X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিস্ময়কর এ পৃথিবীতে কে কাহার

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
০১ জুন ২০২৩, ১৯:৩৬আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১৯:৩৬

একটা সময় সহস্র কুসংস্কারের ক্ষেত্রবিন্দু ছিল আমাদের শৈশব। তেঁতুল তলার ভূত, অন্ধকারে দৈত্যের বসবাসের মতো কাল্পনিক আনন্দ ছিল নিত্য সঙ্গী। পরে সময় বুঝিয়ে দিয়েছে এসবের সবই মিথ্যা। সন্ধ্যায় তেঁতুল গাছের ছোড়া অক্সিজেনের সাথের মানুষের শরীর ব্যবস্থা সমন্বয় করতে না পারায় সেখানে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ফলে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ ধরনের কাল্পনিক গল্পে একশ্রেণির মানুষ আনন্দ পেত, ভয় বিলি করে সুবিধা নিত। এরকম ব্যবস্থার সমসাময়িক সংস্করণ– ‘অমুক না পাশে থাকলে উন্নয়ন হবে না, অমুক বেজার তো সব শেষ’।

আদতে এমন ভয় দেখানো পৃথিবীর এই সময়টায় হাস্যকর। কারণ বিপুলা বিস্ময়কর এই পৃথিবী এখন মানুষকে নানা দিক, নানা মেরু, নানা কিছুর হাতছানি দিতে শিখেছে। বৈশ্বিক যোগাযোগ ও কৌশল এটা করে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত এমন ভয় দাঁড় করানোর পাঁয়তারায় আছে। জনবিচ্ছিন্ন এই দল দুটি উপায় হিসেবে নিয়েছে ‘উকিল মডেল’কে। এরই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক নীতিকে পাশ কাটিয়ে নজিরবিহীন হাততালি নীতি গ্রহণ করেছে। যার প্রমাণ মেলে আমেরিকার ভিসা নীতি নিয়ে প্রকাশিত আচরণে।

আমেরিকা জানিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে তারা বৈরিতার স্বীকার হবেন। বরং এই নীতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বিএনপি-জামায়াত। কারণ দেশের রাজনীতির ইতিহাসের বোমাবাজি, ধর্ষণ, লুট এবং অগ্নি সন্ত্রাসে পিএইচডি শিক্ষার নজির তাদের আছে। বাংলা ভাই, শায়েখ আব্দুর রহমানের মতো জঙ্গিবাদী উত্থানে ট্রেনিং তাদেরই দেওয়া। কাজেই আমেরিকার এই বৈদেশিক নীতিতে তারাই সর্বোচ্চ ভুগবেন।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রথম শর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিগত ২০ বছরে বৈশ্বিক এই ব্যবস্থা এখন এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে কোনও দেশই এখন একতরফা বাজারমুখী নয়। বাজার এখন প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামুখী। কাজেই অদূরে কোনও অঞ্চল আর তার নিজের সমস্যাকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার যে খেলা সেটা একতরফা খেলতে পারবে না। এই আচরণ থেকে সকল পক্ষকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আমেরিকা এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী। যদিও মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাসহ আরও কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে। তবু তাদের কারা বিভ্রান্ত করতে চায় এদের নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। বাড়িতে কোনও উৎসব হলে বাড়ির দুষ্টু প্রাণীকে আগে বেঁধে রাখার চল আছে। দেশের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচন এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সেরকমই বড় উৎসবের মতো। কাজেই ঘরে-বাইরের দুষ্টু অংশকে সামাল দেওয়া জরুরি।

গণতান্ত্রিক আন্দোলন কিংবা নির্বাচন, সকল ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধে জাতিকে নেতৃত্বদানকারী ও সংগঠিত দল আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকবে এটাই বাস্তবতা। এসব তথ্য প্রতিপক্ষের জানা। এজন্যই তারা এখন নেতিবাচক পন্থা অবলম্বণের পথ ধরেছে। কারণ এরা জানে বিগত ১৪ বছরে এরা জনগণের হয়ে কোনও রাজনৈতিক আবেদনমূলক কর্মসূচি দাঁড় করাতে পারেনি। এমনকি তাদের দলীয় প্রধান কে, সেও এখন ধোঁয়াশা। এসব বিবেচনায় বিএনপি-জামায়াত নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের খেলায় নেমেছে। নিষেধাজ্ঞাসহ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনায়নে তদবির করছেন। যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার সামিল।

অথচ বিশ্ব পরিসংখ্যানে অর্থনীতিসহ সকল সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিস্ময়করভাবে এগিয়েছে। এই অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই এত শতমুখী ষড়যন্ত্র। তাছাড়া গণতন্ত্রহীন অবস্থা ও বহুমুখী বিশৃঙ্খলা অস্ত্রের নতুন বাজার সৃষ্টি করে। যার পার্শ্ববর্তী উদাহরণ নির্বাসিত গণতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের দেশ মিয়ানমার। স্বৈরশাসনের দুই বছরে তারা প্রায় ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে। যার কারণে তাদের মৌলিক চাহিদা থেকে গেছে উপেক্ষিত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বহু পথের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বহু উন্নয়নশীল দেশ তাদের দেশে ‘শেখ হাসিনা মডেল’ ব্যবহার করতে চাইছেন। এমন বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতাও ঈর্ষার একটা বড় কারণ। তবুও আমরা চাই সেইসব দেশগুলো যারা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা যেমন প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস, বন্দুক হামলা, ধর্ষণের মত ব্যাধি মুক্ত হোক।

বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছেন। তাছাড়া পারস্পারিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব আমাদের অঙ্গীকার। কাজেই পারস্পারিক সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সকল অবিশ্বাস, সংকট ও মিথ্যাচার রুখে দেওয়া সম্ভব। এতে সকল ক্ষেত্রের সম্পর্কের মাঝে দৃঢ়তা বাড়বে। দুই পক্ষের সুযোগসন্ধানীরা নিঃশেষ হবে।

মানুষ পৃথিবীর সন্তান। কোনও কাঁটাতার কিংবা প্রতিবন্ধকতা তাঁকে দমাতে পারে না। বয়ে চলা নদী যেমন বাঁধা পেলে ভিন্ন দিকে হলেও তার গতিপথ খুঁজে নেয়। মানুষ, সমাজ ও দেশও তাই। কাজেই সম্পর্কের দৃঢ়তা ও দীর্ঘসূত্রতা বিবেচনায় পারস্পারিক বোঝাপাড়ায় এগিয়ে চলাই হবে মূল যৌক্তিকতা।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা

[email protected]

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তৃণমূলের আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
তৃণমূলের আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
জমি নিয়ে বিরোধ, বৈদ্যুতিক শকে চাচাতো ভাইকে ‘হত্যা’
জমি নিয়ে বিরোধ, বৈদ্যুতিক শকে চাচাতো ভাইকে ‘হত্যা’
আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং
আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
গরমে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, মার্কেটে ভিড় বাড়ছে সন্ধ্যায়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ