X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোগের পিপাসার চেয়ে হাসিটাই সহজ

তুষার আবদুল্লাহ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:১৫আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:১৫

তুষার আবদুল্লাহ কেনাকাটা করতে নয়, শুধু বেড়াতেই কখনও কখনও বাজারে যাই আমি। মানুষ দেখি। ক্রেতাদের পর্যবেক্ষণ করি। কোনও কোনও ক্রেতার মুখ বেশ পরিচিত। নিয়মিত দেখি তাদের। কাঁচাবাজার, সুপারশপ, মহল্লার মুদিতে যাই। কখনও নিজের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনি। যতটা না কিনি, তার চেয়ে বেশি দেখি। এটা পুরনো অভ্যাস আমার। যাকে একসময় দেখেছি ইলিশ মাছ ভাগে কিনতে, তিনি এখন পুরো বাজারের ইলিশ বুকিং দিয়ে দিচ্ছেন!‌ মিনতি নিয়ে বাজারে আসতেন যিনি, সাজি ভরে মাছ তরকারি নিয়ে ফিরতেন, তাকে খুব একটা বাজারে আসতে দেখি না। এলেও আড়াইশ গ্রামের বেশি কিনতে দেখি না কিছু। তাদের কারও কারও মহল্লার দোকানে বাকির খাতা ভরে উঠেছে। দোকানিরও বদল হচ্ছে। পুঁজি দিয়ে এখন আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। নতুন পুঁজি আসছে। কোথাও কোথাও শিল্পগোষ্ঠীর দোকান বা আউটলেট এসে দখল নিচ্ছে ক্ষুদ্র পুঁজির। বাজারের ‘প্যাঁক-ময়লা’ সইতে পারেন না যারা, তারা খলসে বা পুঁটি কিনতেও আসেন সুপারশপে।

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাজারে কোনও দর কষাকষি নেই। ৩০০ টাকা কেজির মাছ কাঁচাবাজারে হয়তো আড়াইশ’তেও কেনা যেত। কিন্তু সুপারশপে এসে ভদ্রস্থ ক্রেতা হয়ে বাড়তি দামে কিনেই বাড়ি ফিরছি। কোনও অভিযোগ নেই। থাকলেও ভদ্রতা করে কিছু বলছি না। সুপারশপে যারা কেনাকাটা করতে আসেন তাদের দিকে তাকিয়ে বুঝি, সমাজের খুব উঁচুতলার মানুষরা তো বাজারে আসেন না এখন। কোনও বাজারেই না। তাদের পাইক-পেয়াদারা আসেন। 

কখনও কখনও হয়তো উঁচুতলার মানুষরা শখে বাজারে আসেন। বাকি সব ক্রেতাই করপোরেট দুনিয়ার শ্রমিক বা উঠতি বণিক। তারা ভোগের ক্ষমতা দেখিয়ে সমাজের উঁচুতলার বা বিশেষ শ্রেণিতে নাম লেখাতে চান। এ ধরনের ক্রেতারা জীবনযাপনের জন্য যে পণ্য হয়তো কেনার দরকার নেই সেটিও কেনেন। 


বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগে ভোগের প্ররোচনা চলছে হরদম। সেখান থেকে প্ররোচিত হয়েই সংযম হারিয়ে ফেলছি আমরা। নিজের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনই সন্তানের বেলাতেও। সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই অফুরান খাবার, পোশাক, খেলনায় অভ্যস্ত করছি। আমরা অদূর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ভাবি না, সন্তান তার জীবনে এই ভোগ-উপভোগের জোগানের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে কিনা। পরিবারের সচ্ছলতায় ভাটা পড়লে দেখেছি সন্তানসহ অন্য সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা ভোগের জোগান স্বাভাবিক রাখতে চাপ দিতে থাকে। দুর্ঘটনা তখনই ঘটে। জোগান স্বাভাবিক রাখতে অনৈতিক উপায়ের শরণাপন্ন হন কেউ। পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই বিকল্প পথ খোঁজে। সেই পথ সবসময় সততায় মোড়ানো থাকে না। ফলে পারিবারিক ঝগড়া, দূরত্ব বাড়তে থাকে। স্বার্থের লেনদেনে ভাটা মানেই বিচ্ছিন্নতা। সেখান থেকেই পারিবারিক দুর্ঘটনাগুলো তৈরি হয়।

প্রায়ই বিপণি বিতানে দেখি– বায়না মতো কিনে না দেওয়ায় প্রকাশ্যে ঝগড়া চলছে মায়ের সঙ্গে সন্তানের, স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর, বাবার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের। সেখানে উদাহরণ আসছে আশেপাশের। অন্যে কিনে দিতে পারলে তিনি দেবেন না কেন? মহল্লার একজন অতি স্বল্প আয়ের একজনকে বাধ্য হয়ে তার ছেলেকে মোটরবাইক কিনে দিতে দেখলাম। কারণ জানতে চাইলে বললেন– ওর খালাতো ভাই কিনেছে। তাই ওর মা বললো কিনে দিতে হবেই। এজন্য দিলাম। 

শুক্রবার অফিসের কাছের এক সুপারশপে ঘুরছিলাম। দেখি একটি পরিবার মেয়ের জন্য পোশাক, চকোলেট, মগসহ আরও কী কী যেন কিনছে। মেয়ে যা বলছে তারা সেটাই কিনে দিচ্ছেন। ক্যাশ কাউন্টারের ছেলেটি আমার পরিচিত। ঢাকার একটি কলেজে অনার্স পড়ছেন। বিল মেটাতে কাউন্টারে গেলে ছেলেটি জানতে চাইলেন, ভ্যালেন্টাইন গিফট? মেয়েটি হেসে সায় দিলেন। তারপর ছেলেটির কাছে মেয়েটি জানতে চাইলেন– আপনি কেনেননি কিছু? ছেলেটি প্যাকিং করতে করতে উত্তর দিলেন– আমাদের কিনতে হয় না। মেয়েটি অবাক হয়ে জানতে চাইলেন– ওহ, আপনাদের জন্য ফ্রি? ছেলেটি বললেন– জি, লাভ ক্যান্ডির দরকার হয় না। মন বা হাসিই যথেষ্ট।

সত্যিই তাই। জীবন সুন্দর রাখতে পণ্যের ওপর ভরসা রাখায় ঝুঁকি রয়েছে। পণ্য দিয়ে কোনও সম্পর্ক জিইয়ে রাখা সম্ভব নয়। ভোগের পিপাসা বাড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে, তার চেয়ে হাসি বা হৃদয় অনেক সহজ। ভালোবাসায় অফুরান তৃষ্ণা তৈরি করে সেই সক্ষমতা আছে শুধু এই দুইয়ের।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

 

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ