X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার

স ম মাহবুবুল আলম
২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:১৭আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:১৭

গত ৩০ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের অফিস সময়ের পর নিজ কর্মস্থলে বসে রোগী দেখার  কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। সরকারি চিকিৎসকরা সীমিত পরিসরে নিজস্ব হাসপাতালে বৈকালিক প্রাইভেট চেম্বারে সরকার নির্ধারিত ফি নিয়ে রোগীর দেখার সুবিধা পাবেন।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস (দ্বৈত প্রাকটিস) ব্যাপকভাবে প্রচলিত। চলুন, স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুফল ও মন্দদিক একটু খতিয়ে দেখি।

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের প্রধান প্রণোদনা হলো অতিরিক্ত উপার্জন যোগ। সরকার এর ফলে স্বল্প বেতনে মেধাবী চিকিৎসকদের সরকারি খাতে ধরে রাখতে পারছেন। অনেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস প্রসারের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো কাজের মাধ্যমে সুনাম তৈরি করেন। প্রাইভেট প্র্যাকটিস ব্যবস্থার ফলে অধিকতর সংখ্যক রোগী অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পাচ্ছেন। জনশক্তির অভাবের পরও ‘সরকারি জনশক্তি’র সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে। এই পদ্ধতি রোগীদের দ্রুত ও ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেয়। রোগীদের মধ্যে সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। প্রাইভেট প্র্যাকটিস ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে হলেও চিকিৎসকদের পেশাগত সন্তুষ্টি ও মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবায় দ্বৈত প্র্যাকটিসের নেতিবাচক প্রভাব ব্যাপক। প্রথিতযশা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে বিপুল আয় করেন। সরকারি চাকরি তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস প্রসারে ব্যবহার হয়। হাসপাতালে লম্বা লাইন, দীর্ঘ ও বিলম্বিত অপেক্ষার সময়  নিয়ে নির্বিকার সরকারি চিকিৎসক। ফলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত রোগীরা সরকারি চেম্বার থেকে মুখ ফিরিয়ে প্রাইভেট চেম্বারমুখী। সরকারি চাকরির কর্মস্থল প্রধান ক্ষেত্র হলেও, তা নিশ্চিত থাকায় সরকারি চিকিৎসকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস।

নির্ধারিত কর্মসময়ের পরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অতিরিক্ত শ্রমে ক্লান্ত-শ্রান্ত সরকারি চিকিৎসকরা। এক ক্লিনিক থেকে আরেক ক্লিনিকে, এক শহর থেকে আরেক শহরে ছুটছেন চিকিৎসকরা। সরকারি হাসপাতালের কর্মক্ষেত্রে তার প্রভাব অত্যন্ত প্রকট। অনুপস্থিতি, বিলম্ব, মনোযোগের অভাব, ক্লান্তির ছাপ ও নিম্নমানের সেবা প্রদান। নিরাপদ চিকিৎসা ঝুঁকির মুখে। সরকারি হাসপাতালের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ, সরকারি হাসপাতাল যত দুর্বল হবে রোগীরা তত প্রাইভেট চেম্বারমুখী হবে। সরকারি হাসপাতালে ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশন, সেবার ঘাটতি বৃদ্ধি পেলে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে উপার্জন বেশি। এই মনোজগত সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল, অদক্ষ করে রাখছে। একই সঙ্গে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে উঠতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে– স্বতন্ত্র জনশক্তি, অবকাঠামো গড়ে উঠতে পারছে না।

তাহলে সরকার কেন প্রাইভেট প্র্যাকটিসকে নিষিদ্ধ করছে না? নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে কি স্বাস্থ্যসেবার বেহাল অবস্থার উন্নতি হবে? এ চেষ্টায় দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশে দক্ষ চিকিৎসকরা সরকারি চাকরি ছেড়ে বেসরকারিতে চলে গেছেন। অনেকে বিদেশে উন্নত কর্ম পরিবেশে চলে যায়। সরকারি চাকরির প্রতি দক্ষ ও প্রবীণ চিকিৎসকরা নিরুৎসাহিত হয়। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান ও সামগ্রিক সন্তুষ্টি আরও নেমে যায়। রোগীরা সরকারি হাসপাতালের প্রতি আরও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সরাসরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করা যায় না, অবৈধভাবে চলতে থাকে। আর সরকারি হাসপাতালেও স্বাস্থ্যসেবা নিতে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো টেবিলের নিচ দিয়ে লেন-দেন বৃদ্ধি পায়।

স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান দৈন্য-দুর্দশার জন্য ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ, আমলা, সাংবাদিক সহ সবাই চিকিৎসকদেরকে দায়ী মনে করেন। তারা দেখতে পান চিকিৎসকরা মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত উপার্জন করছেন। জনমানসে চিকিৎসকরা দুর্জন ও তাদের প্রতি আক্রমণাত্বক। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানিয়েছেন– সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসে প্রধানমন্ত্রীও বিরক্ত। তারপরেও আমাদের প্রাজ্ঞ স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিষিদ্ধ ঘোষণার চরম পথে হাঁটেননি। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের রাশ টেনে ধরতে চেয়েছেন। তিনি বিনয়ের সাথে বলেছেন– সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মস্থলে রাখা, রোগীদের স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়ার এবং তরুণ চিকিৎসকদের প্র্যাকটিসের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন কার্যক্রম।

তবে এই ইস্যুতে সমাজে টেনশন অনেক প্রাচীন। প্লেটোর রিপাবলিকে (বুক-১) সক্রেটিস কঠিন প্রশ্ন রাখছেন– “Is the physician a healer of the sick or maker of money?”; চিকিৎসক কি অসুস্থ ব্যক্তির নিরাময়কারী নাকি অর্থ উপার্জনকারি?

একজন চিকিৎসক দুটোই। সে রোগীর জন্য নিবেদিত। তার অর্থেরও প্রয়োজন আছে। যখন সমাজে ধন-বৈষম্য ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী, মানুষ অর্থের পেছনে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে তখন একজন চিকিৎসক সেই সমাজেরই সদস্য হয়ে তার ব্যতিক্রম নয়।

মূল্যবোধ, মানবতার বানী চিকিৎসকদের জন্য একক ভাবে কার্যকর নয়। বাংলাদেশের একজন চিকিৎসকের যাপিত জীবনে থাকে দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণের কঠোর শ্রমে ভরা দিন, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, দীর্ঘ শিফট দায়িত্ব, রাত্রিকালীন কর্তব্য, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দায়িত্ব, স্ট্রেস, নিম্নমানের থাকা-খাওয়া ও অস্বাস্থ্যকর কর্ম পরিবেশ।  নিরাপত্তাহীনতা। কর্মক্ষেত্রে সহিংসতারও শিকার হয় চিকিৎসকরা।

একজন চিকিৎসকের রোগীকে সুস্থ্য করে তোলার মধ্যেই অপার্থিব আনন্দ। সীমাহীন ত্যাগ প্রত্যাশা না করে তার সেই আকাঙ্ক্ষাকে প্রজ্বলিত রাখাই সমাজের, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতা।

বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য খাত ফুটো কলসির মতো। সরকারি সম্পদ, শ্রম-শক্তি ওই ‘ফুটো’ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত দ্বৈত প্র্যাকটিসের বিনিময়ে সরকারি হাসপাতালের সেবার প্রাপ্তির সুযোগ, মান ও দক্ষতাকে হারাতে হচ্ছে। তাই সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। এটা সরকারি নির্দেশ দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণার মতো বিষয় না, পরিস্থিতিকে সেই মাত্রায় উন্নীত করে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। কীভাবে?

সরকারি ও বেসরকারি খাতে আমাদের দেশে ও অন্যান্য দেশে দ্বৈত প্র্যাকটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা ধরনের, নানা মাত্রার আরোপিত নীতি ও নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা বিবেচনায় আনার সুযোগ আছে। পৃথিবীর কিছু দেশ সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস সম্পূর্ণ (কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ভারতের কিছু প্রদেশে) বা আংশিক (কেনিয়া, জাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া) নিষিদ্ধ। কোনও কোনও দেশে (ইংল্যান্ড, ফ্রান্স) অর্থের অনুপাতে মাত্রা নির্ধারণ করে প্র্যাকটিস সীমিত রাখা হয়েছে। কয়েকটি দেশ ( স্পেন, পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, ভারতের কিছু প্রদেশ) উচ্চ সুবিধা দিয়ে সরকারি হাসপাতালে সেবা প্রদানের নিরঙ্কুশ শর্ত আরোপ করেছে। অনেক দেশে সরকারি বেতন ও সুযোগ বাড়িয়ে দিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে বিরত থাকতে উত্সাহ দেওয়া হয়। দ্বৈত প্র্যাকটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু দেশে (অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি) নিজস্ব হাসপাতালে প্র্যাকটিসের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মাত্রার সুবিধা কাঁট-ছাঁট করে। গত এক যুগ ধরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত পরিসরে ইনস্টিটিউশনাল প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালু আছে। বাংলাদেশের কোনও কোনও বেসরকারি হাসপাতালেও (বারডেম, হার্ট ফাউন্ডেশন) দ্বৈত প্র্যাকটিস প্রচলিত আছে।

বাংলাদেশে দ্বৈত প্র্যাকটিস নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি মিশ্র স্বাস্থ্যখাতের পারষ্পরিক ভারসাম্য ও ভূমিকা সম্পর্কে নীতিগত অবস্থানটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

সরকারি বা বেসরকারি যেখান থেকেই জনগণ চিকিৎসা সেবা নিক না কেন, পয়সা তার পকেট থেকে যায়। ট্যাক্সের মাধ্যমে অথবা সরাসরি। সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের এখন দেখার বিষয় কী ব্যবস্থায় জনগণের অর্থের সবচেয়ে সাশ্রয় হবে এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত হবে। সরকারি খাত একাই স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারি, ক্রেতা ও তদারককারির ভূমিকায়। সরকারের একচ্ছত্র ভূমিকা জনগণের বহুমুখী স্বাস্থ্য চাহিদার সমাধান দিতে পারবে না। সরকারি আনুকূল্য ছাড়াই বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত বর্ধিঞ্চু। আরও বৃহৎ বেসরকারি খাত গড়ে ওঠার প্রবণতা দৃশ্যমান। এটা ভাবার যথেষ্ট সুযোগ আছে যে, আমাদের খণ্ডিত বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্য দিয়ে পরিকল্পিত করে গড়ে তুললে তা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সফল ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে চ্যালেঞ্জ হলো, সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে সেবা প্রাপ্তির সুযোগ, সেবার মান ও ব্যয়ের পার্থক্য কমিয়ে আনা। মূল লক্ষ্য হবে– চিকিৎসা সেবাকে ব্যয় বহুল না করা এবং ব্যক্তির সরাসরি স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে রাখা। সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকদের আয়ের ব্যবধান সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা ক্রয়ে দক্ষতা ও মূল্য পরিশোধে উদ্ভাবনী কৌশল, এই পার্থক্য কমিয়ে আনতে পারে।

সরকারি খাতকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর ভূমিকা সংকুচিত করে আনতে হবে। সেবা প্রদানকারীর  মূখ্য ভূমিকা থেকে সরে এসে সরকারি খাতকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা, গবেষণা, জনশক্তি তৈরি, মান উন্নয়ন ও তদারকিতে উত্কর্ষতা অর্জন করতে হবে। আমাদের সামনে প্রতিবেশী দেশের উদাহারণ আছে, AIIMS, PGI Chandigarh-এর মতো প্রতিষ্ঠান। আমাদের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে নন-প্র্যাকটিসিং করতে হবে। প্রতিবেশী দেশে যে সুযোগ-সুবিধা, বাজেট ও বিধি ব্যবস্থা আছে তার আদলে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে পারি। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হলে স্বাস্থ্য-শিক্ষা, গবেষণার মতো প্রতিষ্ঠানকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বাইরে আনতে হবে সর্বাগ্রে।

দ্বৈত প্র্যাকটিসকে এক বাক্যে খারাপ বলে মেনে নিলেও তা থেকে পরিত্রাণের পথ সহজ নয়। সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্যতা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিদ্যমান অবকাঠামো, সরকারের আর্থিক সক্ষমতা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ডাটাবেস কতটা সবল তা বিবেচনায় নিয়ে পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। একটি নয়, একাধিক নমনীয় পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা যেতে পারে– চিকিৎসকদের বেতন কাঠামোকে উচ্চতায় উন্নীত করতে হবে। ‘নন-প্র্যাকটিসিং’ ভাতা প্রচলন করে নবীন ডাক্তারদেরকে নিয়োগ দিতে হবে ‘নন-প্র্যাকটিসিং’ হিসাবে। তারা সরকারি চাকরির প্রথম দশ বছর নন-প্র্যাকটিসিং থাকবেন।  যারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে বিরত থাকবেন তাদেরই কেবল উচ্চতর (অধ্যাপক বা পরিচালক) পদে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। সেই সাথে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। একটি স্বল্প উন্নত দেশের সরকারের পক্ষে উচ্চ বেতন দেওয়া কঠিন।  এক্ষেত্রে সরকার যে সকল প্রতিষ্ঠানিক ফি আরোপ করেছে তার একটি অংশ আনুপাতিক হারে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রদান করতে পারে। কোনও কোনও দেশে এই ব্যবস্থা চালু আছে।

গত মার্চের শেষ থেকে অবাধ দ্বৈত প্র্যাকটিসকে অব্যাহত রেখে সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালু হয়েছে। খুবই সীমিত পরিসরের এই ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক অথবা ইতিবাচক কোনও প্রভাব ফেলার ক্ষমতা অকিঞ্চিত্কর। এটাকে এই মুহূর্তে প্রতীকী বলা যেতে পারে। এ ব্যবস্থাটি কি আদৌ সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে সেবার মান, ব্যয় ও সেবা প্রদানকারিদের আর্থিক উপার্জনের পার্থক্য কমাতে পারবে? যদি পারে, ব্যবস্থাটি তখনই কেবল সফল ও প্রসারিত হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে। নতুন পদ্ধতির যে উদ্দেশ্য ‘চিকিৎসকদের কর্মস্থলে রাখা ও রোগীদের স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়া’ তা সরকার টেলিমেডিসিনকে উত্সাহিত করে আরও ভালোভাবে অর্জন করতে পারে।

চিকিৎসকদের উচ্চ ফি বড় করে নেতিবাচক প্রচারে আসে, আসলে তা স্বাস্থ্যসেবার একটি ক্ষুদ্র সমস্যা। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সহজ ও সুলভ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ও জরুরি দাবি হওয়া উচিত। সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা ও কর্মপরিবেশ উন্নত করতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার বিকাশ যোগ্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে তা স্বচ্ছ্তার সঙ্গে দৃশ্যমান হতে হবে। অপচিকিৎসা ও নিম্নমানের চিকিৎসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। লাগামহীন প্র্যাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ন্ত্রণে সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরি করে তা বাস্তবায়নে সক্ষম জনবল তৈরি করতে হবে। নীতিমালার মূল লক্ষ্য থাকবে– রোগীর নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবাকে নিশ্চিত রাখা এবং সামগ্রিক  স্বাস্থ্যসেবায় প্রাইভেট প্র্যাকটিসের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধ করা।

অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও, মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন–বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম বরাদ্দ না বাড়িয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোনও পরিবর্তন আনা (এমনকি সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস সীমিত করা) বা উন্নয়নের চিন্তা অলীক কল্পনা।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। কনসালটেন্ট, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, এভার কেয়ার হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিষয়ক কলামিস্ট।

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ