X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পাঁচ সিটিতে হিসাবের প্যাঁচ

প্রভাষ আমিন
২০ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:১৭আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:১৭

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখন আমাদের দৃষ্টিসীমায়। এ বছরের শেষ নাগাদ, বড় জোর আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে দেশের রাজনৈতিক বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ দুটি নির্বাচনের পর সবার আকাঙ্ক্ষা এখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু এই শর্তগুলো পূরণের আগে আসল শর্তটি হলো, নির্বাচনটি হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। যাদের অংশগ্রহণ নির্বাচনকে সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক করতে পারে, সেই বিএনপি এখনও বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। আবার সরকারি দলও সংবিধানের বাইরে অন্য কোনও সরকারের অধীনে নির্বাচন না দেওয়ার ব্যাপারে অনড়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে সরকার কোনও ছাড় দেবে কিনা; সেটা দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।

তবে দেশে যখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা, তখন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল। আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন দিয়ে শুরু হবে এ নির্বাচনের পর্ব। ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন হবে রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন। এই পাঁচ সিটি নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে নতুন নানা হিসাব-নিকাশ হচ্ছে। চলবে কিছু কৌশলের খেলাও। বিএনপি যথারীতি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে অনড়। বিএনপির পক্ষে এই মুহূর্তে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন। আবার দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও আগ্রহী প্রার্থীদের কতটা ঠেকিয়ে রাখা যাবে, তা নিয়েও সংশয় আছে। বিশেষ করে যেসব সিটিতে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা আছে, সেসব সিটিতে আগ্রহী প্রার্থীরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। সিলেটে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, গাজীপুরে হাসানউদ্দিন সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনে ‘উকিল আব্দুস সাত্তার’ মডেল নিয়ে শঙ্কিত বিএনপিও।

তবে সমস্যা শুধু বিএনপির ঘরে নয়, অস্বস্তি আছে আওয়ামী লীগেও। ক্ষমতাসীন দলটি এরই মধ্যে পাঁচ সিটিতে তাদের মনোনয়ন ঘোষণা করেছে। পাঁচটির মধ্যে তিনটিতেই তারা প্রার্থী বদল করেছে। একটিতে অবশ্য বদল করতেই হতো। সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন কামরানের মৃত্যুর কারণে এখানে মনোনয়ন বদলানো হয়েছে। তবে লন্ডন আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যেই ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে মাঠে থেকে রাজনীতি করছেন, তাদের মধ্যে ক্ষোভটা বেশি। তাদের না দিয়ে লন্ডন থেকে উড়িয়ে এনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়াটা তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। অনেকেই বলছেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জিতলে মেয়র হবেন, হারলে লন্ডন চলে যাবেন। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যদি বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেন, সাথে যদি আওয়ামী লীগের একাংশের ক্ষোভটা নিজের পক্ষে টানতে পারেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জেতাটা অত সহজ হবে না।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সবচেয়ে বড় চমকটা ছিল বরিশালে। বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন পাননি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য। সবাই ধরে নিয়েছিল তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নানান কাণ্ডে বিতর্ক সৃষ্টি করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। আপন ফুফাতো ভাইয়ের ছেলেকেও ক্ষমা করেননি শেখ হাসিনা। সাদিক আব্দুল্লাহর পিতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডেরও সদস্য। তিনি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সন্তানকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা এখানে দারুণ কৌশলের খেলা খেলেছেন। এখানে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা খোকন সেরনিয়াবাত। প্রাথমিক মন খারাপ কাটিয়ে উঠে সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনের মাঠে চাচার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। খোকন সেরনিয়াবাতও বড় ভাই আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর বাসায় গিয়ে তার দোয়া নিয়েছেন। এ সময় ভাতিজা সাদিক আব্দুল্লাহও উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মান-অভিমান যা, তা ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকবে। নির্বাচনের মাঠে হয়তো তার প্রভাব পড়বে না।

আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে আছে গাজীপুরে। বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত ও মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম এবার দলের মনোনয়ন পাননি। গাজীপুরে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা আজমত উল্লাহ খান। তিনি এর আগেও একবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তবে জিততে পারেননি। জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর অনেকে ভেবেছিলেন তিনিই মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু আজমত উল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ায় পাল্টে গেছে সব হিসাব-নিকাশ। আজমত উল্লাহ মনোনয়ন পেলেও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে জাহাঙ্গীর। তিনি যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জয় অনেক কঠিন হবে।

তবে রাজশাহী ও খুলনায় আওয়ামী লীগ অনেকটাই নির্ভার। বিশেষ করে বর্তমান মেয়র রাজশাহীকে দেশের অন্যতম পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাই খায়রুজ্জামান লিটনের জয় অনেকটাই সহজ হবে বলেই মনে করছেন সবাই। খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সামনেও খুব বেশি চ্যালেঞ্জ নেই। নজরুল ইমলাম মঞ্জু বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচন একটু জমজমাট হতে পারে।  

নির্বাচনের তফসিল, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণা হলেও রমজানের কারণে পাঁচ সিটিতে এখনও নির্বাচনি আমেজ শুরু হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ঈদের পরেই বেজে উঠবে পাঁচ সিটি নির্বাচনের দামামা, যার আওয়াজ পৌঁছে যাবে সারা দেশে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
উত্তর আমেরিকা চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটির অভিষেক
উত্তর আমেরিকা চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটির অভিষেক
লোপেজের জোড়ায় লিগে রানার্সআপ হওয়ার পথে বার্সা
লোপেজের জোড়ায় লিগে রানার্সআপ হওয়ার পথে বার্সা
বাজারে অপরিপক্ব লিচু, খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
বাজারে অপরিপক্ব লিচু, খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
টিভিতে আজকের খেলা (১৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৭ মে, ২০২৪)
সর্বশেষসর্বাধিক