X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মিডিয়ার স্বাধীনতার সপক্ষে নোবেল

স্বদেশ রায়
১৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:৫৯আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:৫৯

স্বদেশ রায় রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ যেদিন ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসার সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পান ওই দিনটি ছিল  দিমিত্রি মুরাতভ সম্পাদিত নোভায়া গেজেটের অন্যতম পরিচিত সাংবাদিক আন্না পলিতিভস্কয়ার নিহত হবার ১৫তম বার্ষিকী। ২০০৬ সালে তিনি পেশাগত কাজ করতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নোভায়া গেজেটের ছয় জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। আর এই সাংবাদিক টিমেরই নেতৃত্ব দেন দিমিত্রি মুরাতভ। অন্যদিকে মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে এখনও দুটি মামলা চলছে।

পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যু, হামলা ও মামলা এটা সাংবাদিকের সঙ্গে শুরু থেকে চলে আসছে। আর এ কারণে সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বলেই চিরকাল চিহ্নিত। প্রত্যেকটা পেশায় ঝুঁকি নেওয়ার একটা কারণ থাকে, একটা স্বার্থকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে এ ঝুঁকি নিতে হয়। সাংবাদিকতার মূল স্বার্থ রাষ্ট্র ও সমাজকে মানুষের কাছে স্বচ্ছ রাখা। অধিকাংশ মানুষই মূলত সাংবাদিকের চোখ দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজকে দেখতে পায়। তাই অধিকাংশ মানুষকে সঠিক বিষয়টি দেখানোর সততা নিয়ে নির্ভয়ে এ কাজটি করার দায়িত্ব সাংবাদিকের ঘাড়ে বর্তায়। আর পৃথিবীতে যেখানেই যেকোনও ধরনের ভয় বা ভয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ালেই সেখানে মৃত্যুসহ নানান ঝুঁকি আসবেই।

তবে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাংবাদিকতাকে এই ঝুঁকির ঊর্ধ্বে যতটা নেওয়া যায় সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। আর এটা যতটা না সাংবাদিকের ও সাংবাদিকতার স্বার্থে, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে। এই স্বাধীন সাংবাদিকতা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি দেশ অনেক বড় বড় বিপর্যয় থেকে নিজেকে রক্ষা করেছে।

যেমন, একটা বিষয় লক্ষ করলে দেখা যায়, ব্রিটিশ চলে যাবার পরে ভারতে আজ অবধি বড় কোনও দুর্ভিক্ষ হয়নি। অথচ ব্রিটিশ আমলের শুরুতে দ্বৈত শাসনামলে ১৭৬৯-৭০ বা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে খ্যাত দুর্ভিক্ষে সে সময়েই তৎকালীন বেঙ্গলে প্রায় ৩০ লাখ লোক মারা যায়। আবার ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষে মারা যায় প্রায় এক কোটি। সেদিনের এই বড় দুটি দুর্ভিক্ষের অর্থাৎ  ছিয়াত্তরের মনন্বতর ও ৪৩-এর দুর্ভিক্ষকে ঠেকাতে না পারার কারণ হিসেবে অনেক বিষয় গবেষকরা সামনে এনেছেন। তার ভেতর ছিয়াত্তরের মন্বন্তর না ঠেকাতে পারার অন্যতম কারণ সে সময়ের মিডিয়াবিহীন রাষ্ট্র আর ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে না পারার কারণ সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া। ১৯৪৩-এ ব্রিটিশ সরকার দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে কোনও সঠিক সংবাদ প্রকাশ করতে দেয়নি। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার পরে সেদেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করায় দরিদ্র দেশ হলেও সেখানে প্রতিটি দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে মিডিয়ার মাধ্যমে। আর সরকার সেই পূর্বাভাস পাবার পরপরই দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর ব্যবস্থাগুলো নিতে পেরেছে। যার ফলে সব দুর্ভিক্ষই তারা ঠেকাতে সমর্থ হয়েছে।

আজকের পৃথিবীতে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া আর সব দেশই প্রায় মূল খাদ্য অভাবটি দূর করতে সমর্থ হয়েছে।  বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর এ মুহূর্তে মোটা দাগে মূল কাজ-  মানুষে মানুষে ধনবৈষম্য কমানো, টেকসই উন্নয়ন করা, রাষ্ট্রের ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দুর্নীতি বন্ধ করা, যুদ্ধ উন্মাদনা কমানো, সমরাস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে পৃথিবীকে বের করে আনা, ধর্মীয় মৌলবাদ ও বর্ণবাদ মুক্ত করা। আর সর্বোপরি মানুষের স্বাধীন মতামত প্রকাশের সব ধরনের সুযোগ দিয়ে চিন্তা ও সংস্কৃতির সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানো। যাতে মনোজাগতিকভাবে মানুষ নিজেকে উন্নত করতে পারে।

এ মুহূর্তের পৃথিবীতে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রযুক্তির উন্নতি ঘটছে কিন্তু ওই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের চিন্তা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে না। আঠারো শতক, উনিশ শতক এবং বিশ শতকে প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের মনোজগতে যে বিকাশ ঘটেছিল, এ মুহূর্তের পৃথিবীতে মনোজগতের বিকাশের গতি সেখানে নেই। বরং সবখানেই কমে গেছে। মনোজগতের এই বিকাশ কমে গেলে মানুষের সাহস কমে যায়, চিন্তার উদারতা কমে যায়, মানুষ অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে পড়ে। যার ফল দাঁড়ায় রাষ্ট্র ও সমাজে দুর্নীতি, বিভিন্ন ধরনের মৌলবাদ ও কুসংস্কার বাসা বাঁধতে থাকে। এবং ধীরে ধীরে এগুলোই রাষ্ট্র ও সমাজে চালকের ভূমিকায় বসে যায়। রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে দুর্নীতি, মৌলবাদ, কুসংস্কার এগুলো দূরে রাখতে হলে এর বিরুদ্ধে সমাজে সব সময়ই একটা প্রতিবাদ থাকতে হয়। কারণ, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো লোভের কাছে আত্মসমর্পণ করা, কুসংস্কার বা মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। এর বিপরীতে মানুষের চিন্তার জগৎকে জাগ্রত করতে পারলে, বোধকে জাগ্রত করতে পারলে তখন মানুষ এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তখন রাষ্ট্র ও সমাজ সুস্থ ও আধুনিকতার পথে যাবার সুযোগ পায় বা মানুষকে সে পথে নিয়ে যেতে পারে।

আধুনিক এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের বোধ ও চিন্তার জগৎ জাগ্রত রাখার জন্যে অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে আসছে সেই পনের শতক থেকে। পৃথিবীর এই পথ চলাতে এখন অবধি দেখা যাচ্ছে, অনেক ত্রুটি সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই মন্দের ভালো। কারণ, গণতন্ত্র কোনও রাষ্ট্রের একক কোনও শক্তির বিষয় নয়। এটা রাষ্ট্রের অনেক শক্তির ওপর নির্ভর করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেমন রাষ্ট্রীয় সব কাঠামোকে শক্তিশালী ও স্বাধীন রাখতে হয়, তেমনি সামাজিক শক্তিগুলোকেও শক্তিশালী ও স্বাধীন রাখতে হয়। রাজনৈতিক দল জনগণের রায়ে রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হয় ঠিকই, কিন্তু তারা যদি মনে করে রাষ্ট্রের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক তারাই, তাহলে গণতন্ত্র থাকে না। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রের ও সমাজের সব ধরনের শক্তির সঙ্গে নিজেকে ভারসাম্যমূলক অবস্থানে নিয়ে যখন চলতে পারে তখনই কেবল ওই রাষ্ট্র ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ হয়।

রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রের সব শক্তিকে নিয়ে ভারসাম্যমূলকভাবে চলছে কিনা, রাষ্ট্রে মৌলবাদ, কুসংস্কার, বর্ণবাদ জাগছে কিনা, আবার রাষ্ট্র তার সব নাগরিকের জন্যে সমানভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছে কিনা, রাষ্ট্র কাউকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে কিনা- এ বিষয়গুলো সব সময়ই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করতে হয়। আর এই চেষ্টার প্রথম সারিতে কাজ করে মিডিয়া। মিডিয়া এগুলোকে যতটা স্বচ্ছভাবে মানুষের সামনে নিয়ে আসবে ততই মানুষ এর ত্রুটিগুলো দূর করার জন্যে রাষ্ট্রের প্রতি চাপ দিতে পারে। এখানে মিডিয়ার ওপর কোনও ভয়ের সংস্কৃতি থাকলে চলে না।

এবারের দুই জন সাংবাদিককে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া তাই বাস্তবে দুই জন সাংবাদিককে নোবেল দেওয়া নয়, এটা মূলত পৃথিবীজুড়ে মিডিয়ায় যে ভয়ের সংস্কৃতি ঢুকে গেছে, তার বিরুদ্ধে একটি বার্তা। তাই এবারের শান্তিতে এ নোবেলটি শুধু সময়োপযোগী নয়, এটা সারা পৃথিবীর মিডিয়াকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি আহ্বান। কারণ, এ কাজটি এমন একসময়ে হয়েছে যে সময়ে সারা পৃথিবীতে রাষ্ট্র, পুঁজি, মৌলবাদ, উগ্রবাদ, ধর্মীয়বাদ ও বর্ণবাদ দ্বারা মিডিয়া অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আর এই কাজ পৃথিবীর দেশে দেশে রাষ্ট্রের এক ধরনের ভুল চিন্তা বা পুঁজি নিয়ন্ত্রিত চিন্তার কারণেই ঘটছে সব থেকে বেশি। এই চিন্তার এক বড় স্লোগান হলো, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা ও মিডিয়ার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর এই স্লোগানের সপক্ষে কর্তৃত্ববাদী সরকার পরিচালিত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচককে সামনে আনা হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর এই অর্থনৈতিক সূচক বাস্তবে কতটা সত্য তা কেউই জানে না। কারণ, ওই দেশগুলোর বাস্তব অবস্থা কি তা সেখানে স্বাধীন মিডিয়া না থাকায় জানার কোনও সুযোগ নেই । যেমন, গত শতকের নব্বইয়ের দশকের আগে অবধি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক, মানবিক উন্নয়নের সূচক নিয়ে পৃথিবীর নানান প্রান্তে অনেক মানুষ উচ্ছ্বসিত ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন কাচের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো তখন দেখা গেলো, ওই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক, মানবিক উন্নয়নের সূচক আসলে ছিল কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রোপাগান্ডার ফানুস। তাই আজ পৃথিবীর দেশে দেশে যেসব কর্তৃত্ববাদী সরকার তাদের অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়নের সূচক তুলে ধরছে নিয়ন্ত্রিত ও সরকারি প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে, তাও যে অমনি ফানুস নয় তা কে জানে?

তবে এর কিছু কিছু লক্ষণ কিন্তু দেখা যাচ্ছে। যেমন, বেশ কয়েক দশক ধরে বলা হচ্ছে আগামী অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হবে এশিয়া। আর সেখানে সামনের সারিতে রাখা হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোকে । কিন্তু এখন অবধি এসব দেশ প্রোডাকশন হাউজই থেকে গেলো। তারা এখনও নিজের দেশের বাজারকে বড় করতে পারেনি বা মূল বাজারে পরিণত করতে পারেনি। তাদের দেশে শ্রমের প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি। বাস্তবে শুধু শ্রম বিক্রি করেই যাচ্ছে। এর মূল অর্থ দাঁড়ায়, সেখানে প্রবৃদ্ধি কেবল কিছু সংখ্যক লোকের জন্যে ঘটেছে। কিছু লোকই ধনী হয়েছে। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য মোটেই কমেনি। আর কোনও সমাজে যখন রাতারাতি কিছু লোক ধনী হতে থাকে, তখন নিশ্চিত ধরে নিতে হয় ওই রাষ্ট্রের সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এবং সরকারি আনুকূল্যে কিছু লোক ধনী হচ্ছে। সরকারি আনুকূল্যে যখন কিছু লোক ধনী হয় তখন তারা যতটা না সঠিক বাণিজ্যের মাধ্যমে ধনী হয়, তার থেকে বেশি হয় জনগণের অর্থ নয়-ছয় করে। যারা জনগণের এই অর্থ নয় ছয় করে তারা তখন ওই অর্থ দিয়েই রাজনীতি ও প্রশাসনকে কিনে ফেলে। আর তখন যে রাজনীতি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে ওই রাজনীতি ও প্রশাসন জনগণের ওপর ভয়ের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়। এই ভয়ের খড়গটি সব থেকে বড় হয়ে আঘাত করে মিডিয়ার ওপর। এমনকি অনেক সময় অনেক সৎ রাজনীতিকও সরকারি আনুকূল্যের বাণিজ্যের মাধ্যমে তথাকথিত উন্নয়নের প্রতারণায় পড়ে যান। তারা মনে করেন, সত্যি সত্যি দেশের উন্নয়ন ঘটছে। এবং তারাও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজকে ভালো মনে করেন।

যেমন, একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমনকি সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। তবে তারপরেও আজ বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে সত্যি অর্থে কোনও শিল্প নেই; বরং রয়েছে চরম বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। অথচ ১৯৪৭-এ যখন ভারত স্বাধীন হয় সে সময়ে শিল্প ও অর্থনীতি মিলিয়ে ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে চার নম্বরে ছিল বেঙ্গল। আর আজ তাদের এ অবস্থা। এখানে তারা বলতে পারে বেঙ্গল ভাগ হবার একটা ধাক্কা তাদের ওপর পড়েছে।

তবে তারপরেও সেখানে এখন সচেতন সবাই বলেন, পশ্চিমবঙ্গের যা প্রকৃত উন্নয়ন তা শুধু বিধান রায়ের আমলেই হয়েছিল। তারপরে আর হয়নি। এই বিধান রায়ের আমলে সেখানে মিডিয়ার স্বাধীনতা এমন ছিল যে বিধান রায় বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে একটি প্রদেশ বা রাজ্য করতে চেয়েছিলেন। মিডিয়ার সমালোচনাই কিন্তু বিধান রায়কে এ কাজ থেকে বিরত হতে বাধ্য করে। অন্যদিকে জ্যোতিবসু’র কমিউনিস্ট শাসনে পশ্চিমবঙ্গে মিডিয়া ও মানুষের মনোজগৎ, দুটোই সরকার শাসিত ছিল। আর মমতা ব্যানার্জির  আমলে ‘আনন্দবাজার’ ও ‘বাংলা স্টেটসম্যানে’-এর  সম্পাদককে সরে যেতে হয়েছে শুধু সরকারের সমালোচনা করার অপরাধে। এভাবে প্রাইভেট মিডিয়াও সেখানে নিয়ন্ত্রিত। আর তার ফল ভোগ করছে পশ্চিমবঙ্গ দারিদ্র্য দিয়ে। সেখানে উন্নয়ন বলতে কয়েকটি ফ্লাইওভার। যে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে হেঁটে চলে হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণী। শুধু দারিদ্র্য নয়, তাদের মনোজগতেরও পরিবর্তন ঘটে গেছে। সেখানে কোনও আদর্শবাদী রাজনীতি এখন আর নেই।  সুবিধাবাদী ও ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিও স্থান করে নিয়েছে উপমহাদেশের আধুনিকতার রেনেসাঁ ঘটেছিল যে এলাকাটিতে, সেই মাটিতেই।

তাই এই স্বাধীন মিডিয়ার বাধা এখন শুধু আর কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতে নয়। সবখানেই কম বেশি বাধার মুখে মিডিয়া।  মাত্র কিছু দিন আগেও যে দেশের সংবিধানে মিডিয়ার স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ নিশ্চিত করা হয়েছে সেই আমেরিকার হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পও মিডিয়াকে ‘শত্রু’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁর মতের লোকেরা এখনও আমেরিকাতেও কম নয়। তাই এবারের শান্তির নোবেল সারা পৃথিবীর সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার জন্যে একটি ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা। এ মুহূর্তে তাই যেকোনও দেশের  সাংবাদিকতা ও মিডিয়া এই সত্য উপলব্ধির বাইরে থাকলে ভুল করবে।

কারণ, স্বাধীন মিডিয়া ছাড়া, সাহসী সাংবাদিকতা ছাড়া একটি মনোজাগতিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমাজ গড়া মূলত গ্রিক দেবতা ‘কাইমেরা’। অর্থাৎ আশা করা যেতে পারে কিন্তু বাস্তবে অসম্ভব।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ