X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্ধ হোক কোভিডের ‘আন্দাজি চিকিৎসা’

তুষার আবদুল্লাহ
২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৫৩আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৫৩

তুষার আবদুল্লাহ উপায় নেই। কোভিড-১৯ আমাদের সঙ্গ ছাড়ছে না। পুরাতন অনেক অনুজীবের মতো দেহে সে বসবাস করে যাবে। অন্যরা এর মতো দুরন্ত বা চরিত্রহীন ছিল না। তাই তাদেরকে বুঝতে পারা বা আচরণ অনুসরণ করা সহজ হয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ যেন মাঠে নেমেছে একুশ শতকের সকল জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে। তার বড় রণ-কৌশল হচ্ছে মুহূর্তেই চরিত্র বদলে ফেলা। কম করে হলেও আট হাজারবার চরিত্র বদল করেছে যে অনুজীব, তাকে ঘায়েল করা এতই সহজ? ওর সঙ্গে আমরা কতবার বদলে যেতে পারি, বা কতটা সম্ভব? মানুষ মাস্ক পরতে পারে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে পারে, ব্যবহৃত পণ্য, আসবাব ঘন ঘন জীবাণুমুক্ত করতে পারে, লকডাউন দিয়ে ঘরে সঙ্গ-নিরোধ পালন করতে পারে। কিন্তু তারও একটি সীমা আছে। কতদিন সঙ্গ-নিরোধ বা লকডাউন করে জীবন অচল করে বসে থাকবো? যদি তার চরিত্র এক থাকতো তবে, মানুষ বুঝে নিতো জীবন আচরণে কী বদল আনলে, অনুজীব দেহে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।

একুশ শতকের বিজ্ঞান এখনও নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেনি, কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার নিশ্চিত কারণ ও উপায়। রকমারি গবেষণা শুধু ধারণা বিলি করে যাচ্ছে। একবার বলা হচ্ছে মুখ থেকে নিঃসৃত কণা বা ড্রপলেট থেকে কোভিড-১৯ ছড়ায়। আবার বলা হচ্ছে অনুজীবটি বায়ুতে উড়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ তাহলে লুকাবে কোথায়? বিজ্ঞান তার ‘আনদাজি’ ধারণা বিলি করা থেকে সরে এসে এখন শুধু মাস্কে স্থির হয়েছে। কারণ নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ পথ আটকে দিয়েই নিজেদের কাছে দায়মুক্ত থাকতে চাইছেন। টিকা দিয়ে অনুজীবকে পরাস্থ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেটা পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর্যায়েই আছে। প্রতিষেধক নিয়ে শুধু বাণিজ্য নয় এখন চলছে দুই গোলার্ধের রাজনীতি। চরিত্র বদলে যাওয়া অনুজীবকে টিকা দিয়ে আটকে দেওয়া যাবে, এমন নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না একুশ শতকের চিকিৎসা বিজ্ঞান।

চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও, সেখানে বাংলাদেশে চলছে কোভিড-১৯ ঘিরে ‘আনতামারি চিকিৎসা’। কোভিড আক্রান্ত হওয়া মাত্র রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে বলা হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জোর করে, রোগীকে আতঙ্কগ্রস্থ করেই। উচ্চ দামে রোগীরা কিনছেন। একাজটি করছেন কতিপয় চিকিৎসক। কোনও কোনও চিকিৎসক কোভিড আক্রান্ত হওয়ার আগেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। চিকিৎসকদের এই প্রবণতার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে, তাদের শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই নিজেরাই দোকান থেকে কিনে নিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন যে রোগীরা তাদেরকেও অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ-দরকারি পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরেও, কোভিড জটিলতার নানা ভয় তৈরি করে অ-প্রয়োজনীয় ও শারীরিক ঝুঁকি আছে এমন পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালের এই বিপন্ন ও সংকট সময়েও কতিপয় চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা বাণিজ্য থেকে দূরে এসে মানবিক হতে পারেনি।

কোভিড আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা প্রয়োজন। নেতিবাচক হওয়ার পরেও চিকিৎসার প্রয়োজন নেই তা বলছি না। শরীরে অনুজীবটি প্রবেশের আগে অন্য কোনও রোগ রয়ে যেতে পারে। অসংক্রামক সেই রোগগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায়, রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে। কোভিড নেতিবাচক হওয়ার পর কোনও জটিলতা দেখা দিলে তারও চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু সেই চিকিৎসা কেন আনতামারি বা আন্দাজ নির্ভর হবে? এতে রোগীর সংকটাপন্ন বা জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

করোনাকাল দেড় বছর কেটে গেলো। স্বাস্থ্য বিভাগের কারিগরী কমিটি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ শুরু থেকেই আনতামারি বা ‘আন্দাজে চিকিৎসা’ এবং চিকিৎসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু তাদের কথা আমরা কানে তুলছি না। তারা জীবন ব্যবস্থা নিয়েও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যা স্বাস্থ্য বান্ধব। সেগুলো আমলে না নিয়েই আমরা অনুজীবটির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। হয়তো চিকিৎসা নিশ্চিতভাবে আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু ওষুধ সেবন বিষয়েতো আমরা সতর্ক হতে পারি। সেই সঙ্গে পূর্বে থাকা রোগের সঙ্গে অনুজীবের বসত নিয়েও আমাদের সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত। এই কাজগুলো আনতামারি ও বাণিজ্যিক আবহাওয়ায় সম্ভব নয়। কোভিড অনুজীবটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে, তার বদলে যাওয়া চরিত্রকে সমীহ করতে হবেই। এবং অবশ্যই করোনা পরীক্ষার নিশ্চিত উপায়ের হালনাগাদে থাকতে হবে। কোভিড আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে তাকে বুঝে শুনে মোকাবিলা করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদেরও জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করা উচিত।

আমাদেরও বুঝতে হবে সকল চিকিৎসকই করোনা মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত নন। যারা যুক্ত আছেন, নিয়মিত হালনাগাদ থাকছেন, তাদের কথা শুনতে হবে। সেই শোনাবার কাজটি সরকারের যেমন, তেমনি দায়িত্বশীল গণমাধ্যমেরও। কোভিড মোকাবিলায় এখনও আমরা মাঝমাঠে এলোমেলো খেলছি। আমাদের কোভিডের রক্ষণব্যুহ ভেদ করতে হলে সমন্বিত হতে হবে। এর কোনও বিকল্প ওষুধ নেই।

২০২০ এ চিকিৎসকরা বলেছিলেন, কোভিডের পেছনে থাকা চলবে না। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। দৌড়াতে হবে আমাদের। এই দৌড় যেন অলিম্পিকের রিলে দৌড়। সকল দেশ দৌড়াচ্ছে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে। সেখানে আমরা যেন দৌড়ে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি। এই দৌড়ে কোনোভাবেই আমাদের অযোগ্য হয়ে পড়া যাবে না।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ