গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অপহরণের পর মাদ্রাসাছাত্র সানজিদুল ইসলাম তামিমকে (৬) হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য শিশুটিকে অপহরণ করেছিল তারা। কিন্তু আসামিরা শিশুটির পূর্বপরিচিত হওয়ায় তাদের পরিচয় বাবাকে বলে দিতে পারে, এই ভয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বলে র্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃতরা।
শনিবার (১৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় উত্তরায় র্যাব-১-এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের সহকারী পরিচালক (অপস অ্যান্ড মিডিয়া) মাহফুজুর রহমান। গ্রেফতারকৃতরা হলো ময়মনসিংহের মুক্তগাছা উপজেলার পাউরিতলা গ্রামের মৃত মজনু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (২০) এবং তার সহযোগী ফুলপুর উপজেলার কুশকান্দা গ্রামের ইস্কান্দার মিয়ার ছেলে সাগর মিয়া (২২)। দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার বিকালে মুক্তাগাছার কদুরবাড়ী বাজার থেকে হাসানকে এবং সন্ধ্যায় ফুলপুরের কুশকান্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাগরকে গ্রেফতার করা হয়।
নিহত সানজিদুল ইসলাম তামিম ফুলপুর উপজেলার মাটিজাপুর গ্রামের নাজমুল হোসেনের ছেলে। নাজমুল কোনাবাড়ী থানার আমবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন এবং সেখানে প্লাস্টিকের একটি গোডাউনে চাকরি করতেন। তামিম ওই এলাকার আইনুদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।
র্যাব জানায়, গত ৭ জুলাই সন্ধ্যায় তামিম নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও না পেয়ে কোনাবাড়ী থানায় জিডি করেন তার বাবা। ৮ জুলাই সকালে বাবার মোবাইলে কল করে তামিমকে পেতে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীদের দেওয়া তথ্যমতে, টাকা দিতে ওই দিন ময়মনসিংহের বাইপাস এলাকায় যান স্বজনরা। কিন্তু সেখানে গিয়ে অপহরণকারীদের না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন তারা। ১০ জুলাই দুপুরে কোনাবাড়ীর আমবাগ মধ্যপাড়ার কলাবাগানের ভেতরে এক শিশুর বিকৃত লাশ দেখে থানায় খবর দেয় স্থানীয়রা। সেটি তামিমের লাশ বলে শনাক্ত করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় কোনাবাড়ী থানায় মামলা করেন তামিমের বাবা। মামলার পর পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে র্যাব। তদন্তের একপর্যায়ে আসামিদের শনাক্ত করে শুক্রবার বিকালে হাসান ও সন্ধ্যায় সাগরকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামিদের বরাতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে র্যাবের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা র্যাবকে জানায় তামিমের বাবার ববিন কাটার গুদামে কাজ করতো হাসান ও সাগর। পাশাপাশি অনেকের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়েছিল। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য তাদের পূর্বপরিচিত নাজমুলের ছেলে তামিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ জুলাই সন্ধ্যায় বাবার কর্মস্থলের সামনে থেকে হাতি দেখানোর কথা বলে তামিমকে অপহরণ করে হাসানের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে বাথরুমের ভেতর আটকে রাখে। হাসান ও সাগর শিশু তামিমের বাবার পূর্বপরিচিত হওয়ায় ঘটনাটি বাবাকে বলে দিতে পারে এই ভয়ে ওই দিন রাত ৮টায় বাথরুমের ভেতরে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা। রাত ১১টার দিকে লাশ আমবাগ মধ্যপাড়ার কলাবাগানের ভেতরে ফেলে দেয়। পরদিন বাবার কাছে কল করে হাসান জানায় তামিম তাদের হেফাজতে, ১০ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। পরে পুলিশের সহায়তায় স্বজনরা টাকা দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের বাইপাস এলাকায় যান। হাসান ও সাগর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।’