X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে ব্যর্থ হলো

লীনা পারভীন
০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০২

পাঁচ বছর পর আবারও আমরা সবাই নাগরিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলাম। একজন ভোটার হিসেবে আমিও চাই আমাদের সব রকম নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। এতে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের ‘এক্সাইটমেন্ট’ যেমন কাজ করে, আবার তেমনই নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতনতা আসে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ২০০৮-এর পরের নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেক ধরনের অভিযোগও আছে। যদিও সেসব অভিযোগের পক্ষে বিরোধীপক্ষ কোনও প্রকার প্রামাণিক আলোচনা তুলতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু সেসব ব্যর্থতার মাঝে কি কখনও তারা নিজেদের জায়গাটা বুঝতে চেয়েছিল?

কোনোদিন কি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমস্যার গোড়ায় গিয়ে আলোচনা করেছে যে কেন তারা সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে পারেনি? আমার বিশ্বাস সেটা করেনি তারা। বরং সেই কাজটি করার চাইতে তারা অনেক বেশি মনোযোগী ছিল বিদেশি ‘প্রভু’দের দৃষ্টি আকর্ষণে।

ঘড়ির কাঁটা ঘুরে আবারও যখন নির্বাচনের ডামাডোল বেজে উঠলো তখনও দেখলাম তারা পুরোনো পথেই হাঁটলো। আমরাও চেয়েছিলাম সরকার চাপে থাকুক। চেয়েছিলাম জনগণের ইস্যুগুলো নিয়ে তারা পাশে রাখুক। সেই পথে হাঁটেইনি তারা। ক্রমাগত ‘সরকার ফেলে’ দেওয়ার বৃথা আওয়াজ তুলে নিজেরাই কুঁকড়ে গেছে। তারা কোথাও কোনও ইস্যুতেই বুঝার চেষ্টা করেনি যে সরকার ‘ফেলে’ দেওয়ার মতো সামর্থ্য তারা অর্জন করেছে কিনা? সরকার কি বিল্ডিং যে বুলডোজার দিয়ে ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে? “সরকার” একটা সিস্টেম যেখানে একজন চালক থাকে আর তার কর্মী বাহিনী থাকে। তো ব্যর্থ প্রমাণ করতে হলে তো আগে আপনাদের জনগণকে সঙ্গে নিতে হবে। এই একটি আসল জায়গাতে তারা সবচেয়ে বেশি অবিশ্বাসের প্রমাণ রেখে গেছে বারবার। আন্দোলনের ইস্যুতে আমরা আমাদের কথা শুনিনি। কেবলি শুনেছি সরকার পতনের হুঙ্কার দিয়ে জ্বালাও পোড়াও করে মানুষ মেরে ফেলা। পরিষ্কার বুঝা গেছে যে ক্ষমতা দখলই তাদের একমাত্র টার্গেট। দেশ কোথায় গেলো সে নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। যদি থাকতো তাহলে অন্তত এবারের নির্বাচনে অংশ নিতো।

প্রশ্ন আসে, যে দলগুলো ‘সরকার ফেলে’ দেওয়ার মতো হুঙ্কার ছাড়ছিল তারা কি নির্বাচন করার মতো যোগ্যতা বা ক্ষমতা রাখে? যদি রাখতো তাহলে তো একটা নির্বাচনি ব্যবস্থা নির্ভর রাজনীতির দেশে অবশ্যই নির্বাচন বয়কটের মতো বোকামি করার কথা না। বিএনপি ও তার সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো কি এতদিন মিছেই তাদের কর্মী বা সমর্থকদের বোকা স্বপ্নে রাখতে চেয়েছিল?

এই যে এখন তাদের সমর্থক ও নেতারা হুক্কাহুয়া করে বলার চেষ্টা করে গেলো যে ‘২০২৪-এর নির্বাচন একটি ভুল নির্বাচন হবে’ বা ‘ব্যর্থ নির্বাচনি ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার আবারও ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে’ বা বলা হচ্ছে যে ‘এটা আওয়ামী বনাম আওয়ামী নির্বাচন’– এসব কথার কি কোনও ওজন আছে বাস্তবে? আপনারাই কি দায়ী নয় এমন একটি পরিস্থিতি তৈরিতে?

অপরদিকে সরকারের সফলতা দেখেন। তারা কিন্তু ঠিকই নিজেদের মডেলে সফলতা নিয়ে আসার পথেই আছে। এটাই তো রাজনীতি, তাই না? প্রতিপক্ষ শক্ত না হলে তো একক রাজত্বে নিজেরই রাস্তা বের করতে হবে। রাষ্ট্র তো কারও জন্য নিজের চলা বন্ধ করে দিবে না বা দিতে পারে না। সরকার যে রাস্তায় এগোচ্ছে আপনি-আমি হাজার সমালোচনা করতে পারি, কিন্তু এর বিকল্প দিতে পারছি কি?

এ ব্যর্থতা কাদের? সরকারের? কোনোদিনও না। বরং আপনাদের ব্যর্থতার কাঁধে ভর দিয়ে সরকার তার সফলতার ছকটি দাঁড় করিয়ে গ্রহণযোগ্যতাও নিয়ে আসবে। তাহলে বলেন, আমরা কাদের পাশে থাকবো? আপনাদের মতো ব্যর্থ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নাকি সফলতার পথে থাকা সরকারি দলের? ব্যর্থ মানুষদের পাশে কেউ হাঁটে না।

আমাদের মতো নির্দলীয় রাজনৈতিক মানুষগুলো কেবল চাই দেশটা এগিয়ে যাক। কারণ, এটুকু বুঝ আমাদের আছে যে দেশ এগিয়ে যাওয়া মানেই আমারও এগিয়ে যাওয়া। হ্যাঁ। উন্নয়ন একা আসেনি বা আসছে না। সেখানে দুর্নীতিও হাত ধরে ফুলে উঠছে। তো সেই দুর্নীতিকে ঠেকানোটাও তো বিরোধিতারই দায়িত্ব। তাই নয় কি? সরকারকে প্রেসারে রাখবে কারা? সাধারণ মানুষ তো মিছিলে নামবে না। তাহলে তাদের হয়ে কথা বলবে কারা? বলার কথাতো ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর। আপনারা সব প্রকার আশা-আকাঙ্ক্ষার রাস্তায় পানি ঢেলে কেবল নিজেদের “ক্ষমতালোভী” চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অস্তিত্বটাই নাই করে দিলেন।

দুর্নীতিবাজরাও বুঝে গেছে তাদের চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মতো কেউ নেই এ দেশে। তারা সরকারকে চাপে রাখছে। ক্ষমতার রাজনীতি মানেই “হিসাব নিকাশের” খেলা। সেই হিসাবের খাতায় সরকারের অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে, যা ওভারকাম করতে পারে কেবল ক্ষমতার বাইরের শক্তিরা। ব্যর্থতায় পূর্ণ আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাই এখন কেবল ক্যালেন্ডারের পাতাতেই কর্মসূচিকে আটকে দিয়েছে।

আগামীতে যদি কেউ এ দেশে রাজনীতি করতে চায় তবে অবশ্যই তাদের হতে হবে জনগণের পক্ষের শক্তি। হতে হবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সারথি। হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী। সাম্য প্রতিষ্ঠা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারাই দাঁড়াবে তারাই হারিয়ে যাবে।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ