X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

গণঅধিকার পরিষদের মুখ বদল

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২১ জুন ২০২৩, ১৯:১৯আপডেট : ২১ জুন ২০২৩, ১৯:১৯

এখন রেজা কিবরিয়া হয়তো গাইতে পছন্দ করবেন, ভাঙনের তীরে ঘর বেঁধে কী বা ফল? গণঅধিকার পরিষদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছে রাশেদ খাঁনকে। সোমবার রাতে এক জরুরি বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

রেজা কিবরিয়াকে বের করে দিয়ে বিশ্বস্ত রাশেদকে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর নিজের অবস্থান সংহত করলেও এই দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর কতদূর যেতে পারবে সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আদর্শিক দ্বন্দ্বে যেকোনও দলে ভাঙন সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু একটা দলের প্রধান ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন অর্থ আত্মসাৎ এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে, তখন তার এগোনোর পথ রুদ্ধ হয়।

এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় ছাত্র আন্দোলন ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সেই আন্দোলন থেকে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন রাশেদ ও নুর। নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে দলের আহ্বায়ক বানিয়েছিলেন রেজা কিবরিয়াকে।

আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার পুত্র অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়াকে দলপ্রধান করার একটি বড় কারণ ছিল নাগরিক সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। এখন তাকে বহিষ্কার করে নিজেদের ঘরানায় ফিরেছেন তারা দুজন।

নুরুল হকের বিরুদ্ধে দল থেকেই যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো ভয়ংকর। দৈনিক কালবেলা রিপোর্ট করেছে, রবিবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের বৈঠকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে নুরুল হক নুরের বৈঠক করা এবং তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন খোদ তারই দলের সদস্যরা। দলের নামে তহবিল এনে কাতারেই এক প্রবাসীর গাড়ি ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে সেই টাকা। শুধু তা-ই নয়, নুরের বিরুদ্ধে দেশের একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া, বিভিন্ন ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ, দলের জন্য প্রবাসীদের দেওয়া টাকার হিসাব না দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ এনেছেন দলের কয়েকজন নেতা।  

এগুলো কতটা সত্য বা কতটা অর্ধসত্য সেটা নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু শুরু করতে না করতেই যদি একটা দলের প্রধানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে, তবে সেই দলের ভবিষ্যৎ কী সেটা বলা যায়। একটি রাজনৈতিক দল থাকবে ঠিকই, তবে বড় দল হতে পারবে না।  

গণঅধিকার পরিষদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজের বহিষ্কার দেখলেন রেজা কিবরিয়া। নুরুল হক নুর পাকা হাতেই খেলছেন। রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দিয়ে দলের ভেতরে থাকা তার বিরোধী পরিসরটিকে আপাতত একটি বার্তা দিয়েছেন এই দল শুধু তার কথাতেই চলবে এবং কোনও অভিযোগ আনা চলবে না।

রেজা কিবরিয়া নুরের সঙ্গে আর টিকে থাকতে পারবেন না। কিন্তু তিনি এ দেশে রাজনীতিও পারবেন বলে মনে হয় না। যে নুরের সঙ্গে তিনি দল করেছেন, মিলেমিশে আন্দোলন করেছেন, বক্তৃতা বিবৃতিতে নুরের প্রশংসা করেছেন, আজ এই সময়ে এসে এমন কিছু কথা বলেছেন যা দিয়ে বোঝা যায় তিনি পলিটিক্যাল ম্যাটার নন। তিনি নুরের পরিবার নিয়ে কথা বলেছেন। বলেছেন, আমার বিচার-বিবেচনার সঙ্গে তো নুরের বিচারবোধ এক হতে পারে না। তিনি যে লেভেলে বড় হয়েছেন, সেই লেভেলেই চিন্তা করবেন। এটিই স্বাভাবিক। আমি বাংলাদেশে এসেছি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য; রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে। আমি তো নুরের মতো পরিবার থেকে আসিনি।

যে কথা বলছিলাম, বিশাল কোটা আন্দোলন থেকে এই দলের শুরু। কিন্তু সমর্থকদের সেই মনোবল ও শরীরী ভাষাটাই এখন উধাও হয়ে গেছে। এখন নুরের কাছে পদ আর অর্থ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নাগরিকদের সমর্থনের চাইতে। নুর নেতা হয়েছেন যতটা না নিজের বড় ভাবমূর্তিতে, তার চাইতে বেশি হয়েছেন ছাত্রলীগের কারণে। ছাত্রলীগ যেখানে সেখানে তাকে আক্রমণ করে বিখ্যাত করেছে।  

সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেজা কিবরিয়া বলেছেন, দলীয় ফান্ডের কোনও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। কাউকে হিসাবনিকাশ দিতে চান না নুর। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন দলের কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই।

কিন্তু নিজের ফেসবুকে নুর রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ এনেছেন। এ কথাগুলো থেকে নুরের চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। তিনি দলে কোনও দ্বিতীয় কণ্ঠস্বর রাখতে চান না। দল গৌণ, পদ আর অর্থই চিন্তা নুরের কাছে।

গণঅধিকার পরিষদ এখনও নিবন্ধন পায়নি। এরমধ্যেই দেখা গেলো দলের আসল ব্যক্তি নুরুল হক নুর রকমারি প্রাপ্তিযোগের আকর্ষণে আকৃষ্ট। এর মাধ্যমে তিনি যে দলের নৈতিক অমর্যাদা করছেন, তা নিয়ে প্রশ্নও করা যাচ্ছে না। এরা যখন শাসক দলের একচেটিয়াত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন নিজেদের মধ্যে যে গণতন্ত্র চর্চার কত অভাব সেটা স্বীকার করছে না। একটা কথা মনে রাখা দরকার, ছলে বলে কৌশলে দলের অভ্যন্তরের বিরোধীদের দমন করা গেলেও, অর্থ কামানো গেলেও জনসমর্থন আত্মসাৎ করা যায় না।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৪ বছর বয়সে শুরু, জিতেছেন ১৬টি গ্র্যামি
শুভ জন্মদিন৪ বছর বয়সে শুরু, জিতেছেন ১৬টি গ্র্যামি
বজ্রাঘাতে ঘরে আগুন, পুড়ে মারা গেলেন ঘুমন্ত মা-ছেলে
বজ্রাঘাতে ঘরে আগুন, পুড়ে মারা গেলেন ঘুমন্ত মা-ছেলে
আসামি ধরতে গিয়ে ৩ পুলিশ আহত
আসামি ধরতে গিয়ে ৩ পুলিশ আহত
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ