X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাজনৈতিক হেলমেট’

আহসান কবির
১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৫:২৭আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১৫:২৯

আহসান কবির ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল,ওবায়দুল কাদের সাহেব তখনও মন্ত্রী ছিলেন। সুন্দর সুন্দর টাই পরতেন,সুন্দর সুন্দর কথা বলতেন।
সেই সময়ে ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন লিখেছিলেন-টাই পরি/দেশ গড়ি! বহুদিন পর ওবায়দুল কাদের সাহেব আবারও ছড়ার শিরোনাম হয়েছেন। এবারের বিষয় হেলমেট। তিনি মানুষকে সচেতন করতে হেলমেট পরতে অনুরোধ করছেন। এমন একটা ছবিতে দেখা যায় তিনি এক মোটরসাইকেল আরোহীর মাথায় হাত রেখেছেন, যিনি হেলমেট পরেননি। ওই আরোহীর আবার মাথায় চুল নেই। আরেকটা ছবিতে দেখা যায় ওবায়দুল কাদের সাহেব নিজেই মোটরসাইকেলে বসা কিন্তু তার মাথায়ও হেলমেট নেই। ছড়াকার আখতারুজ্জামান আজাদ তাই ‘ফাটাকেষ্টর হেলমেট’ শিরোনামের ছড়ায় লিখতে পারেন-
‘গলাস কেন নাক?
হেলমেট তো পরবে তারা যাদের মাথায় টাক!
আমার মাথায় টাক কী দেখিস? তুলবো পিঠের ছাল
হেলমেট তো পরবে হায়াত,পরবে নাহিদ, মাল!’
নতুন একটা আইডিয়া পাওয়া গেলো। অভিনেতা আবুল হায়াত,শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মতো যাদের মাথায় চুল নেই, টাক ঢাকতে তারা হেলমেট পরতে পারেন। আজকাল হেলমেটের বিবিধ ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তাই হেলমেট সম্পর্কে কিছু জেনে নেই।
প্রাচীনকালে সৈন্যরা শিরস্ত্রাণ পরতো। যুদ্ধক্ষেত্রে মাথাকে আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্যই এমন প্রস্তুতি ছিল তাদের। খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ সালে আসিরীয় সৈন্যদের এমন শিরস্ত্রাণ বা হেলমেট প্রথম ব্যবহার করতে দেখা যায়। ব্রোঞ্জ আর চামড়া দিয়ে তৈরি হতো এমন শিরস্ত্রাণ বা হেলমেট। এরপর থেকে সৈন্যদের জন্য শিরস্ত্রাণ বা হেলমেট হয়ে দাঁড়ায় অপরিহার্য। বর্তমান আমলের হেলমেট তৈরি হয় হালকা প্লাস্টিকজাত পদার্থ দিয়ে। সৈন্যদের মাঝে লোহা বা স্টিলের হেলমেটের ব্যবহার এখনও চোখে পড়ে।
ক্রিকেট খেলায় হেলমেটের ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। আগে হেলমেট না পরে খেলতেন অনেকে, এখন হেলমেট না পরে উপায় নেই। ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর পর থেকে আইসিসি নিয়ম করে দিয়েছে ক্রিকেটে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। হেলমেটের মাপও বলে দেওয়া হয়েছে। আবার হেলমেট পরার কোনও নিয়ম না থাকলেও বাগেরহাটের রেজিস্ট্রার অফিসের অনেকেই বাধ্য হয়ে হেলমেট পরতেন। কারণ, রেজিস্ট্রার অফিসের ছাদ ছিল জরাজীর্ণ। জীবন বাঁচাতে তাদের হেলমেট পরাটা প্রয়োজনীয় ছিল।
ভারতের দুই শিক্ষার্থী যোগেশ ও অভিজিৎকে স্মরণ করা যেতে পারে। তারা অভিনব এক হেলমেট আবিষ্কার করেছেন। এই হেলমেটের ভেতরে ব্লু-টুথ থাকবে। এরপর মোবাইলের ব্লু-টুথের সঙ্গে রিলেট করে (গুগল ম্যাপের সাহায্যে) রাস্তা বলে দেওয়া হবে। সুতরাং রাস্তা না চিনলেও ক্ষতি নেই। হেলমেটই আপনাকে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। তবে এখনও বাণিজ্যিকভাবে এই হেলমেট তৈরি শুরু হয়নি। ভারতে অবশ্য আরও এক ধরনের হেলমেট পাওয়া যায়, যার নাম এসি হেলমেট। এই হেলমেট মাথা ও গলা তথা শরীরই নাকি ঠাণ্ডা রাখে। একবার চার্জ দিলে দশ ঘণ্টা থাকে!
হেলমেট অনেক ধরনের থাকলেও বলা হয় চার ধরনের হেলমেট কোনও না কোনোভাবে মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। সাধারণ হেলমেট, ক্রিকেটসহ খেলাধুলার হেলমেট, রোড বাইক হেলমেট ও মাউন্টেন (পাহাড়ে চড়ার) বাইক হেলমেট। মোবাইল কিংবা শিশুদের জুতায় যেমন আলো বা টর্চ থাকে তেমনি আছে টর্চ হেলমেট। আছে সানগ্লাস হেলমেট। গেল বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে মেসি ও নেইমারের ছবি সম্বলিত হেলমেট। ব্যাটমানসহ অনেক সিনেমা বা কার্টুন খচিত হেলমেট আছে। আছে কঙ্কাল হেলমেট। ক্রীড়া জগতে আছে হাজারও নকশার হেলমেট। সারা পৃথিবীর অনেক কোম্পানির মধ্যে চার পাঁচটি হেলমেট কোম্পানি খুবই নাম করেছে। যেমন, MT হেলমেট, Bell হেলমেট, ls2  ও  Hjc হেলমেট, Gmax  এবং shoei হেলমেট প্রভৃতি।
২০১৮ সালের জুলাইয়ের শেষ এবং আগস্ট মাসের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে হেলমেট। হেলমেট নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ক্রিয়েটিভিটি আসলে অসাধারণ। যেমন, ইদানীং  ছড়া লেখা হয় এভাবে- হেলমেট পরি/দেশটাকে গড়ি/হেলমেট চাই/নিজেকে লুকাই/পুলিশ আর হেলমেটধারী দেখ ভাই ভাই!
দুইজন ছাত্রছাত্রী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলে (সড়ক দুর্ঘটনা বলতে রাজি নই,এসব ঠান্ডামাথার খুন!) নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে রাস্তায় নেমে এসেছিল স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা। তারা রাস্তার লেন পরিবর্তন করতে মানা করেছিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র চেক করা শুরু করেছিল। দেখা গেল বেশিরভাগ যানবাহনের ফিটনেস কাগজ বা বৈধ কাগজপত্র নেই। নেই বেশিরভাগ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। পুলিশ, মন্ত্রী, সাধারণ মানুষ সবাই এই বাচ্চাদের সামনে লজ্জিত হতে থাকলো। নৌপরিবহন মন্ত্রী হাসলেন, তারপর মুখ বেজার করে নিহতদের একজনের পরিবারের কাছে মাফ চাইলেন। পরিবহন নেতারা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে আমজনতাকে ফেলে দিয়েছিল দারুণ ভোগান্তিতে। তারপর যা হয় তাই হলো। রাস্তায় নামলো কোনও এক পক্ষ। শুরু হলো মারামারি। আন্দোলনকারীদের পেটাতে রাস্তায় নামলো হেলমেট পরা লোকজন। তারা পুলিশের ছত্রছায়ায় হামলে পড়েছিল আন্দোলনকারীদের ওপর। হেলমেটধারীরা মারলো আন্দোলনকারীদের,সাংবাদিকদের,সাধারণ মানুষদের। পুলিশ কোনও হেলমেটধারীকে তখন গ্রেফতার করেনি, পরবর্তীকালেও চেষ্টা করেনি!
আগেই বলা হয়েছে এই দেশের মানুষের ক্রিয়েটিভিটি অসাধারণ। হেলমেট নিয়ে ছড়া লিখেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা খুঁজে বের করেছে অনেক কিছু। যেমন, বউ পেটাবেন? হেলমেট পরে নেন। বউও চিনবে না আপনাকে! উপদেশ দেওয়া হচ্ছে এভাবে- হেলমেট রাখুন। ইহা নিরাপদ।
বলা হচ্ছে হেলমেট পরুন। পুলিশের ভালোবাসা পাবেন। যারা উবার বা পাঠাও সার্ভিসে মোটরসাইকেল চালান তারা এখন নিজেরটা ও যাত্রীরটা অর্থাৎ দুটো করে হেলমেট রাখছেন। কারণ কী? এক পাঠাও ড্রাইভার বলেছেন, হেলমেট একটা রাখা মানে হচ্ছে একটা এল দিয়ে পিলার লেখা। দুইটা হেলমেট রাখা মানে দুইটা এল দিয়ে পিলার লেখা। দুই এল দিয়া লেখা পিলার খুব শক্ত হয়! পুলিশের ভালোবাসা দ্বিগুণ হয়!
গত এক মাসে হেলমেটের ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুণ। মোটরসাইকেলের শোরুমের নাম রাখা হয়েছে এমন- সিয়াম হেলমেট। একটা খাবারের দোকানের নাম হচ্ছে ক্যাফে গ্রিন হেলমেট। ট্রাফিক সপ্তাহে মোটরসাইকেলের সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে পুলিশ মোটরসাইকেলের চালককে উপহার দিচ্ছে হেলমেট। উপহার তালিকায় হেলমেট চলে এসেছে এখনই। ভবিষ্যতে বিয়ে বৌভাত জন্মদিনে হেলমেট উপহার দেওয়া হবে।
সন্ত্রাসীদের নাম থাকে বিচিত্র ধরনের। যেমন- ছিঁড়া আকবর, মুরগী মিলন, কালা জাহাঙ্গীর, সুইডেন আসলাম,মাউছ্যা কাদের প্রমুখ। সন্ত্রাসীদের নামের তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে হেলমেট হাসানের নাম! সে এক পার্টিতে উপস্থিত হয়ে দেখলো তার ছোট বোন পাড়ার ভোটকা শাহীনের সাথে নাচছে। হেলমেট হাসান তার বোনকে গিয়ে বললো বাসায় চলো। তোর জখমের জায়গায় মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করতে হবে। হেলমেট হাসানের বোন বললো, আমার তো জখম হয়নি। হেলমেট হাসানের উত্তর আগে তো বাসায় চল। তারপর দেখবি জখম কারে কয়! ভারতে প্রচলিত একটা কৌতুক এমন- সর্দারজির নতুন চাকরি হয়েছে পুলিশে। সর্দারজির রাস্তার এক লোককে আটকিয়ে জানতে চাইলেন, হেলমেট কই? লোকটা অবাক। সে সর্দারজিকে বললো- নিচের দিকে তাকান। সর্দারজি খেপে গিয়ে বললো- ছিঃ ছিঃ। আপনি নিচে কী পরেছেন তা দেখার ইচ্ছে আমার নেই। লোকটি উত্তর দিলো, নিচে তাকাতে বলেছি এই কারণে যে গাড়ির চার চাকা নিচেই থাকে! আমি গাড়ি চালাচ্ছি,মোটরসাইকেল না!
সবশেষে পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়া নতুন একটা কৌতুক বলে বিদায় নেই। ইমরান খান জিতেছেন নির্বাচনে। তার হয়ে সেনাবাহিনীর লোকজন নাকি জালভোট দিয়েছে। তো এক কেন্দ্রে বিদেশি এক পর্যবেক্ষক প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলেন, এখানে নাকি অনেক জালভোট দেওয়া হয়েছে? প্রিজাইডিং অফিসার উত্তর দিলেন, আপনার জোর থাকলে আপনিও দিতে পারেন। কেউ ঠেকাতে যাবে না। তবে হেলমেট পরে জালভোট দিয়েন। হেলমেট নিরাপদ। কেউ ছবি তুললেও আপনাকে চেনা যাবে না!!
জোর থাকলেই আপনি অনেক কিছু করতে পারবেন। জোর করে কিছু করার আগে হেলমেট পরে নিন। এটা লেটেস্ট পদ্ধতি!
লেখক: রম্যলেখক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ