X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কোভিড-১৯ পরবর্তী পররাষ্ট্রনীতি

ড. মো. কামাল উদ্দিন
১০ আগস্ট ২০২০, ১৮:২৩আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২০, ১৮:৪৪

ড. মো. কামাল উদ্দিন ঐতিহ্যগতভাবে বৈদেশিক নীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্কে অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও চাবিকাঠি। বৈদেশিক নীতি রাষ্ট্রের গুরুত্ব প্রতিফলন করে এমন কাজ যার মাধ্যমে জাতীয় সরকারগুলো অন্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পরিচালনা করে। এছাড়া রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে সম্পর্ক পরিচালনার মানদণ্ড ঠিক করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে, বৈদেশিক নীতি একটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সুরক্ষার বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশ্বায়নের অগ্রগতির ফলে ‘জটিল আন্তঃনির্ভরশীলতা’ তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। বিশ্বায়নের এই বিকাশ নাটকীয়ভাবে রাষ্ট্রগুলোর মিথস্ক্রিয়তার পরিধি আরও প্রশস্ত ও গভীর করে তুলেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক নীতি কেমন হবে বা এর পরিবর্তন হবে কিনা, তা এ আলোচনার মূল লক্ষ্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বৈদেশিক নীতির ডাইমেনশনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের উত্থানের পর পৃথিবীর ভয়াবহ ট্র্যাজেডি হচ্ছে এই করোনাভাইরাস। এই দুর্ঘটনা কাটিয়ে ওঠার জন্য সবাই চেষ্টা করলেও সমন্বিত পারস্পরিক সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা কম দেখা গিয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর বৈদেশিক নীতিতে বিশেষ করে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও করোনা ট্র্যাজেডি ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা এবং যুদ্ধকালীন সময়ে কীভাবে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের আচরণ হবে তা ঠিক করা। পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বন্ধু ও শত্রু রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করা হয়। 

দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করা হয় বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে। একটি দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই প্রণীত হয় বৈদেশিক নীতি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শত্রু হিসেবে রাষ্ট্র ও সংগঠনকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস কোনও রাষ্ট্রের জন্য একক শত্রু নয়। স্বাভাবিকভাবে আন্তর্জাতিক নিয়মে এটিকে যুদ্ধাবস্থাও বলা যাবে না।

দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত না হলেও করোনাভাইরাস সকল ভূখণ্ডে আক্রমণ করে, এমন শত্রুর বিরুদ্ধে সকলে স্বল্প-তীব্র লড়াই করে বা করেছে। এ ভাইরাস দেখা মুশকিল, সন্ধান করা কঠিন, এর ফলাফল দীর্ঘমেয়াদি ও অনিশ্চিত। করোনাভাইরাস সবাইকে আত্ম-বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য করেছে। করোনাভাইরাস সামাজিকতার বিপরীতে একটি অনুস্বর্গ। স্থানীয়, জাতীয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের সংহতি ও সম্প্রদায়ের গভীরভাবে ধারণকৃত নীতিগুলোর সমস্ত স্তরের আমাদের প্রচলিত সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে করোনাভাইরাস। এটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক মূলধনের একটি মৌলিক অংশকে হ্রাস করেছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করে। ভাইরাসজনিত ক্ষয়ক্ষতিটি আমাদের স্বতন্ত্র এবং স্থানীয় দিগন্তকে ছাড়িয়ে যায়। সামাজিক মূলধন এবং পারস্পরিক বিশ্বাস যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রসারিত হয় তা আর স্বাভাবিক থাকেনি।

প্রতিটি দেশের সামগ্রিক স্থিতিস্থাপকতা, সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে ভাইরাসটির প্রভাব। এই ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত বৈদেশিক নীতির বাইরে প্রত্যেক দেশের আলাদা প্রভাব বিবেচনা করে বৈদেশিক নীতি ও নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, এটি আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উত্তেজনাও সৃষ্টি করতে পারে। করোনাভাইরাস ভবিষ্যতের বৈদেশিক নীতির জন্য জন্য একটি ‘উইন্ডো’ খুলেছে। বৈদেশিক নীতির বর্তমান বিকাশ এবং বিকাশের মডেলগুলোর স্থায়িত্ব এবং সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাত্রা দুর্বল করে দেওয়ায় বৈদেশিক নীতির বর্তমান অবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো পরস্পর বিরোধিতা ও আন্তর্জাতিক সুরক্ষার ব্যর্থতা এবং ভাইরাস মোকাবিলায় কর্তৃত্ববাদী আচরণ, একলা চলো নীতি, বৈদেশিক নীতির দক্ষতাও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মারাত্মক ত্রুটি বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বৈদেশিক নীতির জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তবে নতুন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি, মডেল এবং নিয়ম এখনও তৈরি হয়নি। অনেকে মনে করেন করোনাভাইরাসসহ অন্যান্য অনেক কারণে নীতিশাস্ত্র এবং বৈদেশিক নীতির মধ্যে সম্পর্কের প্রতিফলনের প্রয়োজনীয়তা চূড়ান্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে করোনা সংকট থেকে উত্তরণের পর আমরা আরও ন্যায়বিচার সম্পন্ন, পরিবেশবাদী, নমনীয় এবং টেকসই বিশ্ব গড়ার সুযোগ তৈরি করবো না আমরা বিপরীত দিকে এগিয়ে যাবো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয়তাবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের যে চূড়ান্ত রূপ বিভিন্ন লেখালেখি ও বক্তব্য  বৈদেশিক নীতিকে বিস্তৃত করেছে তা করোনা পরবর্তী সময়ে আরও দৃঢ় এবং আরও সোচ্চার হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক কাঠামোর অস্থিরতা, আর্থ-সামাজিক উত্তেজনা, মানবিক অনুভূতি, জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা, কিছু অভিজাত শ্রেণির সুযোগসুবিধা এ সকল বিষয়গুলো করোনা পরবর্তী বৈদেশিক নীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। নতুন সহস্রাব্দের গোড়ার দিকে নৈতিকতা ও কূটনীতির সামঞ্জস্যের বিষয়টি বিবেচনা করে ইতালীয় কূটনীতিক রবার্তো টসোকানো এক দুর্দান্ত নীতিগত মানদণ্ডের ভিত্তিতে বৈদেশিক নীতি অগ্রাধিকারের একটি সেট তৈরি করেছিলেন। আজ আন্তর্জাতিক বিশ্ব এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে যখন তার প্রণীত নীতিগত মানদণ্ডের বৈদেশিক নীতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এখন রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অধিকারের দৃঢ় সংহতকরণ, সুরক্ষা, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের মধ্যে যে সত্যিকারের সাম্যতার নীতিগুলোর স্মরণ করিয়ে দেবে করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক নীতিতে। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার অধিকার অগ্রাধিকার পাবে বৈদেশিক নীতিতে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈদেশিক নীতি করোনাভাইরাসের সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ায় কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বের জন্য একটি নৈতিক বিদেশি নীতির জন্য একটি চেকলিস্ট তৈরি করা যায়।

করোনা পরবর্তী সময়ে এগিয়ে যাওয়ার উপায় হলো আর্থ-সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালীকরণ, বৈষম্য হ্রাস, স্থায়িত্ব বাড়ানো, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল এবং বিশ্বের জনসংখ্যার সর্বাধিক সুরক্ষাহীন অংশগুলোকে সুরক্ষিত করার ওপর আরও বেশি জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বৈদেশিক নীতিতে। পরবর্তী বৈদেশিক নীতি নির্মাণের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:

প্রথমত: পরবর্তী বৈদেশিক নীতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো কী হতে পারে সে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার নীতি গ্রহণ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ কোথা থেকে, কীভাবে এবং কেন শুরু হয়েছিল তা স্পষ্ট করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এর উৎপত্তি জেনে ভবিষ্যৎ ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, বিশেষ করে বিশ্ববাসীকে আশাবাদী করে তুলতে হবে যে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভাইরাস মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য আন্তর্জাতিক মহল পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করে দেশগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী প্রস্তুতি এবং কার্যকর প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য পেশাদারিত্বের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নীতি নির্ধারণ করতে হবে। গতানুগতিক নিরাপত্তার পরিবর্তে অগতানুগতিক নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

দ্বিতীয়ত: করোনা পরবর্তী বৈদেশিক নীতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি হওয়া উচিত জলবায়ু পরিবর্তন। এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাটি এখনও অবধি আন্তঃযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেয়েছে। করোনার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিবাচক দিক স্পষ্ট হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমেছে, বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক নির্মাণ করে দেখেছেন। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের দাবি করোনাসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক ভাইরাস পরিবেশ বিপর্যয়ের ফল। তাই করোনা পরবর্তী বৈদেশিক নীতিতে বায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। করোনার ফলে বিশ্বজুড়ে লকডাউনগুলোর কারণে নয়াদিল্লির পরিষ্কার আকাশ দেখা দিয়েছে, চীনের দূষণ সূচকগুলো হ্রাস পেয়েছে এবং ভেনিসের উপকূলগুলোতে আবার ডলফিন খেলা করছে। কেউ ভাবেন, যে এটি জলবায়ু ধ্বংস নিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর কাজকে কিছুটা গতি দিতে পারে। তবে এই বছরের শেষের দিকে নির্ধারিত সিওপি ২৬ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে না, সম্মেলন কেন্দ্রটি নিজেই একটি অস্থায়ী কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। করোনার ফলে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলো নির্ধারিত পরিবেশ নীতিগুলোর বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বিশ্বের তেলের দাম হ্রাস পেয়েছে তা জ্বালানি নীতিগুলোকে চাপ পড়েছে। গণপরিবহন ব্যবস্থাগুলো সীমিত স্থানে বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে পরিচালনা করার ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে জাতীয় প্রতিক্রিয়া যেনো পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে না পারে তার খেয়াল রাখতে হবে।

তৃতীয়ত: করোনাভাইরাস পরবর্তী বৈদেশিক নীতির অন্য একটি অন্যতম ফ্যাক্টর হলো বিদেশি বিনিয়োগ। বিদেশি বিনিয়োগ আবার বিশ্বায়নের মূল চাবিকাঠি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলেও রয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ। করোনা পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক বিনিয়োগের ওপর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য বৈদেশিক নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে এবং মূলধনের সন্ধানের প্রতিটি দেশের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সহায়তায় বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে অবাধে নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হবে দেশগুলোর জন্য। ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি যে বৈদেশিক বিনিয়োগের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। উন্নত দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য সরকার ইতোমধ্যে আভ্যন্তরিক বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।  কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় অনেক রাষ্ট্র তাদের নির্দিষ্ট কিছু শিল্পের জাতীয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বর্তমান বেশিরভাগ আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের আরও সহজ করার কথা বলা হলেও করোনা পরবর্তী সময়ে তা হয়তো পরিবর্তন হতে পারে।

চতুর্থত: করোনা পরবর্তী বৈদেশিক নীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাইগ্রেশন। বিশ্বায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো শ্রমবাজারে মানুষের অবাধ চলাচল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দক্ষিণ এশীয় কর্মীসহ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অত্যন্ত দক্ষ কর্মীদের যাত্রা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা বা পশ্চিম ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশন করে আসার মডেলটি ভাইরাসের কারণে ধসে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা, মাইগ্রেশন এর ওপর প্রভাব এবং মূলধন সন্ধানের জন্য প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সহায়তায় বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে অবাধে নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হবে। এটি আবার আস্তে আস্তে ফিরে পেতে যাচ্ছে। যে সকল দেশ বৈদেশিক রেমিট্যান্স এর ওপরে মৌলিকভাবে নির্ভরশীল তাদের জন্য এটি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। তাই তারা তাদের বৈদেশিক নীতিতে সম্ভাব্য দেশগুলোতে যেখানে তাদের বিশাল কর্মী বাহিনী কাজ করে বৈদেশিক রেমিট্যান্স পাঠায় সে সকল দেশগুলোর সঙ্গে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কার্যকর বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করতে হবে। পরবর্তী আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার সীমিত হবে। প্রতিযোগিতা বাড়বে, তবে দক্ষ কর্মীদের কাজের অভাব হবে না। তাই আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে মাইগ্রেশনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে বৈদেশিক নীতিতে।

লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ