোনও মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে না, এটাও আমার কাছে অবিশ্বাস্য। সৃষ্টিকে যে বিশ্বাস করে, তার পক্ষে ধর্মচ্যুত হওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবী, ব্রহ্মাণ্ড যে শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলছে, তাইতো ধর্ম। সুতরাং কোনও মানুষ সেই শৃঙ্খলা ভেঙে বের হয়ে যেতে পারে না। ব্রহ্মাণ্ড, পৃথিবী সৃষ্টি যেহেতু আজও নানা রহস্যে ঘেরা, তাই এ নিয়ে একেক মানুষের ভিন্ন ভিন্ন ধারণা থাকতে পারে। তাই বলে সেই ধারণা উড়িয়ে দিয়ে কাউকে নাস্তিক বলার অধিকার কারও নেই। 

তাহলে ধর্মকে স্পর্শকাতরের কাতারে নিয়ে গেলো কে? রাজনীতি। বর্তমান রাজনীতিকে এখানে শুরুতেই নামিয়ে আনতে চাই না। আমরা প্রাচীন গ্রিস, রোমান সাম্রাজ্য, প্রাচীন চীন ও ভারতের ইতিহাস পরিভ্রমণ করে আসলে দেখতে পাবো, রাজা-রাজন্যরা ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে তুলে নিয়েছিল ধর্মকে। ধর্ম নিয়ে সাধারণ, আলোচনা তর্ক তারা সইতে পারতেন না। ধর্মীয় গুরুদের উসকানি দিতেন অসহিষ্ণু হতে। প্রকৃত গুরুদের অসহিষ্ণু করতে ব্যর্থ হয়ে, রাজসভা থেকে ধর্মীয় গুরুর জন্ম দেওয়া হতো। তারা ধর্মের বাইরে গিয়ে অনেক বিধান বা ফতোয়া দিতেন। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপিয়ে দেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখতে পেলাম ধর্মের দোহাই তুলে মানুষকে করা হলো বাস্তুচ্যুত। জমিন ভাগ হলো ধর্ম মেনে। অথচ ধর্ম কিন্তু সকলকে নিয়ে যৌথভাবে স্বচ্ছ সুন্দর হ্রদে বাস করার জন্যই। 

শুধু বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীজুড়ে ভোটের মুদ্রা হয়ে ওঠে ধর্ম। আমরা ভোটের আগে উপমহাদেশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে দেখেছি পীরের বাড়ি যেতে। কোনও কোনও পীর হয়তো সাধারণ মানুষের কাছে অজানাই ছিলেন। কিন্তু কোনও নেতা তার কাছে যাওয়ার পরেই, ওই পীরকে নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। ওই নেতা বা তার রাজনীতির অনুসারীরা তখন ওই পীরের পেছনে ছুটতে থাকেন। বাংলাদেশে আমরা একজন স্বৈরশাসকে একাধিক পীরের দরবারে হাজির হতে দেখেছি। এর মধ্যে একজন তো রাজনৈতিক দলই খুলে বসেন। ওই স্বৈরশাসকের পতনের পর আরেকজন পীর চলে যান আলোচনার বাইরে। এমন কিছু পীর তৈরি করা হয়েছিল রাজনীতিবিদ ও আমলাদের তদবির ও ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে।

ভোটের রাজনীতিতে নব্বই পরবর্তী সময়ে ধর্ম আরও প্রচলিত মুদ্রা হিসেবে লেনদেন হতে থাকে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি ভোটের রাজনীতিতে লাভবান হতেই জামায়াতে ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামিক দলকে এক ছাতার তলে নিয়ে এসেছিল। নব্বই পরবর্তী সময়ে দুবার ক্ষমতায় গিয়ে তারা প্রমাণ করেছে ধর্মের রাজনীতিতে তারা সফল। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে দুই দফা ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা আগ্রাসীভাবে সাংগঠনিক কাজ করেছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তারাও ওই ভোটের রাজনীতিতে ভাগ বসাতে চায়। হেফাজতে ইসলামসহ সমমনা আরও কিছু রাজনৈতিক সংগঠনকে পাশে পায়। জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি’র সময়ে যেমন কয়েকজন ধর্মীয় গুরু বা নেতার প্রাধান্য দেখতে পেয়েছিলাম, এ সময়েও আমরা এক দুইজনকে দেখতে পাই। তারা ভোটের মাঠে প্রাধান্য রেখেছেন। রাজনীতি যেখানে সেখানে বিতর্ক থাকবেই। কিন্তু রাজনীতি তার মতো করেই যাকে যেমন করে দরকার ব্যবহার করে নেয়। 

রাজনীতির এই ব্যবহারই রাষ্ট্র পর্যায় থেকে একদম পরিবার পর্যন্ত ধর্মকে স্পর্শকাতরের কাতারে পৌঁছে দেয়। অসাম্প্রদায়িক সহজ মানুষ হয়ে ওঠে অসহিষ্ণু মানুষ। আমাদের গ্রামগুলো যে তাদের অসাম্প্রদায়িক গুণ হারিয়েছে, তার জন্য কোনও ধর্ম দায়ী নয়। দায়ী তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া ধর্ম নির্ভর ভোটের রাজনীতি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ