X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

রাশিয়ার চাই ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’: টার্গেট বাংলাদেশ নাকি জাপান?

মো. আবুসালেহ সেকেন্দার
০৮ অক্টোবর ২০২২, ১৮:১৯আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ২২:০৭

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে। রাশিয়া যুদ্ধের লাভ ক্ষতি হিসেব না করে যতটুকু পেয়েছে তা নিয়েই আপাতত এই যুদ্ধের ইতি টানতে চাইছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের প্রথম দিকে কিয়েভের ক্ষমতার পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। কিয়েভ দখল করে জেলনস্কিকে হটিয়ে রাশিয়াপন্থী পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা তাদের লক্ষ্য ছিল। ওই কারণে তারা কিয়েভ আক্রমণও করে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে তাদের ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাদের পক্ষে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করা সম্ভব হয়নি। কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হয়ে রাশিয়াকে তার লক্ষ্য পরিবর্তন করতে হয়। পরিবর্তিত অবস্থায় রাশিয়া যতদূর পারা যায় ইউক্রেনের ভূমি দখলে তৎপর হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে রাশিয়া তার ভূমি দখলের ওই লক্ষ্য থেকেও সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এখন রাশিয়ার সেনারা আক্রমণের বদলে প্রতিরোধ করছে। ফলে রাশিয়া এখন যতটা সম্ভব ই্উক্রেনের ভূমি তার দখল রাখতে মরিয়া হয়ে লড়ছে।

রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জিতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কৃষ্ণ সাগরের উত্তরের ক্রিমিয়া দখল করে ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে। এবারও এই যুদ্ধের ফল হিসেবে তারা রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের ভূমি রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করতে তৎপর। এবারের লক্ষ্য পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেন। ওই লক্ষ্যে রাশিয়া তার দখলকৃত পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝিঝিয়ায় গণভোট আয়োজন করেছে। রুশ সেনারা ওইসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট নিয়েছে। ভোটের ফলও প্রকাশিত হয়েছে। রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে ও নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত যুদ্ধরত অঞ্চলের ওই গণভোট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যান করলেও রাশিয়া ওই ভোটের ফল ঘোষণা করে দাবি করেছে ওইসব অঞ্চলের জনগণ তাদের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তারা ওইসব অঞ্চল রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করতে ভোট দিয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে তড়িঘড়ি করে গণভোটের দোহাই দিয়ে রাশিয়া ওইসব অঞ্চলকে তার দখলে নিতে চাইছে। যুদ্ধে ক্লান্ত রাশিয়ার সেনারা যুদ্ধের ইতি টানার পথ খুঁজছে।

রাশিয়ার বর্তমান লক্ষ্য ইউক্রেনের উপর্যুক্ত চারটি অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিঝিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করা। ওইসব এলাকা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হলে ইউক্রেনের ১৫ ভাগ ভূমি রাশিয়ার দখলে যাবে। যদিও ওইসব অঞ্চলের সব ভূমি তার দখলে নেই। লুহানেস্কের পুরো অঞ্চল রাশিয়ার দখলে থাকলেও দোনেৎস্কের মাত্র ৬০ শতাংশ রাশিয়ার দখলে আছে। জাপোরিজ্জিয়ার রাজধানী এখনও ইউক্রেনের দখলে এবং খেরসন দখলে উভয়পক্ষ লড়াই করছে। এছাড়া ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে প্রতিদিনই নতুন নতুন অঞ্চল থেকে রাশিয়ার সেনারা বিতাড়িত হচ্ছে। ইউক্রেন তার ভূমি উদ্ধার করতে পারছে।

তাই এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া চাইবে যতটুক পারা যায় ইউক্রেনের ভূমি নিজের অধিকারে রেখে এই যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাপ্তি টানতে। ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যর্থতায় ইতোমধ্যে মস্কোয় পুতিনের মসনদ নড়বড় করছে। খালি হাতে রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেন থেকে বিতাড়িত হলে পুতিনের বিরোধী পক্ষ আরও শক্তিশালী হবে, যা পুতিনের পতন ডেকে আনবে। তাই ইউক্রেনীয় উপর্যুক্ত ভূমি দখল করে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে পুতিন যুদ্ধে তার পরাজয় হয়নি তা নিশ্চিত করতে চাই।

তড়িঘড়ি করে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের উপর্যুক্ত চার অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন এই বার্তা দেয় যে, আসন্ন শীতের আগেই এই যুদ্ধের সমাপ্তিই পুতিনের লক্ষ্য। কারণ শীতকাল পর্যন্ত যুদ্ধ গড়ালে রাশিয়ার যুদ্ধব্যয় বাড়বে। অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শীতের আগে যুদ্ধ শেষ হলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জার্মানিসহ ইউরোপের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারবে। গ্যাসসহ জ্বালানি বিক্রি করে রাশিয়া কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

পুতিনের চাওয়া কতটা পূরণ হবে তা এখনই বলা কঠিন। যদিও পুতিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির পথ খুঁজতে চাইছে। ইতোমধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মধ্যে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তির তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই যুদ্ধে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা, যুদ্ধবন্দি বিনিময়, ইউক্রেনের খাদ্যশস্য বিদেশে রফতানিতে রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তিসহ প্রভৃতি বিষয়ে তুরস্ককে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। তাই পুতিনের সঙ্গে এরদোয়ানের আলোচনাকে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানার রাশিয়ার উদ্যোগের সূচনা বলা যায়।

কিন্তু পুতিন চাইলেই যে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ইতি ঘটবে তা নয়। কারণ ইউক্রেনের জেলনেস্কি সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে তারা ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নতুন নতুন অস্ত্র ইউক্রেনীয় সেনাদের মনোবল বাড়িয়েছে, শক্তি জোগাচ্ছে। ফলে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এখন ইউক্রেন বেশ সফল। ইউক্রেন চাইবে ওই সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাদের শেষ লক্ষ্য ক্রিমিয়াকে পুনরুদ্ধার করতে। ইউক্রেনের প্রতি ইঞ্চি ভূমি থেকে রাশিয়াকে বিতাড়িত করতে।

ইউক্রেনের ওই লক্ষ্য সম্পর্কে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও ওয়াকিবহাল। ফলে তিনি ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কূটনৈতিক রাজনৈতিক চাল প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাললে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে তার দরকার নতুন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। নতুন কোনও অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হলেই সবার মনোযোগ ওই দিকে সরে যাবে। বিশ্ব রাজনীতিতে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ তখন গৌণ বিষয় হয়ে পড়বে।

আন্তর্জাতিক চাপ কমে যাওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অন্য ফ্রন্টে ব্যস্ত হওয়ায় গণভোটের অজুহাতে দখলকৃত ইউক্রেনের ১৫ ভাগ অঞ্চলের ওপর সহজে রাশিয়া তার দখলদারিত্ব বজায় রাখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনের প্রধান সমর্থনকারী ও অস্ত্র-অর্থ সরবরাহকারী দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে এমন অঞ্চলে তৃতীয় ফ্রন্ট খোলা পুতিনের লক্ষ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থ রয়েছে এমন অঞ্চলে নতুন যুদ্ধ শুরু হলে ওই যুদ্ধ পুরোপুরি রাশিয়ার পক্ষে যাবে। রাশিয়ার ইউক্রেনের ১৫ ভাগ অঞ্চল দখলকে নিরাপদ করবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে এমন অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশকে রক্ষায় এগিয়ে যাবে। অস্ত্র অর্থ সরবরাহ করবে। ফলে তাদের পক্ষে বর্তমান সময়ের মতো ইউক্রেনকে অস্ত্র অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা পুরোদমে সম্ভব হবে না।

পুতিনের ওই মোড় ঘোরানো কূটনৈতিক রাজনীতির ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ হবে কোন অঞ্চল সেটি এখনও সুস্পষ্ট নয়। ভূরাজনৈতিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব কমে যাওয়ায় বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওই অর্থে আগ্রহ নেই। তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাদের মিশন গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কোনও যুদ্ধ ফ্রন্ট উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই পুতিনের তৃতীয় ফ্রন্ট খুঁজতে হবে নতুন কোনও অঞ্চলে। এক্ষেত্রে দুটি অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা যায়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ প্রবলভাবে জড়িত রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে এমন দুটি অঞ্চল হচ্ছে, কোরিয়া উপদ্বীপ ও জাপান এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চল। চীনের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা রুখতে যুক্তরাষ্ট্র উপর্যুক্ত দুটি অঞ্চলে তার উপস্থিতি বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় (প্যাসিফিক) দ্বীপপুঞ্জ ঘিরে পার্টনারস ইন দ্য ব্লু প্যাসিফিক বা পিবিপি নামে নতুন একটি জোটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। ওই জোটে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও নিউজিল্যান্ড রয়েছে। ওই জোটের প্রধান লক্ষ্য অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াকে উচ্চপ্রযুক্তির পরমাণু চালিত সাবমেরিন প্রযুক্তি সরবরাহ করা এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে নতুন সামরিক জোট কোয়াড্রল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা কোয়াড গঠন বলে দেয় যে উপর্যুক্ত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের প্রবল উপস্থিত নিশ্চিত করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের গঠিত উভয় জোটে, নব গঠিত অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক জোট পিবিপি ও সামরিক জোট কোয়াডে জাপানকে রাখায় এই বিষয়টি স্পষ্ট করে যে জাপান কেন্দ্রিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল অর্থনৈতিক রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। জাপান যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে। এছাড়া জাপানের সঙ্গে চুক্তির ফলে জাপানকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার দায়িত্বও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বর্তায়।

জাপানের সঙ্গে চীনের সাগর কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক, ভূমি ও রাজনৈতিক-কূটনৈতিক বিরোধ রয়েছে। ফলে জাপানকে কেন্দ্র করে নতুন কোনও যুদ্ধ শুরু হলে ওই যুদ্ধে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী জোটে সহজে চীনকে যুক্ত করা যাবে। ফলে যুদ্ধের পরিধি ব্যাপক হবে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুক্ত না হলেও জাপান আক্রান্ত হলে তাদের পক্ষে ঘরে বসে থাকা সম্ভব হবে না। যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র তার সবকিছু দিয়ে জাপানকে রক্ষা করতে চাইবে। আর এক্ষেত্রে রাশিয়ার সরাসরি যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। তার ঘনিষ্ঠ মিত্র উত্তর কোরিয়াকে তারা ব্যবহার করতে পারবে। ৪ অক্টোবর ২০২২ জাপানের ওপর দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত উত্তর কোরিয়ার দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা এবং উত্তর কোরিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাপান সাগরে নকল লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের দুটি করে মোট চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ঘটনা আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর উত্তর কোরিয়ার এই নড়াচড়া, সাহস করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পেছনের কলকাঠি যে অন্য কেউ নাড়ছে তা স্পষ্ট। জাপানের ওপর দিয়ে উত্তর কোরিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার প্রধান লক্ষ্য জাপান নয়, তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখাই উত্তর কোরিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রধান উদ্দেশ্য। তাই উত্তর কোরিয়ার পেছনে যে রাশিয়া রয়েছে, তা সুস্পষ্ট।

প্রশান্ত ও জাপান মহাসাগরের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত আছে এমন অঞ্চলের মধ্যে বঙ্গোপসাগর অঞ্চল তথা বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চল রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ, কোয়াডে বাংলাদেশকে যোগ দিতে ভারতের মাধ্যমে অনুরোধ, বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি সহ তাদের সাম্প্রতিক তৎপর বলে যে জাপানের মতো এই অঞ্চলেও যুক্তরাষ্ট্র তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। অন্যদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। চীনের পাশাপাশি রাশিয়া মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ করছে।

ফলে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলে চলমান মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সামরিক সংঘাতের দিকে বাংলাদেশের গভীর নজর রাখা দরকার। ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাসীর মনোযোগ সরাতে রাশিয়ার সত্যিকার অর্থে তৃতীয় ফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা পড়লে তা যে উত্তর কোরিয়া জাপানের বিকল্প বাংলাদেশ মিয়ানমার অঞ্চল হবে না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

যদিও চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু উভয় রাষ্ট্রের প্রথম পছন্দ মিয়ানমারের স্বার্থ, তারপর বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান নিয়ে চীন রাশিয়ার অবস্থান থেকে বিষয়টি স্পষ্ট। তাই বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে বাংলাদেশের উচিত এখনই প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক পরিকল্পনা সাজানো। একইসঙ্গে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে বাংলাদেশের সামরিক তৎপরতা বাড়ানো।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
সর্বশেষসর্বাধিক