X
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

‘হাইব্রিড’ ভয়ংকর

হারুন উর রশীদ
১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৮আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:৫৩

হারুন উর রশীদ আওয়ামী লীগে এখন বহিরাগত আর অনুপ্রবেশকারী সাফ প্রকল্প চলছে। আর এই ফাঁকে কাউয়া ও হাইব্রিড প্রকল্প কিছুটা হলেও চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগে যারা তৃণমূলে কাজ করেন, তারা কিন্তু আতঙ্কিত হাইব্রিড নিয়ে। আর এই আতঙ্ক কী কারণে, তা সবিস্তারে বলছি। তৃণমূলের সঙ্গে আমার কথোপকথনের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরলে আশা করি তা স্পষ্ট হবে।
চিরিরবন্দরের এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আমার কথা হয় গত সপ্তাহে। তিনি হাইব্রিডের যে সংজ্ঞা দেন, তাতে আমি অবাক হয়ে যাই। তার মতে, আওয়ামী লীগে হাইব্রিড হলেন তারা, যারা আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তাদের কেউ রাস্তা থেকে রাজপ্রাসাদে উঠেছেন। আবার কেউ কেউ পুরনো সম্পদকে বহুগুণে বাড়িয়ে নিয়েছেন। ওই নেতা বলেন, এই হাইব্রিডের মধ্যে বহিরাগত যেমন আছেন, তেমনি আগে থেকেই আওয়ামী লীগ করেন এমনও অনেক আছেন। এই হাইব্রিড বিদায় করলেই আওয়ামী লীগ ঝামেলামুক্ত হবে বলে তার ধারণা। 

ঝালকাঠির এক তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই ক্ষুব্ধ-বিরক্ত। তার কথা, ওই জেলার একটি এলাকার আওয়ামী লীগের এমপিই নাকি বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী। আর সহজ হিসেবে তিনি তার অবস্থান শক্ত করতে অনুপ্রবেশকারীদেরই দলে ভিড়িয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আসীন করেছেন। ফলে মূল আওয়ামী লীগাররা কোণঠাসা। তাই স্থানীয়  আওয়ামী লীগে এখন বহিরাগতদের জয়-জয়কার। তাহলে অনুপ্রবেশকারী দূর হবে কীভাবে? ওই নেতা ও তার অনুসারীদের সম্পদ বাড়ানোর যে হিসাব পাওয়া যায়, তাতে তাদের অধিকাংশই এখন হাইব্রিড।

এখন প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগে বহিরাগতরা ঢুকলো কীভাবে? অনুপ্রবেশকারীরা কি আওয়ামী লীগকে জোর করে দখল করে নিয়েছে? ফেনীর এক আওয়ামী লীগ নেতা আমাকে তার জবাব দিয়েছেন। তার কথা হলো, নির্বাচনের আগে অনেকেই জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে, ফুল দিয়ে এমপি সাহেবের, মন্ত্রী সাহেবের বায়াত গ্রহণ করেছেন। আর ভোটের রাজনীতিতে তারা তাদের গ্রহণও করেছেন। এখন তারা কেন আওয়ামী লীগ হবেন না? ভোটের জন্য আওয়ামী লীগে স্বাগত জানিয়ে ভোটের পর ফেলে দেওয়া তো অনৈতিক। আর আওয়ামী লীগ যদি সুবিধা পায়, তাহলে তারাইবা পাবেন না কেন? এই বৈষম্য করা তো ঠিক না।
সবাই কি স্বেচ্ছায় আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন? ব্যাপারটা সবক্ষেত্রে সেরকম ঘটেনি। কেউ চাপের মুখে, কেউবা মামলা থেকে রেহাই পেতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এটা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নেতাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে। এমপি সাহেব বা মন্ত্রী মহোদয় হয়তো জানেন না। কিন্তু তারই অনুসারী কোনও কোনও হাইব্রিড নেতা তার আরও কাছে যাওয়ার জন্য এক হাজার লোকের একটি মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তিনি দু’ধারী তলোয়ারের মতো দু’দিকে কেটেছেন। যাদের যোগদান করিয়েছেন, তাদের কাছ থেকেও সুবিধা নিয়েছেন। আবার নেতার কাছ থেকেও নিয়েছেন। এই ধরনের নেতারা হাইব্রিডের একটা ভালো উদাহরণ। আর দলীয় কোন্দলে বহিরাগতদের দলে নিয়ে গ্রুপ ভারী করার কথা তো সবার জানা।
তাহলে এবার কিছু সিদ্ধান্তে আসা যায়—১. আওয়ামী লীগে যারা যোগ দিয়েছেন, তারা জোর করে আওয়ামী লীগে ঢোকেননি।
২. তাদের যোগদান করিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
৩. এই যোগদান পর্বে নানা স্বার্থের হিসাব ছিল।
৪. আর আওয়ামী লীগের শুধু তৃণমূল নয়, ওপরেও বহিরাগত ও অনুপ্রবেশকারী আছেন।
৫. বহিরাগত আর অনুপ্রবেশকারীদের দলে এনেছেন হাইব্রিড নেতারা।

এবার চিরিরবন্দরের আওয়ামী লীগ নেতার দেওয়া হাইব্রিডের সংজ্ঞা থেকে একটি সাধারণ সিদ্ধান্তে আসতে পারি। তা হলো—আওয়ামী লীগে নতুন যারা এসেছেন, তাদের মধ্যেও হাইব্রিড আছেন। আর যারা পুরনো আওয়ামী লীগ, তাদের মধ্যেও আছেন। তারা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য কেন, যেকোনও দলের জন্য ক্ষতিকর। কারণ তারা দল করেন, দল বদলান শুধু স্বার্থের জন্য। তারাই দলের নাম ব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েন। কোনও নৈতিকতার ধার ধারেন না। তারাই আওয়ামী লীগে কথিত বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী ও কাউয়া সমস্যার জন্য দায়ী।
তাহলে এবার কি আপনাদের চোখের সামনে আওয়ামী লীগে কারা প্রকৃত অর্থেই অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড, তা ভেসে উঠছে? দেশের সাধারণ মানুষও এখন এই সংজ্ঞা মেনে তাদের নাম বলে দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগের সংকটে এদের পাওয়া যাবে না, আমি নিশ্চিত।
আওয়ামী লীগ যে তালিকা করেছে, তাতে ২০০৮ সালের পর যারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন, তারা আছেন। এই সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। তারা সবাই কি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন? না তা হবেন না। আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া নতুন সংজ্ঞায়, দলে নতুন এলেই তারা অনুপ্রবেশকারী নয়। যাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধিতা, মানবতাবিরোধী অপরাধের  অভিযোগ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এবং আওয়ামী লীগের চেতনাবিরোধী কাজের অভিযোগ আছে, তারা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন। তাদের তালিকা প্রকাশ করে বলে দেওয়া হবে তারা আওয়ামী লীগের কেউ নন।
তাই যদি হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট—আওয়ামী লীগের দরজা বন্ধ নয়। কেউ চাইলে কোনও সময় আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন। তৃণমূলের নেতারাও আমাকে বলেছেন, ভালো মানুষ দলে যোগ দিলে তাতো দলের জন্যই ভালো। সবাইকে বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী বলা ঠিক না। ভালো মানুষ অনুপ্রবেশকারী হয় কীভাবে!
আমিও মনে করি তৃণমূল নেতারা ঠিকই বলছেন। তাই আওয়ামী লীগের উচিত হাইব্রিডদের তালিকা করা। তাদের তালিকা প্রকাশ করে বলে দেওয়া যে, তারা আওয়ামী লীগের কেউ না। এটা করতে পারলেই বহিরাগত, কাউয়া, অনুপ্রবেশকারী—এইসব সমস্যার সমাধান হবে। আওয়ামী লীগও ঝামেলামুক্ত হবে। আওয়ামী লীগ কি সেটা করবে?
লেখক: সাংবাদিক
ই-মেইল:[email protected]

/এমএমজে/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শাহে আলম মুরাদ আবারও রিমান্ডে 
শাহে আলম মুরাদ আবারও রিমান্ডে 
ত্বকের যত্নে দই ব্যবহার করলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
ত্বকের যত্নে দই ব্যবহার করলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
পিরোজপুরে যুবদলের কমিটি গঠনের তিন দিন পর আরও দুই নেতার পদ স্থগিত
পিরোজপুরে যুবদলের কমিটি গঠনের তিন দিন পর আরও দুই নেতার পদ স্থগিত
রুশ হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ পাইলট নিহত
রুশ হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ পাইলট নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক