X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

কারা হচ্ছেন আমাদের নেতা

আনোয়ার সাদী
২২ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৫:৫৮আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৫:০১

প্রশ্ন হলো পৌরসভা নির্বাচনে আমরা কী বেছে নেব, প্রতীক না মানুষ? কাকে বিজয়ী করবো, দল না ব্Anwar Sadiযক্তি? ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়- এই স্লোগান আমি জানি। এটাও জানি, জনপ্রিয় স্লোগানটি আমার প্রশ্নের দারুণ এক জবাব হতে পারে। অর্থাৎ ব্যক্তি নয়, সবাই মিলে দলকেই জয়ী করবো। তাহলে হিসেব এক রকম।

ধরি, ২৩৪টি পৌরসভায় কোন দলের ভিত্তি কতোটা শক্ত, তা প্রমাণ করার মাপকাঠি হলো এবারের পৌরসভা নির্বাচন। তাহলে, দলের মান-সম্মানের প্রশ্ন সামনে চলে আসে। মানে, আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ আসন পেলে, বিএনপি একটা জনবিচ্ছিন্ন দল- তা বলার সুযোগ পাবে তাদের সমর্থকরা। উল্টো হলে, বিএনপি হয়তো আওয়ামী লীগ এমনকি পুরো সরকারের বিরুদ্ধে আরও বেশি কিছু বলবে।

সেসব কথা চুপ করে শোনার মতো মানসিকতা কোনও দলের আছে? তর্কের খাতিরে ধরে নেই, কারওই নেই। তাহলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের পুরো সাংগঠনিক ক্ষমতা নিয়ে নেমে যেতে পারে নির্বাচনে। সেক্ষেত্রে সুসংগঠিত থাকার সুবিধা পাবে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক দুর্বলতার অসুবিধা থাকছে বিএনপির বিপক্ষে। তবে, একটা সুবিধা আছে বিএনপির পক্ষে। তাদের বড় নেতাদের মাঠে নামানো। বড় নেতা বলতে, হয়তো চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই মাঠে নেমে গেলেন। এমন ইঙ্গিত বিএনপি নেতাদের কেউ-কেউ দিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। নির্বাচনি আচরণবিধির কারণে আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতাই হয়তো মাঠে নামতে পারবেন না। তাহলে প্রচারের সুবিধা কার দিকে গেল? প্রশ্ন হলো, প্রচার কি নির্বাচনে জেতাবে? নাকি সাংগঠনিক ভিত্তি নির্বাচনে জেতাবে? জনপ্রিয়তা নির্বাচনে জেতাবে? নাকি স্থানীয় নানা ইস্যু নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে? বলা মুশকিল । ২৩৪ সংখ্যাটি অনেক বড়।

পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির নানা সমীকরণ দূরে রাখা যাচ্ছে না। বরং এতদিনের একটা নির্দলীয় নির্বাচন, এখন পুরোপুরি দলীয় হলো। এটি এক হিসেবে ভালো হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক ভিত্তি সবল হবে। যে প্রতিযোগিতা উপজেলা পর্যায়ে দেখা যেত, সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য, প্রায় একই ধরনের প্রতিযোগিতা পৌরসভা পর্যায়ে দেখা যাবে, মেয়র হওয়ার জন্য। প্রতিযোগিতা সব সময় দক্ষতা বাড়ায় যদি তা সুস্থ হয়।

আগে নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতি দলের স্নেহ থাকতো। এবার দল বেছে নিয়েছে। প্রার্থী নির্বাচনের সময় ঠিক কোন কোন বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে তা বলা মুশকিল। তবে একটা বিষয় অনুমান করা যায়, বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা যার বেশি তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে রাজনৈতিক দল।

পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে যারা লড়ছেন, তারা কেমন মানুষ? তাদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন নামের একটি সংগঠন। এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে দুইটি পৌরসভা ছাড়া বাকি ২৩২টি পৌরসভার প্রার্থীদের নানা তথ্য সামনে এনেছে। 

সুজনের দেওয়া তথ্যমতে, ৯০৪ জন পৌরসভা মেয়র প্রার্থীর মধ্যে, ৬৫২ জনই ব্যবসায়ী। এরমধ্যে, আওয়ামী লীগের ১৬৫ জন, ও বিএনপির ১৬২ জন। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। পৌর নির্বাচনেও ব্যবসায়ী আধিক্য দেখা গেল। এটা হলো পেশার বিষয়ে।

সম্পদের হিসেবে প্রার্থীদের পরিচয় জানা যাক। সুজনের হিসেবে কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫ মেয়র প্রার্থী, বিএনপি'র ৭, এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের ৬ প্রার্থী। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি ৪৭ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২০, বিএনপির ১৩ এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের ১৪ জন।

সুজন আরও জানাচ্ছে, আওয়ামী লীগের ২২১ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে, ৩৩ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা আছে। অন্যদিকে, বিএনপি'র ২০৬ প্রার্থীর মধ্যে মামলা আছে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে। সুজনের তথ্য মতে, ৯০৪ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩৬ জনের নামে হত্যা মামলা আছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭ জন ও বিএনপির ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

তারা বলছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ৪০জন করে মেয়র প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, এসএসসি’র নিচে। আর স্নাতকোত্তর প্রার্থী, আওয়ামী লীগে ২৯ জন, বিএনপিতে ২৭ জন।

এসব তথ্য-উপাত্ত বিষয়ে দু’ধরনের কথাই বলা যাবে। কেউ-কেউ বলবেন, ব্যবসায়ীরা নির্বাচিত হলে, পৌরসভা চালানোর সময় নিজের মুনাফা দেখবেন। সুশাসন দেখার সময় থাকবে না। আবার কেউ কেউ বলবেন, রাজনীতি করার জন্য অন্য কোনও পেশা তারা গ্রহণ করতে পারেননি। টুকটাক ব্যবসা করে জীবন যাপন করেন।

কেউ হয়তো বলবেন- কম পড়ালেখা দিয়ে কীভাবে পৌরসভা চালাবে? কেউ বলবেন, স্বশিক্ষিত মানুষরাই জগত বদলে দিয়েছে। সম্পদ অর্জনের উপায় নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলে, তাহলে জবাব হতে পারে, সম্পদ অর্জন কি অপরাধ? মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও দুধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। পক্ষের লোক বলবেন মিথ্যা মামলা, বিপক্ষের মানুষ বলবেন, এখনই সাজা হয়ে যাক।

ব্যক্তি বিবেচনা করলে এসব তথ্যের ব্যাখ্যা একেক জন একেকভাবে দেবেন। সে নিয়ে কিছু বলছি না। বলছি, এবারের নির্বাচনটা হয়ে যাক। আগামী নির্বাচনের আগে পৌরসভা নিয়ে আরও ভাবুক রাজনৈতিক দলগুলো। প্রতিটি পৌরসভায় তারা তৈরি করুক সংসদ সদস্য হওয়ার মতো একেকজন নেতাকে। তাহলে পৌরসভা হতে পারে রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে সরকারের ক্ষুদ্র একক, স্থানীয় সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর গ্রাম কমিটি বা পৌরসভা কমিটি তাহলে আরও কার্যকর হতে পারে। এমন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ রাজনৈতিক তৎপরতা নিশ্চয়ই জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তৃণমূলে পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত রাজনীতি দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলেই আশা করা যায়।    

লেখক: সিনিয়র নিউজ এডিটর , দীপ্ত টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
দেশে দেশে রমজানের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও রকমারি উৎসব
দেশে দেশে রমজানের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও রকমারি উৎসব
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের দাবি ‘অযৌক্তিক’: ভারত
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের দাবি ‘অযৌক্তিক’: ভারত
‘বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, আ.লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে’
‘বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, আ.লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ