X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে কূটনীতির ঝড়

প্রভাষ আমিন
১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০৭আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৩, ১৯:২১

১২ জুলাই তারিখটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে থাকবে। অন্তত আগামী নির্বাচনের বিবেচনায় তারিখটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সেদিন মাঠে ছিল। হঠাৎ এই বর্ষাকালে কেন রাজনীতির মাঠে ঢেউ, সেটা নিয়ে কেউ কেউ কৌতূহলী হতে পারেন। অনেকেই ভেবে থাকবেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই বুঝি বিএনপি তাদের চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা করলো। দৃশ্যত তা-ই। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের ভরসায় আছে, এটা মনে করার কোনও কারণ নেই।

বিএনপিও জানে, তারা ১৪ বছরে যা পারেনি, আগামী ৩-৪ মাসে আন্দোলন করে তা আদায় করে ফেলবে, বিষয়টা এমন নয়। বিএনপি আসলে মাঠে নিজেদের শক্তিটা দেখাতে চেয়েছে। অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হতো ছুটির দিনে। কিন্তু ১২ জুলাই বুধবার সবাই মিলে রাজপথে নেমে গেলো আসলে সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের নিজেদের শক্তি দেখানোর জন্য। এখানে আসলে জনগণের কোনও ভূমিকা নেই।

১২ জুলাই তারিখটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও কোনও পক্ষই কিন্তু নিজেদের অবস্থান বদলায়নি। অনেক দিন আসলে অনেক বছর ধরেই বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। তারা চায় নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনও নির্বাচনে যাবে না, এটাই তাদের এক দফা। জবাবে আওয়ামী লীগ এক দফা দিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দু’দলেরই এ অবস্থান অনেক পুরনো। ১২ জুলাইয়ের পাল্টাপাল্টি শোডাউনেও অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।

এটা ঠিক, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের অতি উৎসাহ বিএনপিকে আশাবাদী করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া- বাংলাদেশের ব্যাপারে সবার আগ্রহ আছে, মতামত আছে, অবস্থান আছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠের চালচিত্র। ভিসানীতি ঘোষণার পর অনুষ্ঠিত ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার তেমন সুযোগ ছিল না। বিরোধী দলগুলো এখন নির্বিঘ্নে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে। ১২ জুলাই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বেশ সাফল্যের সঙ্গে বিনা বাধায় তাদের কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে। কিন্তু নিছক বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারাতেই কি সন্তুষ্ট থাকবে বিএনপি?

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশ সফর করছে। দুই সপ্তাহের সফরে তারা নির্বাচনপূর্ব এবং নির্বাচনকালীন সম্ভাব্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। তাদের এই সফর থেকে মূলত আগামী নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফর চলাকালেই মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সফর কূটনীতি এবং রাজনীতিতে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি শোডাউনের পরদিন ১৩ জুলাই উজরা জেয়া ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তিনি দফায় দফায় প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু উজরা জেয়ার সফরসূচিতে বিএনপির সঙ্গে কোনও বৈঠক ছিল না। তাহলে এই সফর থেকে বিএনপির প্রাপ্তি কী?

উজরা জেয়া বরং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারে আস্থা রাখছেন। তিনি সংলাপের কথা বলেছেন, তবে সেটা করতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদেরই।

বিদেশিদের তৎপরতা, দৌড়ঝাঁপে বিএনপির উৎফুল্ল হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুম নেই বললেই চলে। ভিসানীতির পর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও নাটকীয় উন্নতি হয়েছে।

বিদেশিদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। সে লক্ষ্যেই তারা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু বিএনপির মূল যে দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সে ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন; কেউই কিছু বলেনি। তারচেয়ে বড় কথা হলো, এবারের উজরা জেয়ার সফর এবং গত কয়েক মাসে একাধিক মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু কেউই বিএনপির কারও সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানান তৎপরতা সরকারকে প্রবল চাপে ফেললেও তাতে বিএনপির উল্লসিত হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না। ভিসানীতির ফলে তাদের কর্মসূচি পালন করাটা অনেক সহজ হয়েছে, মামলা-হামলা কমেছে, গুম-খুন বন্ধ হয়েছে, পুলিশের আচরণ সংযত হয়েছে। আপাতত এটুকুই বিএনপির লাভ। কিন্তু মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফরে বরং আমি বিএনপির জন্য বিপদ দেখছি। তারা কেউই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা তো বলেনইনি, উল্টো সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারেই আস্থা রাখছেন তারা। উজরা জেয়া তো সরাসরি তার আস্থার কথা বলেছেন। এখন সবকিছু দেখে শুনে, সরকারের অঙ্গীকারে আস্থা রেখে বিদেশিরা যদি বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে সম্মত হয় এবং বিএনপিকে তাতে অংশ নিতে বলে, তখন বিএনপি সত্যিকারের বিপদে পড়বে। না পারবে না করতে, না পারবে হ্যাঁ করতে।

বিদেশিদের সব আশ্বাসের পরও যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে বিদেশিদের সমর্থন হারিয়ে আরও একা হয়ে যাবে তারা। আর বিদেশি কারও কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া মুশকিল। কারণ, যে পদ্ধতি তাদের দেশে নেই, আরেক দেশে সে পদ্ধতির সুপারিশ তারা করবে কীভাবে। একটা জিনিস পরিষ্কার, বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাইবে; সেটার জন্য চাপ দেবে, পর্যবেক্ষণ করবে। কিন্তু আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। 

রাজনীতিতে কূটনীতির যে ঝড় বইছে, তা কখন থামবে, কীভাবে থামবে কে জানে। তবে যা করার দ্রুত করতে হবে। সময় খুব বেশি নেই হাতে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ