করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে অর্ধেকে নেমেছে বান্দরবান গণগ্রন্থাগারের পাঠক সংখ্যা। করোনার আগে প্রতিদিন শতাধিক পাঠক গ্রন্থাগারে দৈনিক পত্রিকা, উপন্যাস, গল্প, ইতিহাস, ঐতিহ্য, চাকরির পরীক্ষার জন্য নানা ধরনের বই পড়তে এলেও বর্তমানে ৫০ জন পাঠকের দেখা মিলছে না।
বান্দরবান গ্রন্থাগারের যাত্রা:
১৯৮৮ সালে বান্দরবান জেলা গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ সালে এটি জেলা পরিষদের অধীনে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এটি জেলা পরিষদের অধীনেই পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে একজন ইনচার্জ, একজন কম্পিউটার অপারেটর, একজন অফিস সহায়ক ও একজন পিয়ন কাম নাইটগার্ড দিয়ে চলছে গ্রন্থাগারের কার্যক্রম।
গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ও যেসব দিন খোলা:
সপ্তাহে শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্রন্থাগার খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। গ্রন্থাগারে সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এক হাজার ৩৯৬টি বই বরাদ্দ আসে। বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৮৫টি। এছাড়া নিয়মিত ১০টি জাতীয় পত্রিকা, চারটি আঞ্চলিক পত্রিকা, একটি স্থানীয় পত্রিকা ও সাতটি ম্যাগাজিন পাঠকের জন্য রাখা হয়।
গ্রন্থাগারের সদস্য ও পাঠক সংখ্যা:
করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে সদস্য সংখ্যা ছিল ২৮ জন। করোনাকালীন আরও নয় জন নতুন সদস্য হয়েছেন। চলতি বছর নতুন সদস্য হয়েছেন ছয় জন। বর্তমানে সদস্য ৪৩ জন। করোনার আগে শতাধিক পাঠক এলেও করোনার পর থেকে দিনে প্রায় ৪০-৪৫ জন পাঠক আসেন সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে। তবে বিকাল বেলায় পাঠক বেশি থাকেন।
গ্রন্থাগারের বর্তমান অবস্থা:
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা গ্রন্থাগারের ভেতরে বুক সেলফের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন বই সাজানো রয়েছে। পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী সংবলিত শিশু কর্নার রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আলাদা টেবিল-চেয়ার এবং বুক সেলফ। তবে এদিন পাঠকের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম।
সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া:
গ্রন্থাগারের সাধারণ পাঠক হতে সদস্য পদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু গ্রন্থাগারের বই বাসা-বাড়িতে নিয়ে পড়তে চাইলে সদস্য হতে হবে। প্রথম দিকে সদস্য হওয়ার নিয়ম না থাকলেও বর্তমানে সদস্যের বাইরে কাউকে বাড়িতে বই নিতে দেওয়া হয় না। সদস্য হতে পূরণ করতে হয় একটি সদস্য ফরম। এরপর তিনটি শ্রেণিতে পাঠককে ভাগ করে জামানত নির্ধারণ করা হয়। প্রথম শ্রেণিতে শিশুরা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং তৃতীয় শ্রেণিতে সাধারণ পাঠক। শিশুদের জন্মসনদ ও বইয়ের মূল্যমান অনুযায়ী ২০০ টাকা জামানত জমা রাখতে হয়।
স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০০ টাকা জামানত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়। সাধারণ পাঠকের জন্য ৫০০ টাকা জামানত, জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়। সদস্য হলেই কেবল নিয়ম মেনে বই বাড়িতে নেওয়া যায়। এছাড়া কেউ বই নিতে পারেন না। যদি কেউ সদস্য পদ বাতিল করতে চান তাহলে বই ফেরত দিয়ে জামানতের টাকা নিতে পারবেন।
পাঠকের মতামত:
গ্রন্থাগারে বই পড়তে আসা ইব্রাহিম বলেন, এখানে প্রায়ই বই এবং পত্রিকা পড়তে আসি। কাজ না থাকলে এখানে এসে বই পড়লে সময় কেটে যায়। তবে পাঠক বেশি না থাকলে একা একা বই পড়তে ভালো লাগে না।
বই পড়তে আসা তিন স্কুলছাত্রী জানায়, প্রায়ই এখানে এসে বই পড়ি। বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ নানা ধরনের বই পড়ি। এভাবে আমাদের তিন বান্ধবীর সময় কাটে। একসঙ্গে বই পড়তে আমাদের ভালো লাগে।
জেলা সদরের বাসিন্দা আলিফা আক্তার তার মায়ের সঙ্গে গ্রন্থাগারে এসেছিল। শিশু কর্নারে নানা ধরনের খেলনা নিয়ে খেলছিল। শিশুটির মা জানান, এই গ্রন্থাগারে প্রায়ই মেয়েকে নিয়ে আসি। এখানে এসে খেলতে পেরে মেয়ের আনন্দ লাগে। তাই সময় পেলেই নিয়ে আসি। আমিও মাঝেমধ্যে বই পড়ি।
গ্রন্থাগারের দায়িত্বশীলের বক্তব্য:
জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের ইনচার্জ মাশৈথুই চাক বলেন, সপ্তাহে প্রতি শনিবার থেকে বুধবার প্রায় অর্ধশতাধিক পাঠক এখানে বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়তে আসেন। আগে প্রতিদিন শতাধিক পাঠক এলেও করোনার পর থেকে পাঠকের সংখ্যা কমে গেছে। তারপরও এখন যেসব পাঠক আসছেন তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।
তিনি বলেন, লাইব্রেরিতে সিনিয়র বা সহকারী লাইব্রেরিয়ান নেই। এজন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন করা যায় না। এরপরও পাঠক বাড়াতে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে রচনা প্রতিযোগিতা, বই পাঠ, চিত্রাঙ্কন, কুইজ প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করি আমরা। এছাড়া স্থায়ী সদস্য বাড়ানোর জন্য অনেককে ফি ছাড়াই যুক্ত করেছি। এভাবে আমাদের কার্যক্রম চলছে।